ঝামেলা বিহীন ভাবে ট্রেনে করে ফরিদপুর থেকে ঢাকা যাওয়ার অভিজ্ঞতা।

in আমার বাংলা ব্লগ5 months ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


গতকাল ঢাকায় এসে পৌঁছেছি। গত ২-৩ মাস যাবত প্রতি মাসে একবার করে ঢাকায় আসতে হচ্ছে। একটা সময় ছিলো যখন ঢাকা আসা যাওয়া ছিলো বিরাট ঝক্কি ঝামেলার ব্যাপার। তবে পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষজন এখন খুব সহজেই ঢাকা পৌঁছাতে পারে। আর আমাদের ফরিদপুর থেকে তো ঢাকা পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ২ ঘন্টা। সেটা ট্রেনেই হোক আর বাসেই হোক। কয়েক মাস যাবত ফরিদপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ট্রেনে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। যদিও সরাসরি ফরিদপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত কোন ট্রেন নেই। তারপরেও কয়েকটি ট্রেন খুলনা রাজশাহী বেনাপোল থেকে ঢাকা যায় ফরিদপুর হয়ে। সেই ট্রেন গুলিতে ফরিদপুরের প্যাসেঞ্জারদের জন্য কিছু আসন সংরক্ষিত থাকে।

IMG_20240129_113633.jpg

আমার কাছে যার্নি করা অপছন্দের। বিশেষ করে সেটা যদি হয় বাস। তবে ট্রেন যার্নি আমার কাছে পছন্দের। সেই কারণে ট্রেন চালু হওয়ার পর থেকে আমার ইচ্ছা ছিলো ট্রেনে করে ঢাকা আসা যাওয়া করার। এর আগেরবার যখন ঢাকা এসেছিলাম তখন ট্রেনে করে ঢাকায় এসেছিলাম। সেবার নানারকম সমস্যার কারণে জার্নিটা খুব ভালো হয়েছিলো না। গত জার্নির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আগে থেকেই সবকিছু পরিকল্পনা করেছিলাম। তাই ঢাকা আসার জন্য আমি ৭ দিন আগেই ট্রেনের টিকেট কেটে ছিলাম অনলাইনের মাধ্যমে। এর ভিতরে শুনতে পেয়েছিলাম যে ট্রেন গুলো ফরিদপুর হয়ে ঢাকা যায় বিশেষ করে আমরা দুপুরের যে ট্রেনটাতে ঢাকায় যায়। সেই ট্রেনটাতে নতুন বেশ কিছু কোচ এড করা হবে। খবরটা শুনে বেশ খুশি হয়েছিলাম।


IMG_20240129_121509.jpg

তবে যথারীতি রেল স্টেশনে গিয়ে দেখলাম সেই আগের ভাঙ্গাচোরা ট্রেনই রয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ থেকে সেই নতুন কোচ গুলো যুক্ত হবে এই ট্রেনের সাথে। যাইহোক এবার যেহেতু আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম তাই বাসা থেকে ট্রেন ছাড়ার মাত্র ২০ মিনিট আগে বের হয়েছিলাম। আমাদের বাসা থেকে রেলস্টেশনের দূরত্ব একেবারেই কম। যার ফলে সেখানে রিক্সা করে পৌঁছে গিয়েছিলাম মাত্র ১০ মিনিটের ভিতরে। সেখানে পৌঁছে আমি চিন্তা করছিলাম ট্রেন সময় মতো আসবে কিনা। কিন্তু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঠিক নির্ধারিত সময়ে ট্রেন এসে উপস্থিত হোলো। যেহেতু ট্রেনগুলো স্টেশনে খুব বেশিক্ষণ দাঁড়ায় না তাই আমরা মোটামুটি তাড়াহুড়ো করে আমাদের যে বগিতে সিট ছিলো সেখানে উঠেলাম।


IMG_20240129_123215.jpg

কিন্তু এবারও সিট খুঁজতে গিয়ে কিছুটা ঝামেলার সম্মুখীন হলাম। কারণ অনলাইনে যেভাবে সিট প্ল্যানিং দেয়া ছিলো ট্রেনে উঠে দেখি সিটগুলো সেভাবে নেই। আমি আগেই বলেছি ফরিদপুরের জন্য অল্প কিছু আসন সংরক্ষিত থাকে। সেখান থেকে আমি তিনটা টিকিট কেটেছিলাম। তার ভেতর দুটো টিকিট ছিলো একই জায়গায় পাশাপাশি। আর একটা টিকিট একটু পেছনের দিকে। কিন্তু ট্রেনের ভেতরে খুঁজতে গিয়ে দেখি তিনটা সিট তিন জায়গায় পড়েছে। পরে আশেপাশের লোকজনের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে আমার স্ত্রী আর বাচ্চাকে পাশাপাশি বসার ব্যবস্থা করলাম। কিছুক্ষণ পরে তাদের পাশে যে মহিলা ছিল তার সাথে আমিও সিট পরিবর্তন করে আমরা তিনজন পাশাপাশি বসতে পারলাম। তখন জার্নিটা বেশ ভালো মনে হচ্ছিলো। যাদের সাথে সিট পরিবর্তন করেছিলাম তাদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা গল্প করছিলাম। এর আগের বার যখন আমরা ঢাকা গিয়েছিলাম তখন ট্রেনের খাবার কিনে খেয়েছিলাম। কিন্তু সেই খাবারগুলি একেবারেই ভালো ছিলো না। সেই কারণেই এবার আমি আগে থেকেই ক্লাব স্যান্ডউইচ এবং চকলেট ফ্লেভার স্লাইস কেক কিনে এনেছিলাম ট্রেনে খাওয়ার জন্য। কারণ আমরা যখন বাসা থেকে রওনা দিয়েছিলাম তখন বাজে বেলা ১১ঃ২০। এটা নাস্তা খাওয়ার জন্য উপযুক্ত সময় না আবার দুপুরের খাওয়া খাওয়ার জন্যও না। সেই কারণে কিছু খাবার সাথে এনেছিলাম।


IMG_20240129_122532.jpg

তবে এবারের ট্রেন জার্নিটা আমি দারুন উপভোগ করেছি। কারণ এইবার আমরা যেই বগিতে টিকিট কেটেছিলাম সেখানে দু-একজন বাদে কোন বাড়তি যাত্রী ছিলো না। যার ফলে আমরা মোটামুটি আরামের সাথে যেতে পারছিলাম। তাছাড়া আমরা যেই টিকিটগুলো কেটেছিলাম সেই সিটগুলো ছিল শোভন চেয়ার। মানে এগুলো চেয়ার কোচ বাসের মতো সিট। এমনিতে ট্রেন জার্নি আমার কাছে পছন্দের সেই সাথে এমন আরামদায়ক সিট পেয়ে আমার কাছে বেশ ভালোই লাগছিলো। এবার ঢাকা আসার পথে পুরোটা সময় আমি বেশ ভালো উপভোগ করেছি। আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এরপর থেকে ট্রেনের টিকেট পেলে আর বাসে যাতায়াত করবো না। কারণ আমার জন্য দু দিক থেকে সুবিধা হয়। প্রথম হচ্ছে ফরিদপুরে রেল স্টেশন আমার বাসা থেকে একেবারেই কাছে। আবার ঢাকায় আমি যেখানে যাই সেখান থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন একেবারেই কাছে। যার ফলে আমার জন্য সব দিক দিয়ে এই ট্রেনে চলাচল করা লাভজনক। আর রেল পথে কোন ট্রাফিক জ্যামের সম্ভাবনা নেই আর অনেক বেশি নিরাপদ। তাছাড়া আমার পরিবারও ট্রেন জার্নিটা খুব উপভোগ করেছে। আশা করি এক সময় সমগ্র বাংলাদেশে এভাবে ট্রেনে করে যাতায়াত করতে পারবো। এখন শুধু ভালো মানের কিছু ট্রেন যোগ করলে আমরা খুশি।


আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানফরিদপুর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 5 months ago 

আসলেই ভাই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষজন, খুবই অল্প সময়ে এখন ঢাকা আসা যাওয়া করতে পারে। যাইহোক ট্রেন জার্নি আমারও ভীষণ পছন্দ। ট্রেনে কয়েক ঘন্টা বসে থাকলেও বোরিং লাগে না। যাইহোক আগে থেকে ট্রেনের শোভন চেয়ারের টিকেট কিনেছেন বলে,এবার বেশ আরামে ঢাকা আসতে পেরেছেন ভাই। যদিও সিট নিয়ে প্রথমে একটু ঝামেলা হয়েছিল আপনাদের। তবে এটা ঠিক, সবাই একসাথে না বসলে তেমন ভালো লাগে না। আশা করা যায় ২০৩০ সালের মধ্যে ট্রেনের রুট অনেক বৃদ্ধি পাবে। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

ট্রেন জার্নিতে অবশ্য অনেক সুযোগ সুবিধা আছে ৷ যা বাসের মধ্যে নেই ৷ এজন্য দূরের জার্নির করতে ট্রেনই ভালো ৷ অনলাইনে আগেভাগেই টিকিট কেটে বেশ ভালোই করেছেন ৷ শেষমেশ আবার কোনো ভাবেই টিকিট পাওয়া যায় না ৷ যদিও আপনাদের সিটের ঝামেলা হয়েছে , এরপরও সব ঠিকঠাক করে নিয়ে সম্পূর্ণ জার্নি টা উপভোগ করেছেন জেনে ভীষণ ভালো লাগলো ৷ ধন্যবাদ আপনাকে আপনার সুন্দর অনুভূতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ৷

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 58248.35
ETH 3136.18
USDT 1.00
SBD 2.36