ক্রিয়েটিভ রাইটিং || ছোট গল্প : টিয়ারা (পর্ব -০২)

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

নমস্কার,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই অনেক অনেক ভাল আছো। আমিও মোটামুটি ভালো আছি।

আজকের ব্লগে তোমাদের সাথে একটি ছোট গল্প শেয়ার করবো। গল্পের নাম "টিয়ারা"। গল্পটির দ্বিতীয় পর্ব নিচে দেখে নেওয়া যাক।

green-parrot-8593958_1280.jpg

ইমেজ সোর্স

প্রথম পর্বের লিংক

সময়ের সাথে সাথে টিয়ারার বুদ্ধি আরও অনেক বেড়েছে এবং মানুষকে বোঝার ক্ষমতা তার অনেক বেশি হয়েছে আগের থেকে। অমিতের প্রতি তার যে ভালোবাসা, সেটা সব সময় বিভিন্নভাবে সে প্রকাশ করে থাকে। একবার অমিত অসুস্থ হয়ে ৫ দিন যখন বিছানায় পড়ে ছিল, টিয়ারা বাড়ি ঘর এক করে দিয়েছিল চিৎকার করে করে। টিয়ারা আরও একটু বড় হওয়ার পরে তার পাখার কিছু অংশ কেটে দেওয়া হয়েছে, না হলে সে বারবার উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। অমিত তাকে কোন মূল্যেই হারাতে চায় না। এজন্য অমিত টিয়ারার পাখাগুলো এমন ভাবে কেটে রাখে , যেন সে বেশি দূর উড়ে যেতে না পারে

এভাবে অনেক দিন কেটে গেছে। টিয়ারা সব সময় অমিতের সাথে থাকে। তাছাড়া টিয়ারার খাবারের তালিকায় নতুন করে যোগ হয়েছে পাকা লঙ্কা। অমিতের বাবা যখন বাজার থেকে লঙ্কা কিনে নিয়ে আসে, সেখান থেকে পাকা লঙ্কা গুলো অমিত আলাদা করে রাখে তার টিয়ারাকে খেতে দেওয়ার জন্য। টিয়ারার মুখের সামনে যখন এই লঙ্কাগুলো দেওয়া হয়, সুন্দরভাবে টিয়ারা ওই পাকা লঙ্কা গুলো খেয়ে থাকে। আগের থেকে এখন অনেকটা খাবারও সে বেশি খায়। আগে সারাদিন একটা কলা দিলে হয়ে যেত কিন্তু এখন প্রতিদিন তাকে দুটো করে পাকা কলা খেতে দিতে হয়। যেহেতু অমিতের গ্রামের বাড়ি ছিল তাই সে বাড়ির বারান্দায় টিয়ারাকে রেখে দিত।

একবার টিয়ারা যখন রাতের বেলায় ঘুমিয়ে ছিলো, হঠাৎ করে চোরে চুরি করতে আসে এই টিয়ারাকে। তখন টিয়ারা চিৎকার করে সবার ঘুম ভাঙিয়ে দেয় এবং চুরির হাত থেকে সেই সময় নিজেকে বাঁচিয়ে নেয়। টিয়ারা যে অন্য কোথাও যেতে চায় না, সেদিন সেটা সে প্রমাণ করেছিল। টিয়ারার জন্য অমিত তার বাবাকে অনেক বলে রুপোর একটি রিং বানিয়েছে, টিয়ারার পায়ে পরিয়ে দেওয়ার জন্য। ওই গ্রামে অনেকেই পাখি পোষে কিন্তু অমিতের মত পাখির প্রতি ভালোবাসা অন্য কারোর মধ্যে আছে বলে মনে হয় না।

একবার শীতের সময় টিয়ারা যখন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল অমিত তখন দুই দিন ধরে না ঘুমিয়ে টিয়ারার কাছে থেকে টিয়ারার সেবা যত্ন করে তাকে সুস্থ করেছিল। সে সেই সময় পাখির ডাক্তারও কোথা থেকে যেন জোগাড় করে এনেছিল টিয়ারার জন্য। দুজনের প্রতি দুজনের যে ভালবাসা রয়েছে সেটা আর বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন হয় না এইসব দেখার পরে। এই ব্যাপারটা সব সময়ই সামনে প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে। অনেক সময় পরে গিয়ে টিয়ারা কিন্তু পুরোপুরি ভাবে পোষ মেনে গেছে। এখন আর টিয়ারাকে সব সময় খাঁচার মধ্যে রাখতে হয় না। টিয়ারা সব সময় অমিতের কাছেই থাকে। কখনো হাতের উপর, কখনো কাঁধের উপর, আবার কখনো বা মাথার উপর থাকে। এইভাবে অমিত গ্রামের উপর দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। টিয়ারাও অমিতের সাথে সাথে এইভাবে গ্রাম ঘুরে দেখে। সবার নজর তাদের উপর পড়ে অমিত যখন টিয়ারাকে নিয়ে এইভাবে ঘুরে বেড়ায়।

অনেক সময় যাওয়ার পরে টিয়ারা এখন অল্প করে কথা বলতেও শিখেছে। অমিত.. অমিত.. বলে টিয়ারা সব সময় ডাকে । তাছাড়া সকাল হলে অমিতকে তো ঘুম থেকে টিয়ারাই ডেকে ডেকে জাগিয়ে তোলে। অমিত নিয়মিতভাবে চেষ্টা করছে টিয়ারকে কথা বলা শেখানোর জন্য। অন্যান্য কয়েকটি লাইন অমিত তাকে শিখিয়েছে। টিয়ারার খিদে পেলে, "খেতে দাও", বাড়িতে কোন লোক আসলে, "বাড়িতে লোক এসেছে"- এরকম কিছু কিছু লাইন বলে সব সময় অবাক করে দেয় টিয়ারা। অনেকদিন পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাকই চলে। কিন্তু হঠাৎ করে একটা দুর্ঘটনা ঘটে অমিতদের বাড়িতে।

চলবে...


পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীক্রিয়েটিভ রাইটিং (ছোট গল্প)
লোকেশনবারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল।
বন্ধুরা, আমার আজকে শেয়ার করা "টিয়ারা" গল্পের দ্বিতীয় পর্ব তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও । সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে






আমার পরিচয়

IMG_20220728_164437.jpg

আমি সুবীর বিশ্বাস( রঙিন)। কলকাতার বারাসাতে আমি বসবাস করি। আমি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস এন্ড ফিসারিস সাবজেক্ট নিয়ে। বর্তমানে আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যানরত আছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু শান্ত স্বভাবের । চুপচাপ থাকতেই বেশি ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা, রেসিপি করা , গল্প লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি স্টিমিটকে অনেক ভালোবাসি এবং সব সময় স্টিমিটে কাজ করতে চাই।

🌷🌷 সমাপ্ত 🌷🌷

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 months ago 

টিয়ারা গল্পটার প্রথম পর্ব আমি পড়েছি। আজকে আপনি এত সুন্দর করে দ্বিতীয় পর্ব লিখলেন দেখে ভালো লাগলো। দ্বিতীয় পর্বটা পড়ে তো আরো ভালো লেগেছে। বিশেষ করে অমিত এবং টিয়ারা দুজনের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা দেখে অনেক ভালো লাগলো। টিয়ারা নিজেকে চুরির হাত থেকেও বাঁচিয়েছে দেখে ভালো লেগেছে। আর টিয়ারা দেখছি কথাও বলতে পারছে এখন একটু একটু। কিন্তু শেষে অমিতদের সাথে কি দুর্ঘটনা ঘটেছে এটাই তো বুঝতে পারতেছি না। পরবর্তী পর্ব শীঘ্রই দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম। কারণ অমিতের সাথে কি হয়েছে এটা জানার আগ্রহ রয়েছে অনেক বেশি।

 2 months ago 

অমিতদের সাথে কি দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেটা পরবর্তী পর্বে জানতে পারবেন আপু। যাইহোক, আমার লেখা এই গল্পটা আপনার কাছে সুন্দর লেগেছে , জেনে খুব খুশি হলাম আপু।

 2 months ago 

ভাই আপনার লেখা গল্প গুলো কিন্তু সত্যি অনেক সুন্দর। টিয়ারাকে দেখছি অমিত অনেক বেশি ভালোবাসে। আর টিয়ারা যখন অসুস্থ ছিল দিনরাত তার সেবা করেছে। টিয়ারা আবার অমিতকে ডাকতেও শিখেছে। অমিত অসুস্থ যখন ছিল তখন টিয়ারাও বাড়ি একাকার করে দিয়েছিল চিৎকার করে। দুজনেই একে অপরকে খুব ভালোবাসে। আমি তাকে এত বেশি ভালোবাসতো যে, রুপার একটা আংটিও বানিয়েছে টিয়ারার জন্য। এরকম পাখির প্রতি মানুষদের ভালোবাসা দেখলে অনেক ভালো লাগে। দুর্ঘটনার বিষয়টা আশা করছি পরবর্তী পর্বে জানবো।

 2 months ago 

হ্যাঁ ভাই, দুর্ঘটনার বিষয়টা পরবর্তী পর্বে জানতে পারবেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই, আপনার এই সুন্দর মন্তব্যটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 months ago 

পুরো গল্পটা পড়ে এত ভালো লাগছিল যা বলে বুঝাতে পারবো না কিন্তু শেষের লাইনটা পড়ে বেশ খারাপ লাগলো।এত সুন্দর মিষ্টি সম্পর্কের মধ্যে না জানি কোন ঝড় আসতে চলেছে।তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই তাদের সম্পর্ক যেন এমনই সুন্দর থাকে। পাখি সবার কাছে পোষ মানে না। অমিত টিয়ারাকে মন থেকে ভালবাসে।

 2 months ago 

পুরো গল্পটা পড়ে এত ভালো লাগছিল যা বলে বুঝাতে পারবো না কিন্তু শেষের লাইনটা পড়ে বেশ খারাপ লাগলো।

তাহলে তো আপু, পরের পর্ব টা পড়লে আরো বেশি খারাপ লাগবে আপনার। বেশ দুঃখজনক একটা ঘটনা ঘটবে টিয়ারার সাথে যা পরের পর্বে জানতে পারবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.12
JST 0.030
BTC 61599.36
ETH 3407.97
USDT 1.00
SBD 2.47