প্রাণের বন্ধুদের সাথে ঈদ পূর্ববর্তী আড্ডা।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


একটা সময় ছিল যখন বন্ধু বান্ধব ছাড়া একটা দিনও চলত না। প্রতিদিনই বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজি হতো। আমাদের ব্যাচটাও ছিল অনেক বড়ো। প্রতিদিন আড্ডায় ১৫ থেকে ২০ জন বন্ধুবান্ধব উপস্থিত থাকতো। কিন্তু পড়ালেখা শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আস্তে আস্তে বন্ধু-বান্ধবের উপস্থিতি আড্ডাতে কমতে লাগলো। বর্তমানে তো এমন অবস্থা হয়েছে একসাথে দুজন বন্ধু-বান্ধব পাওয়াও অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার মনে হয়। এখন সেই পুরনো দিনের স্মৃতি মনে করে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলি। তবে এই খারাপ লাগার মাঝেও দুটি ঈদ আমাদের মনে নিয়ে আসে অনাবিল আনন্দ। কারণ এই সময় সকল বন্ধু-বান্ধবেরা এলাকায় ফিরে আসে। এই দুটি ঈদ বাদে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দেখা করার আর তেমন কোন উপলক্ষ নেই। এই কারণেই সব সময় চাতক পাখির মত দুই ঈদের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকি। এটা যে শুধু আমি করি তা নয়। বন্ধুবান্ধবদের সবার মনের অবস্থা প্রায় একই রকম।

IMG_20230628_175029.jpg

আগামীকাল ঈদ ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সব বন্ধু-বান্ধব এলাকায় ফিরে এসেছে। এই দুই ঈদের আগে আমরা একসাথে বেশ কিছু বন্ধু-বান্ধব জড়ো হয়ে আড্ডা দিই। এই আড্ডাটা আমাদের সকলেরই অত্যন্ত পছন্দের। যদিও আস্তে আস্তে এই আড্ডাতেও বন্ধু বান্ধবের উপস্থিতি কমছে। কারণ সকলেরই এখন সংসার রয়েছে। সেখানে তাদেরকে নানা রকম দায়িত্ব পালন করতে হয়। পারিবারিক বিভিন্ন রকম দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আড্ডায় উপস্থিত হওয়া বন্ধুর সংখ্যা দিন দিন কমছে। যাই হোক আজ বিকেলে আমরা বেশ কিছু বন্ধু-বান্ধব এক জায়গায় জড়ো হয়েছিলাম। অবশ্য আজকের আড্ডাটা হয়েছিল একেবারেই পরিকল্পনা ছাড়া। প্রথমে আমি আর ফেরদৌস দুজনে বাজারে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে দুজনে টেপাখোলাতে ফিরলাম। এর ভিতরে বন্ধু রাসেলের সাথে ফোনে কথা হলো। সে জানালো সেও শহরের দিকে আসছে। তখন তাকে বললাম আমরা যে চায়ের দোকানে আড্ডা দেই সেখানে আসতে।

IMG_20230628_183013.jpg

সেই চায়ের দোকানে গিয়ে আমি আর ফেরদৌস বসার পরে আমাদের আর এক বন্ধু হেদায়েত ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলো আমি কোথায় আছি? আমি জানালাম আমি তোদের এলাকাতেই আছি। সে বলল সে নামাজ পড়তে যাচ্ছে। নামাজ পড়া শেষ হলে আমাদের সাথে যোগ দেবে। এভাবে আস্তে আস্তে আমরা প্রায় ছয় সাতজন বন্ধু একত্রিত হলাম। সবাই এক জায়গায় হওয়ার পরে বন্ধু হেদায়েত বলল চলো সবাই হাঁটতে হাঁটতে গুচ্ছগ্রামের দিকে যাই। গুচ্ছগ্রাম জায়গাটি বলতে পারেন আমাদের বন্ধুবান্ধবদের জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী জায়গা। কারণ সেখানে আমরা ঈদের আগের দিন আড্ডা দেই এবং এটা দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। যাই হোক সবাই এক জায়গায় হওয়ার পরে ধীরেসুস্থে গল্প করতে করতে গুচ্ছগ্রামের দিকে হাঁটতে লাগলাম।

IMG_20230628_183007.jpg

আজ দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়েছে। দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি থেমে গিয়ে আবহাওয়া কিছুটা ভালো হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে চারপাশের সবুজ প্রকৃতি আরো গাঢ় সবুজ রং ধারণ করেছে। এমন চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশের ভেতর দিয়ে হাঁটতে আমাদের বেশ ভালই লাগছিলো। আমরা গল্প করতে করতে একসময় গুচ্ছগ্রাম পৌঁছে গেলাম। সেখানে গিয়ে বসে যথারীতি বন্ধু হেদায়েত চায়ের অর্ডার দিলো। আমরা সেখানে পৌঁছে একটি প্রাইমারি স্কুলের বারান্দায় বসে আড্ডা দিতে লাগলাম। স্কুলের পাশে একটি চায়ের দোকান রয়েছে। সেই দোকানদার আমাদের সকলেরই বেশ পরিচিত। কারণ আমরা দীর্ঘদিন থেকে তার দোকানের পাশে বসে আড্ডা দিয়ে আসছি। আর সেই চায়ের দোকানের বিশেষত্ব হচ্ছে সেখানে গরুর দুধের চা পাওয়া যায়। এই চা আমাদের বন্ধুবান্ধবদের প্রায় সকলেই অনেক পছন্দ করে।

IMG_20230628_180826.jpg

যদিও আমি চা খুব একটা খাই না। বিশেষ করে বাইরের দোকান থেকে। তারপরও সবাই যেহেতু চা খাচ্ছে তাই আমিও একটা লাল চা নিলাম। ইদানিং খাবার-দাবারের ব্যাপারে কিছুটা সচেতনতা অবলম্বন করার চেষ্টা করছি। যাইহোক চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আমরা সবাই বিভিন্ন রকম গল্পে মশগুল হয়ে গেলাম। আর আমাদের গল্পের ভেতরে মাঝেমাঝে পুরনো দিনের কথাগুলো ঘুরে ফিরে আসছিলো। এইভাবে সেখানে বসে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়ার পর আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম পদ্মার পাড়ের দিকে যাবো। গুচ্ছ গ্রাম থেকে পদ্মা পাড়ের দূরত্ব একেবারেই কম। যার ফলে আমরা অল্প সময় পদ্মার পাড়ে পৌঁছে গেলাম।

IMG_20230628_180837.jpg

সেখানে পৌঁছে ভরা যৌবনের পদ্মা নদী দেখে সকলে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলো। এর ভেতর আমাদের এক বন্ধু যে পেশায় সাংবাদিক সে বলল গরম গরম সিঙ্গারা খেতে ইচ্ছা করছে। সে জিজ্ঞেস করল এখানে কি আশেপাশে কোথাও সিঙ্গারা পাওয়া যাবে কিনা? তারপর আমরা পদ্মার পাড় ধরে হাঁটতে লাগলাম সিঙ্গারার দোকানের উদ্দেশ্যে। কিন্তু অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরও কোন সিঙ্গারার দোকান পেলাম না। আরো বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর শেষ পর্যন্ত আমরা একটি ভাজাপোড়ার দোকান পেলাম। কিন্তু সেখানে কোন সিঙ্গারা ছিল না। সেখানে ছিল কিছু আলুর চপ আর পুড়ি। যেহেতু সিঙ্গারা পাওয়া যায়নি তাই আমরা যা পেলাম সেটা দিয়েই হালকা নাস্তা সেরে নিলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে আমরা আবার সকলে অটো রিক্সায় উঠে সেই চায়ের দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। উদ্দেশ্য সেখানে গিয়ে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিবো। সেই চায়ের দোকানে পৌঁছে আরো বেশ কিছু পরিচিত ছোট ভাই এবং বন্ধু বান্ধবের দেখা পেলাম। তাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে তারপর বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানগুচ্ছ গ্রাম

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

যখন আমরা ছাত্র ছিলাম তখন বন্ধুরা সবাই মিলে এক জায়গাতে আড্ডা দিতে বেশ ভালো লাগতো। লেখাপড়া শেষ হওয়ার পরে সবাই তার নিজ নিজ কর্মে একেকজন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় কর্মজীবনে আছেন। হয়তো বছরে ঈদের এই দুই দিনই দেখা হয় সবাই মিলে একত্রেতে পুনরায় আবারো সেই পুরনো স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যায়। আবারো একসাথে আড্ডা খাওয়া দাওয়া সবকিছু। অনেকদিন বন্ধুরা এক জায়গায় হয়ে পদ্মার পাড়ে যাওয়ার অনুভূতিটা দারুন ভাই। বন্ধুরা মানে অনাবিল আনন্দ। আপনার অনুভূতিটা করে খুব ভালো লেগেছে ভাই। আপনার বন্ধু এবং আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।

 last year 

বন্ধু-বান্ধব হচ্ছে আত্মার পরম শান্তির একটা জায়গা। একটা সময়ে এসে সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়।তারপরেও ঈদের আনন্দে সবাই আবার একত্রিত হয়ে আনন্দ করা খুবই ভালো লাগা আমেজ কাজ করে।বন্ধুদের সাথে কাটানো মূহুর্তগুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। সব বন্ধুদের নিয়ে সব সময় আনন্দে থাকবেন এমনটাই আশাকরি। বৃষ্টির পর সবকিছু সতেজ হয়ে আছে।খুব ভালো লাগলো ফটোগ্রাফি গুলো। আপনি যত জায়গাই যান না কেন পদ্মার পাড় আপনার খুব প্রিয় জায়গা বুঝতে পারলাম।ধন্যবাদ ভাইয়া অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য।

 last year 

জীবিকার তাগিদে অনেক মানুষকে দূর দূরান্তে পাড়ি জমাতে হয়। তাই ইচ্ছে থাকলেও আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়ে উঠে না সবসময়। যাইহোক বেশ কয়েকজন মিলে অনেকদিন পর ভালোই হাঁটাহাঁটি করলেন এবং আড্ডা দিলেন ভাই। ফটোগ্রাফি গুলো চমৎকার হয়েছে। সবুজের সমারোহ দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। যাইহোক পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.15
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 55971.81
ETH 2362.70
USDT 1.00
SBD 2.32