গোয়েন্দা রহস্য গল্প : "অর্কিড যখন মৃত্যুর হাতছানি দেয়" - পর্ব ০৪

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago


copyright free image source pixabay

তৃতীয় পর্বের পর


চার


তক্ষুনি ঘাড় নেড়ে ইন্সপেকটরের কথায় সায় দিলো হরিসাধন ।

-"সেদিন তোমার বাবু ঠিক ক'টায় শেষবারের মতো ড্রয়ইং রুমে ঢোকেন ?"

-"আমি তো হুজুর ঘড়ি দেখিনি তবে ক্যাটালগটা পাওয়ার সাথে সাথে আমি বাবুকে জানিয়েছিলাম; আর বাবু প্রায় সাথে সাথেই বসার ঘরে ঢোকেন । তখন প্রায় দশটা বাজে । কারণ তার অধঘন্টাটাক আগে আমাদের এপার্টমেন্টের নিচে বাচ্চাদের স্কুলের বাসের হর্ন শুনতে পেয়েছিলাম । রবিবার বাদে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ন'টায় স্কুলের বাসটা নিচে এসে হর্ন দেয় । আমাদের এপার্টমেন্টের বেশ কয়েকটা বাচ্চা যায় ওই স্কুল বাসটাতে ।"

-"তুমি তখন ঠিক কোথায় ছিলে যখন তোমার বাবু ড্রয়ইং রুমে আসেন ?"

-"আমি হুজুর তখন কিচেনে ।"

-"কিচেনে ? "

-"হ্যাঁ, মাছ ভাজছিলাম ।"

-"গুড, ড্রয়ইং রুম থেকে কোনো শব্দ-টব্দ পেয়েছিলে কি ? "

-"না হুজুর, মাছ ভাজার ছ্যাঁক ছোঁক শব্দে আমি কিছুই টের পাইনি ।"

-"বুঝলাম । আচ্ছা তোমার বাবু তো ওই সোফার উপরে বসা অবস্থাতে মারা গেছিলেন ? তাই তো ? তুমি চোখ বুজে খুব ঠান্ডা মাথায় ভাবো তো সেদিনকার কথা । বাবুর হাতে কি ছিল ? বাবুর সামনের টি টেবিল টার উপরে কি ছিলো ? সব একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বলো । সময় লাগুক সমস্যা নেই, কিন্তু এক্সাক্ট জিনিসটা আমার জানা চাই । "

বেশ কিছুক্ষন মাথা নিচু করে ভাবলো হরিসাধন তারপরে বললো - "আমি যখন বাবুকে প্রথম দেখি হুজুর তখন বাবুর ওই অবস্থা দেখে অন্য্ কিছু নজর করতে পারিনি । তবে ওঁনার হাতে কোনো কিছুই ছিল না এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত । বাবুর দুই হাত ছিল সম্পূর্ণ ফাঁকা ।"

-"আচ্ছা, আর তোমার বাবুর সামনের ওই টি টেবিলটা ? ওটাতে কি কি জিনিস ছিলো ? এখন যা যা আছে ঠিক তাই তাই ছিলো ?"

-"হ্যাঁ, হুজুর । শুধু আমি টেবিলটা একটু সামান্য গুছিয়ে রেখেছি । একটু এলোমেলো ছিলো ।"

-"ভুল করেছো হরিসাধন । তোমার ওই টি টেবিলটার কোনো কিছুই স্পর্শ করা উচিত হয়নি মোটেও । বিশেয করে যখন ঠিক ওই টেবিলটার সামনেই তোমার বাবুকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে । আচ্ছা, সেই ক্যাটালগটা কোথায় হরিসাধন ?"

হরিসাধন অঙ্গুলি নির্দেশ করলো ঘরের স্ট্যান্ড লাম্প্টার পাশের ছোট্ট বুকসেল্ফটার দিকে । দ্রুত পায়ে ইন্সপেক্টর হেঁটে গিয়ে দাঁড়ালেন বুকসেল্ফটার সামনে । ক্যাটালগটা সামনেই দেখতে পেলেন । নার্সারির নামটি ভারী অদ্ভুত । Carla Porto (কার্লা পোর্তো) । ক্যাটালগের প্যাকেটের উপরে দ্রুত একবার হাত বুলিয়ে ইন্সপেক্টর বড়বাবুকে ইশারা করলেন ।

বড়বাবু তড়িৎবেগে উঠে দাঁড়ালেন ।

-"বলুন স্যার ।"

-"বড়বাবু এই প্যাকেটটা এখুনি ফরেন্সিক ডিপার্টমেন্টে পাঠান, আর যত দ্রুত সম্ভব ফরেন্সিক রিপোর্টটা আমার চাই সাথে ডেড বডির পোস্টমর্টেম রিপোর্ট । এ দুই রিপোর্ট ছাড়া আমরা এখন ঠুঁটো জগন্নাথ ।"

-"ওকে স্যার, যতদ্রুত সম্ভব আমি চেষ্টা করবো ।"

-"গুড । আর হরিসাধন একটা কথা বলোতো এই ক্যাটালগটি কি এখানে ছিলো নাকি টি টেবিলে ?"

-""টি টেবিলে ছিলো হুজুর । খোলা পড়ে ছিলো । তাই আমি টি টেবিল থেকে দুটি ম্যাগাজিন আর ওই ক্যাটালগটা এনে বুকশেলফে রেখে দিয়েছিলাম ।"

-"কখন ?"

-"ওই, বাবুর দেহ নিয়ে যাওয়ার পরে বিকেলের দিকে । টেবিলটা একটু এলোমেলো ছিলো তো, তাই আমি অভ্যাসবশত একটু গুছিয়ে রেখেছি ।"

-"তার মানে তোমার বাবু ওই ক্যাটালগটা যখন দেখছিলেন সেই অবস্থাতে মারা গেছিলেন ?"

-"মনে হয় হুজুর, কারণ ক্যাটালগটা খোলা পড়ে ছিলো বাবুর সামনে ।"

সহসা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো ইন্সপেক্টরের দুটি চোখ । ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতের তালুতে একটা ছোট্ট ঘুষি মারলেন । মুখে খেলে গেলো একটা আত্মতৃপ্তির হাসি ।

-"আচ্ছা !! বুঝলাম ।" টেনেটেনে উচ্চারণ করলেন ইন্সপেক্টর অনীশ মিত্র । একটা আশার আলো দেখতে পেয়েছেন উনি । ঘুরে বুকশেল্ফের কাছ থেকে সেই সোফাটার কাছে এলেন যেটাতে প্রোফেসর সেন খুন হয়েছিলেন । সোফা সহ টি টেবিল এর চতুর্দিকে পুলিশ ইতিমধ্যে সাদা চক দিয়ে বৃত্ত এঁকে দিয়েছে । সাবধানে দাগটা না মাড়িয়ে সোফার খুব কাছে গেলেন ইন্সপেক্টর । পকেট থেকে একটা ম্যাগনিফায়িং গ্লাস বের করলেন । তারপরে সোফাটা খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে লাগলেন । মিনিট পাঁচেক পরে সহসা কী যেন খুঁজে পেয়ে দ্রুত সেটি একটা সাদা খামের মধ্যে ভরে ফেললেন টুইজার দিয়ে ।

এরপর টি টেবিলটা পরীক্ষা করলেন । মেঝে পরীক্ষা করলেন । কিছুই পেলেন না । টি টেবিলটার নিচের মেঝে থেকে আবারো কি যে কুড়িয়ে পেলেন এবং দ্রুত হাতে সেটিকেও টুইজার দিয়ে খামবন্দি করে ফেললেন ।

এরপর বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে হরিসাধনকে বললেন -

"হরিসাধন, তোমার বাবু কি ডাইরি লিখতেন ? আমি ওনার স্টাডি রুমে যেতে চাই । তারপর ব্যালকনিতে । অর্কিড দেখবো ।"

-"চলুন হুজুর, আপনাদের নিয়ে যাচ্ছি ।"

-"বড়বাবু, ডাইরি এবং কোনো প্রাইভেট চিঠি বা নোটস পাওয়া মাত্র বাজেয়াপ্ত করবেন ।"

"হান্ড্রেড পার্সেন্ট স্যার, নো প্রবলেম । আপনি শুধু অর্ডার করবেন ।"

-"ওকে, চলুন স্টাডি রুমে যাই । রহস্যটা বেশ জটিল, মাকড়সার জাল । বুঝলেন বড়বাবু ? এই জাল একটু একটু করে খুলতে হবে তবেই আমরা রহস্যভেদ করতে পারবো ।"

-"সে তো ঠিকই স্যার । কিন্তু, আমরা এখনো যে তিমিরে ছিলাম সেই তিমিরেই আছি । কিভাবে খুন হলেন সেটাই বিন্দুমাত্র বুঝে উঠতে পাচ্ছি না তো খুনি ধরবো কি করে ? সে তো আরো কঠিন কাজ ।"

-""জটিল কেসেই আনন্দ, বড়বাবু, জটিল কেসেই আনন্দ ।


[ক্রমশ]

Sort:  

রহস্য হবেই, কিন্তু এখনও বুঝে উঠতে পারছি না।কি যে হবে সামনে।মুটামুটি আন্দাজ করতে পারছি যে সকল কাহিনীর মূল হবে ক্যাটালগ।আমি মনে মনে কল্পনা করছি রহস্য উন্মোচন হলে ক্যাটালগ থেকেই হবে।চলবে দাদা চলবে....

 3 years ago 

ইন্সপেক্টর মিত্র তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। তদন্তে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসেনি। তবে যেখানে প্রফেসর সেনের মৃত্যু হয়েছিল সেখানে সামান্য কিছু এভিডেন্স পেয়েছিল। এই এভিডেন্সগুলো তারা খুব যত্নে খামবন্দী করেছিল। ইন্সপেক্টর মিত্র খুব সূক্ষ্মভাবে তদন্ত চালাচ্ছিল। ইন্সপেক্টর মিত্র হরিসাধনের কাছ থেকে জেনেছিল মৃত্যুর পর ওই ক্যাটালকটি প্রফেসর সেনের সামনেই ছিল। এটা শুনে ইন্সপেক্টর মিত্র খুবই খুশি হয়েছিল। ইন্সপেক্টর মিত্র থানার বড়বাবুকে ক্যাটালগের ফরেনসিক রিপোর্ট এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দ্রুত দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। থানার বড়বাবু খুনি শনাক্তের আশা ছেড়ে বলেছেন কেসটা খুবই জটিল। কিন্তু ইন্সপেক্টর মিত্র আশা ছাড়েননি ইন্সপেক্টর মিত্র বলেছেন "জটিল কেসেই আনন্দ"। শেষ পর্যন্ত ইন্সপেক্টর মিত্র কি পারবে খুনি পর্যন্ত পৌঁছাতে বা মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে? রহস্য রয়েই গেল। অপেক্ষায় রইলাম মৃত্যুর আসল রহস্য জানার জন্য।

এই পর্বে খুব সম্ভবত ইন্সপেক্টর সাহেব ক্লো টা ধরতে পেরেছিলেন যেটা বড়বাবু এখনো অবধি বুঝতেই পারেনি। তবে শুধু বিষের ব্যাপারটা ছাড়া এখনও অবধি সব কিছু অপ্রকাশিতই রয়ে গেলো । তবুও যেহেতু ইন্সপেক্টর সাহেবের মুখ জুড়ে একটা স্বস্তিময় হাসির ইঙ্গিত পাচ্ছি তাই বলায় যায় যে আমরা হয়তো রহস্য উদঘাটনের খুব কাছাকাছি কোথাও আছি। তাই আশা করতেই পারি যে, সামনের পর্বে দাদা সকল রহস্যের উন্মোচন করবেন তাঁর গল্পের মাধ্যমে। সে আশা নিয়েই আবারো অপেক্ষায় আছি.....

 3 years ago 

এখন আমার মনে হচ্ছে ওই ক্যাটালগে অবশ্যই কোন ধরনের বিষ দেয়া ছিল। সেই বিষটা এমন যেটা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে এবং তৎক্ষনাত মৃত্যু ঘটাতে পারে। কিন্তু খুনটা কে করালো সেটা এখনো বুঝে উঠতে পারছিনা। আশা করি সামনের পর্বে রহস্য উন্মোচন হবে।

 3 years ago 

মনে হয়নি ইন্সপেক্টর মিত্রের তদন্তে বিশেষ কোনো লাভ হয়েছে বলে যদিও তিনি যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়েছে। আমি গতকালের পার্ট পড়েই বুঝেছিলাম যে ক্যাটালগেই সমস্যা মানে কোনো না কোনো পয়েজন আছে।আমার কাছে বড়বাবুর থেকে ইন্সপেক্টর মিত্রকেই বেশি ভালো লাগছে কারণ তার কাজের জন্য। আমি এখন জাস্ট ওয়েট করে আছি মেইন রহস্যটার জন্য। দাদা তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি দেন, আর ওয়েট করতে পারতেছিনা রহস্যটার উদঘাটন এর জন্য।

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



 3 years ago 

রহস্যের গোলকধাঁধা ধীরে ধীরে খুলতে চলেছে। মনে হচ্ছে ইনেসপেক্টর সাহেব কোন ভাল কিছুর সন্ধান পেয়েছেন। তিনি হয়তো প্রফেসর সেনের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোন ধারণা পেয়েছেন। ইন্সপেক্টর সাহেব দক্ষতার সাথে প্রফেসর সেনের মৃত্যুর তদন্ত করছেন। গোয়েন্দা সিরিজ আমার খুবই ভালো লাগে। আপনার লেখনি পড়ে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

 3 years ago 

আমি ভাবছিলাম গল্পের রহস্যটা চতুর্থ পার্টে শেষ হয়ে যাবে।কিন্তু গল্পের গভীরতা বেড়েই চলেছে।ইন্সপেক্টর মিত্র তার চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে।ক্যাটালগের ভিতরে পয়জন ছিল বিষয়টা পরের পর্বে আশা করি বের হয়ে আসবে।সাথে গল্পের রহস্যটা উন্মোচন হবে।

 3 years ago 

এবার রহস্যটি আরো বেড়ে গিয়েছে।কিছুই বোঝা যাচ্ছে না, তবে ক্যাটালগে ও দুটি ম্যাগাজিনের ভিতরে কিছু একটা ছিল এটি বেশ স্পষ্ট।তবে ইন্সপেক্টর কি যে খুঁজে পেয়েছিলেন এটি একটি নতুন রহস্য সৃষ্টি হয়েছে।পরের পর্বের অপেক্ষায় দাদা।

 3 years ago 

কি যে নিল দুই খামে এটাই দেখার বিষয়। জটিল কেস, সত্যি।

Coin Marketplace

STEEM 0.32
TRX 0.11
JST 0.034
BTC 66785.29
ETH 3229.75
USDT 1.00
SBD 4.30