ভাড়াটিয়ার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের (দ্বিতীয় পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ10 months ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


কিছুদিন আগে আমি আপনাদের সাথে আমার দোতলার ভাড়াটিয়ার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা শেয়ার করেছিলাম। এই বিয়েতে আমাদের সব অনুষ্ঠানেই দাওয়াত ছিলো। এর আগের পর্বে শেয়ার করেছিলাম বৌভাতের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার কথা। আজকে তার পরের অনুষ্ঠানের গল্পটা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। বিয়ের পাত্রীপক্ষ আর পাত্রপক্ষের অর্থনৈতিক অবস্থার ভেতরে বেশ পার্থক্য ছিলো। যদিও পাত্রীপক্ষ তাদের সামর্থের চেয়েও বেশি করেছিলো সেটা অনুষ্ঠানের আয়োজন গুলি দেখে বোঝা যাচ্ছিলো। পরের দিনের দাওয়াতটাও ছিল একই কমিউনিটি সেন্টারে। সেদিন আমরা কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছিলাম যে কখন যাবো? কারণ আমরা তো আর পাত্রীপক্ষের আগে যেতে পারি না। তাই আমার স্ত্রী পাত্রীর মায়ের সাথে কথা বলেছিলো যে আপনারা যাওয়ার সময় আমাকে ফোন দিয়েন। যদিও এই অনুষ্ঠানে যাওয়ার ব্যাপারে আমার খুব একটা আগ্রহ ছিলো না। তারপরেও পাত্রীর বাবা-মায়ের জোরাজুরিতে আমাদেরকে যেতে হয়েছিলো।

IMG_20231027_155528.jpg

দুপুরে নামাজ পড়ে আমরা তৈরি হয়ে বসেছিলাম যাওয়ার জন্য। কিন্তু এদিকে পাত্রীপক্ষের লোকজনের তৈরি হতে অনেক সময় লাগছিলো। সেদিন ছিল শুক্রবার। শুক্রবার সাধারণত আমি জুমার নামাজ পড়ে এসে খেতে বসে যাই। কিন্তু সেদিন কমিউনিটি সেন্টারে যেতে আমাদের অনেক দেরি হয়েছিলো। একটা সময় আমি বিরক্ত হয়ে আর যেতে চাচ্ছিলাম না। যাইহোক শেষ পর্যন্ত বেলা ৩:৩০ টার দিকে আমরা রওনা দিলাম। কমিউনিটি সেন্টারটি আমাদের বাসা থেকে একেবারে কাছে হওয়ার কারণে সেখানে পৌঁছতে আমাদের বেশি সময় লাগেনি। সেখানে পৌঁছে আমরা তাদের আয়োজন দেখছিলাম। খেয়াল করে দেখলাম আগের দিনের তুলনায় এই দিন কমিউনিটি সেন্টারে আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা অনেক বেশি। বুঝতে পারলাম পাত্রপক্ষ অনুষ্ঠানটা বেশ বড় করেই করছে। বিয়ের পাত্র-পাত্রী দুজন সমবয়সী হওয়ায় অনুষ্ঠানে দেখলাম তাদের বন্ধু-বান্ধবদেরই আনাগোনা বেশি। যেহেতু ছেলে ফরিদপুরের স্থানীয়। তাই আমি চিন্তা করেছিলাম হয়তো পাত্রপক্ষের লোকজন পরিচিত হলেও হতে পারে। তবে খেয়াল করে দেখলাম তাদের ভিতর পরিচিত তেমন কাউকে খুঁজে পেলাম না। আমার তখন কিছুটা সন্দেহ হোলো ছেলেরা হয়তো স্থানীয় নয়। তারা সম্ভবত ওই এলাকাতে ভাড়া থাকে। পরবর্তীতে শুনতে পেলাম আমার ধারণাই সঠিক।


IMG_20231027_155337.jpg

অনুষ্ঠানে পৌঁছানোর কিছুক্ষণের ভেতরেই পাত্রীর বাবা আমাদেরকে জোর করে টেবিলে বসিয়ে দিলো খাওয়ার জন্য। সাথে নিজেও বসে ছিলো আমাদের সাথে। এদিনও আয়োজন ছিল প্রায় একই রকম। কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন রোস্ট, বোরহানি আর খাওয়ার শেষে আইসক্রিম। শেষের আইসক্রিমটা বাদে বাদবাকি সবই ছিল আগের দিনের মতোই। তবে এই দিনের রান্নাটা আমার কাছে আগের থেকেও বেশি ভালো লেগেছিলো। বিয়ে বাড়ির মাটন কাচ্চির সাদের আসলে কোন তুলনা হয় না। এটার সাথে আপনি কখনোই হোটেল রেস্টুরেন্টের কাচ্চির স্বাদ মিলাতে পারবেন না। কারণ হোটেল রেস্টুরেন্টে যখন আপনি কাচ্চি খেতে বসবেন তখন সেখানে আপনাকে মাংস দেয়া হবে গুনে গুনে। কিন্তু বিয়ে বাড়ির কাচ্চিতে প্রচুর মাটন থাকে। যার ফলে এটা খেতে আরো অনেক বেশি ভালো লাগে। যাইহোক এদিনও বেশ মজা করে খাওয়া দাওয়া করলাম।


IMG_20231027_155330.jpg

তবে এদিন আর খাওয়া-দাওয়া করে খুব একটা দেরি করিনি। সেদিন সম্ভবত বাংলাদেশের ম্যাচ চলছিলো। তাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করেই পাত্রীর বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা বাড়িতে চলে এলাম। পরদিন পাত্র পক্ষের লোকজনের পাত্রীর বাড়িতে আসার কথা ছিলো। পাত্রীর বাবা আমাকে অনেক জোরাজোরি করেছিল নেয়ার জন্য। কিন্তু আমি আর সেদিন যায়নি। কারন আমার কাছে মনে হচ্ছিলো এই পর্বটা একেবারেই দুই পরিবারের নিজেদের ভেতরের অনুষ্ঠান। এখানে বাইরের লোকজনের থাকা খুব একটা ভালো দেখায় না। এজন্য আমি আর সেদিন যাইনি। যাইহোক এভাবেই বিয়ের অনুষ্ঠানের পর্ব গুলো শেষ হয়ে গেলো। কয়েকদিন ধরেই বাড়িটা এই অনুষ্ঠানের জন্যই বেশ সরগরম হয়েছিলো। অনুষ্ঠান শেষ হতেই বাড়িটা আবার আগের মত চুপচাপ হয়ে গেলো। গত কটা দিন বেশ ভালোই কেটেছে। ভাড়াটিয়ার অনুষ্ঠান হলেও নিজেদের ভেতরেও একটা উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিলো। সব পর্ব শেষ হতে আমাদের ভেতর থেকেও অনুষ্ঠানের আমেজটা চলে গেলো। আর আমরা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলাম।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানফরিদপুর


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 10 months ago 

বাড়িতে বিয়ের আয়োজন হলে পরিবেশটা সরগরম থাকে এটা ঠিকই বলেছেন। খুব সুন্দর ই আয়োজন করেছেন উভয়পক্ষ। তবে ৩ টার পরে যেতে হলো। আসলে বিয়ের সময় সবাইকে এক করে যেতে হয় বলেই এতো দেরি হয়ে যায়। তারপরেও ১.৩০ থেকে ২ টার মধ্যে যাওয়া উচিত।বিয়ে বাড়ির কাচ্চি সত্যি ই খুব মজার হয়।আমার ভাইয়ার বিয়ের কাচ্চি রান্না আমার আজও মুখে লেগে আছে।এতো কাচ্চি খেয়েছি অমন স্বাদ আর কোনটাতে পাইনি। যাক এরা আবার আইসক্রিম ও দিলো।এটা খুব মজারই হলো।সুন্দর অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

 10 months ago 

বিয়ে বাড়ি নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় কাটালেন বেশ কয়েকটা দিন।বিয়ে বাড়ি মানেই আনন্দ আর খাওয়া দাওয়া। আর বিয়ে বাড়ির খাবারের সাথে অন্য খাবারের তুলনাই হয় না।বিয়ে বাড়ির খাবার অন্য রকম মজা হয়।বিয়ে বাড়ির আনন্দ ময় সময় শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 10 months ago 

বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে বেশ ভালোই লাগে, কারণ পুরো বাড়ি একেবারে গমগম করে। জুম্মার নামাজ আদায় করার পর, খুব বেশি দেরি হয়ে গেলে,তখন আর খেতে ইচ্ছে করে না। যাইহোক বিয়ে বাড়ির কাচ্চি বিরিয়ানি খেতে আসলেই দারুণ লাগে। একেবারে তৃপ্তি সহকারে খাওয়া যায়। আইটেম গুলো বেশ ভালোই ছিলো। যাইহোক এতো সুন্দর মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

Posted using SteemPro Mobile

 10 months ago 

কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে বিয়ে খাওয়ার মজাটা একটু অন্যরকম। আপনি আপনার স্ত্রী সহ বিয়ে বাড়ীতে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গিয়েছিলেন, অবশেষে কিছুক্ষণ পর আপনারা কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে বিয়ে খেয়েছেন। বিয়ের আয়োজন টাও ছিল খুবই জাঁকজমকপূর্ণ,আর তার পাশাপাশি খাওয়া দাওয়া ও হয়েছে অনেক সুন্দর।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 59106.19
ETH 2538.36
USDT 1.00
SBD 2.37