চরের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দুই বন্ধুর অভিযান।

in আমার বাংলা ব্লগ6 months ago

৩১/১২

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পরদিন যথারীতি আমি ফেরদৌসকে বেলা আড়াইটার দিকে ফোন দিলাম সময় মত বের হওয়ার জন্য। তখন ফেরদৌস আমাকে জিজ্ঞেস করলো প্রদীপের সাথে কথা হয়েছে নাকি? আমি বললাম না এখনো কথা হয়নি। তখন ফেরদৌস আমাকে বলল প্রদীপকে ফোন দিয়ে কনফার্ম করতে। আমি তখন ফেরদৌসকে বললাম ঠিক আছে আমি প্রদীপের সাথে কথা বলে তোমাকে জানাচ্ছি। তারপর আমি বন্ধু প্রদীপকে ফোন দিলে সে বলল সে একটু শহরের বাইরে আছে। যার ফলে সে আজকে আমাদের সাথে যেতে পারবে না। তখন আমি ফেরদৌসকে বললাম প্রদীপ যাবে না চলো আমরা দুজনই গিয়ে ঘুরে আসি। ফেরদৌস তখন বলল ঠিক আছে। আমি তখন বললাম তুমি সোনালী ব্যাংকের মোড়ে চলে আসো। আমি ১৫ মিনিটের ভিতরে সেখানে পৌঁছাবো।

IMG_20231225_172053_1.jpg

IMG_20231225_154749.jpg

আমি তাড়াহুড়ো করে তৈরি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছে ফেরদৌসকে ফোন দিলে সে জানালো সে ইউসুফ ভাইয়ের দোকানে কেরাম খেলছে। আমি তখন ওকে বললাম তাড়াতাড়ি চলে আসো। এমনিতেই কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছে। ফেরদৌসের সাথে কথা বলার কয়েক মিনিটের ভেতরে ফেরদৌস সোনালী ব্যাংকে মোড়ে এসে উপস্থিত হোলো। তারপর সেখান থেকে আমরা একটা অটোরিকশা নিয়ে পদ্মা পাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। যেহেতু আমরা চরে যাবো তাই ফেরদৌসকে মোটরসাইকেল আনতে নিষেধ করেছিলাম। কারণ চরে যেতে হবে নৌকায় পার হয়ে। নৌকায় করে মোটরসাইকেল আনানেয়া করা খুবই ঝামেলার কাজ। আমরা পদ্মার পাড়ে অটো থেকে নেমে পদ্মার বুকে জেগে ওঠা চর দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। কারণ নদী এখন অনেক দূর চলে গিয়েছে। অনেক বড় একটা চর হেঁটে পারি দিয়ে তারপর নৌকা পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে।


IMG_20231225_161301.jpg

IMG_20231225_161310.jpg

আমরা ঘাটে পৌঁছাতেই দেখতে পেলাম একটি নৌকা ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। আমরা দুই বন্ধু সেটাতেই উঠে বসলাম। নৌকাতে অনেক লোক দেখে আমার চিন্তা হচ্ছিলো। কারণ এত লোকের ভারে যদি নৌকা ডুবে যায়? যাই হোক যেহেতু আমি অনেক বার চরে যাতায়াত করেছি তাই খুব একটা ভয় পাইনি। তাছাড়া নদীতে এখন পানি ও অনেক কম। নৌকায় ওঠার পরে ইঞ্জিন চালিত নৌকাটি ছেড়ে দিলো। অল্প কয়েক মিনিটের ভেতরেই আমরা ওপার পৌঁছে গেলাম। ওপারে গিয়ে আমরা নৌকা থেকে নেমে চরে নতুন তৈরি হওয়া নতুন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। অবশ্য একেবারে নতুনও বলা যায় না রাস্তাটা। কারণ বেশ কয়েক বছর হয়ে গিয়েছে রাস্তাটা তৈরি করা হয়েছে। দুই বন্ধু রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম আর গল্প করছিলাম। আর দুচোখ ভরে চরের সৌন্দর্য দেখছিলাম।


IMG_20231225_155209.jpg

IMG_20231225_155221.jpg

এই চরে এখনো জনবসতি অনেক হালকা। বেশ খানিকটা দূরে দূরে বাড়িঘর। এত সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখে ফেরদৌস বলতে লাগলো এরকম জায়গায় একটা জায়গা কিনে বাড়ি করতে পারলে ভালো হোতো। চারপাশে প্রচুর খোলামেলা জায়গা। বসবাস করার জন্য একেবারে আদর্শ পরিবেশ। আমিও ফেরদৌসের কথায় সায় জানালাম। আমরা হাঁটতে হাঁটতে গল্প করছিলাম এর ভেতর আসরের নামাজের সময় হয়ে গেলো। তবে আশেপাশে তাকিয়ে কোন মসজিদ দেখতে পেলাম না। তখন ফেরদৌস বললো সামনে একটা বাজার আছে ওখানে একটা মসজিদ আছে। তবে আমরা যেখানে ছিলাম সেখান থেকে তখনও সেই বাজারটা বেশ খানিকটা দূর। যেহেতু আমরা চরে এসেছি ঘোরাফেরা করার উদ্দেশ্যে তাই আমরা হেঁটেই সেখানে যাচ্ছিলাম। অবশ্য চরের মানুষজন বেশিরভাগ সময় ঘোড়ার গাড়ি না হয় মোটরসাইকেলে করে চলাফেরা করে। আমাদের পাশ দিয়ে মাঝে মাঝে কিছু মোটরসাইকেল চলে যাচ্ছিলো। আমরা মোটরসাইকেলে না উঠে হেঁটে চরে ঘুরছিলাম। তবে হাঁটতে হাঁটতে একসময় বেশ টায়ার্ড হয়ে পড়লাম। ততক্ষণে অবশ্য সেই বাজারে পৌঁছে গিয়েছিলাম।


IMG_20231225_172047.jpg

IMG_20231225_170534.jpg

সেখানে পৌঁছে ফেরদৌস একটি চায়ের দোকানে গিয়ে বসলো। আমি গেলাম নামাজ পড়তে। নামাজ পড়ে এসে বাইরে বের হয়ে দেখি ফেরদৌসকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। পরে ফেরদৌসকে ফোন দিলে সে জানালো পাশে একটা চায়ের দোকানে সে বসে রয়েছে। আমি সেই চায়ের দোকানে প্রবেশ করে দেখলাম ফেরদৌস বসে চা খাচ্ছে। ফেরদৌস তখন আমাকে জিজ্ঞেস করল চা খাবো কিনা? আমি সম্মতি জানালে ফেরদৌস আমার জন্য একটা চায়ের অর্ডার দিলো। অর্ডার দেয়ার কিছুক্ষণের ভেতরেই দোকানদার আমার হাতে এক কাপ চা দিয়ে গেলো। যেহেতু এখন সারা দেশে নির্বাচন চলছে। তাই আমি কোথাও গেলে সেখানকার নির্বাচনের পরিস্থিতি সম্বন্ধে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করি। দোকানে বসা এক মুরুব্বীকে দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনাদের এদিকে কোন ক্যান্ডিডেটের অবস্থা কেমন? তারপর তার সাথে আলাপ আলোচনা মাধ্যমে সেই এলাকার পরিস্থিতি সম্বন্ধে কিছুটা ধারণা পেলাম।


IMG_20231225_170526.jpg

IMG_20231225_165522.jpg

যাই হোক চা খাওয়া শেষ হলে আমি ফেরদৌসকে বললাম এখন আমাদের রওনা দিতে হবে। কারণ এখান থেকে ঘাটে পৌঁছাতেও বেশ খানিকটা সময় লাগবে। প্রথমে আমি চিন্তা করেছিলাম আমরা ফেরার সময় মোটরসাইকেলে করে ফিরবো। তবে কিছুক্ষণ রেস্ট নেয়ার পরে আবার হাঁটার এনার্জি ফিরে পেয়েছিলাম। যার ফলে দুই বন্ধু ঘাটের উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যার ঠিক কিছুটা আগে আমরা ঘাটে এসে পৌঁছালাম। দেখলাম আমরা পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগেই ওপার থেকে একটি নৌকা এপারে এসেছে। আমরা সেই নৌকাতে গিয়ে উঠে বসলাম। উঠে বসার কিছুক্ষণের ভেতরে নৌকাটা ছেড়ে দিলো ওপারের উদ্দেশ্যে। ওপারে পৌঁছে আমি মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম। তারপর আমরা পরিকল্পনা করলাম জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে আমরা ক্যাম্পিং করবো। অবশ্য ক্যাম্পিং এর ব্যাপারটা নির্ভর করছে আরো কিছু বন্ধু বান্ধবের ছুটি পাওয়ার উপরে। তারপর সেদিনের মতো আমরা ঘোরাফেরা শেষ করে যার যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।


আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানফরিদপুর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP[1000 SP](https://steemlogin.com/sign/delegateVestingShare
Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 6 months ago 

দুই বন্ধু মিলে তাহলে চরের সৌন্দর্য বেশ ভালোই উপভোগ করেছেন ভাই। ফেরদৌস ভাই বাইক না নিয়ে খুব ভালো কাজ করেছে। কারণ নৌকায় বাইক উঠাতে এবং নামাতে খুব ঝামেলা লাগে। যাইহোক দু'জন মিলে চরের মধ্যে বেশ ভালোই হাঁটাহাঁটি করেছেন। আসলে শীতের দিনে বেশিক্ষণ হাঁটলেও ততোটা খারাপ লাগে না। কিন্তু গরমের দিন একটু হাঁটলেই শরীর থেকে অনেক ঘাম বের হয় এবং ক্লান্ত লাগে অনেক সময়। আসলেই এমন খোলামেলা জায়গায় বাড়ি করে থাকতে খুবই ভালো লাগবে। তবে এসব জায়গায় থাকাটা ততোটা নিরাপদ না। কারণ চুরি এবং ডাকাতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যাইহোক সবমিলিয়ে এককথায় দুর্দান্ত সময় কাটিয়েছেন আপনারা দু'জন। হয়তো প্রদীপ ভাই থাকলে, তিনজন মিলে আরও মজা করতে পারতেন। যাইহোক এতো সুন্দর মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 57849.42
ETH 3122.29
USDT 1.00
SBD 2.43