জেনারেল রাইটিং || শৈশবের স্মৃতিচারণ: ফুটবল হারানোর দুঃখে

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago

নমস্কার,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই ভালো আছো। আমিও ভালো আছি।

soccer-698553_1280.jpg

ইমেজ সোর্স

বন্ধুরা, আজকের এই ব্লগে তোমাদের সবাইকে স্বাগতম। আজকের এই ব্লগে তোমাদের সাথে একটি স্মৃতিচারণমূলক পোস্ট শেয়ার করবো। বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে তোমাদের সাথে স্মৃতিচারণমূলক কোন পোস্ট শেয়ার করা হয় না। আসলে এর আগে অনেক স্মৃতিচারণ মূলক পোস্ট তোমাদের সাথে শেয়ার করেছি। মাঝে মাঝে বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিগুলো মনে করতে বেশ ভালই লাগে। আর সেইগুলো তোমাদের সাথে শেয়ার করে একটা আলাদা আনন্দ পেয়ে থাকি। আসলে স্মৃতির পাতায় আমাদের অনেক কথা, অনেক গল্প জমা থাকে। এই স্মৃতিগুলো কোন কোন সময় আমাদের আনন্দ দেয় আবার কোন কোন সময় দুঃখ দেয়। তবে মাঝে মাঝে এই সব স্মৃতি মনে করতে ইচ্ছা করে আমাদের। যাইহোক, আজকে একটি দুঃখের স্মৃতি স্মরণ করবো এই পোষ্টের মাধ্যমে।

সেই সময় আমার বয়স ১২ বছরের মত ছিল। ছোটবেলা থেকেই ফুটবল, ক্রিকেট এবং অন্যান্য খেলাধুলা করতে আমি বেশ ভালবাসতাম। স্কুল শেষে বাড়ি ফিরেই চলে যেতাম এই খেলাধুলা করার জন্য। কোন কোন সময় বাড়ি থেকে সামান্য কিছু খেয়ে যেতাম আবার কোন কোন সময় না খেয়েই চলে যেতাম বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করার উদ্দেশ্যে। আমাদের বাড়ি থেকে সবসময় একটু পড়াশোনার জন্য চাপ দেওয়া হতো। খেলাধুলার থেকে পড়াশুনার উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বলতো। তবে আমরা সেই বয়সটাতে পড়াশুনোর থেকে খেলাধুলায় বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকতাম। পড়াশোনায় যে খুব বেশি খারাপ ছিলাম তা কিন্তু না, তবে পড়াশুনোর প্রেসার সব সময় বাড়ি থেকে পেয়ে থাকতাম। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব ঋতুতেই সমানভাবে খেলাধুলা করতে পছন্দ করতাম। তবে বর্ষার সময় খেলাধুলা করে বাড়ি আসাটা একটু চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ সারা গায়ে কাঁদা মেখে বাড়িতে ফিরতে হত তখন

এই নিয়ে বাড়িতে অনেক রাগারাগিও করা হতো। তবে সেইসব কথা কানে নিতাম না। একবার বর্ষার সময় এরকম ভাবে বেশ কয়েকদিন চলতে থাকে। প্রতিদিনই কাদা মাখিয়ে বাড়িতে আসতে থাকি। এই ব্যাপারটা নিয়ে বাড়িতে দুই এক দিন রাগারাগিও হয়। এই বিষয়টা করতে নাও করা হয়, তবে এসব কথার গুরুত্ব তখন দিইনি। এভাবে একদিন বিকালের দিকে খেলাধুলা করতে চলে যাই মাঠে। বন্ধুদের সাথে খেলাধুলো করে আনন্দ করে সেদিন বাড়ি ফিরি। সেই সময়টাতে আমার একটা ফুটবল ছিল, যেটা আমার নিজের জমানো টাকা দিয়ে কেনা ছিল। আমার ফুটবল নিয়েই খেলতে যেতাম আমি। যাইহোক, বাড়ি এসে কাদা মাখা শরীর দেখে বাবা খুব রেগে যায়। তারপর রাগ করে বাবা আমার ফুটবলটা ছুরি দিয়ে কেটে ফেলে।

সামনে এরকম একটা দৃশ্য দেখে আমি সহ্য করতে পারি না। অনেক চিৎকার চেঁচামেচি করি, কান্নাকাটি করি তবে কোনভাবেই যেন আমার রাগ কন্ট্রোল হচ্ছিল না। কারণ এটা আমার কষ্টের জমানো টাকা দিয়ে কেনা ছিল। বাবা হয়তো সেই সময় আমার ইমোশনের গুরুত্ব বুঝতে পারেনি। সেও অনেকটা রাগ করে এই কাজটি করেছিল। তবে আমার রাগ কোন ভাবেই কন্ট্রোল হচ্ছিল না বলে আমি রুমে এসে অনেক ভাঙচুর করি। তারপরেও আমার রাগ মেটে না। এরপর আমি আমার ১০০০ টাকা দামের জুতো কেটে ফেলে দিই বাবার উপরে রাগ করে। বাবা ৩০০ টাকার ফুটবল কেটে ফেলেছিল আর আমি রাগ করে ১০০০ টাকার জুতো কেটে ফেলি

এই সময় আমাকে কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছিল না। যাইহোক, ফুটবল হারানোর দুঃখেই এই কাজ করেছিলাম আমি। কারণ অনেক শখের ফুটবল ছিল আমার। এইসব ঘটনা ঘটানোর পরে রাগ কিছুটা শান্ত হয় আমার। রাগ শান্ত হওয়ার পরে বাবাও ব্যাপারটা বুঝতে পারে সে ভুল করেছে । আর আমিও ব্যাপারটা বুঝতে পারি আমার দ্বারাও জুতো কাটার কাজটা ভুল হয়েছে। আসলে রাগের মুহূর্তে মানুষ কত কিছুই করে ফেলে তবে সেটা সব সময় ঠিক হয় না। আমার যদিও সেই সময় সেই বয়সটা বোঝার ছিল না তাই হয়তো আমি ভুল করেছিলাম। আর বাবা যেই কাজটা করেছিল, সেটা হয়তো রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরেই করেছিল। যাইহোক, হঠাৎ করেই এই বর্ষার সময়টাতে এই স্মৃতিটা মনে পড়ে গেল তাই তোমাদের সাথে এখানে শেয়ার করলাম।


পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
লোকেশনবারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল।
বন্ধুরা, আজকের এই ব্লগটি তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও । সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে






আমার পরিচয়

IMG_20220728_164437.jpg

আমি সুবীর বিশ্বাস( রঙিন)। কলকাতার বারাসাতে আমি বসবাস করি। আমি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস এন্ড ফিসারিস সাবজেক্ট নিয়ে। বর্তমানে আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যানরত আছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু শান্ত স্বভাবের । চুপচাপ থাকতেই বেশি ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা, রেসিপি করা , গল্প লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি স্টিমিটকে অনেক ভালোবাসি এবং সব সময় স্টিমিটে কাজ করতে চাই।

🌷🌷 সমাপ্ত 🌷🌷

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 66937.04
ETH 3270.78
USDT 1.00
SBD 2.74