জেনারেল রাইটিং || শৈশবের স্মৃতিচারণ : থাপ্পড়!

in আমার বাংলা ব্লগ6 days ago

নমস্কার,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই ভালো আছো। আমিও ভালো আছি।

slap-on-the-face-2022783_1280.png

ইমেজ সোর্স

আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া এরকম অনেক ঘটনাই থাকে। যা আমরা কখনো ভুলতে পারিনা। আমার জীবনেও এরকম অনেক ঘটনা রয়েছে। ছোটবেলায় ক্লাস ফোরে উঠে যখন আমি শহরে আসি সেই বছরটাতে আমার সাথে অনেক ঘটনাই ঘটেছিল। সেই স্মৃতিগুলো সব সময় আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেই সময়টাতে ঘটে যাওয়া আজ আর একটি স্মৃতিচারণ তোমাদের সাথে এই ব্লগে শেয়ার করব। যখন আমি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি আর শহরে নতুন আসি। আমার জন্য শহরের পরিবেশ মেনে নেওয়া অনেকটা মুশকিল কাজ ছিল। গ্রাম থেকে শহরে এসে কোন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সব থেকে বেশি সমস্যা হচ্ছিল মন বসাতে পারছিলাম না এখানে এসে। এই সময়টাতে আমার ঠাকুরদা এসে ক্লাসরুমের বাইরে বসে থাকতো। যেন আমার ক্লাসে মন বসে সেইজন্য।

তারপরেও ঠিকভাবে মন বোঝাতে পারতাম না। কয়েক মাস শহরে কাটানোর পর যখন ক্লাসের প্রতি একটু মন বসে। তখন থেকে ঠাকুরদা আর ক্লাস রুমের বাইরে বসে থাকতো না। ক্লাস ফোরে থাকা অবস্থায় আমি মোটামুটি ভালো স্টুডেন্টই ছিলাম। পড়াশুনা বেশ ভালই পারতাম। সেই বছর আমাদের স্কুলে নতুন কিছু টিচার এসেছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ খুব ভাল ছিল আবার কেউ কেউ একটু রাগী ছিল। সেই ম্যাডাম গুলোর মধ্যে একটা ম্যাডামের নাম ছিল মুক্তা ম্যাডাম। ম্যাডামটির নাম এখনও পর্যন্ত আমার মনে আছে। কারণ সেই সময় ম্যাডামের জন্য একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। এই ম্যাডাম যখন আমাদের ক্লাসে কোন পড়া দিত। পড়া না পারলে ম্যাডাম আমাদেরকে মারতো না।

ক্লাসরুমে এটাই নিয়ম ছিল প্রথমজন যদি পড়া পারে আর দ্বিতীয় জন পড়া না পারে তারপর তৃতীয় জন গিয়ে যদি আবার পড়া পারে তাহলে তৃতীয় জন দ্বিতীয় জনকে থাপ্পড় মারবে। এটাই শাস্তি স্বরূপ নিয়ম করা হয়েছিল ম্যাডামের ক্লাসে। এইজন্যে অনেকবারই স্টুডেন্টের হাতে স্টুডেন্টকে মার খেতে হতো। মার মানে থাপ্পর খেতে হতো আর কি। এরকমটা অনেকদিন ধরেই হয়ে আসছিল যেহেতু আমি পড়া পারতাম তাই এই থাপ্পর আমার খেতে হতো না। তবে একবার পড়া না পারার কারণে আমাকে এই থাপ্পরের সম্মুখীন হতে হয়।

তবে থাপ্পড়টা মেরেছিল আমার এক বন্ধুরূপী শত্রু। কোন সময় যদি আমি পড়া পারতাম এবং অন্যজন পড়া না পারতো। আমি কিন্তু কখনো জোড়ে থাপ্পর মারতাম না তবে এই বন্ধুটা পড়া পারার কারণে এবং আমি না পারার কারণে আমাকে প্রচন্ড জোরে থাপ্পড় মারে। আর থাপ্পড়টা মুখে না লেগে কানে লাগে। তৎক্ষণাৎ ভাবে আমি প্রচন্ড জোরে কান্না শুরু করে দেই। কারণ হঠাৎ করেই দুনিয়া কেমন জানি ঘুরতে শুরু করে আমার জন্য এই থাপ্পড় খেয়ে।

আসলে থাপ্পড়টা এমন ভাবে লেগেছিল এটা আমার জন্য সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত ছিল। এই থাপ্পড় খেয়ে আমি অনেক সময় কান্না করি। টিফিন পিরিয়ডে আমার দাদা যখন আমাকে খাবার দিতে আসে। আমার কান্না করা দেখে কারণ জিজ্ঞেস করে। আমি তাকে কারণ বললে সে বাড়ি থেকে ঠাকুরদা এবং মাকে ডেকে নিয়ে আসে। এই সমস্যার সমাধান ঘটানোর জন্য। বাড়ি থেকে তারা এসে ম্যাডামের সাথে প্রচন্ড ঝামেলা শুরু করে এবং পড়া না পারলে ম্যাডামকে শাস্তি দেওয়া উচিত স্টুডেন্টের হাতে স্টুডেন্টের এরকম মার খাওয়ার বা থাপ্পড় খাওয়ার ঘটনার যেন দ্বিতীয়বার না ঘটে সেই সম্পর্কেও সতর্ক করা হয়।

সেইবার প্রচন্ড ঝামেলাই হয়েছিল এই থাপ্পড় কান্ডের জন্য। আমার আজও এখনো মনে পড়ে এই ঘটনা গুলো। আমার থাপ্পড় খাওয়ার পর থেকেই এই নিয়মটা ক্লাসরুমে আর হতো না। ম্যাডাম ও শিক্ষা পেয়ে গেছিল এই বিষয়টা নিয়ে। পড়া না পারলে ম্যাডাম শাস্তি দিক স্টুডেন্টের হাতে স্টুডেন্টকে মার খাওয়ানোর ব্যাপারটা আসলেই খারাপ। কারণ এই ছোট বয়সে কে কোন ভাবে থাপ্পড় দিয়ে বসে যা ক্ষতির কারণ হতে পারে। যাইহোক এরপর দিয়ে দ্বিতীয় বার আর কখনোই এই ঘটনা হয়নি। আজ হঠাৎ করে এই ঘটনাটা মনে পড়ল তাই তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম।


পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
লোকেশনবারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল।
বন্ধুরা, আজকের এই ব্লগটি তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও । সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে






আমার পরিচয়

IMG_20220728_164437.jpg

আমি সুবীর বিশ্বাস( রঙিন)। কলকাতার বারাসাতে আমি বসবাস করি। আমি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস এন্ড ফিসারিস সাবজেক্ট নিয়ে। বর্তমানে আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যানরত আছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু শান্ত স্বভাবের । চুপচাপ থাকতেই বেশি ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা, রেসিপি করা , গল্প লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি স্টিমিটকে অনেক ভালোবাসি এবং সব সময় স্টিমিটে কাজ করতে চাই।

🌷🌷 সমাপ্ত 🌷🌷

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 6 days ago 

যে পড়া না পারতো অন্য কেউ তাকে কান মোলে দিত। তবে থাপ্পর দেওয়ার কথা আজকেই প্রথম শুনলাম দাদা। ছোটবেলায় এরকম অনেক অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনে হয়েছে। আপনার অভিজ্ঞতার কথা জেনে ভালো লাগলো। সুন্দর করে নিজের শৈশব স্মৃতি তুলে ধরেছেন ভাইয়া।

 5 days ago 

যে পড়া না পারতো অন্য কেউ তাকে কান মোলে দিত। তবে থাপ্পর দেওয়ার কথা আজকেই প্রথম শুনলাম দাদা।

এই নিয়মটাই ছিল আপু আমাদের সময়টাতে , আমাদের এক ম্যাডামের ক্লাসে।

 6 days ago 

আপনার শৈশবের স্মৃতিচারণ পড়ে ভালো লাগলো ভাই। আসলে এই ধরনের ঘটনা শৈশবে অনেক ঘটে থাকে। শৈশবে কত স্মৃতি রয়েছে যা এখনো মনে পড়লে হৃদয় শিউলিত হয়ে ওঠে। আপনার শৈশবের স্মৃতি দারুন ভাবে উপস্থাপন করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 5 days ago 

ধন্যবাদ ভাই আপনাকে, আপনার এই মন্তব্যটির জন্য।

 5 days ago 

খুব বাজে ভাবেই তাহলে থাপ্পড় টি মেরেছিলো আপনার ক্লাস বন্ধু টি।আপনার দাদা আপনার মা ও ঠাকুর দাদাকে ডেকে এনে বেশ ভালো করেছে এবং ম্যাডামের সাথে ঝামেলা করা একদম ঠিক হয়েছে কারণ ছাত্র দিয়ে ছাত্র কে পেটানোর কারণে হিতে বিপরীত হয়ে যায়। অনেক সময় বন্ধু শত্রুতে পরিনত হয়।ম্যাডাম নিজে শাস্তি না দিয়ে ছাত্র কে দিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করা মোটেও ঠিক করেন নি।ধন্যবাদ আপনাকে পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 5 days ago 

আপনার এই মন্তব্যটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি আপনাকে।

 4 days ago 

হে কপাল। এ আবার কেমন শাস্তি। বন্ধু বন্ধুকে থাপ্পড় মারবে? হায় ভগবান। এমন শিক্ষক আমি জীবনে দেখিনি৷ এতো বন্ধুরা নিজেদের মনের সমস্ত আক্রোশ মিটিয়ে নেবে সুযোগ পেয়ে। এমন শাস্তি অমানবিক। শিক্ষকের জন্য এমন শাস্তি দেওয়া মোটেই উচিৎ নয়। সত্যিই এই স্মৃতি আজীবন মনে রাখবার মতোই৷ অনেক শিক্ষকই অনেক সময় বিচিত্র সব শাস্তি দেন, কিন্তু এমন শাস্তি বিরল। আমার স্কুলে ছেলেবেলায় জীবন বাবু বলে একজন শিক্ষক অদ্ভুত সব শাস্তি দিতেন। বাচ্চাদের ব্যাঙ হয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে পুরো বারান্দা ঘোরাতেন। কিন্তু এমন অত্যাচারী শাস্তি দেখিনি।

 2 days ago 

অনেক শিক্ষকই অনেক সময় বিচিত্র সব শাস্তি দেন, কিন্তু এমন শাস্তি বিরল।

এটা আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন দাদা। আপনার এই মন্তব্যটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 4 days ago 

এটা একেবারেই অযৌক্তিক। পড়া না পারলে শিক্ষক শিক্ষিকা গায়ে হাত দিতেই পারে। কিন্তু তাই বলে ছাএদের দিয়ে মারাবে এটা ঠিক না। আর আপনার ঐ বন্ধু রুপী শএুর কথা আর কী বলব। সে তো পুরোপুরি সুযোগের সৎ ব‍্যবহার করেছে। যেটা একেবারেই অনাকাঙ্খিত।

 2 days ago 

পড়া না পারলে শিক্ষক শিক্ষিকা গায়ে হাত দিতেই পারে। কিন্তু তাই বলে ছাএদের দিয়ে মারাবে এটা ঠিক না।

এই ব্যাপারটা এখন বুঝতে পারি ভাই ।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 64614.75
ETH 3444.80
USDT 1.00
SBD 2.55