দিনশেষে আশার আলো (প্রথম পর্ব)। ১০% সাইফক্স।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


রাস্তার পাশে গাছের ছায়ায় বসে আরিফ মাজা থেকে গামছাটা খুলে ঘামে ভেজা মুখটা মুছে নিলো। সকাল থেকেই সূর্যটা তীব্র তাপে চারপাশটা যেন পুড়িয়ে দিচ্ছে। এই প্রচন্ড রোদের ভেতরে আরিফ সকাল থেকে ইট টেনে যাচ্ছে। শুধু মুখ নয় তার পুরো শরীরটা ঘামে ভিজে গিয়েছে। কিন্তু তার কিছুই করার নেই। কাজ তাকে করতেই হবে।

Polish_20220310_203139526.jpg

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovqXYqtnvTwyujR3e6QABJn4NcxC3bdgrwX6NgAN649cHgfxhe5ph4GRfCVnb7WW5KRh8RjMmS8SJiGa3FeiiFtjQ.png

সেই সকালে বাড়ি থেকে সামান্য কিছু পান্তা ভাত খেয়ে সে কাজে এসেছে। তারপর থেকে টানা কাজ করে যাচ্ছে। যদিও তার সাথে অন্য শ্রমিকেরা একটু পরপরই সিগারেট খাওয়ার বাহানায়, চা খাওয়ার অজুহাতে বিশ্রাম নিচ্ছে। কিন্তু আরিফ এগুলো পছন্দ করে না। এজন্য কন্ট্রাক্টর তাকে খুবই পছন্দ করে। সেজন্য কন্ট্রাক্টর তাকে কখনো গালিগালাজ করে না। কিন্তু অন্য শ্রমিকদের কন্ট্রাক্টর বিচ্ছিরি ভাষায় গালিগালাজ করে। আরিফ এই গালিগালাজের ভয়ে সহজে বিশ্রাম নিতে চায় না। কারন সে গালিগালাজ সহ্য করতে পারেনা।

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovqXYqtnvTwyujR3e6QABJn4NcxC3bdgrwX6NgAN649cHgfxhe5ph4GRfCVnb7WW5KRh8RjMmS8SJiGa3FeiiFtjQ.png

গাছের ছায়ায় বসে আরিফ চিন্তা করছিলো। কেমন জীবনের চিন্তা করেছিল সে আর এখন তাকে কি জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। আরিফ দরিদ্র বাবার মেধাবী সন্তান। ছোটবেলা থেকেই সে পড়ালেখায় অত্যন্ত ভালো ছিলো। নিজের গরজেই সে সব সময় লেখাপড়া করেছে। যার ফলে সংসারে প্রচণ্ড অভাব থাকা সত্ত্বেও আরিফের বাবা কখনো তার পড়ালেখায় বাধা দেয়নি। অবশ্য মেধাবী হওয়ার কারণে প্রতিবেশীরা এবং স্কুলের কর্তৃপক্ষ ও আরিফকে অনেক সহায়তা করেছে তার লেখাপড়ার জন্য। সকলের সহায়তায় আরিফ গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovqXYqtnvTwyujR3e6QABJn4NcxC3bdgrwX6NgAN649cHgfxhe5ph4GRfCVnb7WW5KRh8RjMmS8SJiGa3FeiiFtjQ.png

তারপর কাছেই শহরের এক কলেজে ভর্তি হয়েছিলো। প্রথম কিছুদিন ভালোই ক্লাস করছিল সে। কিন্তু হঠাৎ তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায়। তার স্বাভাবিক জীবনযাপনে ছেদ পড়ে। আরিফ যে আগে কখনো কাজ করেনি ব্যাপারটা এমন নয়। সে আগেও মাঝে মাঝে বাবার সাথে কাজে সহায়তা করতো। কিন্তু এখন পরিবারের মুখে দু'মুঠো ভাত জোগানোর জন্য তাকে প্রতিদিন কাজে যেতে হয়। কারণ সে কাজ করে যে টাকা নিয়ে যায় সেই টাকায় বাজার করার পর তার বাড়িতে রান্না হয়। যার ফলে সবাই তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovqXYqtnvTwyujR3e6QABJn4NcxC3bdgrwX6NgAN649cHgfxhe5ph4GRfCVnb7WW5KRh8RjMmS8SJiGa3FeiiFtjQ.png

আরিফ পরিবারের বড় সন্তান। তার আরো চারটি ভাই বোন আছে। তারা সবাই ছোট ছোট। পরিবারের সকলের খাওয়া পড়ার খরচ সাথে আছে বাবার ওষুধের টাকা। সবকিছুই আরিফকে জোগাড় করতে হয়। সেজন্য আপাতত লেখাপড়া আরিফ বন্ধ রেখেছে। কারণ সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর বাড়ি ফিরে আর বই নিয়ে বসতে ইচ্ছে করে না। যদিও সে এর ভেতরেই মাঝে মাঝে একটু একটু করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার আর কলেজে যাওয়া হয় না। এভাবেই কঠোর সংগ্রামের মাধ্যমে তার দিন চলছিলো।

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovqXYqtnvTwyujR3e6QABJn4NcxC3bdgrwX6NgAN649cHgfxhe5ph4GRfCVnb7WW5KRh8RjMmS8SJiGa3FeiiFtjQ.png

আরিফ একসময় চিন্তা করতো বাবা সুস্থ হয়ে গেলে আবার সে কলেজে ফিরে যাবে। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে তার বাবা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আরিফ এখন ভালই বুঝতে পারে তার বাবার পক্ষে আর কখনো আগের মত কাজ করা সম্ভব হবে না। তাই সে লেখাপড়ার চিন্তাটা মাথা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। এভাবেই তার দিন চলে যাচ্ছিল।

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovqXYqtnvTwyujR3e6QABJn4NcxC3bdgrwX6NgAN649cHgfxhe5ph4GRfCVnb7WW5KRh8RjMmS8SJiGa3FeiiFtjQ.png

একদিন আরিফ কাজের ফাঁকে দুপুরের খাবার বিরতিতে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলো। এর ভেতর সে দেখে পাশেই একটি ইংরেজী খবরের কাগজ পড়ে আছে। যেটির ওপর কিছুক্ষণ আগে তারই এক সহকর্মী শ্রমিক বসেছিলো। আরিফ খবরের কাগজটি নিয়ে পড়তে থাকে। সেই ইংরেজি খবরের কাগজে মহাবিশ্ব নিয়ে সুন্দর একটি আর্টিকেল লেখা ছিলো। আরিফের এই ধরনের লেখা পড়তে খুবই ভালো লাগে। যখন তাকে কাজ করতে হতো না তখন সে এই ধরনের বই পেলেই পড়তো।

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovqXYqtnvTwyujR3e6QABJn4NcxC3bdgrwX6NgAN649cHgfxhe5ph4GRfCVnb7WW5KRh8RjMmS8SJiGa3FeiiFtjQ.png

আরিফ আগাগোড়াই ইংলিশে যথেষ্ট ভালো। সেজন্য ইংলিশ পত্রিকা বা বই পড়তে তার কোনো সমস্যা হয় না। আরিফ মগ্ন হয়ে বসে সেই আর্টিকেলটি পড়ছিলো। এর মধ্যে কখন যে সেখানকার মালিক এসে উপস্থিত হয়েছে আরিফ বুঝতে পারেনি। আরিফের হাতে ইংরেজি কাগজ দেখে সে খুবই অবাক হয়েছে। যেখানে বেশিরভাগ শ্রমিক নিরক্ষর হয় সেখানে একজন শ্রমিক বসে ইংলিশ পত্রিকার একটি আর্টিকেল পড়ছে এটি দেখে সে খুবই আশ্চর্য হয়েছে।

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovqXYqtnvTwyujR3e6QABJn4NcxC3bdgrwX6NgAN649cHgfxhe5ph4GRfCVnb7WW5KRh8RjMmS8SJiGa3FeiiFtjQ.png

তিনি আরিফকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি ইংলিশ পড়তে পারো? আরিফ উত্তর দিল জি স্যার আমার স্কুল জীবন থেকেই ইংলিশ পত্রিকা পড়ার অভ্যাস আছে। তখন তিনি আরিফকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি কত দূর পড়ালেখা করেছো? আরিফ তখন তাকে সব কিছু খুলে বললো। এর ভেতর কন্ট্রাক্টর ও সেখানে এসে উপস্থিত হয়েছে। কনস্ট্রাকশন সাইট এর মালিক ভদ্রলোক কন্টাকটার কে বলল ওকে এক সময় আমার অফিসে পাঠিয়ে দেবেন। দেখি ওর জন্য কিছু করা যায় কিনা। (চলবে)

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovqXYqtnvTwyujR3e6QABJn4NcxC3bdgrwX6NgAN649cHgfxhe5ph4GRfCVnb7WW5KRh8RjMmS8SJiGa3FeiiFtjQ.png

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

গল্প টা বেশ ভালো লেগেছে। পরবর্তী পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার। সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

গল্পের শুরুটা আকর্ষণীয় আর সাবলীল হয়েছে। এমন জায়গায় শেষ করেছো যে পরবর্তী পর্বটি আমাকে পড়তেই হবে। আশা করি এভাবে বাকি অংশেও আকর্ষণ ধরে রাখতে পারবে। তবে সত্যি বলতে কি গল্প মানুষ একেবারেই পড়তে চায় না। যদি সত্যি কোন ঘটনা উপস্থাপন করতে পারো সেক্ষেত্রে হয়তো পাঠকদের আগ্রহ তৈরি হবে।

 2 years ago 

আপনি সুন্দর একটি গল্প আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন। আরিফের জীবনযাত্রা মান আমাদেরকে দেখিয়েছেন এবং বাবা মরার পর আরিফের ঘাড়ে সংসারের বোঝা এসে পড়েছে যা সত্যিই আমাকে ব্যথিত করেছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56588.25
ETH 2399.94
USDT 1.00
SBD 2.32