বন্ধুর সাথে হঠাৎ করে ঘুরতে যাওয়া (প্রথম পর্ব)।
কয়েকদিন আগে হঠাৎ রাতে বন্ধু রাফসানের ফোন পেলাম। তখন বাজে প্রায় রাত দশটা। এত রাতে রাফসানের ফোন দেখে আমি চিন্তা করলাম কোন সমস্যা হলো কিনা আবার। কারণ রাফসান সাধারণত রাতে আমাকে কখনো ফোন দেয় না। যাই হোক ফোন রিসিভ করেই ওকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? ও বলল তেমন কিছু না। কাল সকালে ঘুরতে যাবি নাকি? আমি বললাম কোথায় যেতে চাস? তখন ও বলল আমরা এর আগেও বেশ কয়েকবার যেখানে যাওয়ার প্ল্যান করে যেতে পারিনি সেই রাজবাড়ীতে যাবো।
আমরা কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব মিলে দীর্ঘদিন ধরেই ফরিদপুরের আশেপাশের কোন জেলায় ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। কিন্তু সে পরিকল্পনাটা বিভিন্ন কারণে আর বাস্তবায়ন হচ্ছিল না। কিছুদিন আগে আমরা চার বন্ধু মিলে রাজবাড়ী ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু যেদিন ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল সেদিন সকালে বন্ধু রাসেলের কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা থাকার কারণে আমাদের সেদিনের ট্যুরটা ক্যান্সেল হয়েছিলো। আপনারা জানেন আমি ঘোরাফেরা করতে এমনিতে অনেক পছন্দ করি। তাই বন্ধু রাফসানের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়ে আর দেরি না করে নিজের সম্মতি জানালাম।
তারপর রাফসানের কাছে জিজ্ঞেস করলাম আমাদের সাথে আর কে যাবে? তখন রাফসান জানালো ওদের এলাকার এক ছোট ভাই আমাদের সাথে যাবে। তারপর আমরা দুজন মিলে ঠিক করলাম সকাল নটার ভেতরে আমরা লক্ষ্মীপুর রেল স্টেশনে একত্রিত হব। কারণ সকাল নটার সময় ফরিদপুর থেকে রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে একটি ট্রেন ছেড়ে যায়। আর আমাদের এই ট্যুরটা প্লান করা হয়েছিল মূলত ট্রেন ভ্রমণটা কে মাথায় রেখে। ট্রেনে ভ্রমন করতে আমার কাছে এমনিতেই অনেক ভালো লাগে। কয়েক বছর আগে যখন প্রথম ফরিদপুর রাজবাড়ি রেল সার্ভিস চালু হয়েছিল দীর্ঘ বিরতির পর। তখন আমরা বেশ কিছু বন্ধু-বান্ধব মিলে রাজবাড়ী গিয়েছিলাম ঘুরতে ট্রেনে করে। তারপর আর যাওয়া হয়নি। যদিও তখনকার মত এখন আর এতগুলো বন্ধু-বান্ধব একসাথে হওয়া হয় না।
যাইহোক আমরা পরিকল্পনা করলাম নটার আগেই আমরা রেল স্টেশনে উপস্থিত হবো। পরিকল্পনা মোতাবেক নটা বাজার কিছুক্ষণ আগে আমি লক্ষ্মীপুর রেল স্টেশনে উপস্থিত হলাম। সেখানে পৌঁছে দেখি বন্ধু রাফসান আগে থেকেই দাঁড়িয়ে রয়েছে সাথে ওর সেই ছোট ভাই। আমি গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম টিকিট কেটেছিস কিনা? ও আমাকে টিকিট দেখিয়ে জানালো টিকিট কাটা হয়েছে। আমি যখন রেল স্টেশনে পৌঁছেছি তখনও ৯ টা বাজতে প্রায় ১৫ মিনিট বাকি। তাই আমরা রেলস্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আমরা অনেক দূর থেকে ট্রেনের আওয়াজ শুনতে পেলাম। তখন আমরা ধীরে ধীরে প্লাটফর্মের দিকে আগাতে লাগলাম।
এর আগের বার যখন আমরা রাজবাড়ী গিয়েছিলাম তখন ট্রেন ছিল একেবারেই ফাঁকা। শুধু আমাদের মত কিছু ঘুরতে যাওয়া মানুষজন ট্রেনে ছিলো। আমি মনে করেছিলাম এবারও তেমনটাই হবে। কিন্তু ট্রেন কাছাকাছি আসার পর দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। পুরো ট্রেন লোকে ঠাসা। এত লোক দেখে আমি কিছুটা অস্বস্তি বোধ করতে লাগলাম। মনে মনে চিন্তা করছিলাম কি ভেবেছিলাম আর কি হলো। যাইহোক শেষ পর্যন্ত ভিড় ঠেলে ট্রেনে প্রবেশ করলাম। অবশ্য আমরা ট্রেনে ওঠার আগে ট্রেন থেকে বেশ কিছু যাত্রী ফরিদপুরে নেমেছে। যার ফলে ট্রেনের ভিতরে ভিড় কিছুটা হলেও কমেছিলো। আমরা ট্রেনে প্রবেশ করে বসার জন্য জায়গা খুঁজতে লাগলাম। আগে পরিকল্পনা করেছিলাম আমরা তিনজন একসাথে বসবো। কিন্তু ট্রেনের কামরার ভেতরে ঢুকে সেখানকার পরিস্থিতি দেখে আমাদের পরিকল্পনার সাথে সাথে বাদ দিতে হলো। বহু কষ্ট করে আমরা তিনজন তিন জায়গায় সিট জোগাড় করতে পারলাম। কিছুক্ষণ পরে ট্রেন ছেড়ে দিল রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে।
আমরা যে ট্রেনটাতে উঠেছিলাম এই ট্রেনটা একটা লোকাল ট্রেন। এই ধরনের ট্রেন সাধারণত খুব আস্তে চলে। আগের রাতে ট্রেন ভ্রমণের কথা চিন্তা করে মনে করেছিলাম জানালার পাশে বসে রেল রাস্তার দুপাশের প্রকৃতি দেখতে দেখতে রাজবাড়ি পৌঁছাব। কিন্তু সে আশায় ঘুরে বালি। ভিড়ের ভিতর কোন রকমে ঠেলাঠেলি করে একটা সিট জোগাড় করে তাতে কোনরকমে বসে আমরা যাচ্ছিলাম। আর তিনজন তিন জায়গায় বসার কারণে যাত্রাটা মোটেও উপভোগ্য হয়নি। চলতে শুরু করার কিছুক্ষণ পর আমি ট্রেনের ভিতরে পরিবেশ দেখায় মনোযোগ দিলাম। বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ ট্রেনে করে যাচ্ছে। ট্রেনে এত ভিড় হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে ফরিদপুর থেকে বাসে করে রাজবাড়ী যেতে ভাড়া লাগে ষাট টাকা। আর এই ট্রেনে ভাড়া হচ্ছে মাত্র ১৫ টাকা। এই জন্য যাদের রাজবাড়ী যাওয়ার প্রয়োজন হয় তারা সবাই চেষ্টা করে ট্রেনে করে রাজবাড়ি যেতে। ট্রেনে জার্নি এমনিতেই নিরাপদ বাস জার্নি থেকে। আর তাছাড়া ভাড়াও অনেক কম। এই সুবিধা দুটোর কারণে ট্রেনে যাত্রি হয়েছিল অনেক বেশি। (চলবে)
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | ফরিদপুর |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলে ঘোরাঘুরির ব্যাপারটা বন্ধুদের সাথেই বেস্ট। হ্যাঁ ট্রেনে ভ্রমণ করা অনেকটাই নিরাপদ আর বাসের চেয়ে ট্রেনে ভাড়া মূলমূলক অনেক কম দেখুন যেখানে রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুর আসতে বাসে ষাট টাকা ভাড়া লাগে সেখানে ট্রেনে আসতে মাত্র ১৫ টাকা ভাড়া লাগে। যাইহোক একদিন ঘুরতে ঘুরতে আমাদের কুষ্টিয়াতে চলে আসেন একই ট্রেনে আসা যায় তাহলে আর সমস্যা কোথায়।
ভাইয়া ঘুরতে যাওয়ার মজাই হলো সবাই এক সাথে বসে আড্ডা দিতে দিতে ভ্রমন করা। কিন্তুু আপনাদের ক্ষেত্রে তার উল্টা হলো। তিনজন তিন জাগায়। লোকাল ট্রেন হওয়ার কারনে এমন হয়েছে। আর ট্রেন জার্নির দুইটি কারন যথার্থ বলেছেন। ধন্যবাদ।।
ট্রেন জার্নি আমারও ভীষণ পছন্দ। আসলে বন্ধুদের সাথে জার্নি করার সময়, একসাথে বসতে না পারলে জার্নিটা উপভোগ করা যায় না। বরং পুরো জার্নি বোরিং লাগে। এই গরমে ট্রেনের মধ্যে এতো মানুষ থাকলে অস্বস্তি লাগাটাই স্বাভাবিক। আশা করি রাজবাড়ীতে নিরাপদে পৌঁছেছেন এবং দারুণ সময় কাটিয়েছেন সেখানে। যাইহোক সেগুলো পরবর্তী পর্বে অবশ্যই জানতে পারবো আশা করি। ভালো থাকবেন সবসময়।
ট্রেন জার্নি আমার ও ভীষণ পছন্দ। আর আপনার পোস্ট পড়ে জেনেছি আপনি ঘুরতে এবং খেতে খুব পছন্দ করেন।যাই হোক রাত ১০ টায় কখনও রাফসান ভাইয়া আপনাকে কল দেয় না।কিন্তু সেদিন দিল। আপনি কিছুটা চিন্তিত হয়ে ফোন রিসিভ করলেন।ভাইয়া ফোন দিয়ে রাজবাড়ী ঘুরতে যাওয়ার কথা বলল।আপনারা গেলেন।কিন্তু ট্রেনে একসাথো বসে গল্প করতে করতে যাবেন তা আর হলো না।তিনজন তিন জায়গায় বসলেন।জানালার পাশেও সিট পেলেন না।খুব দুঃখজনক ব্যাপার হলো আসলে।ট্রেনটি ছিল লোকাল। ট্রেনের জার্নি সত্যি ই খুব ভালো লাগে,যদি জানালার পাশে বসা যায়।অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার অনুভূতি গুলো পড়ে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।