এভাবে আর কতো?

in আমার বাংলা ব্লগ5 months ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


গত পরশুদিন ঢাকা গিয়েছিলাম একটি ব্যক্তিগত কাজে। কাজটা হওয়ার কথা ছিল গতকাল বিকালে। সেই কারণে একদিন আগে ঢাকায় গিয়েছিলাম। আগে থেকেই পরিকল্পনা করে গিয়েছিলাম কাজ শেষ হলে পরদিন ফরিদপুরে ফিরে আসবো। সেই হিসেবে ট্রেনের ফিরতি টিকিট আগেই কেটে রেখেছিলাম। গতকাল যথারীতি সন্ধ্যার পরে আমাদের সেই কাজের জন্য বের হয়েছিলাম। সেখানে অবশ্য আমাদের খুব একটা বেশি সময় লাগেনি। অল্প সময়ে আমাদের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিলো। কাজের জায়গাটা ছিল সিদ্ধেশ্বরী কালি মন্দিরের কাছে। সেখান থেকে বেইলি রোডের দূরত্ব একেবারেই কম। যার ফলে আমাদের কাজ শেষ হলে আমরা হাঁটতে হাঁটতে বেইলিরোডের দিকে আগাতে লাগলাম। ঢাকা যাওয়ার আগে পরিকল্পনা করেছিলাম বৃহস্পতিবার রাতে আমরা রাতের খাওয়াটা বাইরে খাবো।

IMG_20240301_123724.jpg

তবে বৃহস্পতিবার আমাদের দুপুরে লাঞ্চ করতে করতে প্রায় বিকাল হয়ে গিয়েছিলো। যার ফলে সন্ধ্যার দিকে যখন আমরা বের হয়েছিলাম তখন আমাদের কারো পেটেই তেমন একটা ক্ষুধা ছিলো না। যার ফলে আমাদের সেই পূর্ব পরিকল্পনাটা আর বাস্তবায়ন করা হয়নি। মূলত আমি চিন্তা করেছিলাম আমরা কাচ্চি ভাই এর বেইলিরোড শাখা থেকে কাচ্চি বিরিয়ানি খাবো। কারণ আমার স্ত্রী কাচ্চি বিরিয়ানি বেশ পছন্দ করে। আর কাচ্চি ভাইয়ের কাচ্চিটা আমার কাছেও বেশ দারুন লাগে। যাই হোক শেষ পর্যন্ত আর সেই খাওয়া-দাওয়া টা হয়নি। আমরা হালকা কিছু খাওয়া-দাওয়া করে রাত নটার কিছুক্ষণ আগে বাসায় ফিরে এসেছিলাম। তখন প্রায় হ্যাংআউটের মাঝামাঝি সময়। এর ভেতরে আমার খালাতো বোনের হ্যাজবেন্ড এসে আমাকে বলে গেলো বেইলি রোডের যে বিল্ডিং এ কাচ্চি ভাইয়ের শাখা রয়েছে সেখানে ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমি তো শুনে বেশ অবাক হয়ে গেলাম। কারণ আমরা কিছুক্ষণ আগেই সেই বিল্ডিং এর সামনে দিয়ে এসেছি। যদিও তখন উনার কাছ থেকে শোনার পরে আগুনের ভয়াবহতা সম্বন্ধে তেমন কোন ধারণা পায়নি। আমি মনে করেছিলাম হয়তো ছোটখাটো কোন অগ্নিকাণ্ড হয়েছে।


হ্যাংআউট যখন শেষ হোলো রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে উনার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে টেলিভিশন স্ক্রিনের দিকে চোখ গেলে দেখলাম সেখানে ব্রেকিং নিউজে দেখাচ্ছে বেলিরোডের অগ্নি দুর্ঘটনায় প্রায় ৪৩ জন মানুষ মারা গিয়েছে। যদিও আমরা বাংলাদেশের মানুষজন জানি এই সমস্ত দুর্ঘটনায় সঠিক প্রাণহানির সংখ্যাটা কখনোই জানানো হয় না। কারণ সরকার সবসময় এই ধরনের দুর্ঘটনায় হয়ে যাওয়া মৃত্যুর সংখ্যা জনসাধারণের কাছ থেকে লুকাতে চায়। কারণ এই সমস্ত দুর্ঘটনার পেছনে সরকারি কোনো না কোনো সংস্থার গাফিলতি দায়ী থাকে। যাইহোক টেলিভিশনে ব্রেকিং নিউজ টা দেখে মনটা আসলে খারাপ হয়ে গেলো। তখন মনের ভিতর এ চিন্তাটাও এসেছিল যদি আমরা সেখানে খেতে যেতাম তাহলে আমরাও হয়তো এতক্ষণ আর কেউ বেঁচে থাকতাম না। এর ভেতর সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো অনেকের বিভিন্ন ঘটনা ভেসে আসতে লাগলো। যে বিল্ডিংটাতে আগুন লেগেছিল সেই বিল্ডিং এর প্রত্যেকটা ফ্লোরেই ছিলো বিভিন্ন রকমের নামি-দামি খাবারের দোকান। যেগুলো স্থানীয় মানুষের মাঝে বেশ জনপ্রিয়। তাই সাধারণ বিল্ডিং এর থেকে সেখানে লোকজনের সংখ্যাটা বেশি ছিলো।


কেউ এসেছিল সেখানে পুরো পরিবার নিয়ে, আবার কেউ এসেছিল বন্ধু বান্ধবের সাথে, আবার কেউ এসেছিলো আত্মীয় সজনের সাথে কোন একটা কিছু সেলিব্রেট করতে। কিন্তু সব কিছু মুহূর্তেই কেমন আগুনে ঝলসে বিবর্ণ হয়ে গেলো। কিছু মানুষ মুহূর্তেই পোড়া মাংসের দলায় পরিণত হোলো। তবে এগুলো আমাদের কাছে একেবারেই নতুন না। প্রতিবছরই আমরা এমন ঘটনা একাধিক বার দেখে থাকি। এবং এরপর কি হবে সেটাও আমি বলে দিতে পারি। আগামী কয়েক দিন বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টকশো গুলো সরগরম হয়ে উঠবে এই ইসুতে। তারপর কিছুদিন পর আবার সব আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সবাই আবার পরবর্তী দুর্ঘটনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকবো। কিন্তু এই যে হঠাৎ করে এতগুলো মানুষ হারিয়ে গেলো এই দায় কি কেউ নেবে? কেউ নেবে না। কারণ এমনটাই আমাদের দেশে হয়ে আসছে। আর এটাতেই আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে গিয়েছিলাম সেই পোড়া বিল্ডিংটার সামনে। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম এখনো অসংখ্য মানুষের ভিড়। এখনো অনেক স্বজন হারা মানুষ নীরবে তাদের অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে আবার কেউ উৎকণ্ঠিতভাবে তার স্বজনকে এখনো খুঁজে ফিরছে। আর রয়েছে উৎসুক জনতার ভিড়। সেই সাথে মিডিয়ার অসংখ্য ক্যামেরা। কিন্তু যারা চলে গিয়েছে এর কোন কিছুই আর তাদের কে স্পর্শ করছে না। কিন্তু তারা চলে যাওয়ার আগে একটা প্রশ্ন আমাদের কাছে রেখে গিয়েছে। সেই প্রশ্নটা হচ্ছে এভাবে আর কতো?


আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানবেইলিরোড

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 5 months ago 

আসলেই ভাইয়া যার শরীরে কাটা ফোঁড়ে সেই বুঝে তার বেদনা।যার আত্মীয় হারায় যায় সেই বুঝে তার বেদনা। এরকম দুর্ঘটনা প্রায় শুনি আমরা ঢাকা শহরে এবং টিভি নিউজগুলো কিছুদিন চিল্লাচিল্লি করে আবার সব আগের মত হয়ে যায় কিন্তু সঠিক সমাধান কোনভাবেই পাওয়া যায় না। আর আমাদের দেশের এমন অবস্থা এরকম ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া সত্ত্বেও সেখানকার নিহত প্রাণের সঠিক সংখ্যাটুকুও বলে না। আত্মীয় কে হারানোর বেদনা অনেক কষ্টের ভাইয়া সেটা যার হয়েছে সেই বুঝে। আপনার পোস্টের মাধ্যমে আজকে আমার পুরনো দিনের একটি কথা মনে পড়ে গেল। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে খুবই সুন্দর একটি জিনিস আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন।

 5 months ago 

হুমমম ভাই একদম সঠিক বলেছেন ৷ যারা এই আগুনের দাউ দাউ করে ঝুলে প্রাণ ত্যাগ করেছে৷ তাদের হয়তো এই প্রশ্নটা থেকে যাবে এভাবে আর কতো৷ আমিও গতকাল সো শেষ করে যখন খবরে দেখলাম হতাশ ৷
ঈশ্বরের কাছে হাজার হাজার প্রার্থনা আপনার যান নি ৷ না হলে জানি না কি হতো ৷ আমার ও একজন পরিচিত সে কিছু দুরে থাকে ৷ সেও প্রায়ই যায় রাতের খাবার খেতে যায় ৷ কিন্তু গতকাল যায় নি ৷ সে আমায় ভিডিও কলে দেখিয়েছে অঙ্গনি কান্ডের এর বাস্তব চিত্র৷

যাহোক দিনশেষে ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে আপনারা যান নি ৷

 5 months ago 

সত্যি ভাইয়া এই ঘটনাগুলো যখন ঘটে তখন শুধু হয়তো আমরা আফসোস করি। কিন্তু এরপর আর সঠিক সমাধান খুঁজে বের করা হয় না। এভাবেই হয়তো আবারও সময়ের সাথে আমরা সবকিছু ভুলে যাই। আবারো নতুনভাবে সেই সব অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা আমাদের সামনে আসে।

 5 months ago 

বড় বাঁচা বেঁচে গেছেন ভাই!! নইলে কী অবস্থাটাই না হতো!! আসলে আমরা এমন একটা দেশে বাস করি, যেখানে জীবনের নিরাপত্তা যেন একটা হাস্যকর শব্দ মাত্র! আমিও এই খবরটা কিছুতেই হজম করতে পারছি না এখনো পর্যন্ত। কী পরিমাণ কষ্ট পেতে পেতে মানুষ গুলো পুড়ে মারা পড়েছেন!! চিন্তাও করতে গায়ে কাটা দেয়! সৃষ্টিকর্তা সকলের সহায় হউন। এমন মৃত্যু কখনো কারোর না হউক।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

আমিও এটাই ভাবছি, আপনারা গতকাল রাতে সেই বিল্ডিংয়ে খেতে গেলে কি একটা অবস্থা হতো। যাইহোক আল্লাহ আপনাদেরকে নেক হায়াত দান করুক। আসলে আমাদের দেশের কোনো জিনিসের সুষ্ঠু বিচার হয় না। কাউকে কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না। একের পর এক অগ্নিকাণ্ড ঢাকা শহরে ঘটেই চলেছে। কিন্তু এই পর্যন্ত তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা তো জীবনটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘুরছি সারাক্ষণ। কখন কি হয়ে যাবে আসলেই বলা মুশকিল। যাইহোক যারা এই অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন,তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 4 months ago 

আসলেই অনেক দুঃখজনক একটি ঘটনা আমিও নিউজটি দেখে অবাক হয়েছিলাম। কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে গিয়ে ৪৩ জন মানুষ আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছে যেটা লোভহর্ষক ঘটনা। যেটা ঢাকা শহরে মাঝে মাঝেই আগুনে পুড়ে অনেক মানুষ মারা যায় । যারা ভিতরে ছিল তারাই এই ভয়াবহতার বিষয়টি ভালই উপলব্ধি করতে পেরেছে। যারা মারা গেছে তাদের জন্য দোয়া করি যারা বেঁচে আছে তাদের জন্য দোয়া করি যেন সুস্থ থাকে। তাছাড়া কিছুই করার নেই বাংলাদেশে গাফিলতির কারণে সকল দুর্ঘটনা।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 62835.77
ETH 3392.04
USDT 1.00
SBD 2.50