আলোকচিত্র : শান্তিনিকেতনে কিছুদিন -০৫
"কোপাই" নদী । যেমন শান্ত তেমনি স্নিগ্ধ এর পরিবেশ । ছোট্ট, আঁকা-বাঁকা । দুই তীরে বালিয়াড়ি আর ঝোপঝাড় প্রচুর । পাড়ের উঁচু স্থানে রয়েছে শাল-তমাল-বুনো খেঁজুর গাছের সারি । স্থানে স্থানে দুই-তিনটি নীপ গাছ অপেক্ষায় রয়েছে বাদল দিনের প্রথম কদম ফোটানোর অপেক্ষায় । দূরে দূরে তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে, সব গাছ ছাড়িয়ে আকাশ পানে উঁকি মারছে ।
কোপাই নদীর কাছে আমরা যখন পৌঁছোই তখন প্রায় দুটো বাজে । নদীর ওপরে ছোট্ট একটি ব্রিজ । ব্রিজের কাছে গিয়ে দেখি সাঁওতালদের বিশাল একটা প্রসেশন চলছে । আগামীকাল তাদের গাঁয়ে পরব আছে । তাই এই প্রসেশন । অদ্ভুত ঝলমলে পোশাক পরিহিত, গায়ে, পিরান, পরনে ধুতি আর গামছা, মাথায় পাগড়ি, আর পাগড়িতে পাখির পালক গোঁজা । খালি পা, কারো কারো পায়ে চটি । ঢাক-ঢোল বাজিয়ে নাচতে নাচতে আর অদ্ভুত মাতাল করা সুরে পরবের গান গাইতে গাইতে চলেছে তারা মেঠো পথ দিয়ে ।
প্রচন্ড গরম । গ্রীষ্মের শুরুতেই এখানে প্রখর সূর্যালোকে নদীর জল তেতে রয়েছে । স্থানে স্থানে যেখানে প্রচুর ঝোপঝাড় আর গাছের জটলা নদীর জলে ঝুঁকে রয়েছে সেখানে জল কাকচক্ষুর মতো কালো টলটলে আর শীতল । সেখানে গাঁয়ের দস্যি ছেলের দল দুরন্তপনায় মেতে উঠেছে ।
নদীর দুই তীরেই একেবারে জলের ধরে লম্বা লম্বা ঘাসের জঙ্গল । বালির মধ্যে পা ডুবে যায় সেথায় । কোত্থাও কাদা নেই, আছে শুধু একরাশ বালি । শেষবেলার সূর্য্যের পড়ন্ত আভা লেগে সেগুলো হীরককুচির মতো জ্বল জ্বল করছে । নদীর তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে একটা শান্ত নির্জন স্থানে উপনীত হলাম ।
এখানে একটা তালাওয়ের মতো আছে, মনেই হয় না যে এটি একটি নদী । এতটা নিস্তরঙ্গ এর জলরাশি । কোত্থাও কোনো ঢেউ নেই । ভাবলাম এখানে একটু বসি । কিন্তু, ইতি উতি চাইতেই আবিষ্কার করলাম অজস্র বিয়ার আর হুইস্কির বোতল । ইতঃস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে । এত সুন্দর একটি জায়গায় শহুরে কিছু সভ্য জানোয়ারের দল কলুষিত করে গিয়েছে । আর বসা হলো না । ফেরার পথ ধরলাম ।
ব্রিজের কাছে এসে দেখলুম টিনটিন বাবুরা নেমে পড়েছে । বালিয়াড়িতে ওদের কয়েকটা ছবি তুলে দিলাম । এরপর ব্রিজের কাছে নদীর উঁচু পাড়ে বাউলদের একটা গানের আসরে কিছুক্ষন গান শুনে সাঁওতালদের পসরা গুলো ঘুরে ঘুরে দেখলাম । তনুজা সাঁওতালি কানের দুল, মাকড়ি, গলার হার এসব কিনলো ।
এরপরে, ড্রাইভারকে ২০০ টাকা দিয়ে কয়েক খানা পাঁপড়, ফুলুরি আর আলুর চপ আনতে বললুম । একটা মেলা বসেছিল সেখানে । তো ব্যাটা পুরো ২০০ টাকার পাঁপড়, ফুলুরি আর চপ নিয়ে হাজির । কত খাওয়া যায় ! তাও আমি অনেক গুলো পাঁপড় , ফুলুরি আর চপ গিলে অবশেষে হার স্বীকার করে নিলাম । মজার একটি ছেলে আমার এই ড্রাইভার ।
সন্ধ্যের আঁধারে নদীর কালো জল আঁধারে ডুব দিলো । আর আমরাও হোটেলে ফেরার পথ ধরলাম । দারুন একটি দিন এনজয় করলাম সত্যি ।
কোপাই নদীর তীরে সাঁওতালদের পরবের শোভাযাত্রা ।
তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : বিকাল ১ টা ৪০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাইবার কালে
গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে
তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : বিকাল ২ টা ৩০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
কোপাইয়ের তীরে আদিবাসী সাঁওতালীদের নানান পসরা সাজিয়ে বসেছে বিক্রির উদ্দেশ্যে ।
তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : বিকাল ৫ টা ৫০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
কোপাইয়ের উঁচু পাড়ে বাউলদের গানের আসর বসেছে
তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : বিকাল ৫ টা ২০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
নদীর বালিয়াড়িতে মা, তনুজা আর টিনটিনের গ্ৰুপ ফটো ।
তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : বিকাল ৫ টা ০০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
নদীর তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে দূরে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো
তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : বিকাল ৪ টা ২০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
নদীর তীরের সেই নির্জন তালাওয়ে । অদ্ভুত শান্ত নির্জন পরিবেশ । মন উদাস করা প্রকৃতি এখানে ।
তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : বিকাল ৪ টা ৪০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
ক্যামেরা পরিচিতি : OnePlus
ক্যামেরা মডেল : EB2101
ফোকাল লেংথ : ৫ মিমিঃ
কোপাই নদী সম্পর্কে সর্বপ্রথম জেনেছিলাম বৌদির পোস্ট থেকে। উনিও এখানে গিয়েই নদীটা সম্পর্কে লিখেছিলেন। আদিবাসীরা এখনো ওদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে ব্যাপার টা বেশ মজার। আর ওরা কী ফুটবল ফ্যান নাকী। অধিকাংশের গায়ে দেখছি ফুটবলের বিভিন্ন দলের জার্সি।।
দাদা মাত্র ২০০ টাকার পাপড়, ফুলুরি আর চপ এটাই খেয়ে শেষ করতে পারলেন না। শেষে হার মেনে নিলেন না না না এই হার মেনে নেয়া সম্ভব না হি হি হি। কোপাই নদীর প্রাকৃতিক দৃশ্য গুলো দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। প্রত্যেকটা ফটোগ্রাফি অসাধারণ ছিল বিশেষ করে বলতে হয় নদীর ওই পারে তালগাছের ফটোগ্রাফি টা। দাদা সাঁওতালদের পরব উৎসব সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার আমার আগ্রহটা থেকে গেল। কোপাই নদীর শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশে আপনার ফটোগ্রাফি টা মন কেড়ে নিয়েছে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community
হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করলে,হারিয়ে যান না কেরে😉😉।যাই হোক বেশ উপভোগ করার জন্য ভালো জায়গা।শান্তিনিকেতন বলে কথা।শান্তির জায়গা।ধন্যবাদ
হুম, শান্তিনিকেতনেই আদিবাসী গাঁয়ে হারিয়ে যেতে চাই । সাঁওতাল গাঁয়ে দেখেছিলাম তাঁকে, কালো সে যতই কালো হোক, আমি দেখেছি তাঁর কালো হরিণ চোখ । হারিয়ে যেতে চাই সেথায় ....
এই অপেক্ষাটা কবে শেষ হবে দাদা, একটা আকর্ষণ সেখানে এখনো কিন্তু বসে আছে, গল্পের বাকী অংশটুকু দ্রুত চাই। যদিও বুঝতে পারছি বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন আপনি।
বেশ মজা পাইছি এখানে হা হা হা হা, সব শেষ করেছিলেন তো দাদা নাকি? আজকের দৃশ্যগুলো সত্যি বেশ মুগ্ধকর ছিলো আর শেষ দৃশ্যটায় আপনার পুরো ফেসটা দারুণভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে। ধন্যবাদ
ভক্তের অনুরোধ উপেক্ষা করা যাবে না । একটু পরে লিখতে বসবো গল্পের অন্তিম পর্ব । থ্যাংক ইউ ভক্ত :)
দাদা আপনার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে আমার মনে হয়েছে সাঁওতালরা বেশ আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে তাদের জীবন অতিবাহিত করে ।আর কোপাই নদী টি সত্যিই চমৎকার। নদীর তীর ধরে হেঁটে যেতে আমার কাছেও বেশ ভাল লাগে । একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে ।আর আপনি যতই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চান না কেনো শেষের ছবিটিতে কিন্তু আপনাকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। চোখ দুটো ভালোভাবে ঢাকা হয়নি। যাই হোক খুব সুন্দর সময় কাটিয়েছেন ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যাচ্ছে ।ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সঙ্গে আপনার সুন্দর মুহুর্ত গুলো শেয়ার করার জন্য।
ওহ ম্যাডাম, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে । চোখ দুটি একটু কম ঢাকা হয়ে গেছিলো । এবার ঠিক করে দিয়েছি । এরপর থেকে হিজাব পরিয়ে দেব চোখে ।
বেশ মজা পেয়েছি।হিজাব পড়ার দরকারটা কি?খোলা রাখলেই ভালো লাগে।
দেখে ফেলবে যে সবাই । শুধুমাত্র আপনজনদের ছাড়া আর কাউকে দেখা দেই না । বুঝলেন ম্যাডাম !
জি বুঝলাম, আমি আপনাকে কিন্তু এখনও পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি।এখনও চোখ আমি দেখতে পাচ্ছি হা হা হা।
হায় হায় রে, কি চোখ আপনার ? চিতা বাঘের মতো তীক্ষ্ণ দেখি । এতবার ঢেকেও রেহাই নেই ।
এই রে আমার বাংলা ব্লগ কথা বলতে পারে ??তাই তো জানতাম না ।বেশ অবাক হয়েছি। তবে ভালই লাগছে বাংলাব্লগের সঙ্গে কথা হলো। দেখেছেন খালি চোখে আমি কত ভালো দেখি ,তবুও ডাক্তার চশমা দিয়েছে।যদিও আমি পরি না।আর একটা কথা আমিও কিন্তু আপনার মত চেহারা শুধু কাছের মানুষকেই দেখাই। 🐆🐆
আপনি দেখছি ম্যাডাম এক্কেবারে আমার মতোই । ঠিক ঠিক, কাছের মানুষ ছাড়া কাউকে নিজের চেহারা দেখাতে নেই । আর হ্যাঁ, আমারবাংলাব্লগ কথা বলতে জানে । হা হা :)
দাদা আপনার শান্তিনিকেতনে ঘুরতে যাওয়ার পর্বগুলো দেখে আমার কিন্তু খুব ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করছে এখানে। সত্যি অপূর্ব কিছু সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে। মহিলাটি পাটি বিছিয়ে অনেকগুলো জিনিস নিয়ে বসে আছে। এসব জায়গা থেকে ঘুরে ঘুরে আমার কিছু কিনতে খুব ভালো লাগে। কারণ এগুলো প্রায় জিনিস তাদের নিজের হাতের তৈরি হয়ে থাকে যা তারা নিখুত ভাবে তৈরি করে। এমন সুন্দর জায়গা দেখলে কার না হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে বলেন দাদা 🙂!!! ওখানে ঢুকাও আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা শান্তিনিকেতনের আরো একটি সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল।
শান্তিনিকেতনে ঘুরতে যাওয়ার পর্বগুলো কিন্তু দাদা অসাধারণ। বিশেষ করে সাঁওতাল এর ছবিগুলো বেশ উপভোগ করেছি। সেই ছোটবেলায় দেখেছিলাম এরপর থেকে আর দেখা হয় নি। তবে দাদা এরকম নিরিবিলি পরিবেশে আমারও সময় কাটাতে অনেক ভালো লাগে, মন শান্ত হয়ে যায়। আর দাদা ওই গল্পের জন্য কিন্তু এখনো বসে আছি, পরবর্তীতে কি হবে? পড়ার জন্য অপেক্ষা করছি।
দাদা আমার মনে হয় সবকিছুই দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে। আপনার বর্ণনাগুলো যখন পড়ছিলাম তখন মনে হয়েছিল জায়গাটা কতই না সুন্দর। আপনার লেখার সঙ্গে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখার বেশ মিল লক্ষ করলাম। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ণনা করার ক্ষেত্রে অদ্বিতীয় ছিলেন। এর পরের স্থানেই সম্ভবত বুদ্ধদেব গুহ। যাইহোক কোপাই নদী এবং তার আশপাশের এলাকা সেইসঙ্গে সাঁওতালদের বিভিন্ন আয়োজন মিলিয়ে দারুন লাগলো আজকের এই পোষ্ট। ধন্যবাদ