হঠাৎ নিভে যাওয়া (শেষ পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক


রাসেল সেই দোকানে বেশ সুখে শান্তিতেই ছিলো। সেখানে আগের দোকানের মত এতক্ষণ ডিউটি করতে হতো না। তাছাড়া সপ্তাহে একদিন ছুটির ব্যবস্থা ছিলো। সেই সাথে বেতন টাও আগে দোকান থেকে বেশ কিছুটা বেশি। তাছাড়া দোকান মালিক মাঝে মাঝেই রাসেলকে এটা সেটা উপহার দিতো। সবকিছু মিলিয়ে রাসেলের জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছিলো। রাসেল মনে মনে চিন্তা করছিল তার কষ্টের সময় মনে হয় শেষ হয়েছে। এই দোকানে কাজ করাটা সে খুব উপভোগ করছিলো। দোকানটাকে সে একেবারে নিজের দোকানের মত সে আগলে রাখতো। রাসেলের কর্মকাণ্ড দেখে দোকান মালিক খুবই খুশি ছিলো। এভাবেই দিনকাল চলছিলো।

Polish_20230313_002834723.jpg

একদিন সন্ধ্যার সময় রাসেলের মালিক তাকে বলে আমার শরীরটা বেশি ভালো লাগছে না। আমি বাড়ি চলে গেলাম। আজকে দোকানটা তাড়াতাড়ি বন্ধ করে তুমি চাবিটা আমার বাড়িতে দিয়ে যেও। রাসেল বলল চাচা আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আপনি বাড়ি চলে যান। আমি যথাসময়ে দোকান বন্ধ করে আপনার কাছে চাবি পৌঁছে দিয়ে তারপর বাড়িতে যাবো। তারপর দোকান মালিক গাড়িতে উঠে তার বাড়িতে চলে যায়। রাসেল দোকানের কিছু জিনিসপত্র গোছগাছ করছিল। সে অন্যান্য কর্মচারীদের উপর কিছুটা বিরক্ত ছিলো। কারণ বাদ বাকি কেউই তার মত জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখে না। দোকানের বিভিন্ন জিনিসপত্র এখানে সেখানে এলোমেলোভাবে পড়ে রয়েছে। সেগুলো গুছিয়ে সে জায়গা মত রাখছিলো।

এর ভেতরে দোকানের এক কর্মচারী মালিক না থাকার সুযোগে দোকানের ভিতর সিগারেট ধরানোর জন্য দেশলাই জালায়। সাথে সাথেই প্রচন্ড এক বিস্ফোরণে রাসেলের দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে আশেপাশের লোকজন এসে দেখে রাসেলের দোকানের ভেতর যে কয়জন লোক ছিল। তারা প্রচন্ড বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। দোকান মালিক এই খবর শোনার সাথে সাথে সে অসুস্থ শরীরে সেখানে উপস্থিত হয়। এসে দেখে তার দোকান একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দোকানের ভেতরে কর্মচারীদের মৃতদেহ গুলো ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সে।

সে কর্মচারীগুলোর ভিতরে রাসেলকে খুঁজছিল আর মনে মনে কামনা করছিলো রাসেল যেন এর ভিতরে না থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে তার টেবিলের পেছনে একটি হাত দেখতে পেলো। দেখে বোঝা যাচ্ছিল অনেক জিনিসপত্র নিচে হয়তো কোন মানুষ চাপা পড়েছে। তার হাতটি বের হয়ে রয়েছে। যখন সবকিছু সরিয়ে হাতটি ধরে টেনে বের করা হয়। তখন সে দেখে এটি রাসেলের মৃতদেহ। রাসেলের মৃতদেহ দেখার পর তার দু চোখ বেয়ে পানি ঝরতে থাকে। এই বয়সে একটি ছেলের জীবন হঠাৎ নিভে যাওয়া সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না।

প্রতিবছর আমাদের দেশে এমন অসংখ্য অগ্নি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। সেই সমস্ত দুর্ঘটনায় এমন অনেক তাজা প্রাণ অকালেই ঝরে যায়। এই অগ্নি দুর্ঘটনা গুলোর ভেতরে বেশির ভাগ ঘটনা লোক চক্ষুর অন্তরালে থেকে যায়। অত্যন্ত আলোচিত কিছু ঘটনা দেশের মানুষের নজরে আসে। কিন্তু তাতে কোনই লাভ হয় না। প্রতিবার এমন দুর্ঘটনার পরে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই তদন্ত কমিটি কিছু সুপারিশ প্রণয়ন করে। কিন্তু সেই সুপারিশ কখনোই বাস্তবায়িত হয় না। এই সমস্ত দুর্ঘটনার পেছনে যারা দায়ী তাদের চেহারা কখনো উন্মোচিত হয় না। যার ফলে প্রতিবছর এমন দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। আর এমন তাজা প্রাণগুলো অকালে ঝরে পড়ছে। আর কতদিন এমন ভাবে রাসেলদের প্রাণ ঝরতে থাকবে? আর কত প্রাণ ঝড়লে এই সমস্ত ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে? সকলের কাছে এই প্রশ্ন রেখে পোস্টটি শেষ করছি।

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

রাসেল ক্ষনিকের জন্য নতুন কর্মস্থলে সুখ পেলেও সেটা দীর্ঘস্থায়ী হল না। তার আগেই অকালে রাসেলের প্রাণ ঝরে গেলো। এতে করে রাসেলের পরিবার আরও বিপদের সম্মুখীন হবে দিনের পর দিন। কেননা একমাত্র রাসেল ই ছিল তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। এভাবে রাসেলের মতো অনেক কিশোর অকালে ঝরে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর শেষ কোথায়? এর উত্তর কারো জানা নেই। যাইহোক প্রতিটি পর্ব ভীষণ সুন্দর ছিল ভাইয়া। এতো সুন্দর একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন সবসময়।

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 64160.97
ETH 3145.28
USDT 1.00
SBD 3.86