আমার প্রিয় শিক্ষক। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।



প্রত্যেকটা মানুষই যারা শিক্ষা গ্রহণ করেছে তারা অনেক শিক্ষক এর সংস্পর্শে আসে এই শিক্ষকদের ভেতর অনেকেই থাকে যাদেরকে শিক্ষার্থীরা কিছুদিন পরেই ভুলে যায় আর অল্প কিছু শিক্ষক থাকেন যাদের কথা আমাদের সারা জীবন মনে থাকে তারা আমাদের মনের উপর প্রচন্ড প্রভাব বিস্তার করে তাদের কর্মকান্ডের দ্বারা তাদের আদেশ-উপদেশ স্থায়ী প্রশাসন দ্বারা স্নেহ শাসন দাঁড়া। আবার এমন কিছু শিক্ষক ও থাকেন যাদের কথা শিক্ষার্থীরা মোটেই মনে রাখতে চায় না যদিও তাদের সংখ্যা খুবই কম আমার শিক্ষাজীবনে আমি অসংখ্য শিক্ষকের সংস্পর্শে এসেছি তাদের বেশিরভাগই সাথে আমার শুধু ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ছিল অল্প কিছু শিক্ষক আছেন যাদের সঙ্গে আমার অন্যরকম একটা হৃদ্যতা তৈরি হয়েছিলো।

school-teacher.jpg

Image source-Link

সেই স্যারদের ভেতরে আছেন আমার একজন গৃহশিক্ষক। আর আছেন আমার স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক। সবার ভিতর আমার সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক ছিলেন মল্লিক স্যার। কেন জানি উনাকে আমি ভীষণ শ্রদ্ধা করতাম। এমন না যে উনি শুধু আদরই করতো। বরং শিক্ষক হিসাবে উনি কিছুটা কড়া ধাঁচেরই ছিলেন।

একবারের ঘটনা ক্লাস সেভেন এর ঘটনা। মধ্য বার্ষিক পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। ক্লাসের বেশিরভাগ ছেলে ইংরেজিতে ফেল করেছে। আমাদের ক্লাসের ছাত্র সংখ্যা ছিল ১১০ জন তার ভেতরে সম্ভবত মাত্র ৩৭ জন পাস করেছিলো। স্যার যথারীতি ক্লাসে আসলেন। এসে কিছু রোল নাম্বার বললেন এবং রোল নাম্বার বলার সঙ্গে সঙ্গে এটাও বললেন আমাদেরকে দাড়াতে। আমরা ভয়ে ভয়ে সবাই দাঁড়িয়ে আছি। পরে আমাদেরকে বললেন তোমরা এসে সামনে দাঁড়াও। তারপর স্যার একটি বেত নিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যারা এসেছিল তাদের সবাইকে মারতে শুরু করলেন। আমরা তো ভয়ে অস্থির। এরপরে বোধহয় আমাদের পালা। কিন্তু যখন ছাত্রদেরকে মারা শেষ হল তখন তিনি বসে থাকা ছাত্রদেরকে বললেন তোমাদের সামনে যারা দাঁড়িয়ে আছে এরা এবছর ইংরেজিতে পাস করেছে। তারপর আমাদেরকে জায়গায় গিয়ে বসতে বললেন। এরপর থেকে স্যারের সঙ্গে আমার একটা অন্যরকম আন্তরিক সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিলো। কারণ সেই পাস করা ছাত্রদের ভিতরে আমিও ছিলাম।

অন্য আরেকদিন এর ঘটনা। আমি তখন প্রচুর কিশোর থ্রিলার আর স্পাই থ্রিলার পড়তাম। বাংলাদেশের তখন কিশোর থ্রিলার হিসেবে তিন গোয়েন্দা ছিল সবচাইতে জনপ্রিয়। আর স্পাই থ্রিলার হিসেবে কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয়। আমি মাসুদ রানার প্রচন্ড ভক্ত ছিলাম। একদিন আমি স্কুল ফাঁকি দিয়ে আমার বাসা থেকে বেশ খানিকটা দূরে রেললাইনের উপর বসে মাসুদ রানার একটা গল্পের বই পড়ছিলাম। আমি গল্পের বইয়ে এতটাই বুঁদ হয়েছিলাম যে স্যার কখন আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে আছে আমি বুঝতেই পারিনি। স্যারের বাসা আর আমার বাসায় একই এলাকায় ছিল। স্যার হঠাৎ করে পেছন থেকে আমার কান ধরে আমাকে টেনে উঠালেন। উঠিয়ে আমার হাত থেকে বইটা নিলেন বইটা দেখে স্যার আমাকে বইটা ফেরত দিয়ে দিলেন। আর বললেন এরপর থেকে যদি কখনো স্কুল ফাকি দেয়া দেখেছি তাহলে প্রচন্ড পিটুনি দেবো। আমাকে আর সাথে এটাও বলেছিলেন যে আগামীকাল যদি আমার পড়া না হয় তাহলে অনেক শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে। যাওয়ার সময় স্যার হঠাৎ করে মুচকি হেসে বলল গল্পের বই পড়তে তোর এত ভালো লাগে? তাহলে বাড়ি গিয়ে পড়।

স্যারের পড়ানোর ধরন তার কথা বলার ধরণ। সবকিছু আমার কাছে অনেক ভালো লাগতো। স্যারের সাথে দেখা হলেই এটা আমি বুঝতে পারতাম স্যার আমাকে অনেক স্নেহ করেন। স্কুল থেকে বের হওয়ার পরেও স্যারের সাথে আমার মাঝে মাঝে দেখা হোতো। দেখা হলেই স্যারকে সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করতাম। স্যারও হেসে জবাব দিত। বেশ কয়েক বছর আগে স্যার মারা গিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে জান্নাত নসিব করেন। এই দোয়াই করি।


একজন শিক্ষক একটি ছাত্রকে আমূল বদলে দিতে পারেন। একজন খারাপ ছাত্র কে ভালো ছাত্রে পরিণত করতে পারেন। আমার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন তেমনই একজন। যাকে মন থেকে ভক্তি শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছা করে।


আমাদের সময়ে আমরা শিক্ষকদের অনেক সম্মান করতাম। তাদেরকে দেখলেই সসম্মানে মাথা নিচু করে সে জায়গা থেকে সরে যেতাম। আর আজকালকার দিনের ছেলেমেয়েরা পান থেকে চুন খসলেই শিক্ষকের নামে বিভিন্ন রকম বদনাম শুরু করে দেয়। আমাদের সময়ে এই সুযোগ ছিল না। শিক্ষকের নামে কিছু বললে আমাদের অভিভাবকেরা আমাদেরকে চরম শাসন করতো। আর এখন আমাদের দেশের শিক্ষকেরা অনেকটাই ভয়ে থাকেন। ছাত্র-ছাত্রীদের কে শাসন করতে তারা ভয় পান। এই অবস্থাটা মোটেও ভালো নয়।


প্রিয় শিক্ষকের কথা মনে হলেই আমার কবি কাজী কাদের নেওয়াজ এর সেই বিখ্যাত কবিতাটির কথা মনে হয়।


কবিতাটি হচ্ছে

শিক্ষকের মর্যাদা

বাদশা কহেন "সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায় তফাতে
নিজ হাতে জবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন
পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ
নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে
ধুয়ে দিলো না'কো কেন সে চরণ, স্মরি ব্যাথা পাই মনে"

উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষক আজি দাঁড়াইয়া সগৌরবে
কুর্নিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চস্বরে
আজ হতে চির উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির
সত্যিই তুমি মহান উদার বাদশা আলমগীর

আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোনো লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।

logo.png

Support @amarbanglablog by delegating STEEM POWER.
100 SP250 SP500 SP1000 SP2000 SP


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok


আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি

Sort:  

শিক্ষককে নিয়ে আপনার উপস্থাপনা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। একটি শিক্ষক পারে তার শিক্ষার আলোয় একটি শিক্ষার্থীকে আলোকিত করতে। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া, এরকম উপস্থাপনা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল।

 3 years ago 

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 

আপনার প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে খুব সুন্দর লিখেছেন। আর শেষ অংশে শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতা যুক্ত করায় লেখার মান উন্নত হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার সুন্দর পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

অনেক সুন্দর লিখেছেন ভাই।স্যারদের সাথে আপনার অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল। স্যারদের প্রতি আপনার ভালোবাসা অটুট রয়েছে।অনেক সুন্দর হয়েছে ভাই।

আপনার জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইলো।

 3 years ago 

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

অসম্ভব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন আপনার প্রিয় শিক্ষক সম্পর্কে।আপনার জন‍্য অভিন্দন রইল

 3 years ago 

আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 

একজন আদর্শ শিক্ষক সবার জীবনেই আছে। আমার জীবনেও আছে।

ক্লাস নাইনে তখন স‍্যার একদিন বীজগণিত পরীক্ষা নিলেন। এক @rasel72 বাদে সবাই ফেল করলাম। স‍্যার খুব রেগে গেলেন। জোড়া বেথ নিয়ে শুরু করলেন মারা। অন‍্যদের থেকে আমাকে একটু বেশি মেরেছিলেন। এরপর আমার জ্বর এসে যায়। পরবর্তীতে দুইদিন পড়তে যেতে পারিনি। এরপর আমি নিজের জিদ থেকে বীজগণিতের পেছনে লেগে যায়। সেসময় স‍্যার আমাকে কীভাবে বুঝাতেন সেটা শুধু আমিই জানি। কিছুদিনের মধ্যেই আমার অংকভীতি দূর হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তিনি আমারাজীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তার জন্যই আজ আমি এই পর্যন্ত। আপনার লেখাটা পড়ে আজ তার কথা মনে পড়ে গেল। এখন বুঝি কেন তিনি সেদিন সবার থেকে আমাকে বেশি মেরেছিলেন।।

 3 years ago 

আপনার প্রিয় শিক্ষকের কথা শুনে খুব ভালো লাগলো। আসলে আমাদের সবার জীবনে এমন একজন শিক্ষক খুবই প্রয়োজন।

 3 years ago 

জী ভাই য়া।

 3 years ago 

শিক্ষক হলো গুরুজন।মা-বাবার পরেই শিক্ষকের স্থান।একজন শিক্ষকই পারেন আমাদের মানুষের মতো মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে।সবারই একজন প্রিয় শিক্ষক থাকেন।যাদের কথা মনে পড়লেই গা শিউরে ওঠে।কারন শিক্ষকের আদর-স্নেহ কখনো ভুলবার নয়।

একজন শিক্ষক একটি ছাত্রকে আমূল বদলে দিতে পারেন। একজন খারাপ ছাত্র কে ভালো ছাত্রে পরিণত করতে পারেন।

কথাটা একদম সত্য একজন শিক্ষকই পারেন একজন ছাত্রকে পরিবর্তন করতে।

আপনার প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে সুন্দর বর্ণনা করেছেন।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 

❤️❤️

এই পৃথিবীতে পিতা-মাতার পরের স্থানটা হলো শিক্ষকের। একজন শিক্ষকই পারেন ছাত্রদের জীবনটা সঠিক পথে চলাতে। যদিও অনেক।সময়, তারা আমাদের রাগ বা মেরে থাকেন।কিন্তু তখন যদি সেই কাকটা সে না করতেন তাহলে হয়ত তাকে আর আমরা মনে রাখতাম না।

আমার সবচেয়ে একজন প্রিয় শিক্ষক আছেন। আমি যখন ক্লাস ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তাম, তখন থেকে তার সাথে আমার পরিচয়। এখন আমি কলেজে পরি, তার তার সাথে আমার যোগাযোগ আছে,। আমার শিক্ষা জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোই সে নিয়ে থাকেন। আমার জন্য কোনটা করা উচিত আর কোনটা করা উচিত নয়, সেটা আমাকে সে বলে দেয়। সে আমার রক্তের সম্পর্কের না হলেও সব সময় আমাকে এভাবে সাহায্য করে।যান।

আমি সব সময় তাকে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসি। আপনে আপনার আজলের পোষ্টটা খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। পৃথিবীর সকল শিক্ষকগুলো প্রদিপের মতো জ্বলতে থাকুক আমাদের মনে। শুভ কামনা।

 3 years ago 

শিক্ষকের প্রতি আপনার শ্রদ্ধা এবং তার সাথে চমৎকার সম্পর্কের কথা শুনে খুব ভাল লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

প্রিয় শিক্ষক নিয়ে অনেক সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। আসলে সেই প্রিয় শিক্ষক কারা হয়? যারা অন্যান্য শিক্ষক এর তুলনায় একটু ব্যতিক্রম, একটু অন্যরকমভাবে স্টুডেন্টদের পড়ানো চেষ্টা করে। আপনার সাথে যে রকম ঘটনা ঘটেছিল সে রকম ঠিক আমার সাথে একটি ঘটনা ঘটেছিল তবে সেই দিনগুলো এখনো অনেক মিস। সেদিন যদি স্যার আপনাকে সেভাবে মারতো না, তাহলে হয়তো আজ তাকে আপনি মনে রাখতেন না। পৃথিবীতে যতগুলো মধুর সম্পর্ক রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষক এবং ছাত্রেরর সম্পর্ক।

 3 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

আপনার প্রিয় শিক্ষক পোস্টটি খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই একজন করে প্রিয় শিক্ষক রয়েছে। ঠিক তেমনি আমার জীবনেও একজন প্রিয় শিক্ষক রয়েছে তিনি আমার গৃহ শিক্ষক। আপনার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন "মল্লিক স্যার" আর আমার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন "কাসেম স্যার"। আপনার এবং আপনার প্রিয় স্যারের জন্য শুভ কামনা রইল।

 3 years ago 

আপনার মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 

একজন আদর্শ শিক্ষক সবার জীবনেই আছে
আপনার প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে খুব সুন্দর লিখেছেন। সকল শিক্ষকদের জন্য শুভকামনা। আপনার উপস্থাপনা অনেক সুন্দর হয়েছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো 🥀 ভাইয়া

 3 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 57408.28
ETH 3079.77
USDT 1.00
SBD 2.31