আমাদের গল্প (৪)
নমস্কার,,
তপু বাড়িতে যায় নি এখনো। দাদার সাথেই আছে ঢাকায়। তিন দিনের মাথায় হঠাৎ ফোনে জানতে পারলো যে রেজাল্ট দিয়ে দিয়েছে সেই পরীক্ষার। বুকটা একটু কেপে উঠলো। দাদার ল্যাপটপ টা দিয়ে রেজাল্ট এর পিডিএফ নেট থেকে নামিয়ে এক এক করে রোল নম্বর দেখতে শুরু করে দিল। তপুর শতভাগ কনফিডেন্স যে তার চান্স পাওয়া স্বপ্নেও সম্ভব নয়। তাই নিজের রোলের পাশাপাশি সাথীর রোল টাই যেন বেশি মনযোগ দিয়ে দেখতে শুরু করলো। মোট ১২০ কে চান্স দেওয়া হয়েছে। প্রথম ৮০ জনের মাঝেও কারোর নাম নেই। একটা সময় বিরক্ত হয়ে তপু বলছে,,
"ঘটনা বুঝলাম না, আমার সাথে দেখা হয়ে কি সাথীর কপাল টাও কি পুড়লো নাকি!!"
" তোদের যা কাহিনী, তাতে এমন টায় হওয়ার কথা।" (পাশ থেকে দাদা উত্তর দিল)
"যে কোন একটা নাম উঠলেও তো একটু শান্তি পেতাম"
এই বলে প্রথম ৯০ জনের রোল পেরিয়ে ৯৩ এর ঘরে যেতেই তপুর চোখ কপালে উঠে গেল।
"দাদা ,, এই দাদা, এখানে আসো তো। আমার চোখ কি খারাপ হয়ে গেল নাকি? আমার অ্যাডমিট এর সাথে একটু মিলিয়ে দেখো তো"
"কি রে তপু,, এটা কি করে সম্ভব! তোর রোল এখানে আসলো কি করে! নাকি এটাও ভুল করে দিয়েছে ?"
" বিশ্বাস করো দাদা, আমার নিজের কাছেই তো বিশ্বাস হচ্ছে না। আমিই চান্স পেলাম!!!"
"ভাই আয় তোর কপালে একটু চুমু দেই 🤪। অসাধ্য সাধন করছিস তুই।"
"কিন্তু দাদা সাথী কই গেল!!"
"ওই ব্যাটা,, নিজে বাঁচলে বাপের নাম। ভার্সিটি তে গিয়ে আরো ১০০ সাথীর দেখা পাবি তুই"
তপুর দাদা শত কিছু বললেও কিছুতেই তপুর মন ভরছে না। কয়েকবার পুরো লিস্ট টা চেক করলো, ওয়েটিং লিস্টেও সাথীর নাম নেই। দেখা হওয়ার শেষ সুযোগ টুকুও হারিয়ে গেল। এমন একটা খুশির দিনেও তপুর মুখটা কালো হয়ে গেল। যাই হোক, পরদিনই তপু বাড়ি ফিরে গেল। কারণ পরের সপ্তাহেই ভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজ সব গুছিয়ে নিতে হবে।
পরের সপ্তাহের সোমবার তপু তার বাবাকে নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। এডমিন বিল্ডিং এ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে একটি ফরম ফিলাপ করছিল তপু। এমন সময় হঠাৎ করেই পাশ থেকে একজন বলে উঠলো,
"কেমন আছো তপু?"
কণ্ঠ টা অচেনা একদম তপুর। চোখটা ফর্ম থেকে সরিয়ে ওপরে তুলে পাশে তাকাতেই দেখতে পেল এক প্রকান্ড শরীর ধারি যুবক দাড়িয়ে। পরনে লাল রঙ্গের একটা পাঞ্জাবি। বড্ড বেমানান লাগছে তপুর কাছে। অনেকটা আশ্চর্য হয়েই উত্তর দিল,,
"হ্যাঁ, আছি ভালো, কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না। কে আপনি?"
"আপনি করে বলার দরকার নেই। আমরা একই ব্যাচের। আমি জয়। সাথীর মামাতো ভাই। তোমার অ্যাডমিট টা আমিই পোস্ট অফিসে গিয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেই। "
তপু যেন আকাশ থেকে পড়লো আবার। এখানেও সাথীর বিচরণ!!! অনেকটা ম্যাজিকাল লাগছে। আবার মনে মনে বেশ খুশি। জয়ের সাথে বেশ কথা বলছিল তপু। একটা সময় জানতেও পারলো যে সাথী নিজেও অনেক খুশি হয়েছে তপু চান্স পেয়েছে দেখে। তপুর বাবা পাশেই ছিল। তাই খুব বেশি কিছু বলতেও পারছিল না তপু সাথীকে নিয়ে। জয় যেহেতু সেখানে এসেছে তাহলে সাথীর সাথে যোগাযোগের একটা মাধ্যম হয়েই যাবে। কিন্তু বিপাক বাঁধলো অন্য খানে। জয়ের সাবজেক্ট মন মত হয় নি। তাই অ্যাডমিশন টা পরবর্তীতে ক্যান্সেল করে দিতে পারে সে। এত কিছু ভেবে অবশ্য তপুর কাজ নেই। তপু শুধু সাথীর সাথে যোগাযোগের একটা রাস্তা পেলেই খুশি।
কথা বলার এক পর্যায়ে তপুর অন্য রুমে ডাক আসে কিছু অফিসিয়াল কাজ সারার জন্য। তপু সেদিকে চলে যায়। আর জয় অ্যাডমিন বিল্ডিং বের হয়ে খাওয়া দাওয়া করার জন্য বের হয়ে যায়। কথা ছিল একটু পর ওদের আবার ওখানে দেখা হবে। কিন্তু তপুর ডকুমেন্টস নিয়ে কিছু প্রবলেম হওয়ায় কমন রুমে আসতে পারে না সময় মত। আর জয় প্রায় ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করে সেখান থেকে চলে যায়। ভেবেছিল তপু হয়তো বের হয়ে চলে গেছে।
কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার জন্য তপু আর জয়ের দেখা হলো না। তপুর ভেতর টা যেন ফাটছে। এমন টা কেন হলো তার সাথে! এদিকে বাবা পাশে, তাই যতটা সম্ভব নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করছে। এভাবে দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়েই বাড়ির দিকে রওনা দিল তপু। তবে তপুর বিশ্বাস আর ১৫ দিন পরেই ওরিয়েন্টেশন ক্লাস। তখন তো জয়ের দেখা পাবেই পাবে। আর সেদিন সাথীর সাথে যোগাযোগের জন্য আর কোন বাঁধা আসবে না।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
শেষ পর্যন্ত তপু তাহলে, ভয়ে ভয়ে পরীক্ষা দিলেও দারুন পরীক্ষা দিয়েছিল দেখছি। সাথীর মামাতো ভাই জয়, যখন তপু কে ডাকলো আমি তো ভাবলাম সাথী ডেকেছে তপুকে। তারপর নিচের লাইনটা পড়ে দেখলাম সাথী নয় সাথীর ভাই । তবুও একটা যোগাযোগের মাধ্যম তো হলো, এটাই বড় ব্যাপার তপুর জন্য।
আমার এই পাগলামো লেখা গুলো এত ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য সত্যিই আমি কৃতজ্ঞ 🙏🙏। আসলে এই লেখা টা লিখতে আমার বেশ ভালো লাগছে নিজের কাছেই। বাস্তবের খুব কাছাকাছি পুরো ব্যাপারটাই। তাই আরো বেশি মজা পাই।
আমি চিন্তা করেছিলাম কি জানেন তো ভাই, হয়তো একদম শেষের দিকে গিয়ে সাথীর নামটা থাকবে লিস্ট এ। কিন্তু সেই জায়গায় গিয়ে আসলে গল্পের অন্যরকম মোড় নিল। তারপরও মনে হচ্ছে একটু আশার আলো পাওয়া গেছে যখন সাথীর মামাতো ভাই আচমকাই সেখানে উপস্থিত হয়। এখন দেখা যাক ১৫ দিন পর ওরিয়েন্টেশন ক্লাস শুরু হলে ব্যাপারটা আরেকটু জমজমাট হয় কিনা।
আসলে এই পুরো লেখাটিতে শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা। বর্তমান যুগে যেই ব্যাপারটা একদমই অধরা বলা যায়। তবে আমি বেশ মজা নিয়েই প্রতিটা পর্ব লিখছি ভাই। অনেক ভালো থাকবেন।