জেনারেল রাইটিং || শৈশবের স্মৃতিচারণ : শসা চুরির গল্প
নমস্কার,
তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই ভালো আছো। আমিও ভালো আছি। |
---|
ছোটবেলায় ছোটখাটো চুরি করেনি এমন মানুষ হয়তো খুঁজতেও পাওয়া যাবে না। আমরা সবাই কমবেশি ছোটবেলায় টুকটাক চুরি করেছি। হয়তো সেগুলো মজার খাতিরেই করেছি, তবে সেগুলো আমরা সবাই করেছি। আমার মোটামুটি বয়স যখন ৫ বছর তখন থেকেই এই কাজগুলো করতাম বন্ধুদের সাথে। একদম ছোটবেলায় তো লোকের গাছ থেকে ফুল চুরি করে নিয়ে আসতাম। যদিও ওই সময় আমার বোঝার বয়স না। যাইহোক, আস্তে আস্তে যখন বড় হলাম তখন বন্ধুদের গ্রুপের সাথে গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ছোটখাটো চুরি করতে যেতাম। এগুলো আমরা তখন চুরির তালিকায় ফেলতাম না। কারণ এগুলোর ফলে মানুষের কোন ক্ষতি হতো না। ব্যাপারটা এরকম ছিল, তাদেরকে না বলে আমরা নিয়ে আসলাম। হিহিহি ..তবে এখন এই কাজগুলো করি না। এখন এই কাজগুলো করতে অপরাধ বোধ ই লাগে। তাছাড়া, কারোর ছোট থেকে ছোট ক্ষতি হবে, এমন কোনো কাজ করার মানসিকতা এখন আর আসে না।
যাইহোক, আমার বয়স তখন ৯ থেকে ১০ বছরের মধ্যে হবে, তখনকার একটা ঘটনা শেয়ার করছি আজ। আমাদের বাড়ি থেকে মামা বাড়ি খুব বেশি দূরে ছিল না, একই গ্রামে ছিল। এই জন্যই মামা বাড়ি থেকে বাড়ি আর বাড়ি থেকে মামা বাড়ি, এই রকম সবসময় করা হতো। তাছাড়া মামা বাড়ি থেকে একটু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরে অনেক ফসলের ক্ষেত পড়তো। বিভিন্ন ধরনের ফসল করা হতো সেই সব ক্ষেতে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তরমুজ, শসা, ধান, কুমড়ো ইত্যাদি। তবে প্রতিবছর আমি সহ আমার বন্ধুদের বেশি টার্গেট থাকতো শসা ক্ষেতের উপর । মামা বাড়ির এলাকায় আমার বেশ কিছু বন্ধু ছিল। আমরা সবাই গ্রুপ করে একদম দুপুরে চলে যেতাম শসা চুরি করতে। রাতের বেলা যাওয়ার সাহস ছিল না আর সকাল বেলায় লোকজন কাজ করতো ক্ষেতে। তাই আমরা দুপুরের সময়টাতে যেতাম, যখন সবাই কাজ করে বাড়ি চলে যেত। আর সেই সময়টাতে গিয়ে আমরা অনেক শসা চুরি করে নিয়ে আসতাম। আমরা এর জন্য বাড়ি থেকে ব্যাগও নিয়ে যেতাম।
গরমের একদিন আমরা সব বন্ধুরা মিলে শসা চুরি করতে দুপুরের সময় যাই। আমরা তো সেদিন দুপুরের আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলাম কখন সবাই ক্ষেত থেকে যাবে। যাইহোক, সবাই যখন ক্ষেত থেকে রীতিমতো চলে যায়, আমরা বন্ধুরা ক্ষেতে গিয়ে ব্যাগের ভিতরে শসা ভরা শুরু করি। এই শসা চুরির কাজ শুরু করার পাঁচ মিনিট পর গিয়ে দেখি, শসা ক্ষেতের মালিক হঠাৎ করে আমাদের সামনে এসে হাজির। আমরা তো তখন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করি তবে শসা ক্ষেতের মালিক আমাদের সেই মুহূর্তে ধরে ফেলে। আসলে ঘটনাটা হয়েছিল, শসা ক্ষেতের মালিকেরা অনেক দিন ধরে লক্ষ্য করে যে, তাদের ক্ষেতের শসা কমে যাচ্ছে। তাই তারা দুপুরেও লুকিয়ে পাহারা দিচ্ছিল। যদিও অন্য সময়, অন্য কেউ হয়তো চুরি করেছিল তবে তারা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল এই কাজগুলো কারা করছে তাদের ধরার জন্য।
সেদিন হাতের কাছে পেয়ে তাই আমাদেরই ধরে নিয়েছিল। সেই সময় এর বিচারও করা হয়। যেহেতু আমি মামা বাড়িতে ঘুরতে গেছিলাম তাই আমাকে কিছুটা কনসিডার করা হলেও আমার সাথে যারা ছিল তাদের ক্ষেত্রে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। কারণ আমি অতিথি হিসেবে মামা বাড়ি গেছিলাম, সেই হিসেবে আমাকে কিছুটা মাপ করেছিল। আর অন্য যারা ছিল তাদেরকে ধরে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়। তারপর সবার বাবা মাকে ডাকা হয়। আর সেই মুহূর্তে আমাকে সাইড করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
যদিও আমাকে বিচারের তালিকায় নিয়ে আসা হয়নি। তবে আমার বন্ধুদের সবাইকে অনেকটা অপমানের শিকার হতে হয়েছিল। এই ঘটনার পর আমার বন্ধু গুলো আমার উপরে অনেক রাগও করেছিল। তবে সেই ক্ষেত্রে আমার কোন দোষ ছিল না। আমি তো তাদের সাথেই ছিলাম, আমাকে যদি অতিথি হিসেবে শাস্তি দেওয়া থেকে শসা ক্ষেতের মালিক কিছুটা কনসিডার করে, তবে তার দায়ভার তো আর আমার না। এইভাবে বন্ধুদের মধ্যে সম্পর্কের একটা ফাটল ধরে যায় আমার। আমিও অনেকদিন পর্যন্ত তাদের সাথে কথা বলি না। আসলে আমি কথা বলার চেষ্টা করতাম তাদের সাথে কিন্তু তারা কথা বলতো না। সেই ছোটবেলায় তাদের এই অভিমানগুলো আমার এখনও মনে পড়ে।
এই শসা চুরি করতে যাওয়ার জন্য আমাদের বন্ধুদের মধ্যে ফাটল ধরে গেছিল, সেই ব্যাপারটা ওই সময়টাতে আমাকে প্রচন্ড আহত করেছিল মানসিকভাবে। এই ঘটনার পর অনেকদিন পর্যন্ত আর মামা বাড়িতে আমি যাই না। তাছাড়া, এই ধরনের কাজগুলো করা প্রায় বন্ধও হয়ে গেছিল কারণ আমাদের যে বন্ধুত্বের গ্রুপ ছিল তারাও আর এই কাজ করতো না।
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
লোকেশন | বারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল। |
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনার গল্প পড়ে হাসতে হাসতে জীবন শেষ হয়ে গেল। অনেক চুরির দায় ও আপনাদের নিতে হলো আর নিজেরাও কিছু চুরি করতে পারলেন না। সর্বশেষ এটাই কথাই বলব আর ছোটবেলায় সবাই এরকম চুরি করেছে।
হ্যাঁ আপু, এটা ঠিক কথা বলেছেন আপনি ছোটবেলায় আমরা সবাই কমবেশি এই ধরনের চুরি করেছি।
আপনার শসা চুড়ির গল্প পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। আসলে আপনি ঠিক বলেছেন ছোট বেলায় আমরা কম বেশি সবাই চুরি করেছি। তবে সেটা মানুষের তেমন বেশি ক্ষতি হয়নি। তবে ছোট বেলায় আমি স্কুল থেকে বাসায় আসার পথে এমন খেত থেকে শসা চুরি করে খেতে খেতে বাসায় চলে আসতাম। গল্পটি পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আমার শেয়ার করা এই গল্পটি পড়ে যে আপনার ভালো লেগেছে, সেটা জেনে অনেক খুশি হলাম ভাই।
চুরি করতে গিয়ে যদি ধরা খেয়ে যান তাহলে মিশন ফেইল। তবে যদি ধরা না খেলেন তাহলে গল্পটা আরো বেশি মজা লাগতো। মামার বাড়ি গিয়ে এমন একটা অঘটন ঘটে যাওয়া আসলেই কেমন যেন হয়ে যায় বিষয়টা।
মিশন ফেইল হয়ে গেলে কি আর করা যাবে ভাই! অভিজ্ঞ চোর না হওয়ার কারণেই এই মিশন ফেইল হয়েছিল। হিহিহি..😁😁🤭🤭😥
আপনাদের বন্ধুদের একসাথে হয়ে এই ধরনের ছবিগুলোর কথা শুনে খুব ভালোই লেগেছে আমার কাছে। ছোটবেলায় এরকম জিনিস গুলো চুরি তো কমবেশি সবাই করে। বেশিরভাগ ছেলেই আমি মনে করি এই কাজগুলো করে অথবা করেছে। আপনাদের শসা চুরি করার বিষয়টা দারুন ছিল। কিন্তু এর কারণে আপনাদের বন্ধুত্বের মাঝে ফাটল ধরে গিয়েছে শুনে অনেক খারাপ লেগেছে। আসলে তখন আপনারও কিছু করার ছিল না। কারণ বড়রা সবাই আপনাকে মেহমানের কাতারেই ধরেছিল। যদি আপনি নিজে থেকে তখন বলতেন আপনি নিজের ইচ্ছা সেখানে গিয়েছিলেন তখন তো আরো খারাপ কিছু হতো। যাই হোক সুন্দর করে শেয়ার করেছেন চুরি করার গল্পটা।
এই ব্যাপারটার কারণে আমি অনেক দিন পর্যন্ত দুঃখী ছিলাম আপু।
ছোটবেলায় ছোট ছোট এই চুরি গুলোর প্রতি অভ্যাসটা আমার খুব কম ছিল। হয়তো এক দুই বার করেছিলাম মনে হয়। ঠিক ভালো করে মনেও পড়ছে না। কিন্তু ছোটবেলায় এই কাজগুলো করতে ভালোই লাগতো। আসলেই এগুলোকে তখন চুরির আওতায় ধরাই হতো না। বন্ধুরা মিলে অন্যের ফল গাছ থেকে অনেক ফল চুরি করে খেয়েছি। কিন্তু কখনো শসা খাওয়া হয়নি। আপনাদের শসা খাওয়ার মুহূর্তটা খুব ভালোই লেগেছে আমার কাছে। কিন্তু ধরা পড়ে গিয়েছিলেন শুনে খারাপ লাগলো। আর এজন্য আপনাদের সবার বন্ধুত্বটাও ভেঙে গিয়েছে আপনার সাথে।
কি আর করা যাবে ভাই খারাপ লাগলে, ধরা তো পড়েই গেছিলাম সেদিন শসা চুরি করতে গিয়ে হাতে নাতে। তাছাড়া এই ঘটনার কারণে আমার বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্বটাও ভেঙে গেছিল।
শঁশা চু্রির ঘটনাটি বেশ ভালো লাগলো।আসলে ছোটবেলায় না বুঝে ও আনন্দ মনে করে অনেক ছোট ছোট চুরি করে অনেকেই। আপনার আবার চুরি করতে গিয়ে ধরাও পরেছিলেন দাদা।আপনি সেখানে অথিতি চোর জন্য বিচারে মাফ পেয়েছেন জেনে হাসি পাচ্ছে। ধন্যবাদ পোস্ট টি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।
অতিথি চোর হিসেবে মাপ পাওয়ার ব্যাপারটা সত্যিই হাস্যকর ছিল। অনেক অপমানের হাত থেকে সেদিন রক্ষা পেয়েছিলাম অতিথি চোর হওয়ার কারণে। হিহি..🤭😁🤭
খুবই সুন্দর একটি স্মৃতিচারণ মূলক পোস্ট শেয়ার করেছেন আপনি। আসলে ছোটবেলার মুহূর্তগুলো পড়লে যেন একেবারে ছোটবেলায় ফিরে যাই৷ আপনার এই পোস্টটি যখন পড়ছিলাম তখন আমারও এরকম একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল৷ যখন প্রাইমারি স্কুলে ছিলাম তখন সকলে মিলে একটি সসার ক্ষেতের সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম৷ সেখানে সকলে মিলে অনেকগুলো সসা নিয়ে নিলাম৷ আসলে ছোটবেলাকার এরকম মুহূর্তগুলো খুবই ভালো লাগে৷ ধন্যবাদ আপনাকে এরকম একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য৷
আমিও যখন এরকম কোন ঘটনা পড়ি, আমিও আমার ছোটবেলায় ফিরে যাই ভাই।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ দায়িত্বশীল যেমন হয়ে যায় তেমন ভুল কিংবা ঠিক বোঝার ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়।এই রে,মামাবাড়ি গিয়ে শসা চুরি করা।তাও ভালো তোমার ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছিল, ব্যাপারটি কেমন একটা যেন লাগে ঘটনাগুলো ভাবতেই তাইনা দাদা!যাইহোক এইজন্য চুরি করতেও পারদর্শী হওয়াটা জরুরি,☺️☺️।ধন্যবাদ দাদা।
এটা ঠিক বলেছো বোন, তবে ছোটবেলায় এই বিষয়ে পারদর্শী ছিলাম না আমি। 😁😁