হঠাৎ কলকাতা ।। পর্ব : ৪ ।। দুই ভাইয়ের কাটানো কিছু মুহূর্ত
তৃতীয় পর্বের পর থেকে শুরু করছি। বেশ রাত করে ফিরে ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পরেছিলাম। ঘুমটা ঠিক আসছিল না রাতে। বারবার ফোনটা হাতে নিয়ে দেখেছি কখন ভোর হবে। যথারীতি ভোর হয়ে গেল। সারাদিন কি করবো শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম। সত্যি বলতে আমি জানতাম না আমার জন্য কত কি অপেক্ষা করে আছে। সকাল সকাল ফোনের ওপাশ থেকে বলতে থাকলো আমি যেন বাংলাদেশে ফিরে যাই তাড়াতাড়ি। আর বেশি সময় না থাকাই ভালো। অনেক কিছুই আবছা ছিল তখন আমার কাছে। কখন কোথায় কিভাবে কি ঘটছে আমি আসলে ঠিক বুঝে পাচ্ছিলাম না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা এই বেড়াজাল আমার সামনে সব সময় দাঁড়িয়ে থাকতো। দ্বিধার ভিতর থাকছিলাম বারবার। এক এক সময় এক এক রকম কথার মারপ্যাচে নিজেকে হারিয়ে ফেলছিলাম।
এর মাঝেই আমাকে ফোন দিল আমার এক দাদা। বাইক নিয়ে রওনা দিয়েছে আমার হোটেলের উদ্দেশ্যে। আমার কাছে পৌঁছতে এক ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। ওর নাম দেবাশীষ। আমার সাথে দেবাশীষের পরিচয় ফেসবুকের মাধ্যমে হয় ২০১১ সালের শেষের দিকে। তারপর থেকেই আমাদের দুজনের মাঝে অদ্ভুত একটা বন্ধুত্ব হয়ে যায়। আমরা যে অন্য পরিবারের সদস্য সেটা মনেই করিনি। আমার পড়াশোনা রেজাল্ট ইউনিভার্সিটি সবকিছু নিয়েই খোঁজখবর নিত। এমন না যে তার সাথে আমার খুব বেশি কথাবার্তা হতো। শুরুর দিকে বেশ যোগাযোগ থাকলেও একটা সময়ে এসে যোগাযোগ অনেক কমে যায়। বেশ কয়েক মাস পর পর কথা হতো। কিন্তু তারপরেও আমাদের ভেতরের যে বন্ধন তৈরি হয়েছিল সেটা এতটুকুও কমেনি। মাঝে এমনও হয়েছে দেবাশীষ দা বাংলাদেশে এসেছে, আমার সাথে দেখা করার জন্য অনেক চেষ্টাও করেছে কিন্তু দাদার ব্যস্ততার জন্য সুযোগ হয়ে ওঠেনি।
এর মাঝে ২০২০ সালে দাদা বাংলাদেশে এসেছিল। আমি তখন রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে চাকরি করি। দাদা শুধুমাত্র আমার সাথে দেখা করার জন্য খুলনা চলে এসেছিল। সেটাই ছিল আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ।
তো এবার কলকাতা যাওয়ার কথা শুরু হয়েছে সেই মার্চ মাস থেকে। নানান সমস্যায় যখন ভীষণ চাপে পরে যাই দাদার সাথে সেই তখন থেকেই যোগাযোগ শুরু করি। দাদার একটাই কথা যা করবি আমাকে বলে করিস। আসার পাঁচ ছয় দিন আগে আমাকে জানাবি। সত্যি বলতে কলকাতা যাওয়া নিয়ে অনেক নাটকীয়তার সামনে পরতে হয় আমাকে। তো এবার কলকাতা যাওয়ার একটা ডেট ফিক্স করলেও সেটা ক্যান্সেল করে আরো তিন দিন আগেই যেতে হয়। দাদা ব্যবসা করে। তাই সময় বের করা মুশকিল হয়। তারপরেও আমার অবস্থা বুঝে আমাকে বলে ঠিক আছে চলে আয়। আমি সাথে থাকতে না পারলেও যে কোন সমস্যায় আমি পাশে আছি।
যাই হোক সকাল এগারটার পর পর দাদা চলে আসে আমার হোটেলে। আমি সকাল থেকে যেহেতু কিছু খাই নি । আমাদের হোটেলের ওই রেস্টুরেন্টেই দুই ভাই মিলে বসে গেলাম খাওয়া দাওয়া করতে। সাথে সব গল্প চলতে থাকে। দাদা আমাকে বাংলাদেশে ব্যাক করার জন্য বার বার বারণ করতে থাকে। আমাকে দাদার সাথে ওদের বাড়িতে যেতে বলে। দুই দিন একটু আনন্দ করে তারপর ফিরতে বলে। কিন্তু আমার শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা ঠিক না থাকায় আমি আর দাদার কথায় সাই দিলাম না। সাময়িক সব বিষয়গুলো নিয়ে দাদার সাথে খোলাখুলি কথা হলো। দাদা নিজের মত করে তার সব পরামর্শ আমাকে দিলো। কথাগুলো বেশ ভাল ছিল এবং দামি ছিল।
ঘন্টাখানেক সময় দাদা আমার সাথে ছিল। দাদাকে বললাম আমি হয়তো খুব শীঘ্রই আবার ইন্ডিয়াতে আসবো। তারিখ সহ বলে দিলাম। দাদা বলল সবকিছু আমার মাথায় থাকবে। আর এর পরের বার যখন আসব দুই ভাই চুটিয়ে মজা করব। দাদার বাইকে চড়ে ১৫ মিনিটের মতো ঘোরাঘুরি করলাম। মারাত্মক বাইকটা । আমিও কিছুক্ষণ চালালাম। বেশ মজাই লাগছিল। পরের বারের জন্য সবকিছু তুলে রেখে দিলাম।
জীবনে চলার পথে এমন কিছু মানুষ পেয়েছি যারা হয়তো আমাকে সত্যিকারের ভালবাসে। মন থেকে আমার ভালো চায়। আর খারাপ মুহূর্তগুলোতে পাশে থাকতে প্রস্তুত সবসময়। ঠিক সেরকম একটা মানুষ এই দেবাশীষ দা। ভালো থাকুক এই কাছের মানুষগুলো। আর আমিও যেন তাদের মনে এই জায়গাটা ধরে থাকতে পারে সারাটা জীবন।
এই কাছের মানুষগুলোর জন্যই একসময় আপনি সব দুঃখ কষ্ট পার হয়ে আবার সামনের দিকে ভালোভাবে এগিয়ে যেতে পারবেন। বুঝতে পারছি আপনার জীবনে অনেক বড় কিছু ঘটে গিয়েছে। সে সবকিছু ভুলে এগিয়ে যেতে হবে। জীবন তো আর কারো জন্য থেমে থাকে না। জীবনে এমন ছোট বড় অনেক ঘটনা সামনে আসবে। দোয়া করি ভালো বিষয় নিয়ে আর খারাপ বিষয় ভুলে এগিয়ে যান। দোয়া রইলো অনেক।
এভাবেই পাশে থাকবেন সবসময় আপু। আপনারা আছেন বলেই আমি এখনও দাড়িয়ে আছি। অনেক ভালো থাকবেন।
আপনাদের দুই ভাইয়ের কাটানো কিছু মুহূর্ত দেখে খুবই ভালো লাগলো। কলকাতা গিয়ে এমন একটি ভাই পেয়েছেন তাও আবার ফেসবুকের মাধ্যমে এটি বিশাল পাওয়া ভাইয়া। যে আপনাকে আপনার সাময়িক সব বিষয়গুলো শুনে তার নিজের মতো করে সুন্দর পরামর্শ দিয়ে আপনাকে সহযোগিতা করেছে। তার মহামূল্যবান কথা আপনাকে হয়তো নতুন পথের দিশা দেখাবে। জীবনে চলার পথে এমন মানুষ পেয়েছেন যে মন থেকে আপনার ভালো চায় এবং খারাপ সময় গুলোতে পাশে থাকতে চায়। সত্যি ভাই খুব কপাল করে এমন মানুষের সাথে আপনার পরিচয় হয়েছে। তাই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি আপনারা দুই ভাই সব সময় যেন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে খুবই ভালো থাকেন। ধন্যবাদ
এত চমৎকার করে কেউ মন্তব্য করলে মনটা আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়। আর একজন মানুষ তখনই ভালো মন্তব্য করতে পারে যখন তার মনটা ততটাই শুদ্ধ এবং পরিষ্কার হয়। আপনার কমেন্টগুলো সব সময় আমাকে অনুপ্রাণিত করে বড় ভাই। অনেক ভালোবাসা রইলো ।
তুমি যেমন কথার মারপ্যাচে হারিয়ে যাচ্ছিলে আমিও তোমার লেখার মার প্যাচে গুলিয়ে ফেলছিলাম। বার বার মনে হচ্ছে লেখার মধ্যে কিছু একটা রহস্য লুকায়িত। ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তি টি ফিরে যেতে বলছে সে কি কোলকাতার ডন কিনা কে জানে। হা হা। যাই হোক না কেন। দারুন লেগেছে লেখা গুলো পড়ে। ভাল থাকবে ভাই। তবে মনে রাখতে হবে জীবন একটাই তো সঠিক সিদ্ধান্ত সঠিক সময়ই নিতে হয় ।
দাদা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত টা নিতে পারি নি বলেই আজ আমি এত ভুগছি। মানুষকে বিশ্বাস করার ফল হাতে নাতে পাচ্ছি। আশীর্বাদ করবেন দাদা।
বর্তমান সময়ে বাস্তব জীবনের ভাই বন্ধুদের চেয়ে ভার্চুয়াল থেকে পাওয়া ভাই বন্ধুরাই সেরা হয়। কলকাতায় দুই ভাই মিলে অসাধারণ কিছু মুহূর্ত কাটিয়েছেন। আপনার লেখার মধ্যে অনেক রহস্য আছে। লেখার মারপিঠে হারিয়ে যাচ্ছিলাম বারবার। খারাপ মুহূর্তগুলো ভুলে ভালো মুহূর্ত গুলো মনে রেখে সারা জীবন সুন্দর ভাবে কাটিয়ে দেন। দোয়া রইল আপনার জন্য।
হাহাহাহা,, ভালো ধরেছেন। আসলেই অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে ভাই। চেষ্টা করছি ভালো কিছুর জন্য। পাশেই থাকবেন।