আমাদের গল্প (৩)

in আমার বাংলা ব্লগlast year

নমস্কার,,

book-863418_1280.webp

Source

দ্বিতীয় পর্বের পর থেকে

লোকাল বাসে করে তপু আর তার দাদা বাণিজ্য মেলার দিকে যাচ্ছে। তপুর মনে শুধু সকাল টাই উকি দিচ্ছে বার বার। এমন পরিচয় নাটকে অনেক দেখেছে সে, কিন্তু বাস্তবেও যে এমন টা হয়, এটা যেন কিছুতেই মানতে পারছে না। একটা সময় বাসের হেলপার হঠাৎ ডাকতে শুরু করলো, " এই যে ট্যাকার খেলা, বাণিজ্য মেলা,,,, ঐ ঐ ট্যাকার খেলা, বাণিজ্য মেলা,,,,,, ওস্তাদ ডাইনে ক্যাইটা বায়ে নামায় দিয়ে যান"

তপু আর তার দাদা টিকিট নিয়ে মেলার ভেতর প্রবেশ করলো। তপু প্রথমবার বাণিজ্য মেলাতে এসেছে। উৎসাহ টা সাংঘাতিক রকমের বেশি তাই। দাদার সাথে এক পাশ থেকে ঘুরে ঘুরে দেখতে শুরু করলো। ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হবে এমন একটা বয়স। চোখে বলা যায় রঙ্গিন চশমা। যাই দেখছে তাই ভালো লাগছে। নিজের ছবি তুলতে তুলতে দাদাকে পাগল করে দিচ্ছে। দাদা একটা সময় তো রেগে বোম। বলছে,,

"হ্যাঁ রে তপু, আজ কি তোর পার্সোনাল ফটোগ্রাফার আমি? নাকি আমি ফোনে তোর ছবি তোলার জন্য এক্সট্রা মেমোরি কার্ড লাগিয়ে নিয়ে এসেছি?"

"এমন বলো না গো দাদা, সবে মাত্র একটা নতুন পরিচয় হলো। মন থেকে রঙ্গের দাগ কি আর এতো তাড়াতড়ি উঠবে!! একটা দিনই তো,,,,,,,"

"বুঝি রে সবই বুঝি। সব বয়সের দোষ"। তো ফোন নম্বর টা নিছিস তো ?"*

কথাটা শুনতেই মাথায় হাত পরলো তপুর। এত কথা হয়েছে কিন্তু ফোন নম্বর তো নেওয়া হয় নি। মুখ ফুটে বলতে গিয়েও বলতে পারে নি তপু। এমনিতে দুষ্টুমি করলেও এসব ব্যাপারে বেশ লাজুক তপু। কিন্তু এবারে আফসোসের পরিমাণ টা যেন আকাশ ছোঁয়া।

"দাদা, আমি তো নাম্বার টা নেই নি, হায় হায়! এখন কি হবে !! ওর সাথে তো আমার ফেইসবুকেও অ্যাড নেই! আমাদের যোগাযোগ করার মত কোন রাস্তাই তো আর দেখছি নাহ্!!"

"হাহাহাহাহা, ছোট ভাই, বল নিয়ে মাঠে দৌড়িয়ে তো লাভ নেই। গোল টাও তো সময় মত দিতে হবে।"

"কপালের নাম গোপাল দাদা। রাখে হরি মারে কে!"

"নে নে চাপাবাজি অনেক হলো। খিদেতে পেট শেষ। চল মেসের দিকে যাব।"

"দাদা, বিকালে তো সাথী দের মেলায় আসার কথা আছে। থাকি না আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত।"

"ওরে তপু, তোর ইচ্ছা শক্তি তো গিনিস বুকে নাম লেখাবে রে ! বেটা তুই চিনিস না , জানিস না, তার জন্য যে ভাব করছিস, আমার জ্বর আসলেও তো কখনো এত কেয়ার করিস না"

" বড়দা, জানোই তো সব বয়সের দোষ।"

"হ্যাঁ অনেক কিছু আমি বুঝি। এখন ভদ্র লোকের মত বাড়ির দিকে চল। যে জ্যাম লাগে, যেতে কমপক্ষে দুই ঘন্টা লাগবে "

তপু আর তর্ক করলো না। কারণ এখানে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। বিকাল সন্ধ্যায় ভিড় টা আরো কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। এত মানুষের মাঝে সাথী কে খুঁজে পেতে চাইলে নিজেকেই ছবি হয়ে যেতে হবে। দাদাকে নিয়ে কিছুটা অন্যমনস্ক হয়েই রওনা হয়ে গেল।

অন্যদিকে সাথী নিজেও আজ মামার বাড়িতে বেশ চুপচাপ আছে। অল্প সময়ের এই কথোপকথন কোথাও একটা যেন জায়গা করে নিয়েছে। বারবার ভাবছে, আর হয়তো কখনো যোগাযোগ হবে না। ক্ষণিকের এই পরিচয় টা হয়তো সারা জীবনের জন্য দাগ কেটে দিয়ে গেল। সাথী ওর মামাতো ভাইয়ের সাথে পুরো ঘটনা শেয়ার করে। ওর নাম জয়। দুজন সমবয়সী। জয় নিজেও অ্যাডমিশন পরীক্ষা দিয়েছে।

জয় বলছে,

" তপু শেষমেষ পরীক্ষার হলে এসেছে তাহলে!" বেশ মজার ছিল পুরো ব্যাপারটা। আমরা সবাই কত ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।"*

" হ্যাঁ একদম তাই।"

" তা , কথা বলে কেমন মনে হলো?"

"সে আর বলিস না। ভীষন লাজুক ধরনের ছেলে। গুছিয়ে কথা বলে বেশ। আর সব কথার সাথেই একটা না একটা মজার কিছু থাকবেই থাকবে। না হেসে পারা যায় না একদম।"

"এই টুকু সময়েই এত কিছু বুঝে গেলি!"

"জয় শোন, মেয়ে দের অবজারভেশন ক্ষমতা টা একটু বেশীই থাকে। এটা কি তোর অজানা এখনো?"

"সে আর বলতে!! তো, নাম্বার টাম্বার নেয় নি?"

" আরে না একদম। আমি এটাই অবাক হলাম। চার তলা থেকে এতক্ষণ ধরে কথা বলতে বলতে নামলাম। অথচ এসব নিয়ে কিছুই বললো নাহ্।"

"এ তো দেখি তোর মতই নিরামিষ ভোজী, হাহাহাহা"

"মজা করিস না ভাই। যোগাযোগ টা থাকলে আমারও বেশ ভালো লাগতো। কি আর করার। যেটা হওয়ার সেটাই হয়েছে।"

মুখ টা থেকে হাসি কোথায় যেন লুকিয়ে গেল নিমিষেই। পাশের বেলকুনি তে কিছুক্ষণ একা দাড়িয়ে থাকলো সাথী। লেখা লেখির অভ্যাস আছে স্কুল লাইফ থেকেই। একা একা আকাশের দিকে তাকিয়ে আপন মনে দুই এক লাইন বলে গেল সাথী।

Sort:  

এত কথা বলল আর ফোন নাম্বারটা নিতে পারল না। ওই জায়গায় আমি থাকলে তো কথা বলার আগে ফোন নাম্বার নিয়ে নিতাম। হা হা হা... আমি আসলে গল্প পড়ার সময় ভাবছিলাম যে তপু হয়তো সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলায় থাকবে। তবে দেখলাম আপনি গল্পের মোড় চেঞ্জ করে দিলেন। যাইহোক এক্ষেত্রে ভালোই হয়েছে, ইন্টারেস্ট আরো অনেক বেড়ে গেল। বেশ ভালোর দিকেই এগোচ্ছে গল্পটা। সত্যিই ভালো লাগছে পড়তে, আপনি চালিয়ে যান আমি পড়ে নেব।

 last year 

হাহাহাহাহা,,, আমি মশাই বেশ চালু আছেন তাহলে দেখছি😉। সত্যি বলতে আমি নিজেও লিখতে বেশ পাচ্ছি। তাই সময় নিয়ে মন মত লিখছি। অনেক ধন্যবাদ ভাই পাশে থাকার জন্য।

 last year 

গল্পটা যত পড়ছি ইন্টারেস্ট আরও বাড়ছে। অপেক্ষাতে আছি শেষ টা দেখার। আসলে প্রথম দেখাতেই দুজনের দুজনকে ভালো লেগে গেছে, তাই একজন আর একজনকে মিস করছে আর কি 🤭। ফোন নাম্বার টা না নিয়ে তপু সত্যিই অনেক ভুল করেছে।

 last year 

আরে সব ছেলে কি আর সুপার ফাস্ট হয় তাই,, কিছু কিছু তো আমার মত লাজুক ও আছে, তাই নাহ্ 😅😅। দেখা যাক গল্প টা নিয়ে কই থেকে কই যাওয়া যায়। হিহিহিহি।

 last year 

হি হি হি,,,,নিজের প্রশংসা নিজেই করলো।

 last year (edited)

ম্যাডাম, নিজের ঢোল নিজে না পেটালে, অন্য কেউ বাজাতে নিলে তো ফাটিয়ে ফেলবে 😅। তাই বুঝে শুনে আমিই বাজাচ্ছি। 🤪

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 62499.32
ETH 2450.41
USDT 1.00
SBD 2.66