হঠাৎ কলকাতা।। পর্ব : ৫ ।। বাস্তবতাকে কাছে থেকে দেখা আর কঠিন সত্যকে জেনে ঘরে ফেরা
চতুর্থ পর্বের পর থেকে শুরু করছি। আমার পোষ্টের টাইটেল টা দেখে অনেকেই হয়তো ভাবছেন লেখার মাঝে গভীর কিছু হয়তো বা ভাগাভাগি করে নিতে যাচ্ছি আজকে। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি নিরুপায়। চাইলেও অনেক কিছু প্রকাশ করা যায় না। নিজের ভেতরে সারা জীবন ধরে পুষে বেড়াতে হয়। হয়তো সবকিছু খুলে বলতে পারব না। চাইলে বলতে পারতাম কিন্তু ইচ্ছে নেই। পোষ্টের মাধ্যমে আমার স্মৃতিতে রেখে দিচ্ছি এই দিনটাকে। এতোটুকুই আমার পাওয়া। কোন একদিন হয়তো স্মৃতির পাতাগুলো যখন খুলে পড়তে শুরু করব তখন এই পোস্টটাই আমাকে অনেক কিছু মনে করিয়ে দেবে।
দিনটা ছিল ২৬ জুন ২০২২। আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় একটা দিন। এই দিনটা আমাকে মানুষ চিনতে সাহায্য করেছে। আর আমি বুঝতে পেরেছি আমি কতটা নোংরা খেলার শিকার হয়েছি। একটু দেরিতে হলেও এমন একটা দিন আমার লাইফে আসা খুব দরকার ছিল। তা না হলে হয়তো আমার অন্ধবিশ্বাস আর অন্যের মিষ্টি কথায় এবং চোখের জলের মায়া কান্নায় সবকিছু ভুলে যেতাম বারবার।
সকালবেলা টায় বেশ নাটকীয়তার ভেতর দিয়ে গেল। দেব তুল্য দুইজন মানুষের হাজার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল। তাই সবশেষে দুপুরের দিকে বাংলাদেশে ব্যাক করার জন্য টিকিট কনফার্ম করে ফেললাম। আমার ইচ্ছে ছিল বিকেল টাই ভালো কিছু স্মৃতি নিয়ে তারপরে বাড়ি ফিরব। কিন্তু আমার জন্য বিকাল আর সন্ধ্যাবেলা টায় কত কি যে অপেক্ষা করে আছে সেটা তখনও বুঝতে পারিনি।
দুপুরের একটু পরে ক্যাব নিয়ে চলে গেলাম শিথিরমোর। উদ্দেশ্য বেলুড় মঠ যাব। গঙ্গা নদী পার হয়ে যেতে হয়। ছোট লঞ্চে করে যেতে বেশ ভালোই লাগছিল। গঙ্গার জলটা একটু ঘোলা ঘোলা। ভালোই ঢেউ ছিল নদীতে। একটা সময় ভাবছিলাম গঙ্গার জল মাথায় দেয়ার সাথে সাথে সব মানুষের মনটা যদি পরিষ্কার হয়ে যেত তাহলে কতই না ভালো হতো। যাই হোক বেলুড় মঠ খুলতে দেরি হবে তাই সময়টুকু কাটানোর জন্য আবার চলে গেলাম স্পেন্সার। বেশ ঘোরাঘুরি হাটাহাটি চলছিল।
ঘন্টাখানেক সময় সেখানেই কেটে গেল। নিজের মতন করে কিছুটা সময় কাটছিল বেশ। হঠাৎ করেই সেখানে এক কালো বিড়ালের ছায়া এসে পরলো। যে কালো বিড়ালের ছায়াতে আমার জীবনের সমস্ত আবেগ অনুভূতি নিমিষেই মুছে ছারখার হয়ে গেছে। জায়গাটা থেকে বেরিয়ে চলে আসলাম। উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমার সবকিছুতে এই কালো বিড়ালটা কেন বেগ্রা বাঁধাবে। একটা সময় আমি জানতে পারি আমার পরিচিত মানুষ টাই ওই কালো বিড়ালটাকেই অনেক আদর যত্ন করে পুষে রাখে। আর ওই কালো বিড়ালটার যখন তখন হাচর বা কামড় দেওয়ার অধিকার আছে। সেই অধিকার তাকে দেওয়া হয়ে গেছে। সমস্ত সন্ধ্যে টুকু কালো বিড়ালটার উৎপাত সহ্য করলাম। আমি ছিলাম শুধুমাত্র নীরব দর্শক।
অজানা সব কথা জানা হয়ে গেল। যেটুকু বোঝার বাকি ছিল সেটুকুও বোঝা হয়ে গেল। আমি ছিলাম শুধুমাত্র টেস্টিং সাবজেক্ট। মুখ বুজে সবটা সহ্য করলাম। জীবনের বাস্তবতাটাকে অনুভব করলাম। মানুষকে চিনলাম। মানুষের আবেগ আর তার ঠুনকো, মিথ্যে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ নিজের চোখে দেখতে পেলাম। পাহাড় সম অভিযোগের বোঝা আমার কাঁধে মুহূর্তেই চেপে বসলো। ঈশ্বরকে বললাম, হে ঈশ্বর আমার হয়তো এই দিনটা দেখারই বাকি ছিল। জীবনের এতো কঠিনতম সত্য এত কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্যটা হয়তো বেশি মানুষের থাকে না। কিন্তু আমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান। হাতে কলমে সবকিছু বুঝে নিয়ে অভিযোগের বস্তা নিজের কাঁধে তুলে বাড়ি ফিরব বলে রাস্তা নিলাম।
আজকের এই লেখাটা যে বা যারা পড়বে সবাই ভাববে কি সব আবোল তাবোল গল্প করে যাচ্ছে। তবে আমি শুধু এটুকুই বলবো, আমি মানুষ চিনে ফিরতে পেরেছি আমার ঘরে। ভুল জায়গায় আমার আবেগ ঢেলেছি বছরের পর বছর। মিথ্যে সব প্রতিশ্রুতিকে বানিয়েছিলাম নিজের শক্তি। সেই জায়গাটুকু ফেরত নিয়ে এবার ফিরেছি আমার পৃথিবীতে। মানুষের মন যে বহুরূপী মৌলের থেকেও বেশি পরিবর্তন হতে পারে সেটা কোন বিজ্ঞানী বলার আগে আমি স্বচক্ষে দেখে এসেছি হয়তো প্রথম বার।
এই দিনটা আরো অনেক আগেই আসা উচিত ছিল আমার জীবনে। তাহলে হয়তো আরো অনেক আগে থেকেই নিজেকে গুছাতে পারতাম। দিনশেষে ঈশ্বর যা করেন ভালোর জন্যই করেন। দেরিতে হলেও নিজের ভুল যে ভেঙেছে এতেই আমি খুশি। এখন নতুন করে শুরু করার পালা। এগিয়ে যাওয়ার পালা।
সকলে ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন।
আপনার পোস্ট পড়ে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছি, আমার বলার কিছু না থাকলেও শুধু এটাই বলব সৃষ্টিকর্তা যা করেন সবার মঙ্গলের জন্যই করেন। তা আপনি এখন না বুঝলেও পরে ঠিকই বুঝতে পারবেন। দোয়া করি আপনার জন্য, আপনার এই খারাপ সময়ে যেন সৃষ্টিকর্তা আপনার পাশে থাকেন।
সত্যিই তাই আপু। এখন দেখার পালা সামনে কি অপেক্ষা করে আছে। পাশে থাকবেন সবসময় এতোটুকুই চাওয়া।
দেরিতে হলেও আপনার ভুল ভেঙ্গেছে তার জন্য শুকরিয়া আদায় করা উচিত। তা না হলে এই মিথ্যা অভিনয় আরো দেরিতে জানতে পারলে আপনার জীবন থেকে আরো কিছু বছর হয়তো গায়েব হয়ে যেত। এখনো জীবনের বেশি দূর যাননি। ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এখনই। ঘুরে দাঁড়িয়ে সবাইকে নিজের অবস্থান বুঝিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। আশা করি আপনি অবশ্যই পারবেন। শুধু প্রয়োজন একটু চেষ্টার। দোয়া ও শুভকামনা রইল রইলো।
আসলেই আপু। আমি ভগবান এর চরণে প্রণাম জানাই এমন কারো কাছ থেকে আমাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। অনেক টা সময় শেষ করে ফেলেছি। আর কিছু সময় গেলে হয়তো আমি নিজেই শেষ হয়ে যেতাম। দেখা যাক এখন কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারি। অনেক ভালো থাকবেন আপু।
আমাদের এই ক্ষুদ্র জীবনে হয়তো অনেক কিছুই পাওয়া হয়ে ওঠে না। হয়তো সময়ের সাথে সাথে প্রিয় মানুষগুলো বদলে যায়। আর সেই প্রিয় মানুষগুলোর আসল চেহারা যখন সামনে আসে তখন এই হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। তবুও সব কিছুকে সামলে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন। কারণ সে যদি ভালো থাকতে পারে তাহলে আপনিও ভালো থাকতে পারবেন। সেটা হয়তো লোক দেখানো ভালো থাকা। হয়তো নতুন কোন স্বপ্ন নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করতে পারবেন। আমরা স্বপ্নবাজ মানুষ স্বপ্ন দেখতে তো আর বাধা নেই। তাই নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়ে পুরোনোকে অতীত ভেবে এগিয়ে যাওয়াই উত্তম। হয়তো সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে। তবে এই দিনগুলো কখনোই ভুলা যাবে না। কথায় আছে যে মানুষটি আপনাকে বেশি কষ্ট দিবে তাকে ভুলে যাওয়া তত বেশি সহজ। কারণ তার প্রতি ঘৃণা তাকে ভুলে যেতে সাহায্য করবে।
চমৎকার কিছু কথা বলেছেন ভাই। মন ছুয়ে গেল একদম। আমার জীবনে যা ঘটে গেছে সেটা হয়তো কোন সিনেমার গল্প কেই হার মানিয়ে দিবে। মানুষ এর মন এত ছোট হতে পারে ,, আর মানুষ যে এতোটা লজ্জাহীন হতে পারে, নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না সত্যি। দোয়া করবেন আমার জন্য ভাই। অনেক ভালোবাসা রইল।
জীবনে অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা থাকে। সব আশা বা ইচ্ছাযই পূরণ হয় না। কিছু ইচ্ছা সারাজীবন ইচ্ছাই থেকে যায়। শুধু এইটুকু মনে রাখি সবসময় যে আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। দোয়া করি আপনার খারাপ সময় গুলো যেন খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়। শুধু আল্লাহর উপরে ভরসা রাখবেন। আপনার জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইল।
হ্যাঁ ভাই। ঈশ্বর এর উপরই সবটা ছেড়ে দিয়েছি। বাকি টা দেখি কি হয়। ভালো থাকবেন আর এভাবেই পাশে থাকবেন।