দীর্ঘদিন পর গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা।

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


বেশ কিছুদিন থেকে পরিকল্পনা করছিলাম বাড়িতে যাওয়ার জন্য। তবে বিভিন্ন সমস্যার কারণে আর সে পরিকল্পনাটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়ে উঠছিলো না। এমনিতে আমার গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয় খুবই কম। বছরে হয়তো একবার বার দুবার। বিশেষ কোনো কাজ না থাকলে সাধারণত গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয় না। সেখানে না যাওয়ার একটি কারণ হচ্ছে আমাদের গ্রামের বাড়িতে এখন আত্মীয়-স্বজন কেউই থাকে না। বাড়িতে একজন কেয়ারটেকার রয়েছে দেখাশোনার জন্য। যদি চাচা চাচি বা চাচাতো ভাই বোনেরা থাকতো তাহলে হয়তো সেখানে যাওয়ার একটা তাগিদ অনুভব করতাম। যাই হোক দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করার পর শেষ পর্যন্ত গতরাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক সকালে উঠে নাস্তা করেই গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিলাম। আমাদের শহরের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি দূরত্ব ৪৩ কিলোমিটার। প্রথমে আমাদের শহর থেকে বাসে করে আমাদের গ্রামের কাছাকাছি একটি জায়গায় গিয়ে নামতে হয়। তারপর সেখান থেকে অটো রিক্সা বা ভ্যানে করে আমাদের গ্রামে যেতে হয়।

IMG_20240525_083934.jpg

তবে সমস্যা হচ্ছে শহর থেকে যে বাস গুলি যায় তার বেশিরভাগই লোকাল বাস। যার ফলে এই লোকাল বাস গুলো মাত্র এই ৪০ কিলোমিটার রাস্তা যেতে দেড় ঘন্টা সময় লাগিয়ে দেয়। যার ফলে আমি চেষ্টা করি লোকাল বাসে না গিয়ে ডাইরেক্ট বাসগুলিতে উঠতে। কারণ ডাইরেক্ট বাসগুলিতে উঠতে পারলে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ মিনিটের ভেতর আমি পৌঁছে যেতে পারি। সকালে আমি ফজরের নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নাস্তা করে তারপর বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কিন্তু সেখানে পৌঁছে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরও কোন ডাইরেক্ট বাসের দেখা পেলাম না। ডাইরেক্ট বাসের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে একটা লোকাল বাস ছেড়ে দিলাম। শেষ পর্যন্ত চিন্তা করলাম যদি আরো কিছুক্ষণ আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাহলে সেই একই সময় লেগে যাবে। সেজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিলাম সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লোকাল বাসে উঠে যাওয়ার জন্য। চিন্তা ভাবনা করে দেখলাম সকালের সময়টা লোকাল বাস খুব একটা বেশি দেরি করবে না। হয়তো কিছুটা তাড়াতাড়িই যেতে পারবো। এই চিন্তা করেই আমি লোকাল বাসে উঠে বসলাম। আমি উঠে বসার কিছুক্ষণের ভেতরেই বাস ছেড়ে দিলো।


IMG_20240525_083949.jpg

অনেক ভোরে ঘুম থেকে ওঠার কারণে বাসের ভেতর আমার ঝিমুনি এসে গিয়েছিলো। এমনিতেও আমার বাসে উঠলে ঘুম আসে। এক পর্যায়ে আমি ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। কিন্তু আমাদের এলাকার কাছাকাছি পৌঁছাতেই আমার ঘুম ভেঙে গেলো। বাস থেকে যখন নামলাম তখন দেখি এক ঘন্টার মতো সময় লেগেছে সেখানে পৌঁছতে। তারপর সেখান থেকে একটা অটোরিক্সা করে আমাদের গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। গ্রামে পৌঁছে আমাদের জমি জমা দেখাশোনা করে যেই লোকটা তার সাথে কিছু কথাবার্তা বলে আমি যে কাজের জন্য গিয়েছিলাম সেই কাজটা শেষ করলাম। ইচ্ছা ছিলো কিছু আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করবো। কিন্তু এক চাচতো ভাই কে ফোন দিলে জানতে পারলাম সে আজকে সকালেই শহরে গিয়েছে। যাইহোক কাজ শেষ করার পরে আমি আমাদের বাড়ির উপরে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম বাড়িঘর মোটামুটি পরিষ্কার রয়েছে। যে ছেলেটাকে রাখা হয়েছে তাকে বাড়িতে পেলাম না। তার স্ত্রীকে দেখলাম রান্নার আয়োজন করছে।


IMG_20240525_083849.jpg

IMG_20240525_083839.jpg

তাদের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে ঘুরে ফিরে বাড়ির পুরো এরিয়াটা দেখতে লাগলাম। আসলে যখনই বাড়িতে যাই তখনই নস্টালজিক হয়ে যায়। আমাদের বাড়িতে এক সময় প্রচুর লোকজন ছিলো। বাপ, চাচা, ফুফুরা দশ ভাইবোন। তারপর ছিলো তাদের ছেলেমেয়েরা। সব মিলে আমরা যখন কোন উৎসবে বাড়িতে যেতাম তখন দারুণ মজা হোতো। এক সময় আমাদের এই বাড়িটা লোকে ভরপুর ছিলো। আর এখন কি রকম পরিত্যক্ত বাড়ির মত পড়ে রয়েছে। দেখলেই খারাপ লাগে। যাইহোক বাড়িতে কিছুটা সময় কাটিয়ে আমি আমার বাবার কবর জিয়ারত করে চলে গেলাম আমাদের গ্রামের বাজারের উপরে। সেখানে আমাদের অন্য আরেক চাচাতো ভাইয়ের সাথে কিছু কথাবার্তা বলে আমি বাসার দিকে রওনা দিলাম। তবে ফেরার সময় আমি ডাইরেক্ট গাড়িতে এসেছিলাম। যার ফলে সকালে রওনা দিয়ে বেলা ১০ টার ভেতরে আমি বাসায় ফিরে আসতে পেরেছি। প্রচন্ড এই গরমে ভেতরে আমি ইচ্ছা করেই অনেক সকালে রওনা দিয়েছিলাম। যাতে করে বেলা খুব একটা বেশি হওয়ার আগেই বাসায় ফিরতে পারি। দীর্ঘদিন পর গ্রামের বাড়িতে ঘুরেফিরে বেশ ভালোই লাগলো।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসHONOR 90
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানফরিদপুর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 months ago 

আপনি যে সকাল 10 টার মধ্যে বাসায় ফিরে আসতে পেরেছিলেন এটা শুনে বেশ ভালো লাগলো।কারণ এই প্রচণ্ড গরমে যদি একটু বেশি বেলা করে বাইরে থাকা যায় তবে কঠিন অবস্থা হয়ে যায়।সময়ের সাথে সাথে একদিন আমরা সবাই হারিয়ে যাবো।সব কিছু পরে রবে শুধু থাকবনা আমরাই।আপনার বাবার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

 2 months ago 

আপনার মতো আমার দাদা বাড়ির অবস্থা। এতো এতো মানুষ ছিল বাড়িতে।এখন বাড়িতে কেউ নেই।সবাই শহরে থাকে।বাড়ি নিরিবিলি। তাই ইচ্ছে থাকলেও যাওয়া হয় না।আপনি লোকাল বাসে গেলেন।বাসে ঘুমিয়ে পরা বিপদ।আপনার যেহেতু ঘুমের অভ্যাস তাই ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর যে ১০ টার মধ্যে চলে আসতে পেরেছেন এটাই ভালো। কারন বাইরে যে পরিমান গরম।আপনার শেয়ার করা অনুভূতি গুলো পড়ে ভালো লাগলো ভাইয়া।

 2 months ago 

আসলে গ্রামে গেলে সবাই অন্যরকম ফিল হয়,এখন তো সময়ের অভাবে অনেকেরই গ্রামে যাওয়ার সময় হয় না।অথচ একটা সময় কোন প্রোগ্রামে একএিত হতো।ভাইয়া আপনার গ্রামের বাড়ির অভিজ্ঞতা পড়ে বেশ ভালো লাগলো।ধন্যবাদ

 2 months ago 

আসলেই ভাইয়া, আত্মীয়-স্বজন না থাকলে গ্রামের বাড়িতে প্রয়োজন ছাড়া সেভাবে যাওয়া হয় না। আমরাও আমাদের গ্রামের বাড়িতে যাই না কারণ কেউই থাকে না সেখানে। প্রায় ৩ বছর আগে একবার গিয়েছিলাম। তবে এই জায়গা গুলো তে গেলে আসলেই অন্যরকম একটা অনুভূতি পাওয়া যায়। ফটোগ্রাফি গুলো দেখে ভীষণ ভালো লাগলো। পুকুরে তো দেখছি অনেক পদ্ম ফুল রয়েছে। কিছুটা সময় কাটিয়েছেন সেখানে। আপনার বাবার কবর জিয়ারত করেছেন। মুহূর্তগুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 months ago 

সকাল সকাল গ্রামের বাড়িতে গিয়ে, কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার আইডিয়াটা দারুণ ছিলো ভাই। নয়তো এই গরমে অবস্থা একেবারে খারাপ হয়ে যেতো। যাইহোক বাড়িতে লোকজন না থাকলে আসলেই যেতে ইচ্ছে করে না। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে চমৎকার কিছু ফটোগ্রাফি ক্যাপচার করেছেন ভাই। গাছে তো দেখছি অনেক গুলো কাঁঠাল হয়েছে। এমন খোলামেলা জায়গায় সময় কাটাতে ভীষণ ভালো লাগে। সবমিলিয়ে পোস্টটি বেশ উপভোগ করলাম ভাই। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 months ago 

গ্রামে গেলে একটু ঘুরতে মন চাই। আমার তো বেশ ভালো লাগে যেহেতু ছোটকাল শৈশবকাল সবকিছু গ্রামে কেটেছে । শেষমেষ আপনি গ্রামে গেলেন প্রয়োজনীয় কাজটা ছেড়ে নিলেন। আর আপনাদের বাড়ির পাহারাদার ভালো শুনে বুঝতে পেরেছি। এভাবে যদি কাউকে রাখা যায় গ্রামের বাড়ি পাহারা দিতে। তাহলে ঘরগুলো দেখা শোনা করতে পারে নষ্ট হয়ে যায় না। সুন্দর একটা মুহূর্ত আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করলাম ভালো লাগলো।

 2 months ago 

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের গ্রামের বাড়ির এই অবস্থা। সবাই চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গাই চলে গিয়েছে লেখাপড়ার জন্য বাইরে আছে আর গ্রামের বাড়ি একেবারে ফাঁকা। বেশ দারুণ লাগল আপনার গ্রামের বাড়ির কথাটা শুনে। তবে আমি বাসে উঠলে আমার কখনোই ঘুম আসে না। আর লোকাল বাসগুলো ঐরকম করবেই এটা স্বাভাবিক।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 65306.74
ETH 3488.89
USDT 1.00
SBD 2.51