জেনারেল রাইটিং || শৈশবের স্মৃতিচারণ: পাখি শিকার
নমস্কার,
তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই অনেক অনেক ভাল আছো। আমিও বেশ ভালো আছি। |
---|
ছোটবেলায় আমি গ্রামেই বড় হয়েছি আর এই গ্রামে বড় হওয়ার সময়ের হাজারো স্মৃতি রয়েছে আমার। যে স্মৃতি গুলো আসলে শহরে বড় হলে হয়তো আমার জীবনে থাকতো না। এই গ্রামে বড় হওয়ার সময় আমি মাঝে মাঝে আমার এক মামার সাথে পাখি শিকার করতে যেতাম। আমার এই মামা ছিল আমাদের গ্রামের মধ্যে সবথেকে বড় পাখি ধরার এক্সপার্ট। আমি ছোটবেলায় সব সময় দেখতাম, আমার মামা যখন ভোরে বিল থেকে বাড়িতে আসতো অনেক পাখি ধরে নিয়ে আসতো। আর সেইগুলো গ্রামের লোকদের কাছে বিক্রি করতো এবং ভালো অংকের টাকা ইনকাম করতো।
শীতের মৌসুমে সাধারণত মামা এই পাখি শিকারের জন্য যেত। অনেক রাতে মামা এই পাখি শিকার করার জন্য যেত এবং ভোরে এই পাখি ধরে নিয়ে ঘরে ফিরত। একবার শখ করে আমিও মামার সাথে গেছিলাম পাখি শিকার করতে। ছোটবেলায় অত কিছু বুঝতাম না তবে এই পাখি শিকারের ব্যাপারটা আমার কাছে তখন অনেক মজা লাগতো। যাইহোক, আমাদের গ্রামে বড় খাল ছিল, নৌকায় করে সেই খাল বেয়ে চলে যেতে হতো বিলের মধ্যে। সেইবার আমি, আমার মামা এবং সাথে আরো দুইজন নিয়ে গেছিলাম আমরা এই বিলের ভিতরে পাখি শিকার করার জন্য একদিন গভীর রাতে।
আমাদের গ্রামের বাড়ির থেকে বিলের দূরত্ব অনেকটাই ছিল। যাইহোক, আমাদের নৌকায় করে সেখানে যেতে প্রায় ৪৫ মিনিটের মতো সময় লেগে গেছিল। আমরা সেখানে গিয়ে প্রথমে নির্দিষ্ট একটা জায়গা সিলেক্ট করি, এই পাখি শিকার করার জন্য। পাখি শিকার করার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম ছিল। পাখি শিকারের জায়গায় গিয়ে কোন কথা বলা যেত না। যাইহোক, আমরা আমাদের সাথে জাল নিয়ে গেছিলাম সেই সময়টাতে পাখি শিকার করার জন্য। এই পাখি শিকার করার জন্য আমরা বড় জালের দুই পাশে বাঁশ বেঁধে দিয়ে জাল পেতে দিই এবং আমাদের সাথে অন্য যে দুজন গেছিল তাদেরকে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় চুপচাপ করে বসে থাকার জন্য বলি এই জাল নিয়ে। আর অন্য দিকে আমি এবং আমার মামা দূর থেকে পাখিদের তাড়া করে নিয়ে আসি এই জালের দিক। এইভাবে আমরা এই পাখি শিকারের কাজটা করি সেইবার।
মামার সাথে সেইবার এই পাখি শিকার করার জন্য গিয়ে আমরা প্রায় ৩০ টার মত পাখি পেয়েছিলাম। বিভিন্ন ধরনের পাখি পেয়েছিলাম আমরা। যদিও সেই পাখিগুলোর নাম আমার জানা নেই। তবে সেই পাখিগুলো ছিল অতিথি পাখি বা বিদেশি পাখি। শীতের মৌসুমে আমাদের এইসব এলাকায় আসতো এই পাখিরা আর পাখি শিকারিরা এই পাখিগুলোকে শিকার করে নিত। সেইবার যখন মামার সাথে পাখি শিকার করে বাড়ি এসেছিলাম, আমার বেশ ভালো লেগেছিল কারণ অনেকগুলো পাখি পেয়েছিলাম আমরা। এই পাখিগুলো বিক্রি করে আমার সেই মামা বেশ ভালোই টাকা পেয়েছিল।
আমার মামা আমাকে পাখি বিক্রির টাকা দিয়ে ব্যাট এবং বল কিনে দিয়েছিল তার সাথে সেইবার পাখি শিকার করতে যাওয়ার জন্য। এই পাখি শিকারের ব্যাপারটা তখন আমার কাছে খুবই ভালো লাগলেও, এখন এই স্মৃতিটা হঠাৎ মনে পড়লে আমার বেশ খারাপ লাগে। এই পাখিগুলো কিছু সময় আশ্রয়ের জন্য, কিছু খাদ্যের জন্য আমাদের এখানে আসতো আর আমরা যদি তখন তাদেরকে শিকার করি তাহলে সেই কাজটা আমার কাছে অমানবিক বলে মনে হয়।
পাখি শিকারের এই ব্যাপারটা আইনগত দিক থেকেও অবৈধ। তবে এই ব্যাপারগুলো এখন বুঝতে পারি যা তখন বুঝতে পারতাম না। আজ হঠাৎ করেই ইউটিউবে পাখি শিকারের একটা ভিডিও সামনে চলে আসে, সেই পাখি শিকারের ভিডিওটা দেখতে গিয়ে আমার শৈশবের এই স্মৃতিটা হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল। তাই তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম এই ব্যাপারটা। এই বিষয়ে তোমাদের কি মতামত আছে তা কমেন্ট করে জানাতে পারো।
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
লোকেশন | বারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল। |
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
জীবনে এভাবে পাখি শিকার করতে খুব কমই যাওয়া হয়েছে তবে আমাদের এদিকে মাছের পুকুরে অনেক জাল টাঙানো থাকে, সেগুলোতে ভোরবেলাতে অনেক পাখি বেধে যাই ওই পাখিগুলো মাঝেমধ্যে আমি শিকার করেছি, যাইহোক ভাই আপনার পুরনো মুহূর্তগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই, আপনার এই মন্তব্যটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
মানুষ আবেগের বসে অনেক কাজ করে ফেলে কিন্তু পরবর্তীতে যখন সেটার ভুল বুঝতে পারে তখন আফসোস করে। শৈশবে পাখি শিকার করতে গিয়েছিলেন তবে এখন সেটা মনে পড়লে খুব খারাপ লাগে স্বাভাবিক কারণ অতিথি পাখিরা যখন খাবারের খোঁজে আসে তখন যদি আপনি তাদেরকে স্বীকার করেন বিষয়টা অন্যরকম হয়ে যায়।
একদম ঠিক কথা বলেছেন ভাই, এসব অতিথি পাখিরা যখন খাবারের খোঁজে আসে তখন তাদেরকে শিকার করার ব্যাপারটা সত্যিই অন্যরকম এবং যা অমানবিক একটি কাজ বলে আমার মনে হয়।
আপনার এক মামার সাথে সখের বশে পাখি শিকার করতেন এবং অনেক প্রকারের অতিথি পাখি পেতেন জন্য ভালো লাগতো আপনার।এখন সেই কথা মনে পড়লে কষ্ট হয় কষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক কারণ সত্যি তো ওসব পাখি দূর দূরান্ত পাড়ি দিয়ে আমাদের দেশে ঘুরতে কিংবা খাবার সংগ্রহ করতে আসে। আইনগত ভাবে পাখি শিকার নিষিদ্ধ করছে এটা খুব ভালো করেছে সরকার। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্ট টি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।
হ্যাঁ দিদি, এইসব অতিথি পাখি শিকার করা অনেক দেশেই অবৈধ। সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া এই পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসনীয়।
ছোটবেলায় আমিও পাখি শিকার করতে দেখেছি বন্ধুদের কিন্তু নিজের সেভাবে পাখি শিকার করে নেই। আর ছোটবেলায় এই কাজগুলো আমাদের সকলেরই কম বেশি হয়েছে। আসলে ছোটরা হুট করে পাখি শিকার বুঝে না। ঠিক এমনই মামা অথবা বড় ভাইদের মাধ্যমেই তাকে শিকারের ধারণা আসে। তবে অতিথি পাখি আমাদের পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ভারসাম্য বজায় রাখে আর এগুলো যারা বুঝে তারা পাখি স্বীকার করতে চায় না। যাহোক অনেক কিছু জানতে পারলাম আপনার এই ব্লগের মাধ্যমে।
হ্যাঁ ভাই, এই পাখিগুলো আমাদের পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, সেই সাথে পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করে। এই অতিথি পাখির শিকার করা মোটেও উচিত না।
ভাই আপনি আজকে আমাদের মাঝে শৈশবের স্মৃতিচারণ নিয়ে বেশ দারুন একটি পোস্ট লিখে শেয়ার করেছেন। আপনার মামা পাখি শিকারে যেত তখন আপনি অনেক ছোট ছিলেন এসব দেখে তখন আপনার কাছে বেশ ভালো লাগতো জানতে পারলাম। সন্ধ্যাবেলায় যেত আপনার মামা এবং সকালবেলায় যখন পাখিগুলো নিয়ে বাড়ি ফিরত তখন আপনি বেশ খুশি হতেন। আপনারা অতিথি পাখি শিকার করেছেন কিন্তু পরে যখন আপনি বুঝতে পারলেন আপনার একটু খারাপ লেগেছিল। ধন্যবাদ ভাই শৈশবের স্মৃতিচারণ নিয়ে পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই, আপনার এই মন্তব্যটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
এই অতিথি পাখি গুলো হাজার মাইল দূর থেকে আমাদের দেশে আসে শুধু একটু উষ্ণতার জন্য। তাদের কে শিকার করা এককথায় অমানবিক ভাই। তবে তখন ছোট ছিলেন বুঝতেন না সেই ব্যাপার টা আলাদা। কিন্তু এখন সেটা বোঝেন দেখে আপনার মধ্যে আফসোস কাজ করছে দেখে ভালো লাগল। আমাদের উচিত এই পাখিগুলো স্বীকার না করে তাদের রক্ষা করা।
হ্যাঁ ভাই, এটা ঠিক কথা বলেছেন, আমাদের উচিত এই পাখিগুলোকে শিকার না করে তাদেরকে রক্ষা করা।
শীতকালে অতিথি পাখি এমনিতে সব জায়গাতে বেশি দেখা যায় বিশেষ করে নদী এলাকায়। যাই হোক মামার সাথে পাখি শিকার করতে গেলেন। তবে আপনার মামাটি পাখির স্বীকার করে অনেক টাকা ইনকাম করে পাখি বিক্রি করে। তবে এটি শুনে খুব ভালো লাগলো সে পাখির শিকার করে আপনাদেরকে ব্যাট এবং বল কিনে দিলেন। আসলে এই স্মৃতিগুলো মনে পড়লে অন্যরকম একটা অনুভূতি আসে। সত্যি আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
আমার শেয়ার করা পোস্ট টি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে, জেনে খুশি হলাম আপু। ধন্যবাদ, আপনার এই সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
শীতের সময় আমাদের এখানেও বেশ অতিথি পাখির আগমন ঘটে থাকে। তবে এই সমস্ত পাখিগুলো দূর-দূরান্ত থেকে আমাদের এলাকায় এসে যায়। এগুলো কিন্তু আমাদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু অনেকে আছে ভুল বুঝে না জেনে না শুনে এগুলোকে স্বীকার করতে যায়। আজকে কিন্তু ঠিক তেমনি আপনার এক অনুভূতি জানতে পারলাম। আসলে প্রথমত কিছু করার থাকে না পরবর্তীতে যখন বুঝতে পারা যায় এগুলো ভুল হচ্ছে তখনই অনুতপ্ত হতে হয়।
অতিথি পাখি শিকার করা যে উচিত না, এই ব্যাপারটা আগে বুঝতে পারতাম না আপু, এখন বুঝতে পারি সেজন্য বেশ অনুতপ্ত হই এই ব্যাপারটা নিয়ে।