পরিবার নিয়ে বাইরে খাওয়া-দাওয়ার অভিজ্ঞতা।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


কিছুদিন আগে ফেসবুক ব্রাউজ করতে গিয়ে হঠাৎ করে দেখতে পেলাম শহরে একটি নতুন রেস্টুরেন্ট হয়েছে। অনেকেই রেস্টুরেন্টের ডেকোরেশন নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছে। পোস্টটা দেখার পরেই মনে হচ্ছিল এই রেস্টুরেন্টটা থেকে একবার ঘুরে আসতে পারলে মন্দ হতো না। যদিও তারপরে আর এই রেস্টুরেন্টের খুব বেশি রিভিউ ফেসবুকে দেখিনি। বেশ কিছুদিন থেকেই চিন্তা করছিলাম পরিবার নিয়ে বাইরে থেকে খাওয়া-দাওয়া করে আসতে পারলে মন্দ হতো না। তাছাড়া আমরা প্রতি মাসেই দু-একবার বাইরে খাওয়া-দাওয়া করি। কিন্তু এ মাসে বিভিন্ন সমস্যার কারণে এবং অসুস্থতার কারণে এখন পর্যন্ত বাইরে যাওয়া হয়নি খাওয়া-দাওয়ার জন্য। তাছাড়া মেয়েটাও কয়েকদিন ধরে আবদার করছিলো বাইরে খেতে যাওয়ার জন্য। তাই আজ দুপুরের দিকে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিলাম রাতে বাইরে খেতে যাবো।

IMG_20230814_201845.jpg

তবে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বিকালের দিকে সিদ্ধান্তটা পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম। কারণ আজকে কাজের প্রচণ্ড প্রেসার ছিলো। তাই আমি আমার স্ত্রীকে বলেছিলাম আজকে না গিয়ে যদি কালকে যায় তাহলে কোন সমস্যা হবে কিনা? সে আমাকে বলল আমার তো কোন সমস্যা নেই। তোমার মেয়েকে রাজি করাতে পারো কিনা দেখো। তখন আমি বুঝতে পারলাম আজকেই যেতে হবে। কারণ মেয়েকে একবার কোন কথা দিলে সেই কথা না রাখলে বিপদ আছে। যাই হোক তারপরও আমি আমার কন্যার কাছে একবার প্রসঙ্গ টা তুলে দেখলাম কি বলে। কথাটা বলার সাথে সাথে সে রেগে অস্থির হয়ে গেলো। আমি বুঝতে পারলাম কোন অজুহাতেই কাজ হবে না। তাই আমি তাদের বললাম মাগরিবের নামাজের পরে আমরা বাইরে খেতে যাবো। আমি যখন নামাজ পড়তে যাব তখন তোমরা তৈরি হয়ে থাকবে। আমি এসেই রেডি হয়ে রওনা দেবো। আমার হাতে সময় আজকে খুবই কম। সেজন্য বেশিক্ষণ বাইরে থাকা যাবে না।

IMG_20230814_193959.jpg

যাই হোক আমি মাগরিবের নামাজ পড়ে এসে দেখি আমার মেয়ে তৈরি হয়ে বসে রয়েছে। তারপর আমি আর আমার স্ত্রী দুজনে তড়িঘড়ি করে তৈরি হয়ে রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। রেস্টুরেন্টটি আমাদের বাসা থেকে খুব একটা বেশি দূরে নয়। সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরত্বে হবে। যার ফলে ইঞ্জিন চালিত রিক্সায় করে সেখানে পৌঁছাতে খুব বেশি সময় লাগেনি। তবে সেখানে পৌঁছে আলো ঝলমলে রেস্টুরেন্টটা দেখে মন ভালো হয়ে গেলো। রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে দেখলাম আসলেই রেস্টুরেন্টটা দারুন করে সাজিয়েছে। ডেকোরেশন এর পেছনে তারা বেশ ভালো টাকা খরচ করেছে। আমরা রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে দেখতে লাগলাম বাইরে বসার কোন টেবিল খালি রয়েছে কিনা। তবে কোন টেবিল খালি না পেয়ে আমরা একটা বেঞ্চে কিছুক্ষণ বসলাম। রেস্টুরেন্টটাতে বসার জন্য দুই রকমের ব্যবস্থা রয়েছে। একটা হচ্ছে রেস্টুরেন্টের বিল্ডিং এর ভেতরে বসার ব্যবস্থা। আর রেস্টুরেন্টের সামনে খোলা জায়গাটাতে কয়েকটা টেবিল রাখা আছে। সেখানে বসেও খাওয়া দাওয়া করার ব্যবস্থা রয়েছে।

IMG_20230814_195212.jpg

আমরা দেখে শুনে ঠিক করলাম বাইরের কোন একটা টেবিলে বসতে হবে। কারণ বাইরের টেবিলে বসলে রেস্টুরেন্টের সৌন্দর্যটা ভালোভাবে দেখা যাবে। যাই হোক আমি আমার স্ত্রী কন্যাকে বসিয়ে রেখে কাউন্টারে গেলাম কোন টেবিল ফাঁকা রয়েছে কিনা সেটা জানার জন্য। সেখানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম একটি টেবিল খালি রয়েছে। পরে আমি আমার স্ত্রী কন্যাকে ডেকে নিয়ে সেই টেবিলে বসলাম। খেয়াল করে দেখলাম রেস্টুরেন্টের প্রতিটা টেবিলই লোকে পরিপূর্ণ। তবে তাদের ওয়েটারের সংখ্যা আমার কাছে কম মনে হোলো। কারণ আমরা সেখানে বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পরও দেখি কোন ওয়েটার অর্ডার নিতে আসছে না। কারণ যে অল্প কয়েকজন ওয়েটার তারা রেখেছে তাদের সকলেই প্রচন্ড ব্যস্ত। যাইহোক তারপরেও আমি বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করে একজন ওয়েটারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। তাকে বললাম টেবিলটা পরিষ্কার করে দিন আর একটা মেনু কার্ড দিন। সে সাথে সাথে টেবিলটা পরিষ্কার করে একটা মেনু কার্ড এনে দিলো। তারপর আমরা মেনু কার্ড দেখে খাবারের অর্ডার করলাম।

IMG_20230814_195217.jpg

সেই রেস্টুরেন্টটা ছিল মূলত কাবাব এবং ইন্ডিয়ান ফুডের রেস্টুরেন্ট। আমরা মেনু কার্ড দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম ইন্ডিয়ান একটা ডিশ ট্রাই করবো। আমরা অর্ডার করলাম বাটার টিক্কা মাসালা সেই সাথে টাংরি কাবাব। সাথে অর্ডার করলাম গার্লিক নান এবং বাটার নান আর ছিলো ড্রিংকস। এদের ব্যস্ততা দেখে মনে হচ্ছিলো খাবার পরিবেশন করতে অনেক দেরি হবে। তবে অবাক হয়ে খেয়াল করলাম তারা বেশ অল্প সময়ে টেবিলে খাবার পরিবেশন করলো। তবে পরিবেশন করার স্টাইল দেখে বুঝতে পারলাম সেখানকার ওয়েটাররা এখনো খুব একটা দক্ষ হতে পারেনি। কারণ আমাদের টেবিলে যখন খাবার সার্ভ করল তখনও টেবিলে প্লেট কাটা চামচ এগুলি দেয়নি। সাধারণত অভিজ্ঞ ওয়েটাররা আগে টেবিলে প্লেট, গ্লাস, কাটা চামচ, ছুরি এগুলো দিয়ে যায়। তারপর খাবার পরিবেশন করে। কিন্তু এখানকার ওয়েটার দেখলাম করেছে ঠিক তার উল্টো কাজ। যাই হোক টেবিলে খাবার পরিবেশন করতেই আমরা দু চারটে ছবি তুলে খাওয়া শুরু করলাম। কিন্তু আমরা যে দুটি খাবার অর্ডার করেছিলাম তারা প্রথমে দিয়েছিলো একটি খাবার আর সাথে নান। বাটার টিক্কা মাসালা পরিবেশন করেছিল আরো কিছুটা পরে। যার ফলে আর সেটার ছবি তুলতে পারিনি।

IMG_20230814_193956.jpg

যাই হোক আমরা প্রথমে চিন্তা করছিলাম পরিমানে কতটুকু দেবে? সেটাতে আমাদের হবে কিনা? আমি চাচ্ছিলাম আরো একটি ডিস অর্ডার করতে। তবে আমার স্ত্রী বাধা দিয়ে বলল আগেই অর্ডার করার প্রয়োজন নেই। আগে তারা খাবার পরিবেশন করুক। যদি পরিমাণ কম হয় তখন দেখা যাবে। তবে খাবার টেবিলে পরিবেশন করার পরে বুঝতে পারলাম পরিমাণ একেবারে কম নয়। আমার তো রীতিমতো খাবার শেষ করতে কষ্ট হয়েছিলো। যদিও আমার মেয়ে একেবারেই কম খেয়েছে। তবে আমি আর আমার স্ত্রী বেশ ভালোই খেয়েছি। তবে রেস্টুরেন্টটা দেখে যতটা ভালো মনে করেছিলাম তাদের খাবারের স্বাদ ততটা ভালো না। খাবারের স্বাদ ছিল মোটামুটি। তবে স্বাদ মোটামুটি হলেও খাবারের দাম ছিল বেশ ভালোই। যাই হোক খাওয়া দাওয়া শেষ হলে দ্রুত বিলমিটিয়ে সেখান থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। হাতে সময় থাকলে হয়তো সেখানে বসে কিছুটা সময় কাটাতাম। কিন্তু প্রচুর কাজ জমা হয়েছিলো হাতে। সেজন্যই সময় নষ্ট না করে দ্রুত বাড়ি চলে আসতে হোলো।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানচরকমলাপুর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

যতই যাই বলেন না কেন রেস্টুরেন্টের বাইরে পরিবেশটা কিন্তু বেশ। এরকম পরিবেশে বসে প্রিয়জনকে নিয়ে বা পরিবার-পরিজন নিয়ে অনায়াসে কিছুটা সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। যাইহোক রেস্টুরেন্টে গিয়ে বাটার টিক্কা মাসালা, টাংরি কাবাব, গার্লিক নান, বাটার নান আর ড্রিংকস। সবকিছুই তো ভাই আমার প্রিয় খাবার। বেশ সময়টাকে এনজয় করেছেন ভাইয়া। দোয়া রইল সমস্ত পরিবারের প্রতি।

 last year 

ফেসবুক পেজ দেখে আপনি নতুন রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন জেনে ভালো লাগলো।কারন নতুন জায়গায় গেলে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চার করা যায়।যদিও খাবারের স্বাদ তেমন ভালো ছিল না তবুও আশা করা যায় পরবর্তীতে ভালো হবে।আপনার মেয়ে নিশ্চয়ই অনেক খুশি হয়েছিল।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 last year 

ফেসবুক থেকে দেখে পরিবার নিয়ে খাওয়া -দাওয়া করতে নতুন রেস্টুরেন্টে গেলেন।পরিবেশটা কিন্তু চমৎকার। এমন পরিবেশে গেলে মন এমনিতেও ভালো হয়ে যায়। তবে তাদের খাবারের মান বেশী ভালো না বললেন।দামটা ও কম নয়।তারপরেও সবাইকে নিয়ে খুব সুন্দর সময় কাটিয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। কাজের চাপ না থাকলে আরো কিছু সময় হয়তো সেখানে থাকতেন।আপনার অনুভূতি গুলো পড়ে বেশ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য।

 last year 

নতুন রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করতে দারুণ লাগে। খাবারের ফটোগ্রাফি দেখে তো বেশ লোভনীয় লাগছে। রেস্টুরেন্টের ডেকোরেশন তো চমৎকার। এমন চাকচিক্য হলে তো দাম একটু বেশি হবেই। তবে নতুন রেস্টুরেন্টের খাবারের স্বাদ মোটামুটি হলে তো চলবে না। তাহলে কাস্টমারদের মনে নেগেটিভ ধারণা চলে আসবে। যাইহোক মোটামুটি ভালো সময় কাটিয়েছেন পরিবারের সাথে। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 58544.56
ETH 2629.02
USDT 1.00
SBD 2.44