মানুষের মনুষত্ব এখন কোমায় ।। জুন -০৬/০৬/২০২৩।।
☬নমস্কার সবাইকে☬
হ্যালো বন্ধুরা,
গতকালের এই ঘটনাটা নিজের চোখের সামনে দেখার পর শুধু আমার কাছে এটাই মনে হচ্ছিল যে, আমরা যে নিজেদেরকে মানুষ বলে পরিচয় দিই তবে আমরা আদেও কতটা মানুষ সেটা হয়তো আমরা নিজেরা বুঝতে পারি না। যে মানুষের ভিতরে মনুষ্যত্ব নেই আমি সেই মানুষকে একেবারেই মানুষ বলে মনে করি না। আপনার ভিতর যদি মনুষত্ব থাকে তাহলে আপনি একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারেন। যাই হোক গতকাল সন্ধ্যার দিকে আমি একটু বেরিয়েছিলাম স্টেশনের উদ্দেশ্যে। যদিও স্টেশনে যাওয়ার একটা বিশেষ কারণ ছিল সেটা হল যে, ডাই প্রজেক্ট করার জন্য কিছু রঙিন কাগজ কেনার দরকার ছিল। কিছু কিছু কাগজ আমার বাড়িতে থাকলেও আমি যে রঙের কাগজটা খুজছিলাম সেটা ছিল না তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে গরমের ভিতর বাইরে বেরোতে হয়েছিল। প্রচন্ড গরম লাগছিল তারপরও স্টেশনের উপর উঠে কিছুদূর হাঁটতেই আচমকা একটা ঘটনা আমার চোখের সামনে ঘটলো। হঠাৎ করেই দেখলাম একজন মাঝ বয়সী লোক প্লাটফর্মের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করেই প্ল্যাটফর্ম থেকে নিচে অর্থাৎ রেল লাইনের উপর পড়ে গেল। ব্যাপারটা আমি স্বাভাবিকভাবে নিতাম তবে যখন দেখছিলাম যে ঠিক তখনই একটা শিয়ালদা বনগাঁ গামী ট্রেন দ্রুত গতিতে প্ল্যাটফর্মের দিকে এগিয়ে আসছে, তখন আমি আসলে প্রচন্ড পরিমাণে ভয় পেয়ে গেছিলাম। কারণ এক মিনিটের ভিতরে যদি আমি লোকটাকে রেললাইন থেকে না উঠায় তাহলে হয়তো ট্রেন তাকে কেটে দিয়ে বেরিয়ে চলে যাবে।
সব থেকে আশ্চর্যকর যে ব্যাপারটা লাগছিল সেটা হল যে কোন একজন মানুষ এই ব্যাপারটা দেখে এগিয়ে আসছিল না। আর মহিলাদের কথা তো বাদই দিলাম তারা তো দেখেই অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই দেখলাম যে অন্য প্ল্যাটফর্ম থেকে একজন ছেলে দৌড়ে রেললাইনের উপর নেমে পড়ল আর সাথে সাথে আমিও এটা দেখে রেললাইনের ভিতর নেমে পড়লাম। লোকটা আসলে প্রচন্ড রকম ভারী ছিল তাই টেনে তুলতে আমাদের দুজনের বেশ কষ্ট হচ্ছিল। তারপর দেখলাম আমাদের দেখাদেখি আরো দুই তিন জন লোক লোকটার হাত ধরে রেললাইনের উপর টেনে তুলছে। এদিকে প্রায় ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢুকে গেছে তাই আমাদেরও দ্রুত রেললাইন থেকে সরে যাওয়ার দরকার ছিল। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে তখন প্ল্যাটফর্মের উপর প্রায় ৫০ জন লোক দাঁড়িয়ে গেছে এই ব্যাপার দেখার জন্য।কেউতো আবার ক্যামেরা বের করে ভিডিও করা শুরু করে দিয়েছে। এই ব্যাপার গুলো দেখে আসলে এত মাথা গরম হচ্ছিল বলে বোঝাতে পারবো না।
যেহেতু ভারতবর্ষের কিছু কিছু শ্রেণীর মানুষ রয়েছেন যারা নিয়মিত মদ্যপান করেন তাই অনেকেই হয়তো এটা ধারণা করেছিল যে লোকটা হয়তো মদ খেয়ে মাথা ঘুরে রেল লাইনের উপর পড়ে গেছে। তবে কেউ যদি মদ খেয়ে বা গাজা খেয়ে রেললাইনের উপর পড়ে থাকে তাহলে তো এটা কোন নিয়ম হতে পারে না যে তাকে সেখান থেকে বাঁচানো যাবে না। এবার ওখানে কিছু মহিলা দাঁড়িয়েছিল তারা আবার বলাবলি করছিল যে, তারা নাকি ভেবেছে লোকটা মদ খেয়ে রেল লাইনের উপর পড়ে গেছে তাই তাকে তুলতে সাহস পাচ্ছিল না। সত্যি কথা বলতে এই কথাটা শুনে আমার যেমন রাগ হচ্ছিল তেমনি হাসি পেয়েছিল খুব। আসলে ঘটনাটা হয়েছিল যে প্রচন্ড গরমে লোকটা অফিস থেকে ফেরার পথে মাথা ঘুরে রেল লাইনের উপর পড়ে যায়। লোকটাকে আসলে অনেক ভদ্র এবং নম্র মনে হয়েছিল। যাই হোক সেখান থেকে লোকটাকে তুলে নিয়ে একটা জায়গায় বসালাম এবং জল খাইয়ে কিছুটা সুস্থ করার চেষ্টা করলাম। এই ব্যাপারটা দেখার পর আমার এটাই মনে হয়েছিল যে, আমরা মানুষরা আসলে দিন দিন পশু হয়ে যাচ্ছি। নিজেদের স্বার্থ ছাড়া কিছুই আজকাল বুঝতে চাই না। মানুষ হয়েও যদি আমরা কিছুটা হলেও মানুষের পাশে না দাঁড়াতে পারি তাহলে কিসের মানুষ আমরা..?
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং। |
---|
আসলে লেখাটা পড়ার পর কি মন্তব্য করা উচিত এটাই আমি বুঝে পাচ্ছি না। সত্যি বলতে প্রতিটা ক্ষেত্রে এমন। আর জানেন তো, কিছু হোক না হোক একটু কে তেই ছবি তোলা বা ভিডিও করা প্রাণী গুলো যে কতটা অসুস্থ মস্তিষ্কের প্রাণী হয়ে গেছে সেটা যদি ওদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে পারতাম একবার! আর দুই একজন আছেন যারা সব ভিড় ঠেলে একটু ভালো কাজে এগিয়ে আসতে নেন, কিন্তু এই বিকৃত অসুস্থ মানুষ গুলোর জন্য তারাও নিজেদের কাজ ঠিক মত করতে পারেন না। যাই হোক অনেক সাহসী একটা কাজ করেছেন ভাই। খুব ভালো লাগলো আপনার তৎক্ষণাৎ সাহসী ভূমিকা পালন করতে দেখে।
যে ছেলেটা ওখানে দাঁড়িয়ে ভিডিও করছিল আমার মনে হচ্ছিলো তাকে ধরে টেনে রেললাইনের উপর ফেলে দেই। আসলে এখনকার মানুষজন ভাইরাল হওয়ার চক্করে কেমন জানি অসুস্থ মস্তিষ্কের হয়ে যাচ্ছে।
ভাইয়া এ পর্যন্ত আমারও। মানুষের মনুষত্ব আসলে এখন কোথায়? দিন দিন মানুষ এখন পশুতে পরিণত হচ্ছে। আমার তো মনে হয় লোকটি মাথা ঘুরিয়ে পড়েছে তাতে কি হয়েছে, আজকাল তো কেউ খুন হলেও কেউ এগিয়ে আসেনা।
আসলে ঐদিন ব্যাপারটা দেখে অনেকটাই অবাক হয়েছিলাম। যদিও এই ঘটনাটা বা এরকম ঘটনা আমার সাথে প্রথমবার ঘটেনি। এরকম অনেক ঘটনা আমার চোখের সামনে বারবার ঘটেছে।
বাহ,পোষ্টের টাইটেলটি খুব সুন্দর দাদা।তেমনি তোমার ভিতরে লেখা ভাবনাটি ও।তবে এটা ঠিক মানুষ চাইলে সবকিছু করতে পারে।তবে কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি মানুষকে অনেক কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তখন জেদ থাকলেও কাজ দেয় না এটা আমার মতে।আবার কিছু ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষ অমানবিকতার পরিচয় দেয়।যেমন তোমাদের মতো অন্য লোকগুলো দাঁড়িয়ে না থেকে সাহায্য করলে হয়তো আরো আগেই প্ল্যাটফর্মে লোকটিকে টেনে তুলতে পারতো ।কিন্তু তা না করে বাজে মন্তব্য এবং ভিডিও করা শুরু করে দিলো এটা যে কতটা হীনমন্যতার পরিচয় ভাষায় প্রকাশ করতে ঘৃণা করে ওই মানুষগুলোর সম্পর্কে দাদা।খুবই ভালো একটা কাজ করেছো দাদা,খুবই ভালো লাগলো জেনে।লোকটির বাড়ি কোথায় ছিল জেনেছিলে কিছু?ধন্যবাদ দাদা।
লোকজন এগিয়ে যাচ্ছিল না বা এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিল না এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। তবে যখন ভিডিও করা শুরু করে দিল তখন থেকে আসলে আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল।
প্রথমেই বলি, অপর পাশের প্লাটফর্ম থেকে ছুটে আসা ছেলেটা আর তুমি দুজন মিলেই একটা মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছ।তাই এর থেকে ভালো কাজ আর হতে পারে না। আসলেই মানুষ এখন বিপদে পড়লে আর এগিয়ে আসে না, শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে আর এটা খুবই বিরক্তিকর একটা ব্যাপার ।এগিয়ে না আসলেও তাকানোর দরকার নেই ,বলে আমি মনে করি। সাহায্যে যদি না করতে পারে ,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখার কোন দরকার নেই। যাই হোক তোমরা সকলে মিলে একটা মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছো,এর থেকে ভালো কাজ আর হতে পারে না।
আসলে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তবে এই কথাটা অনেকেই বুঝতে পারে না। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পোস্ট পড়ার জন্য।
এখনকার বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই মনুষ্যত্ববোধ নেই। কারণ রাস্তা ঘাটে বিভিন্ন সময় দেখতে পাই, কেউ বিপদে পড়লে সবাই দাঁড়িয়ে মজা দেখে। এমনকি ফেইসবুক লাইভে পর্যন্ত চলে যায়। আসলে এই ধরনের মানুষেরা এমন ঘটনা বেশ উপভোগ করে। আপনারা দুইজন সেই লোকটিকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন। জেনে সত্যিই খুব ভালো লাগলো ভাই। আপনাদের দুজনকে মন থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আসল কথা হলো ভাই আমরা দিন দিন আধুনিক হতে গিয়ে কোন একটা দিক থেকে দিন দিন ভেড়া হয়ে যাচ্ছি। এ সোশ্যাল মিডিয়ার চক্করে নিজেকে ভাইরাল করতে গিয়ে অনেক সময় নিজের মনুষত্ব হারিয়ে ফেলেছি।