ভোরের আলোয় বন্ধুদের সাথে পদ্মার চর ভ্রমণ (শেষ পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক

পদ্মার চরে পৌঁছে আমরা প্রথমে একটি জায়গায় বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। আমরা যেখানে বসেছিলাম সেখানে একটি দোকান ছিলো। সেই দোকানে চরের মানুষজন চা খেতে আসতো। আমরা সেখানে বসে বিশ্রাম নেয়ার সময় আমাদের দুজন সহযাত্রী দেখতে পেলো সামনে একটি খই ফলের গাছ। তারা গাছে পাকা খই ঝুলে থাকতে দেখলো। এটা দেখে তারা কোথা থেকে যেন একটা লাঠি এনে খই পাড়তে শুরু করলো। তাদের ভেতরে একজন জানালো সে দীর্ঘদিন পরে খই ফল গাছ দেখেছে। আমরা সবাই বসে বসে তাদের খই পাড়া দেখছিলাম।

IMG_20240503_065541.jpg

IMG_20240503_065957.jpg

বেশ কিছুক্ষণ এইভাবে কাটানোর পরে আমি ঘড়ি দেখলাম। তারপর তাদেরকে বললাম একটু পরে কিন্তু সূর্যের তাপ বেড়ে যাবে। যার ফলে আমাদেরকে তাড়াতাড়ি ঘোরাফেরা শেষ করা দরকার। সেই সাথে আমার বন্ধু শোভন বললো আসলেই আমাদেরকে তাড়াতাড়ি চরের ভেতরে যাওয়া দরকার। না হলে আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি সেটা আজকে আর হবে না। মূলত শোভন এসেছিল চর থেকে গরুর টাটকা দুধ কিনতে। সেজন্য সে হাতে করে ৮+৮=১৬ লিটারের দুটো পানির বোতল নিয়ে এসেছিলো। যাই হোক আমি তাড়া দেয়ার পরে আমার সহযাত্রীরা খই পাড়া বাদ দিলো। তারপর আমরা সবাই মিলে হেঁটে আগাতে লাগলাম। প্রথম উদ্দেশ্য ছিল এর আগের দিন তারা যেই বাড়ি থেকে গরুর দুধ কিনেছিল সেই বাড়িতে যাওয়া। সেখান থেকে গরুর দুধ কেনা হলে তারপর আমরা আরো সামনের দিকে ঘুরতে যাবো। চরের ভেতরে চলাফেরা করার জন্য দু'রকমের বাহন আমি দেখতে পেলাম। একটি হচ্ছে মোটরসাইকেল আরেকটি হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। তবে ঘোড়ার গাড়িগুলো সাধারণত মালপত্র আনা নেয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। আর মোটরসাইকেলে করে মানুষজন যাতায়াত করে। পদ্মার চরে পৌঁছে অনেকগুলো মোটরসাইকেল দাঁড়ানো দেখতে পেলাম। এরা মূলত যাত্রী আনা নেয়ার কাজ করে।


IMG_20240503_074348.jpg

IMG_20240503_075620.jpg

যাই হোক আমরা চরের রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে বেশ কিছুক্ষণ পর পৌঁছে গেলাম আমাদের প্রথম গন্তব্যে। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা জানালো তাদের কাছে এতোটা দুধ হবে না। তখন আমরা চিন্তা করতে লাগলাম তাহলে আমাদের আরো সামনে যেতে হবে। এর ভেতরে সেই বাড়ি পৌঁছে দেখতে পেলাম তাদের বাড়িতে নানার রকমের ফলের গাছ রয়েছে। বাড়িটার পেছন দিকে রয়েছে খোলা মাঠ আর বাড়িটার চারপাশ দিয়ে বিভিন্ন রকম ফলের গাছ লাগানো। যে ধরনের গ্রামীণ পরিবেশ আমরা সবচাইতে বেশি পছন্দ করি বাড়িটা দেখে ঠিক তেমন মনে হচ্ছিলো। আমরা সেখানকার গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে ঠান্ডা হাওয়া খেতে লাগলাম। পেছনের খোলা মাঠ থেকে হালকা ঠান্ডা বাতাস আসছিলো। গাছের ঠান্ডা ছায়ায় দাঁড়িয়ে সেই ঠান্ডা হাওয়ায় আমাদের শরীর জুড়িয়ে যাচ্ছিলো। যাই হোক বেশ কিছুক্ষণ সেই বাড়িতে কাটানোর পরে আমরা আরো সামনের দিকে রওনা দিলাম।


IMG_20240503_081109.jpg

কিছুদূর আগানোর পরে আমি রাস্তায় কিছু ভেড়া দেখতে পেলাম। তখন আমি আমার সহযাত্রীদের প্রস্তাব দিলাম যে আমরা কয়েকজন মিলে একটা ভেড়া কিনি। আমার সহযাত্রীরা সাথে সাথে আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলো। পরবর্তীতে আমরা পরিকল্পনা করলাম পরবর্তী সপ্তাহে এসে আমরা চর থেকে একটা ভেড়া কিনে নিজেদের ভেতর ভাগ করে নেবো। এই পরিকল্পনা করতে করতে আমরা আগাতে লাগলাম। কিছু দুর আগানোর পরে পথের ভেতরে এক বৃদ্ধ চরবাসীকে দেখতে পেলাম মাথায় একটা বড় পাত্র নিয়ে নদীর ঘাটের দিকে যাচ্ছে। আমরা যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম পাত্রে কি রয়েছে? তখন তিনি মাথা থেকে পাত্র নামিয়ে দেখালো পাত্রে কলা এবং বেল রয়েছে। আমার সাথে থাকা বন্ধু-বান্ধবেরা দু তিন জন তার কাছ থেকে কলা খেলো। তারপর আমরা আবার সামনের দিকে আগাতে লাগলাম। মূলত আমরা সামনের দিকে যাচ্ছিলাম আরো কিছু দুধ জোগাড় করতে।


IMG_20240503_071718.jpg

IMG_20240503_074555.jpg

সেই সাথে আমার সহযাত্রীদের ভেতর একজন জানালো তারা এর আগের সপ্তাহে যখন চরে এসেছিলো তখন একটা বাড়িতে ভেড়া দেখতে পেয়েছে। তাই আমার উদ্দেশ্য ছিল সেই বাড়িতে গিয়ে ভেড়ার দরদাম করে আসা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের কোন আশা আর পূর্ণ হয়নি। কারণ সেই বাড়িতে গিয়ে দেখতে পেলাম যে মহিলা ভেড়ার মালিক তিনি বাড়িতে নেই। আর সেদিন তাদের দুধ আগেই বিক্রি করা হয়ে গিয়েছিলো। যার ফলে আর দুধ কেনা হয়নি। সেই বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই আমি সকলকে প্রস্তাব দিলাম চলো এখন মোটরসাইকেলে করে আমরা ঘাটের দিকে ফিরে যাই। আমার প্রস্তাবে সবাই রাজি হওয়ায় আমরা মোটরসাইকেলে করে ঘাটের দিকে ফিরে গেলাম। তারপর খেয়া নৌকা পার হয়ে সবাই বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। এভাবেই সেদিনের ঘোরাফেরা শেষ হয়েছিলো।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসHONOR 90
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানফরিদপুর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 4 months ago 

শুনে খারাপ লাগলো যে আপনাদের একটা পরিকল্পনাও বাস্তবিক রূপ নেয়নি। আসলে এরকম পরিকল্পনা করে বা উদ্দেশ্য নিয়ে কোন জায়গায় গেলে সেখানে সেই লক্ষ্য পূরণ না হলে মনটা বেজায় খারাপ হয়ে যায়। যাই হোক বন্ধুবান্ধবদের সাথে সুন্দর ভাবে ঘোরাঘুরি করতে পেরেছেন এটাও একটা ভালো থাকার সুন্দর দিক। তবে আশা করছি পরবর্তীতে গেলে আপনার ভেড়া কেনার ইচ্ছা এবং দুধ কেনা দুটোই পূরণ হবে। তবে হয়তো ভাইয়া আরো একটু সকাল সকাল সেখানে পৌঁছাতে হবে আপনাদের।

 4 months ago 

বাহ বেশ চমৎকার সময় কাটালেন তাহলে ভাইয়া সবাইকে নিয়ে পদ্মার চরে। যেখানে গরুর লালন পালন বেশি হয় সেখানে ফ্রেশ দুধ পাওয়া যায় একদম খাঁটি। আর দামেও কম পাওয়া যায়। তবে এখন গ্রামেও জিনিস কিনতে গেলে সেখানে অনেক বেশি দাম বলে থাকেন। খই জিনিসটা আমি কি জিনিস চিনিনাই ভাইয়া। যদি দেখতাম তাহলে চিনতে পারতাম মনে হয়। আপনারা অনেক ক্লান্ত হয়ে গেলেন ঘুরে ঘুরে প্রতিটি বাড়িতে দুধ পাওয়া যায় কিনা দেখলেন। সবাই অনেক আনন্দ করলেন গ্রামে ঘোরাঘুরি করে। অনেক সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি ও শেয়ার করলেন গ্রামীন দৃশ্যের। পুরো ব্লগটি পড়ে অনেক আনন্দ পেয়েছি।

 4 months ago 

ভাইয়া এর আগেও আপনার পোস্টের মাধ্যমে পদ্মা চরের অনেক গল্প পড়েছি। আমার সেখানে যেতে খুব ইচ্ছে করে। এভাবে নদীর পাড় ঘোরাঘুরি করতে ভালোই লাগে। ভাইয়া খই ফলের নাম শুনে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। এই ফলের নাম শুনেছি কিন্তু কখনো খাওয়া হয়নি আর দেখাও হয়নি। আমি ভেবেছিলাম যেহেতু আপনার কাছে এই ফলের নাম শুনেছি তাহলে দেখতে পাবো। কিন্তু আপনি তো খই ফলের কোনো ছবিই দিলেন না। যাই হোক যেই উদ্দেশ্য নিয়ে এত গরমে প্রচন্ড রোদের মধ্যে আপনারা এত কষ্ট করে গিয়েছেন আর সেখানে গিয়ে আপনাদের আশা পূর্ণ হয়নি জেনে খারাপ লাগলো। ভাইয়া হাল ছেড়ে দেবেন না কিছু দিন পর আবার যাবেন আর সেদিন অবশ্যই সার্থক হবেন। আপনার সেই পোস্ট দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

 4 months ago 

খই ফলের গাছ কখনো দেখিনি ভাইয়া। তবে বুঝতে পারছি এটা কোন ভালো ফলই হবে। এত কষ্ট করে এতদূর পর্যন্ত গিয়ে দুধ পেলেন না আর ভেড়ার দরদাম করতে পারবেন না সেটা ভাবতেই খারাপ লাগছে। আর ফেরার সময় মোটরসাইকেলে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভালোই করেছেন ভাইয়া। যাওয়ার সময় খুব সহজেই দেওয়া যায়। আর এতটা পথ ফেরার সময় ভীষণ খারাপ লাগে।

 4 months ago 

আমরা এই ফলকে জিলাপি ফল বলে থাকি। জিলাপি ফল বা খই ফল খেতে কিন্তু দারুণ লাগে। ছোটবেলায় অনেক খেয়েছি জিলাপি ফল। যাইহোক শেষ পর্যন্ত দুধ কিনতে না পারলেও, আপনারা কিন্তু অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় ঘুরাঘুরি করেছেন। ফটোগ্রাফি গুলো দেখেই বুঝা যাচ্ছে, পুরোটা সময় আপনারা বেশ উপভোগ করেছেন। ভেড়া কিনে কিন্তু পিকনিক করতে পারেন ভাই। ভেড়ার মাংস খেতে বেশ ভালোই লাগে। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

 4 months ago 

আমি যখন খুব ছোট ছিলাম তখন এরকম বাবা-মার সাথে নদীর চরে ঘুরতে যেতাম। তবে বন্ধুবান্ধবের সাথে কোনদিন যাওয়া হয়নি। তবে ভাই আপনারা ঘোরাঘুরি করার পাশাপাশি দুধ কেনা কিংবা ভেড়া কেনার যে উদ্দেশ্য নিয়ে গেছিলেন এটা কিন্তু একেবারে খারাপ নয়। ভালো জিনিস পাওয়া গেলে সেখান থেকে কিনে আনাটাই উচিত। তবে আপনার বন্ধু এত বড় বড় দুটো বোতল নিয়ে যাওয়ার পরেও যে দুধ কিনতে পারিনি, এটা একটু খারাপ লাগলো জেনে। তবে আপনারা যেখানে ঘুরতে গিয়েছেন সেখানকার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে কিন্তু মন ভরে গেল। বিশেষ করে ওখানকার যে কলা এবং কাঁঠাল এগুলো কিন্তু অনেক বেশি সুস্বাদু হয়।

 4 months ago 

খই ফল আপনি চেনেন দাদা...? আমি তো জানতাম এই নামটা শুধু আমাদের গ্রামেই প্রচলিত। যাইহোক, আপনারা আসলে নদীর চরে ঘুরতে গেছেন নাকি দুধ আর ভেড়া কিনতে গেছেন দাদা! হা হা হা..🤔🤭🤭 উদ্দেশ্য খারাপ না, ঘোরাঘুরি করার পাশাপাশি ভালো কোন জিনিস পাওয়া গেলে কিনতে দোষ কোথায়! যাইহোক, আপনারা দুধ কেনার উদ্দেশ্য নিয়ে গেলেও সেটা যে কিনতে পারেননি, এটা জেনে খারাপ লাগলো। তবে আপনাদের ঘোরাঘুরির কথা পড়ে বেশ ভালো লাগলো দাদা।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 58389.23
ETH 2521.57
USDT 1.00
SBD 2.35