নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত ক্যাম্পিংয়ের প্রোগ্রাম সফল করা (তৃতীয় পর্ব)।
যদিও প্রথমে আমাদের পরিকল্পনা ছিল আমরা চরে গিয়ে সেখানকার কোন এক স্থানীয় বাড়িতে গিয়ে তাদের দিয়ে রান্নাটা করাবো। এই ধরনের কাজ আমরা এর আগেও করেছি। গ্রামের মানুষেরা দরিদ্র হলেও তাদের হৃদয়টা অনেক বড়ো হয়। তারা মানুষকে আতিথেয়তার সুযোগ পেলে বেশ খুশি হয়। আমরা যখন বাজার করেছিলাম তখন কিছু বেশি করে কিনেছিলাম। কারন আমরা চাচ্ছিলাম যে বাড়িতে রান্না হবে তারাও যেন আমাদের সাথে খাওয়া-দাওয়া করতে পারে। যাই হোক জোবায়ের রাতের খাবার দায়িত্ব নেওয়ার পরে আমরা মোটামুটি নিশ্চিন্ত হলাম। তারপর তাবুর আশেপাশের এলাকাটা আমরা ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলাম। যদিও রাতের অন্ধকারে একটু ভয় ভয় করছিলো ঘোরাফেরা করতে। কারণ নদীর পাড়ে সাপ বা অন্য কোন ধরনের ক্ষতিকর প্রাণী থাকতে পারে। এই চিন্তা মনের ভেতরে কাজ করছিলো। যদিও জানতাম শীতের দিনে সাধারণত সাপ বাইরে বের হয় না। তারপরও এক ধরনের ভয় মনের ভেতরে কাজ করছিলো। এর ভেতরে আমি তাঁবুর ভেতরে ঢুকে থাকার জায়গা গুলো পরীক্ষা করতে লাগলাম। থাকার জায়গা গুলো দেখে আমি বেশ সন্তুষ্ট হলাম। বুঝতে পারলাম এখানে ৮ থেকে ১০ জন মানুষ থাকা সম্ভব। ততক্ষণে আমাদের ক্যাম্পিংয়ের লোক বাড়তে বাড়তে লোক সংখ্যা হয়েছিল প্রায় ১১ জন। কারণ জোবায়ের আসার সময় তার এক বন্ধুকে সাথে করে নিয়ে এসেছিলো। প্রথমে বুঝতে পারিনি তাকে আনার কারণটা কি? পরে জোবায়ের যখন বারবিকিউ শুরু করলো তখন বিষয়টা বুঝতে পেরেছিলাম।
আমরা যারা ক্যাম্পিং এ গিয়েছিলাম তাদের ভেতর কিছু লোকজন কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে কার্ড খেলার কথা বলতে লাগলো। আমিও প্রথমে মনে করলাম কিছুক্ষণ কার্ড খেলুক। কারণ এখন তো করার মত তেমন কিছু নেই। কিন্তু তখন বিষয়টা বুঝতে পারিনি যে কার্ড খেলার এই গ্রুপটা আর সেখান থেকে উঠবেই না। আমিও প্রথমে কিছুক্ষণ বসে তাদের কার্ড খেলা দেখতে লাগলাম। দেখতে দেখতে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিলো এদের সাথে কার্ড খেলায় যোগ দেই। তবে আমি কার্ড খেলা ছেড়েছি বেশ কয়েক বছর আগে। তারপর থেকে আর কখনো কার্ড খেলিনি। যাই হোক এইভাবে বেশ কিছুক্ষন তাদের খেলা দেখতে দেখতে রাত নটা বেজে গেলো। কখন যে এতটা রাত হয়েছে বুঝতেই পারিনি। এর ভেতর জোবায়ের তার বাড়ি থেকে খিচুড়ি আর মাংস রান্না করে নিয়ে চলে এসেছিলো। আমাদের সাথে থাকা অনেকে তখন বলছিল ক্ষুধা লেগে গিয়েছে। যেহেতু গরম গরম খিচুড়ি চলে এসেছে তাই সবাই মিলে খাওয়া শুরু করলাম। খিচুড়িটা একটু বেশি ঝাল হয়েছিলো। তারপরেও দারুন লেগেছিল খেতে।
খিচুড়ি খাওয়া শেষ হতে আমি জোবায়ের কে বললাম কিছুক্ষণ পরে আমরা বারবিকিউ করা শুরু করি। কারণ বারবিকিউ এর আয়োজন শুরু করে বারবিকিউ করতে বেশ খানিকটা সময় লাগবে। বারবিকিউ করার আয়োজন করতে গিয়ে খেয়াল করলাম আমাদের কয়েকটা ইট প্রয়োজন। পরে জোবায়ের আবার সাথে একজনকে নিয়ে একটা মোটরসাইকেল নিয়ে চলে গেল ইট আনতে। সাথে আরো দুই একটা টুকিটাকি জিনিস নিয়ে এসেছিল বারবিকিউ করার জন্য। রাত দশটার দিকে জুবায়ের বারবিকিউ এর আয়োজন শুরু করলো। তখন আমি যে সমস্ত সদস্যরা কার্ড খেলছিলো তাদের সবাইকে ডাকলাম বারবিকিউ করার ওখানে আসার জন্য। কিন্তু তারা কিছুতেই সেখান থেকে উঠলো না। এর ভেতরে আমরা আগুন জ্বালিয়ে ক্যাম্প ফায়ার এর ব্যবস্থাও করেছিলাম। মূলত সেই আগুনের কয়লা দিয়ে পরে বারবিকিউ করা হয়েছিলো। সাথে অবশ্য দোকান থেকে কিনে আনা কয়লাও ছিলো। বারবিকিউ শুরু করার সময় ছোট একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেলো। আমরা যে নেট নিয়েছিলাম বারবিকিউ করার জন্য সেগুলোর থাকে প্রচন্ড ধারালো। তার একটা কোনায় আঘাত পেয়ে জোবায়েরের পায়ের কিছুটা অংশ কেটে গেলো। অবশ্য কিছুক্ষণ পরেই তার রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। যাই হোক জোবাইরের পা ঠিক হওয়ার পরে আমরা বারবিকিউ করতে শুরু করলাম।
তখনই জোবায়েরের বন্ধুর ভূমিকাটা বুঝতে পারলাম। সেই ছেলেটি থাকে মূলত মিডিল ইস্টে। সেখানে তারা মাঝে মাঝে বিভিন্ন রকমের বারবিকিউ পার্টি করে। তার বারবিকিউ করার অভিজ্ঞতার জন্য জুবায়ের মূলত তাকে সাথে করে নিয়ে এসেছিলো। আমাদের বারবিকিউ করার সময় সেই ছেলেটা বেশ সাহায্য করেছিলো। সেদিন একটা পর্যায়ে বুঝতে পেরেছিলাম সেই ছেলেটা না থাকলে বারবিকিউ করতে আমাদের অনেক সমস্যা হোতো। প্রথমে আমরা যেই লাকড়িগুলো দিয়ে ক্যাম্প ফায়ারের ব্যবস্থা করেছিলাম সেগুলোর কয়লা তার ওপরে আমাদের কিনে আনা আরো কিছু কয়লা দিলাম। তারপর কেরোসিন ঢেলে সেই কয়লা গুলোতে ভালোমতো আগুন ধরানো হোলো। যখন সমস্ত কয়লা পুড়ে একেবারে লাল হয়ে গিয়েছিলো তখন আমরা বারবিকিউ করতে শুরু করলাম। প্রথমে দু এক পিস মুরগি একটু বেশি পুড়ে গিয়েছিলো। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে করে বারবিকিউ করাতে সেদিনের বারবিকিউ টা আসলেই দারুন হয়েছিলো। যদিও প্রথমে আমি খুব টেনশনে ছিলাম জোবায়েরকে নিয়ে। কারণ এর আগের বারের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পেরেছিলাম জোবায়েরের বারবিকিউ করার কোন অভিজ্ঞতা নেই। জোবায়র বলছিলো গত কয়েক দিনে সে বেশ কয়েকটা বারবিকিউ পার্টিতে অংশগ্রহণ করেছে। সেখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছে। এবার বারবিকিউ করার সময় সেই ব্যাপারটা তার ভেতরে দেখতে পেলাম। (চলবে)
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | গজারিয়া |
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এসব ক্যাম্পিং অনেক বন্ধু মিলে করতে ভালোই লাগে ৷ আপনারা দেখি দারুন একটা সময় অতিবাহিত করেছেন ৷ সত্যি অসাধারণ লাগলো ৷ আপানার চরের পাশের বাড়ি থেকে রান্না করেছেন ৷ আসলে মানুষ গুলো গরিব হতে পারে কিন্তু মন বড়ই হয় ৷
যা হোক দারুন ছিল গরম গরম খিচুড়ি সাথে সালাত ৷
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই দারুন একটি ব্লগ শেয়ার করার জন্য ৷
আমারও গতবারের ঘটনা মনে আছে ভাই। যাইহোক জোবায়ের তাহলে মোটামুটি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এই ব্যাপারে। আর সাথে মিডল ইস্ট থেকে আসা ছেলেটিকে নিয়ে যাওয়াতে খুব ভালো হয়েছে। তবে জোবায়ের না থাকলে রান্না নিয়েও আপনারা ঝামেলায় পরতেন। আসলে এই ধরনের পার্টিতে এমন মানুষ থাকলে খুব ভালো হয়। কার্ড খেলার নেশা আসলেই খারাপ। কার্ড খেলতে বসলে রাতদিন কিভাবে পার হয়ে যায়, সেটা বুঝাই যায় না। আমিও কার্ড খেলা বাদ দিয়েছি বেশ কয়েক বছর আগে। সবমিলিয়ে পোস্টটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো ভাই। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাই।