ক্রিয়েটিভ রাইটিং || গল্প : জঙ্গলে দীনু (পর্ব -০১)

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

নমস্কার,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই অনেক অনেক ভাল আছো। আমিও ভালো আছি।

আজকের এই ব্লগে তোমাদের সাথে একটি গল্প শেয়ার করবো । গল্পটির নাম "জঙ্গলে দীনু"। গল্পটির প্রথম পর্ব নিচে দেখে নেওয়া যাক।

forest-7626899_1280.jpg

ইমেজ সোর্স

ছোটবেলা থেকেই দীনু নিজের কপালটাকে খারাপ মনে করে। কারণ সে অত্যন্ত গরিব একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে। তার বাবা সামান্য একজন কৃষক। নিজের জমি বলতে কোন তার কিছুই নেই, পরের জমিতে কাজ করে অল্প যা কিছু ইনকাম করে তাই দিয়ে তাদের সংসার চলে। টাকা পয়সার অভাবে সে দীনুকে পড়াশোনাও করাতে পারেনি। তাই নিয়েও দীনুর মনে অনেক দুঃখ রয়েছে। দীনু ছোটবেলা থেকেই চাইতো পড়াশোনা করে ভালো চাকরি করবে, ইনকাম করবে কিন্তু সেই সৌভাগ্য তার আর হয়নি। ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে কৃষিকাজ করে বেড়ে উঠেছে সে ‌তাই ক্লাস ফাইভ এর বেশি পড়াশোনার কোন সুযোগ সে পায়নি ।

দীনুর বর্তমান বয়স ১৭ বছর। সময়ের সাথে সাথে যখন দীনুর বয়স বেড়েছে, দীনুর চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা অনেকটাই বেড়ে গেছে। কিন্তু তার পরিবার কখনো তার চাহিদা আকাঙ্ক্ষা মেটাতে সক্ষম হয়নি। দীনু নিজে টাকা ইনকামের জন্য কয়েকবার শহরেও এসেছে। কিন্তু শহরে এসে সেই ভাবে টাকা ইনকাম না করতে পেরে, পুনরায় গ্রামে ফিরে গেছে। এই ভাবেই দীনুদের সংসার চলছিল। দীনুর মা নেই, ছোটবেলায় জন্মের সময় তার মা মারা গেছে। তার মায়ের মৃত্যুর জন্য তার বাবাও তাকে দোষারোপ করে। সবকিছু মিলে দীনুর মনে অনেক কষ্ট। এই কষ্ট দূর করতে সে মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের একটি জঙ্গলে গিয়ে বসে থেকে। অনেক সময় সকালে যায় বিকালে আসে। আবার কোনদিন বিকেলে যায় সন্ধ্যার আগে আগে বাড়ি ফিরে আসে। এই ভাবেই দীনুর সময় চলে যাচ্ছিল।

দীনুর বাবা যখন কৃষি কাজে যায়, দীনুকেও সাথে যেতে বলে কিন্তু ইদানিং দীনু তার বাবার সাথে আর যাচ্ছে না।ইদানিং তার উদাসীনতা অনেকটাই বেড়ে গেছে। সে কেমন জানি একা থাকতে চাইছে সব সময়। দীনুর কোন বিশেষ বন্ধুও নেই এই গ্রামে। কারণ এই গ্রামে সব থেকে গরীব বলতে দীনুরাই রয়েছে। আর এতটা গরীব বলে তার সাথে কেউ বন্ধুত্ব করতে আসেনি, এমনটাই দীনু মনে করে থাকে। গরমের একদিন দীনু দুপুরের সময় চলে যায় তাদের পাশের জঙ্গলে। সেদিন সে সন্ধ্যার আগে আর বাড়ি ফেরেনা। সে সন্ধ্যা পর্যন্তই জঙ্গলের মধ্যে বসে থাকে। অন্ধকার অনেকটা হয়ে যাওয়ার পর সে সেই জঙ্গলে থেকে রওনা করে।

সেই সময় সে একটা জিনিস খেয়াল করে, একদল লোক এই জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করছে। সে আগে এই জঙ্গলে অনেকবার এসেছে কিন্তু কোন লোকের আনাগোনা কখনোই দেখতে পায়নি। আর যেহেতু সে বিকালের আগেই ফিরে যেতো বাড়িতে, হয়তো সেই জন্যই দেখতে পায়নি এমনটাই সে সেই মুহূর্তে ভাবতে থাকে। তবে এই সন্ধ্যায় এই জঙ্গলে এই মানুষগুলো কি করছে, সেই প্রশ্ন তার মনের ভিতরে জাগে। সেই জন্য সে সেই লোকগুলোর পিছু করতে থাকে। তাদের পিছু করতে করতে জঙ্গলের অনেকটা গভীরে চলে যায় সে। পূর্ণিমার রাত ছিল, এজন্য জঙ্গলের মধ্যেও অল্প দেখে দেখে সে চলতে পারছিল। আর যেহেতু এই জঙ্গলে হিংস্র কোন প্রাণীর ভয় ছিল না, এইজন্য সে অনেকটা নির্ভয়ে সেই লোকগুলোকে ফলো করে যেতে পারছিল।

যাইহোক, জঙ্গলের কয়েক কিলোমিটার ভেতরে যাওয়ার পরেই হঠাৎ লোকগুলো দাঁড়িয়ে যায়। তারপরে দেখে লোক গুলো মাটি খুঁড়ছে। সে ওই লোকগুলোর কাজের মধ্যে একটা রহস্য খুঁজে পায়। আসলে দীনু যে লোকগুলোকে ফলো করে জঙ্গলের ভিতর পর্যন্ত এসেছিল, সেই লোকগুলো ছিল ডাকাত। তারা শহরের একটি জুয়েলারি দোকান ডাকাতি করে, সোনা গয়না নিয়ে এসেছে এই জঙ্গলে পুঁতে রাখার জন্য । দীনু প্রথমে এই ব্যাপারটা দূর থেকে বুঝতে পারে না। কিন্তু আলোর এক ঝলক যখন স্বর্ণগুলোর উপর পড়ে দূর থেকে, সে এই জিনিসটা লক্ষ্য করে এবং সেই সময়ই সে এই ব্যাপারটা বুঝতে পারে

চলবে...


পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীক্রিয়েটিভ রাইটিং (গল্প)
লোকেশনবারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল।
বন্ধুরা, আমার আজকে শেয়ার করা "জঙ্গলে দীনু" গল্পের প্রথম পর্বটি তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও । সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে






আমার পরিচয়

IMG_20220728_164437.jpg

আমি সুবীর বিশ্বাস( রঙিন)। কলকাতার বারাসাতে আমি বসবাস করি। আমি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস এন্ড ফিসারিস সাবজেক্ট নিয়ে। বর্তমানে আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যানরত আছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু শান্ত স্বভাবের । চুপচাপ থাকতেই বেশি ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা, রেসিপি করা , গল্প লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি স্টিমিটকে অনেক ভালোবাসি এবং সব সময় স্টিমিটে কাজ করতে চাই।

🌷🌷 সমাপ্ত 🌷🌷

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 months ago 

আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে এমন জায়গায় থাকলো মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ গল্পটা পড়তে পারলে ভালো লাগতো।আসলে দীনু লোকগুলোকে ফলো করেছে, তারপর তাদের গোপন রহস্য জেনে গেল।তবে ডাকাত গুলো যদি দীবুকে দেখে ফেলে তাহলে কি হবে, সেটা জেনে ভয় লেগেছিল। দেখা যাক পরবর্তী পর্ব কি হয়। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর লিখেছেন।

 2 months ago 

আমার শেয়ার করা এই গল্পটি পড়ে যে আপনার অনেক ভালো লেগেছে, এটা জেনে অনেক খুশি হলাম আপু।

তবে ডাকাত গুলো যদি দীবুকে দেখে ফেলে তাহলে কি হবে, সেটা জেনে ভয় লেগেছিল।

পরবর্তী পর্বেই এই ব্যাপারটা জানতে পারবেন আপু।

 2 months ago 

ভাইয়া আজকে আপনি খুব সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন।দীনু এর জীবনের মত অনেক মানুষের জীবন এরকম আছে। বাবা কৃষক এবং বাবার সাথে ছেলে গিয়ে কৃষিকাজ করে। তবে ছোটকালে দীনু এর মা মারা গেল এ কারণে হয়তোবা তার কষ্টটা আরো বেশি হয়েছে। তবে আমার মনে হয় সেই জঙ্গলে গিয়ে ভালোই করেছে। ডাকাতের জিনিসপত্র গুলো মনে হয় সেই পেয়ে যাবে। যদিও এই পর্বে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়নি। আশা করি পরের পর্বে জানতে পারবো কি হয়েছে ডাকাতদের সাথে দীনুর। সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 months ago 

যদিও এই পর্বে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়নি।

ভাই, আশা করি আগামী পর্বে ব্যাপারগুলো ক্লিয়ার ভাবে বুঝতে পারবেন। যাইহোক, আমার শেয়ার করা এই গল্পটি যে আপনার কাছে সুন্দর লেগেছে, এটা জেনে ভালো লাগলো অনেক।

 2 months ago 

আপনার লেখা আজকের গল্পটার প্রথম পর্ব অনেক সুন্দর হয়েছে। বুঝতেই পারছি দীনুর জীবনে অনেক বেশি কষ্ট রয়েছে। গরিব হয়ে জন্ম নেওয়ার, কোন বন্ধু না হওয়া, তার ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হওয়া সব কিছুই মিলেই তার অনেক কষ্ট। আর তার মায়ের মৃত্যুর জন্য তার বাবা তো তাকেই দেখছি দোষারোপ করে থাকে। ওই ডাকাতের দল জঙ্গলে স্বর্ণ পুঁতে রাখার জন্য এসেছিল, আর এটা দীনু দেখে ফেলেছে। এখন কি হবে পরবর্তীতে এটাই দেখতে হবে। আশা করছি এই গল্পের পরবর্তী পর্ব তাড়াতাড়ি শেয়ার করবেন। অপেক্ষায় থাকলাম পড়ার জন্য।

 2 months ago 

এই গল্পের পরবর্তী পর্ব খুব তাড়াতাড়িই শেয়ার করবো আপু‌। আশা করি, আপনাদের আর বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না পরবর্তী পর্বে জন্য।

 2 months ago 

গ্রাম অঞ্চলের বেশিরভাগ ডাকাতদের আস্তানা হয়ে থাকে জঙ্গলের ভেতরে। আর তেমনি দীনুদের গ্রামের পাশে ওই জঙ্গলে ডাকাতেরা চুরি করে সব কিছু লুকিয়ে রাখতো আমার মনে হয়। দীনু তো আগে সন্ধ্যার আগেই বাড়িতে ফিরে যেতো জঙ্গল থেকে। কিন্তু ওই দিন সন্ধ্যার পরেও সে যেহেতু জঙ্গলে ছিল তাই ওই লোকদেরকে দেখেছিল। যারা চুরি করা গহনা জঙ্গলে লুকিয়ে রাখছিল। আমার তো এটা ভেবে ভয় হচ্ছে তারা যদি দীনুকে দেখে ফেলে তাহলে কি হবে। অপেক্ষায় থাকলাম পরবর্তী পর্বের জন্য।

 2 months ago 

আমার তো এটা ভেবে ভয় হচ্ছে তারা যদি দীনুকে দেখে ফেলে তাহলে কি হবে।

ভয়ংকর কিছুই হতে চলেছে ভাই। বাকি ব্যাপারটা পরবর্তী পর্বেই জানতে পারবেন। যাইহোক, পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.031
BTC 60794.44
ETH 2623.30
USDT 1.00
SBD 2.62