দিনশেষে আশার আলো (দ্বিতীয় পর্ব)। ১০% সাই ফক্স
পূর্ববর্তী পর্বের-লিংক
কন্ট্রাকটর মালিক কে বলল স্যার ছেলেটা খুবই ভালো। কখনো কাজে ফাঁকি দেয় না। অত্যন্ত মেধাবী ছেলে। তাকে আপনি যে কাজ দেবেন খুব ভালোমতো করতে পারবে। স্যার যদি ছেলেটার জন্য কিছু করতে পারতেন। তাহলে ওর জীবনটা হয়তো ঘুরে যেতো। লোকটা আরিফের হাতে একটি কার্ড দিয়ে বলল সময় করে আমার সাথে একসময় দেখা করো। বলে তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন।
লোকটা চলে যাওয়ার পর কন্ট্রাকটার আরিফ কে বলল তোমার তো ভাগ্য ফিরে গিয়েছে। আশা করি এখন থেকে আর তোমাকে দিনমজুরের কাজ করতে হবে না। তুমি কালকে গিয়ে স্যারের সাথে দেখা করবে। আরিফ সেদিনের মত কাজ শেষ করে বাড়ি চলে এলো। পরদিন সকালে আরিফ আর কাজে না গিয়ে সরাসরি সেই কার্ডের ঠিকানায় গিয়ে উপস্থিত হল।
আরিফ সেই কার্ডের ঠিকানায় গিয়ে দেখে সেখানে এক আলিশান অফিস। আরিফ অনেক ভয়ে ভয়ে সেই অফিসে ঢুকলো। যদিও ঢোকার সময় আরিফের পোশাক আশাক দেখে দারোয়ান বারবার জিজ্ঞেস করছিল কাকে চাই কি কাজ? পরে আরিফ যখন দারোয়ানকে কার্ড দেখিয়ে বলল স্যার আমাকে দেখা করতে বলেছেন। তখন দারোয়ান তাকে ভেতরে ঢুকতে দিলো।
আরিফ রিসেপশনে গিয়ে বললো স্যার আমাকে দেখা করতে বলেছেন। রিসিপশনের লোকটি আরিফকে দেখে তাচ্ছিল্যভরে বলল সামনের সোফায় গিয়ে বসো। স্যার মিটিং এ আছে। ফ্রি হলে তখন যেতে পারবে। আরিফ অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু রিসেপশন থেকে তাকে আর কিছু বলে না। অপেক্ষা করতে করতে দুপুর হয়ে গেলো। তখন সে আবার রিসিপশনে গিয়ে জিজ্ঞেস করল স্যার এখন কি স্যারের সাথে দেখা করা যাবে? রিসিপশনের লোকটি তাকে ধমক দিয়ে বলল বারবার ঘ্যানঘ্যান করো কেন? চুপচাপ ওইখানে বসে থাকো। সময় হলে আমি তোমাকে ডাকবো।
আরিফ আবার গিয়ে চুপচাপ বসে থাকলো। সেই সকালে বাড়ি থেকে সামান্য কিছু খেয়ে বেরিয়েছে আরিফ। পেট খিদেয় চোঁ চোঁ করছে। পকেটে টাকা খুব বেশি নেই যে কিছু কিনে খাবে। সর্বসাকুল্যে মাত্র ৫০ টাকা আছে। এই টাকার ভেতরে আবার তাকে বাড়ি ফিরতে হবে। তার পরেও প্রচন্ড ক্ষুধায় অস্থির হয়ে আরিফ অফিস থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর আশেপাশে কোন চায়ের দোকান খুঁজতে লাগলো। চিন্তা করছিল যদি কোন চায়ের দোকান পাওয়া যায় তাহলে সেখান থেকে কলা রুটি কিনে খাওয়া যাবে। কিন্তু আরিফ আশেপাশে অনেক খুজেও চায়ের দোকান পেলো না। আরিফ তখন বুঝতে পারল এটি ধনী লোকের এলাকা। এখানে তার মত লোকের কোন স্থান নেই। এমনকি এক কাপ চা খাওয়ার ব্যবস্থা ও নেই।
আরিফ প্রচন্ড ক্ষুধা পেটে নিয়ে আবার অফিসে এসে বসলো। কিন্তু বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। তার আর ডাক পড়ে না। আরিফ বসে থাকতে থাকতে দেখল অফিসের সবাই একে একে চলে যাচ্ছে। একসময় রিসেপশনের লোকটাও চলে গেলো। আরিফ এর প্রচন্ড মন খারাপ হলো। দুঃখে তার দু চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছিলো।
তারপর সেখান থেকে আরিফ বাড়ি ফিরে এলো। আরিফ যদিও এখনো বাড়িতে কিছু জানায়নি। কিন্তু বাড়িতে ফেরার পর ওর মা জিজ্ঞেস করল কিরে আজ কোথায় গিয়েছিলি? আজ কাজে যাসনি? আরিফ বললো না আজকে একটি নতুন কাজের খোঁজে গিয়েছিলাম। ওর মা বলল ঘরে কিন্তু বাজার আর কিছুই নেই। কালকে তুই যদি কাজে না যাস তাহলে কিন্তু বাড়ির সবাইকে উপোস থাকতে হবে। আরিফ বললো চিন্তা করো না মা। কালকে সকালে উঠে আমি কাজে যাব।
এই বলে আরিফ ঘর থেকে বাজারের ব্যাগটা নিয়ে কাছের এক মুদি দোকানে গেলো। মুদি দোকানির সাথে আরিফের সম্পর্ক খুবই ভালো। কারণ আরিফ কখনো বাকি নিলে সেটা সময়মতো পরিশোধ করে দেয়। যার ফলে আরিফ বাকি চাইলে দোকানদার কখনো মানা করে না। আর আরিফ পারতপক্ষে বাকি না নেয় ও না। আরিফ দোকানদারের কাছ থেকে চাল ডাল আর ডিম নিয়ে ওর মাকে দিয়ে বলল কালকে দুপুর পর্যন্ত চালিয়ে নিও। সন্ধ্যার সময় আমি বাজার করে নিয়ে আসবো।
পরদিন সকালে আরিফ যথারীতি আবার কাজে গেলো। কাজের ফাঁকে যখন দুপুরে খাওয়ার পর বিশ্রাম নিচ্ছিলো। তখন সেখানে কন্ট্রাক্টর আসলো। কন্ট্রাকটার আরিফকে দেখে অবাক হলো। জিজ্ঞেস করল কি ব্যাপার তুমি স্যারের সঙ্গে দেখা করনি? (চলবে)
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
গল্প লেখায় তোমার হাত খুলে যাচ্ছে। আজকের পর্ব টুকু পড়তে একটুও তাড়াহুড়া বা বিরক্তি লাগলো না। পরবর্তী কাহিনী জানার আকর্ষণ থেকেই কখন যেন সম্পূর্ণ লেখাটি শেষ হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। চালিয়ে যাও এভাবে।
ভাই অসাধারণ লিখেছেন আপনি আপনার এই পোস্টটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। আপনি সত্যিই একজন অসহায় মানুষের আবেগ অনুভূতি তুলে ধরেছেন। আর অফিসে রিসিপশনের কাহিনীতে সবথেকে হৃদয়বিদারক মনে হয়েছে আমার। রিসিপশনের ব্যক্তিটি কিন্তু চাইলে তাকে তার স্যারের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে পারতেন। এতে হয়তো বা তার কোনো লাভ হতো না কিন্তু তার তো কোনো ক্ষতি হত না। মানুষ যেন কেমন আসলে মানুষ এমন হয় কেন। আপনার পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ভাইয়া, প্রথমেই আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনার লেখা টি অত্যন্ত সুন্দর করে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। আপনার লেখা পড়তে পড়তে কখন যেন,আমি নিজের অজান্তেই গল্পের ভেতরে প্রবেশ করলাম বুঝতেই পারলাম না। মনে হচ্ছিল লেখাগুলো পড়ছিলাম আর চোখের সামনে সব ঘটনা গুলো দেখছিলাম। এত সুন্দর করে গল্পটি লিখলেন যা হৃদয়ের কিছুটা অংশ দখল করে নিল। আমার কাছে একটি জিনিস খুবই খারাপ লাগলো আর সেটি হচ্ছে, আরিফের পেটে তখন প্রচন্ড ক্ষুধা আর তাই সে কলা রুটি কিনে খাওয়ার জন্য বাইরে বেরিয়ে আসলো। কিন্তু হতাশার কথা হল এই, সে যে এলাকায় ঢুকেছে সেটি ধনী লোকের এলাকা সেখানে আরিফের মত ব্যক্তিদের এক কাপ চা খাওয়ার মতো কোন ব্যবস্থা নেই । সবকিছু সহ্য করা সম্ভব, কিন্তু কখনো পেটের ক্ষুধা কে দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই আরিফের প্রতি আমার খুবই মায়া হল। যাইহোক ভাইয়া অসাধারন সুন্দর লেখার জন্য আপনাকে আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এবং পরবর্তী পর্বের জন্য আপনার পোষ্টের অপেক্ষায় রইলাম। ভাল থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশা করছি।
অসাধারণ গল্প , স্যারের সাথে দেখা করার অপেক্ষায় সারাদিন পাড় করে দিলো। আসলে কি টাকার দাম সব জায়গাতেই আছে। টাকা নেই তো দাম ও নেই। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া।