২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ দলের প্রাপ্তি ও সমর্থকদের চিন্তাভাবনা।
কিন্তু সেই চিন্তা ভাবনায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলো ঠিক বিশ্বকাপের দল ঘোষণা সময়। যখন তামিম ইকবালকে বাদ দেয়া হলো। বাংলাদেশের দীর্ঘদিন ধরেই তেমন কোন ভালো ওপেনিং জুটি গড়ে ওঠেনি। আমরা অনেকদিন থেকে আশা করছিলাম লিটন দাস এবং তামিম ইকবাল মিলে ভালো একটি ওপেনিং দুটি উপহার দেবে দেশকে। কিন্তু লিটন দাসের ধারাবাহিকতার অভাবের জন্য সে আশায় গুড়ে বালি। তারপরেও আশা করেছিলাম এই বিশ্বকাপে তামিম ইকবাল এবং লিটন দাসকে ওপেন করতে দেখা যাবে।
পরবর্তীতে কি হয়েছে সেটা আমরা সকলেই জানি। সাকিব আল হাসানের সাথে তামিম ইকবালের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পরতে হয়েছে। যাই হোক তারপরেও আশা করেছিলাম হয়তো যে সমস্ত প্লেয়াররা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছে তারা সবাই মিলে ভালো কিছু করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচটি জেতা ছাড়া বাংলাদেশ এই বিশ্বকাপে আর ভালো কিছুই করতে পারেনি। বরং একের পর এক হতাশা উপহার দিয়ে গিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের।
তামিমকে দলে না নেয়াটা যে কত বড় ভুল সিদ্ধান্ত হয়েছে এখন এটা বাংলাদেশের প্রত্যেকটা ক্রিকেটপ্রেমী বুঝতে পারছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তামিম ইকবালকে নেয়ার পক্ষপাতি ছিলাম এই কারণে যে। ইন্ডিয়াতে যে ধরনের পিচে খেলা হচ্ছে এই ধরনের পিচে তামিম ইকবাল বরাবরই ভালো পারফর্ম করে। সেই কারণে যদি তামিম ইকবাল দলে থাকতো তাহলে হয়তো বাংলাদেশ এ বিশ্বকাপে আরো ভালো করতে পারতো। শুধু যে এখানে সমস্যা তা নয়। সমস্যা দেখা যাচ্ছে তরুণ যেসব প্লেয়ারদের উপরে ভরসা করে দল গঠন করা হয়েছিলো তারা কেউই এখন পর্যন্ত পারফর্ম করতে পারেনি।
আজকে একজনের ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ার পরে বুঝতে পারলাম আসলে আমাদের চিন্তা ভাবনাতেই অনেকটা ভুল রয়েছে। কারণ আমরা ধরেই নিয়েছিলাম ইন্ডিয়া পাশের দেশ বলে সেখানকার সবকিছু আমাদের চেনা হবে। কিন্তু আপনারা কেউ বলতে পারেন গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ দল ইন্ডিয়ায় কটা ম্যাচ খেলেছে? ইন্ডিয়ার কোন কোন ভ্যেনুতে খেলার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের এই দলের প্লেয়ারদের আছে? সাকিব আল হাসান এবং মুস্তাফিজ বাদে আর কারোরই ইন্ডিয়াতে খেলার তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাছাড়া সাকিব ও তামিম ইসুতে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। একদল সাকিবের পক্ষে থাকলেও আর একদল প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে চাইছে যেন বাংলাদেশ এই বিশ্বকাপে খারাপ করে। এতোটা বাজে চিন্তা ভাবনা যে কোনো ক্রিকেট প্রেমি করতে সেটা আমি না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। কারণ নিজের দেশের খারাপ চাইতে পারে এমন মেন্টালিটি থাকলে দলের কাছ থেকে আসলেই কখনো ভালো কিছু পাবেন না।
বাংলাদেশী ক্রিকেটপ্রেমী এবং মিডিয়াও এই দলটার উপরে ব্যাপক চাপ তৈরি করেছে। এটাও একটা কারণ বাংলাদেশের এই বিশ্বকাপে খারাপ করার পেছনে। তাছাড়া আপনারা যদি চিন্তা করে দেখেন বাংলাদেশ এ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত যাদের সঙ্গে ম্যাচগুলো হেরেছে তারা সবাই শক্তির বিচারে বাংলাদেশ থেকে অনেক এগিয়ে। এখন সামনে যদি বাংলাদেশ নেদারল্যান্ড বা শ্রীলংকার কাছে হারে তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। বাদ বাকি যে দলগুলোর সাথে বাংলাদেশের খেলা তারা সবাই বাংলাদেশের থেকে কাগজে-কলমে অনেক শক্তিশালী দল। তার মানে আমি এটা বলছি না যে বাংলাদেশের জেতার কোনো সুযোগ নেই বা যেটা উচিত ছিল না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশ যে ধরনের উইকেটে খেলে অভ্যস্ত ইন্ডিয়াতে গিয়ে তাদেরকে খেলতে হচ্ছে সম্পূর্ণ অন্য ধরনের উইকেটে। যেখানে বাংলাদেশে ২৩০/২৪০ রান হলে ফাইটিং স্কোর ধরা হয়। সেখানে ইন্ডিয়ার যেই পিচ গুলোতে বাংলাদেশ খেলছে সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৩০০/৪০০ পর্যন্ত রান হয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের পিচে খেলার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের খুব একটা বেশি নেই।
যার ফলে এখন থেকে আমাদেরকে বাস্তবসম্মত চিন্তা ভাবনা করতে হবে। আর যাই হোক না কেন আমাদের কখনোই এমন কোন আচরণ বা কাজ করা উচিত না যাতে দলের মন মানসিকতা ভেঙ্গে যায়। আমাদের সবসময় উচিত দলকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া একজন সাপোর্টার হিসেবে। একজন ভালো সাপোর্টারের তো সেটাই করার কথা। আমরা তামিম ইকবালকে সাপোর্ট করতে গিয়ে সাকিবকে শত্রু বানিয়ে ফেলছি। কিন্তু আমরা ভুলে গিয়েছি এই দুজনই বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। যাইহোক আশা করব বাদবাকি ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশ তাদের সামর্থ্য অনুসারে ভালো খেলবে এবং অন্তত দুটো ম্যাচ জিতবে। তাহলেই বাংলাদেশ দলের সমর্থক হিসেবে আমি খুশি।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
একদম ঠিক বলেছেন ভাই, সাকিব এবং মুস্তাফিজুর রহমান ছাড়া ভারতের মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা নেই আমাদের দলের কারোরই। তবে তামিম থাকলে আশা করি ভালো কিছুই হতো। তাওহীদ হৃদয়ের কাছ থেকে ভালো পারফরম্যান্স আশা করেছিলাম। সে ভালো ফর্মে ছিলো। শ্রীলংকা এখন যে ফর্মে রয়েছে, তাদের বিপক্ষে জিততে হলে অবশ্যই আমাদের টিমের বেশ কয়েকজনকে ভালো পারফর্ম করতে হবে। তবুও আমি আশাবাদী পাকিস্তান,শ্রীলংকা এবং নেদারল্যান্ড এর বিপক্ষে ভালো কিছু হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের উচিত যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাদের দলকে সাপোর্ট করা। যাইহোক পোস্টটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো ভাই। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
বিশ্বকাপের মতো আসরে অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অনেক। যেটা তখন বাংলাদেশের নির্বাচক রা বুঝে নাই। তামিমকে রেখেছে স্কোয়ার্ডের বাইরে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ সেটা ঠিকই প্রমাণ করে দিয়েছে। দুই যুগ আগে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া দলের থেকে যদি আমরা একটা শিরোপা আশা করি বা বিশ্বকাপে ভালো ফলাফল আশা করি সেটা আমাদের দোষ না। দোষ তাদের যারা আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না।