আসন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় আপনি কি প্রস্তুত?

in আমার বাংলা ব্লগ6 months ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


ইদানিং কাজের চাপে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে যাওয়া হয় খুব কম। তবে সেদিন হঠাৎ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখে কিছুটা অবাক হলাম। একজন মানুষ আগামী দিনের দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কি কি করণীয় সেটা নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছেন। পোস্টে তেমন আহামরি কিছু উল্লেখ করেননি। তবে নিজের একটা পরিকল্পনা সেখানে সে শেয়ার করেছিলেন। সেই পরিকল্পনাটা দেখে আমার মনে প্রশ্ন জাগলো আসলেই কি আমরা সামনের দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত আছি? আপনাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে আমি কোন ধরনের দুর্যোগের কথা বলছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ফলে যে দুর্যোগ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে আমি সেটার কথাই বলছি। আপনারা খেয়াল করে দেখুন আমাদের ঋতুচক্রে ইতিমধ্যে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাবে। আগে আমরা যে সময়ে বৃষ্টিপাত দেখতাম সেই সময়ে আর পরিমাণ মতো বৃষ্টিপাত হবে না। আবার হঠাৎ করে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে রীতিমতো বন্যা হয়ে যাবে। শীতকালের ব্যাপ্তি ইতিমধ্যেই কমে গিয়েছে। অল্প কিছুদিন শীত থাকবে তবে সে শীতের তীব্রতা হবে অনেক বেশি আরো নানা রকম পরিবর্তন আসবে। আমাদের এই ছোট্ট দেশে বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে চাষের জমি অনেক কমে গিয়েছে।

IMG_20240106_154706.jpg

যদিও আমাদের আগের থেকে জমি প্রতি ফসল উৎপাদনের হার বেড়েছে। তার পরেও এই বিপুল জনসংখ্যার জন্য খাদ্যের পুরোপুরি যোগান আমাদের দেশের পক্ষে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেজন্য আমাদেরকে অন্য দেশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। আমাদের খাদ্য ব্যবস্থা অনেকটা আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছে। কিন্তু যাদের কাছ থেকে আমরা খাদ্য আমদানি করছি তারাও যখন আমাদের মতো সংকটে পতিত হবে তখন আমাদের কি অবস্থা হবে সেটা কি একবার চিন্তা করে দেখেছেন? ছোট্ট একটা উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন। খেয়াল করে দেখবেন মাঝে মাঝে ইন্ডিয়া থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি করা বন্ধ করে দেয়। কারণ তাদের নিজেদের জনগণের চাহিদা আগে মেটাতে হবে। তাদের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য তারা এই সিদ্ধান্ত নেয়। তখন আমাদের দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় হুহু করে। গত কিছুদিন আগে কাঁচা মরিচের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টাই হয়েছিলো। অসময়ে বৃষ্টির ফলে কাঁচা মরিচ উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছিলো। সেই সময় এক কেজি কাঁচা মরিচ নাকি এক হাজার টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। তখন আমাদের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইন্ডিয়া থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি করতে হয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। তখন যদি আমরা যাদের কাছ থেকে আমদানি করি তারাও সমস্যায় থাকে তখন আমাদের কি অবস্থা হবে সেটা কখনো চিন্তা করে দেখেছেন?


এই জন্য বিশেষজ্ঞরা সবাইকে তাকিদ দিচ্ছে এক ইঞ্চি জমি ও যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে। যার যেখানে যতটুকু জমি আছে প্রতি ইঞ্চি জমিতে যেন কোনো না কোনো ফসল উৎপাদন হয় বা কোনভাবে সেটাকে কাজে লাগানো হয়। ফেসবুকে যেই পোস্টটা আমি দেখেছিলাম সেখানে একজন মানুষ একটি বাড়িকে খামার হিসাবে কিভাবে গড়ে তুলবেন সেই বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। সেখানে তিনি দেখিয়েছিলেন কিভাবে একজন মানুষ তার চাহিদার শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ খাদ্য নিজেই উৎপাদন করতে পারবে এবং সেই জন্য যে প্রচুর জমির প্রয়োজন তাও নয়। ধরুন গ্রামে আপনার একটি বাড়ি আছে। আপনার বাড়ির আশেপাশে কিছু খালি জায়গা রয়েছে। বাড়ির সামনে একটা পুকুর রয়েছে। আপনি বাড়ির আশেপাশের খালি জায়গা গুলোর কিছু অংশে শাকসবজি চাষ করলেন। পুকুরে মাছের চাষ করলেন। আর কিছু জায়গায় হাঁস-মুরগি, গরু, ছাগল পালন করতে শুরু করলেন। তাহলে কিন্তু আপনার চাহিদার বেশিরভাগ খাদ্যই আপনি নিজেই যোগান দিতে পারবেন। গরু-ছাগল সবার পক্ষে পালন করা সম্ভব না হলেও গ্রামের মানুষদের পক্ষে হাঁস মুরগি পালন করা খুবই সহজ।


একটা সময় কিন্তু বাংলাদেশের মোটামুটি অবস্থা সম্পন্ন প্রত্যেকটা গ্রামীণ পরিবারেই এই সমস্ত কিছু ছিলো। তখন কিন্তু গ্রামের মানুষজন তাদের চাহিদার বেশিরভাগ জিনিসপত্র তারা নিজেরাই উৎপাদন করতো। গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে হাঁস মুরগি পালন করা হোতো। প্রত্যেকটা পরিবার কৃষি কাজের সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত থাকতো। প্রত্যেকটা গ্রামের বাড়ির আশেপাশে প্রচুর ফলের গাছ লাগানো থাকতো। কিন্তু এখন গ্রামে গিয়ে দেখেন আপনি বেশিরভাগ বাড়িতেই হাঁস মুরগির পালন করা দেখতে পাবেন না। সেই সাথে অনেকেই কৃষি কাজের সাথে তাদের সম্পর্ক শেষ করে ফেলেছে অনেক আগেই। হয়তো তাদের পরিবারের একজন বা দুজন মানুষ বিদেশে গিয়েছে। তারা এখন পুরোপুরি সেই টাকার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ভেতরে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে উপরের দিকে। যার ফলে আমাদেরকে আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরে যেতে হবে। এখন শুধু গ্রামে নয় শহরের প্রতিটা পরিবারকেও চেষ্টা করতে হবে তার পরিবারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ভেতর যতটুকু সম্ভব সে যেন নিজেই উৎপন্ন করে।


আপনারা বলতে পারেন শহরে এটা কিভাবে সম্ভব? শহরে তো জায়গার খুবই অভাব। শহরের জায়গার অভাব রয়েছে এটা সত্যি কথা। তবে শহরে প্রতিটা বাড়ির ছাদের জায়গাটা কিন্তু অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে। আপনি যদি প্রত্যেকটা বাড়ির ছাদকে ফসলের মাঠ হিসেবে চিন্তা করে দেখেন তাহলে দেখবেন শহরের বিপুল পরিমান জায়গা পড়ে রয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন খাদ্যশস্য উৎপাদনে কাজে লাগানো যেতে পারে। ছাদের উপরে সহজেই হাঁস মুরগি পালন করা সম্ভব। আবার ছাদের উপরেই বায়োফ্লক প্রযুক্তির মাধ্যমে পানির বিশেষ ট্যাঙ্কে মাছ চাষ করা সম্ভব। আবার এই ছাদের উপরেই আপনি ইচ্ছা করলে বিভিন্ন রকম সবজি উৎপাদন করতে পারবেন। সোজা কথায় শহরের বাড়ির ছাদগুলোকে আমার কাছে বিশাল পড়ে থাকা অনাবাদি জমির মতো মনে হচ্ছে। এই ছাদগুলোকে যদি আমরা সামগ্রিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের আওতায় নিয়ে আসতে পারি। তাহলে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যাবে।


তবে এই জিনিসটা হয়তো একদিনে করা সম্ভব না। এই জন্য দরকার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। আর এই কাজে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো সবচাইতে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। তাছাড়া সরকার কেউ এই ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিভাগের ও এই ব্যাপারে করণীয় রয়েছে অনেক কিছু। তাদেরকে পরিবর্তিত এই ঋতুচক্রে কিভাবে বিভিন্ন রকম ফসল উচ্চ হারে উৎপাদন করা যায় সেই প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে হবে এবং সেই ধরনের বীজ তৈরি করতে হবে। তবে সরকারের দিকে তাকিয়ে বসে থাকলে হবে না। আমাদের সবাইকে যার যার জায়গা থেকে এই ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে ছোট ছোট প্রচেষ্টা দিয়েই বড় কোন পরিবর্তনের শুরু হয়। আজকে আমার এই পোস্ট যারা পরবেন তারা যদি নিজেরা এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং সেটা তার আশেপাশের লোকজনের ভেতরে ছড়িয়ে দিতে পারেন। তাহলেই হয়তো একদিন বড় একটা পরিবর্তন চলে আসবে। মনে রাখতে হবে সামনে ভয়াবহ দুর্যোগ আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের সবার জীবনে দারুণ সব সমস্যা তৈরি হবে। তাই সেই সমস্যা মোকাবেলায় আমাদেরকে আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।


আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানফরিদপুর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 6 months ago 

ভাইয়া বেশ উপযোগী একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আসলে দিনে দিনে আমাদের অবস্থা বেশ সচনীয় হয়ে পড়ছে। আগামীতে কি হবে সেটাও জানানেই। আর এমন পরিস্থিতিতে কিন্তু আমাদের কে দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণ করে রাখতে হবে। ধন্যবাদ ভাইয়া এমন সময় উপযোগী একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 6 months ago 

খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট আজ আমাদের মাঝে শেয়ার করলেন ভাইয়া।আমাদের সকলের জন্য সময় উপযোগী পোস্ট। আমাদের সকলের উচিত কঠিন বিপদ আসার আগেই মোকাবেলার পথ তৈরি করা।জলবায়ুর পরিবর্তনে আমরাই সবার আগে হুমকির স্বীকার হওয়ার আগে আমাদের মধ্যে সচেতনতা জাগাতে হবে।কথাগুলো খুবই সুন্দর লিখেছেন।এই বিষয় গুলোর প্রচার যতো হবে ততোই মানুষ সচেতন হবে।ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে সুন্দর এই বিষয়টি নিয়ে পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 6 months ago 

ভবিষ্যতে আমরা ভয়ংকর এক সমস্যার মধ্যে পড়তে যাচ্ছি। আর আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবেশ যেমন বদলে যাচ্ছে তেমনি দুর্যোগের আশঙ্কাও বেড়ে যাচ্ছে। আর সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুত থাকা উচিত। সত্যি ভাইয়া আমরা সবাই যদি নিজেদের জায়গা থেকে এখন থেকে উদ্যোগ নেই তাহলে হয়তো পরিস্থিতি সামলানো যাবে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া।

 6 months ago 

বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী আমরা ধারণা করতেই পারি, সামনে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে আমাদেরকে। প্রকৃতি দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। এতে করে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ সৃষ্টি হতে পারে এবং দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য অবশ্যই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে আমাদের। ভাবতেই অবাক লাগে, কৃষিপ্রধান একটি দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ, আর বাংলাদেশকে কৃষি পণ্য অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমাদের দেশের জনসংখ্যা অত্যাধিক বেশি, আর বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোর জন্য অবশ্যই ফলন বেশি হতে হবে। তাই খালি জায়গা ফেলে না রেখে, সবজি লাগানো উচিত। তাছাড়া বর্তমানে অনেকেই ছাঁদে বিভিন্ন ধরনের সবজি লাগাচ্ছে। যাইহোক দারুণ লিখেছেন ভাই। পোস্টটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 6 months ago 

দারুণ কিছু কথা শেয়ার করেছেন ভাইয়া ৷ আসলেই আমাদের এসব বিষয়ে ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন আছে ৷ সময় এবং পরিস্থিতি সব সময় একই রকম যায় না আর যাবেও না ৷ দিন দিন আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে ৷ জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ অন্য দেশ থেকে অনেক কিছুই আমদানি করে নিজেদের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে ৷ এজন্য মাঝে মাঝে দ্রবমূল্যের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ তবে আমরা চাইলে খাদ্য উৎপাদন করতে পারি আপনার উল্লেখিত বিষয় গুলো মাথায় রেখে ৷ যেমন ছাদ বাগান কিংবা গ্রামের বাড়ির আশেপাশের জায়গায় জমি ব্যবহার করে ৷ যাই হোক , খুব সুন্দর এবং বাস্তবিক কিছু কথা শেয়ার করেছেন ৷ ভীষণ ভালো লাগলো কথা গুলো , অসংখ্য ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60696.91
ETH 2593.10
USDT 1.00
SBD 2.56