দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি।
গত কিছুদিন ধরে দেশের সমস্ত মানুষজন থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রিন্ট মিডিয়া সব জায়গায় একই বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে। সেটা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। এই সমস্যার শুরু হয়েছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে। যখন রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। তখন ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি হাজার হাজার মাইল দূরের দুটি দেশে যুদ্ধ লাগলে আমাদের জন্য এত সমস্যা তৈরি হবে। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিনের ভিতরেই সেই যুদ্ধের প্রভাব আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে জ্বালানি তেল, গ্যাস সমস্ত কিছুর দাম হয়ে গেছে আকাশচুম্বী। এটাযে শুধু বাংলাদেশের সমস্যা তা নয়। বরং পুরো বিশ্বব্যাপী এই সমস্যাটা চলছে। তবে পুরো পৃথিবীর সাথে আমাদের একটা অমিল রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন কোন জিনিসের দাম বাড়ে। তখন আমাদের দেশে সেই জিনিসের দাম সাথে সাথেই বেড়ে যায়। কিন্তু দাম বাড়ার কথা বর্ধিত মূল্যে পন্য আমদানি করার পরে। আবার যখন দাম কমে তখন আর সেই পন্যের দাম সহজে কমেনা। এখানে দুটো পক্ষ দায়ী। একটা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের চরম অনৈতিক মনোভাব ও অধিক মুনাফাখোরি মনোভাব। আর একটা হচ্ছে সরকারের তদারকির অভাব।
যাই হোক দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতির ফাঁদে আমরা সকলেই পড়ছি গত বেশ কিছু মাস হয়ে গেলো। কিন্তু গত কিছুদিন আমাদের খাদ্য তালিকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের দাম হঠাৎ করে এত বেড়ে গিয়েছে। যে দেশের সকলেই অস্থির হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন রকম মাংসের দাম। আমাদের দেশের মানুষের আমিষের অন্যতম উৎস হচ্ছে বিভিন্ন রকমের ফার্মের মুরগি। হঠাৎ করে সেই ফার্মের মুরগির দাম এত বেশি বেড়ে গিয়েছে। যে এখন মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র মানুষের পক্ষে আর মুরগির মাংস কেনা সম্ভব নয় বা কিনলেও আগের থেকে অনেক কম পরিমাণে কিনতে হবে। ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা এই ঘটনা কেও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের সাথে জড়াতে চাচ্ছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা মিলে সিন্ডিকেট তৈরি করার কারণে মাংসের বাজারে এই অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
এমনিতেই আমাদের দেশীয় খামারিদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য মুরগির মাংস আমদানি করা হয় না। কিন্তু এখন সেই মুরগির মাংসের দাম এতটাই বেড়ে গিয়েছে। যে সরকারকে মুরগির মাংস আমদানি করার কথাও বিবেচনা করতে হচ্ছে। কিন্তু যখনই সরকার মুরগির মাংস আমদানি করার কথা ঘোষণা দিয়েছে। সাথে সাথেই সেই বড় ব্যবসায়ীরা মুরগির দাম কমিয়ে দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা অবশ্য মুরগির মাংসের দাম বাড়ার জন্য পশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করছিলো। কিন্তু সরকার তদন্ত করে দেখেছে এই কথা মোটেও সত্য নয়। এখন দেশের লোকজন পরিষ্কার বুঝতে পারছে অন্যান্য যে সমস্ত জিনিসের দাম বাড়ানো হয়েছে। সেগুলোর পেছনেও ব্যবসায়ীদের কারসাজি অনেকটা দায়ী। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ধোয়া তুলে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা করার জন্য সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
আমি অবশ্য ব্যবসায়ীদের এই কারসাজির জন্য শুধু ব্যবসায়ীদেরকে দোষারোপ করতে রাজি নই। কারণ ব্যবসায়ীরা এই ধরনের কাজ করতেই পারে। সরকারি সংস্থাগুলো যদি ভালোভাবে নজরদারি করে তাহলে ব্যবসায়ীরা এ ধরনের কাজ করার সুযোগ এবং সাহস কোনটাই পাবে না। কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলোর গাফিলতির কারণেই আজকে ব্যবসায়ীরা লাগামহীন ভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে চলেছে। যার ফলে দেশের নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষজনকে প্রচন্ড ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তাদের জীবন থেকে বিভিন্ন রকম জিনিস বাদ দিতে হচ্ছে।
গত পরশুদিন একটি টেলিভিশন চ্যানেলে খবর দেখছিলাম। সেখানে রমজান উপলক্ষে খেজুর আমদানির উপর একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছিলো। সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে সমস্ত খেজুর আমদানি করা হয়েছে সেগুলোর গড় মূল্য ১০০ টাকার নিচে। কিন্তু সেই খেজুরই বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১২০০টাকা কেজিতে। এটা থেকেই আপনারা আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের মনোভাব সম্বন্ধে একটা ভালো ধারণা পেতে পারেন। ব্যবসায়িরা শুধু যে মাংস আর খেজুরের দাম এতটা বৃদ্ধি করেছে তা নয়। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম একইভাবে তারা বাড়িয়ে চলেছে। এই অরাজকতার কোথায় শেষ সেটা আমার জানা নেই। সম্ভবত দেশের সাধারণ মানুষেরা কেউ জানে না। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদেরকে উদ্যোগী হতে হবে।
এখন দেশের মানুষ জন রাস্তায় নেমে কোন কিছুর প্রতিবাদ করতে পারে না। সমস্ত প্রতিবাদ ফেসবুক কেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে। যার ফলে যে সমস্ত লোকজন এই সমস্ত কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী। তারাও নিশ্চিন্তে সমস্ত কুকর্ম করে যাচ্ছে। কারণ তারা জানে যত খারাপ কাজই তারা করুক। জনগণ তাদের বিরুদ্ধে কখনোই রাস্তায় নামবে না। হয়তো ফেসবুকে দু-চারটে গালি দেবে। তারপরে সবাই ঠান্ডা হয়ে যাবে। এই ভরসাতেই ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দেশের মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। দ্রব্যমূলের এই ঊর্ধ্বগতির সময়ে শুধু যে আমদানিকৃত জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে তা নয়। যে সমস্ত পণ্য আমাদের দেশেই উৎপাদিত হয় সে সমস্ত পণ্যের দামও কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়েছে। আর এই সবকিছুর পেছনে রয়েছে সেই ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। অবশ্য শুধু ব্যবসায়ীদের কে দোষারোপ করেও লাভ নেই। কারণ খুঁজলে অবশ্যই এর পেছনে আর রাজনৈতিক নেতাদের ইন্ধনও পাওয়া যাবে। এ সমস্ত ব্যাপার দেশের বেশিরভাগ লোকজনে জানে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে ?
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
নিম্ন আয়ের মানুষ শুধু নয়, মধ্যবিত্ত মানুষও নিত্য পণ্যের বাজার নিয়ে দিশেহার। শুধু সিন্ডিকেটের কারণে ও দায়িত্ববানদের মনিটরিং এর অভাবে অনেক কিছুই এখন সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে।মনিটরিং থাকলে ১০০ টাকার খেজুর ৬০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হতোনা। সময়োপযোগি পোস্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাই আপনি আজকে আমাদের মাঝে দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি বাস্তব সময় সম্মুখে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। আপনার পোস্টে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে ভাই। আমিও আপনার কথায় এক ভাই শুধু ব্যবসায়ীদের দোষ দিলে হবে না সরকারি কর্মচারীদের দোষ দেওয়া উচিত এখানে।তারা যদি ভালোভাবে তাদের ডিউটি পালন করে তাহলে এগুলো করার সাহস হয়ে উঠবে না। আমি মনে করি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সব থেকে বড় কারণ হচ্ছে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ।
ধন্যবাদ ভাই আপনাকে একবার সময় উপযোগী একটি পোস্ট করার জন্য। বাজারে যে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে তাতে করে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত এই দুই শ্রেণীর মানুষই এক সময় না খেয়ে থাকতে হবে। এগুলো দেখার মতো যেন কেউ নেই এদেশে। যে যার মত ইচ্ছে যেভাবে হোক দেশে চলছে। আমার তো মনে হয় এগুলোর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী সিন্ডিকেট। আর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কি বলবো ভাই এদেশের আইন শৃঙ্খলা যেন নেই, ব্যবসায়ীরা যে যার মত পারছে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করছে কিন্তু কিছু বলার লোক নেই।
ভাই বিড়ালের গলায় যে ঘন্টা বাধবে তাকে তো আটকে রাখা হয়েছে 😔
ইউক্রেন এবং রাশিয়া যুদ্ধের জন্য যদিও পণ্যের দামের কিছু পরিবর্তন ঘটেছে কিন্তু তারপরেও আমাদের দেশে যারা মুনাফাখোর ব্যবসায় আছে তারা এসব পণ্য গুলো সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করাচ্ছে। নিজেদের অধিক লাভের আশায় নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষ গুলোকে প্রচন্ড ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তারা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো কেনার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে। তবে এই বিষয়ে সরকার যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে কিছুটা সমাধান হতে পারে। খেজুরের দামের এই বিষয়টি আমিও দেখেছি ভাই। রোজার সময় মুসলমানরা যখন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব, তা না করে এই মুনাফার খোরেরা অধিক লাভের আশায় পণ্যদ্রব্য দাম বাড়িয়ে দেয়। আমার তো মনে হয় এদের কাছে সরকার জিম্মি যার জন্য মুনাফাখোরদের কোন কিছুই করতে পারে না।
আমাদের দেশে কোন জিনিসের দাম বাড়লে সেটা কমে না বললেই চলে। মাঝে মধ্যে বাজার মনিটরিং করে শুধুমাত্র দেখানোর জন্য। আমি দক্ষিণ কোরিয়াতে দেখেছি এমপি মন্ত্রীরাও বাজারে গিয়ে বাজার তদারকি করেন সিভিলে। আর সেজন্যই উন্নত দেশগুলোতে সবকিছুর দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। কয়েক মাস আগে বিশ্ববাজারে তেলের দাম যখন বাড়লো তখন তেলের দাম বাড়িয়ে দিল,বাস ভাড়া বাড়িয়ে দিল। যখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমল তখন তো আমাদের দেশে তেলের দাম কমালো না। সবকিছু হচ্ছে অজুহাত,আর কিছুই না। যারা সিন্ডিকেট করে তারা শুধু সুযোগ খুঁজে কিভাবে দাম বাড়ানো যায়। জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী। অন্যান্য যেসব দেশে জিডিপির হার আমাদের চেয়ে অনেক বেশি, সেসব দেশেও জিনিসপত্রের দাম এতো না। যাইহোক এই অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি নেই। যত দিন যাবে অবস্থা আরও করুণ হবে। সময় উপযোগী একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।