গোয়েন্দা রহস্য গল্প : "অর্কিড যখন মৃত্যুর হাতছানি দেয়" - পর্ব ০৩

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)


copyright free image source pixabay

দ্বিতীয় পর্বের পর


তিন


মিনিট দু'য়েক নীরবতা । তারপরে প্রথমে বড়বাবুই নীরবতাটা ভাঙলেন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ।

-"থাক থাক আর ন্যাকা কান্না কাঁদতে হবে না, তারপরে কি হলো বলো তো বাপু ? তোমার মতো অমন ঢের ঢের বেড়াল তপস্বী দেখেছি আমি । মাছের মায়ের পুত্র শোক !! হুমম !"

চোখ মুছে আরো কিছুক্ষন লাগলো হরিসাধনের ধাতস্থ হতে । তারপর আবার শুরু করলো বলা ।

-"বাবু নেই শুনে আমি কিছুক্ষন চোখে অন্ধকার দেখলাম । তখন ডাক্তারবাবুই নিচের সিকিউরিটি গার্ডদাদাকে বললেন পুলিশ ডাকতে । আমার তখন পাগল হওয়ার দশা ।"

-"আচ্ছা, হরিসাধন আমি তোমাকে কিছু কোয়েশ্চেন করবো । খুব ভেবে চিন্তে মনে করে উত্তর দেবে কেমন ?" ইন্সপেক্টর মিত্র বললেন ।

ঘাড় কাত করে সায় দিলো হরিসাধন ।

-"খুন হওয়ার কিছুদিন আগে তোমার বাবুকে কি কোনো কিছু ব্যাপারে উদ্বিগ্ন বা চিন্তিত দেখাচ্ছিলো ? ইনফ্যাক্ট কোনো বিষয়ে কি উনি খুবই আপসেট বা এক্সসাইটেড ছিলেন ?"

-"না, হুজুর, আমার কাছে তেমন কোনো কিছুই চোখে পড়েনি ।শুধু আমাকে পরশু রাতে বলছিলেন একটা খুবই দামি ফুল কিনতে যাচ্ছেন উনি । বারান্দাটা তার-জালি দিয়ে ঢাকতে হবে । একজন মিস্ত্রির খোঁজ নিতে বলছিলেন আমাকে ।"

-"হুঁ, আচ্ছা, তোমার বাবুর কি আত্মহত্যার কোনো কারণ থাকতে পারে ? ধরো বিষ খেয়ে ?"

-"না, হুজুর, তাহলে উনি আমায় সকালে তোপশে মাছ ভাজা খাওয়ার ইচ্ছের কথা বলতেন না, সকালে ফোনে ফুলের ক্যাটালগ চাইতেন না, বই পড়তে যেতেন না; আর ওনাকে বেশ কিছুদিন ধরে বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছিলো । বাবু আত্মহত্যা করবেন এটা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি না । "

-"বুঝলাম, তোমার বাবু আত্মহত্যা করেননি আর বড়বাবুর মতে এটা কোনো দুর্ঘটনাও নয় । আচ্ছা বড়বাবু, আপনি ডাক্তার প্রভাত সরকারকে কি জেরা করেছিলেন ?"

-"হ্যাঁ, স্যার । ড: সরকারকে করা ইন্টারোগেশন রিপোর্টটা স্যার আমি আপনার ফাইলেই অ্যাটাচ করে দিয়েছি ।"

-"হুম, ওটা দেখা হয়নি আমার এখনো । গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে ?"

-"না , স্যার । উনি শুধু কন্ফার্ম করেছিলেন যে প্রোফেসর cardiac arrest এ মারা গেছেন আর সেটার উৎস হলো বিষ । মারাত্মক বিষ । ওনার ধারণা পটাশিয়াম সায়ানাইড বা ওই ধরণের কোনো তীব্র বিষ । মৃত্যু হয়েছে প্রায় চোখের পলকে । আর একটা কথা বলেছিলেন উনি । কিন্তু আমার কাছে সম্পূর্ণ অবান্তর মনে হয়েছিল তাই ওটা রিপোর্টে বাদ দিয়েছি ।"

-"আপনার কাছে যেটা অবান্তর আমার কাছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ হতেও পারে । বলে ফেলুন ।"

-"ইয়ে স্যার, উনি বলেছিলেন ভিক্টিমের বডিতে রাইগার মর্টিস শুরু হয়ে গিয়েছে অলরেডি । শুনুন স্যার, কি অবান্তর কথা । মার্ডারের ১ ঘন্টার মধ্যে আমি এসে লাশ পোস্টমর্টেমে পাঠিয়ে দিয়েছি । আর উনি বলছেন উনি যখন প্রোফেসরকে এক্সামিন করেছিলেন তখনি নাকি রাইগার মর্টিস শুরু হয়ে গিয়েছে । পুলিশের চাকরিতে তো আর আমার কম দিন হলো না স্যার; চুল পাকিয়ে ফেললাম আর সেদিনকার এক ডাক্তার এসে আমায় জ্ঞান দেয় । রাইগার মর্টিস শুরু হতে মিনিমাম ৬-৮ ঘন্টা লাগে । হরিসাধন তো প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারবাবুকে ডেকে নিয়ে এসেছিলো । আধা ঘন্টার মধ্যে রাইগার মর্টিস শুরু হয় কক্ষনো ? ফাআআলতু ...."

-"সত্যি আশ্চর্য বড়বাবু । কিন্তু ভুলে যাবেন না ড: প্রভাত সরকার কিন্তু বেশ নামকরা ডাক্তার । তাঁর এরকম ভুল করাটাই আশ্চর্যের । যাই হোক আপাতত পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না পাওয়া অব্দি এই চ্যাপ্টারটা ক্লোজড থাকুক । হরিসাধনকে আরো কিছু ক্রস এক্সামিন করা বাকি আছে । সেটা সেরে নিই আগে ।"

-"ওকে স্যার ।"

-"আচ্ছা হরিসাধন, আমি মেনে নিলাম তোমার বাবু আত্মহত্যা করেননি । তাহলে তাঁকে খুন করলো কে ? তোমার বাবুর কোনো শত্রু আছে ?"

-""না হুজুর, বাবুর কোনো শত্রু নেই । উনি পন্ডিত মানুষ ।"

-"পন্ডিত মানুষেরও শত্রু থাকে, হরিসাধন ।দুনিয়ায় কেউ অজাতশত্রু হয় না । গতকাল বাইরের কেউ তো ঘরে ঢোকেনি হরিসাধন । তাই তো ? সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী তাই তো বলছে, কি বড়বাবু ?"

-"হ্যাঁ স্যার, আমরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি । খুন হওয়ার দিন কেউ ঘরে ঢোকেনি এক হরিসাধন ছাড়া । আর প্রোফেসরও বাইরে যাননি গতকাল ।"

-"পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ছাড়া এই কেস-এ আর বিন্দুমাত্রও এগোনো সম্ভব নয় বড়বাবু । তবে আমার কিছু খটকা লেগেছে । আচ্ছা আপনি সেই ক্যাটালগটা কি বাজেয়াপ্ত করেছেন বড়বাবু ?"

-"ক্যাটালগ ? কোন ক্যাটালগ স্যার ? ওহ্হ মনে পড়েছে সেই অর্কিডের ক্যাটালগ ? না স্যার । ফালতু ফালতু ওটা বাজেয়াপ্ত করে কি করবো ? আমি রান্নাঘরের যাবতীয় কাপ ডিশ আর শুকনো খাবার বাজেয়াপ্ত করেছি । ওয়াটার টেস্ট করিয়েছি । কোত্থাও স্যার বিষের নামগন্ধ নেই । "

একটা ব্যঙ্গের হাসি দিলেন ইন্সপেক্টর মিত্র । সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন । বসার ঘরটা শ্যেনদৃষ্টিতে পরীক্ষা করতে লাগলেন । তারপরে ঘুরে হঠাৎ হরিসাধনের মুখোমুখি হলেন । কিছুক্ষন তীব্র দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন তার চোখের দিকে । সেই তীব্র দৃষ্টি সহ্য করতে পারলো না হরিসাধন । মুখ নিচের দিকে নামিয়ে ফেললো ।

-"শোনো হরিসাধন, তুমি কি সত্যিই চাও তোমার বাবুর হত্যাকারীকে ধরে উচিত সাজা দেই ?"

থরথর করে কেঁপে উঠলো হরিসাধনের সারা শরীর ।

তীব্র এবং বিকৃত স্বরে চিৎকার করে উঠলো সহসা হরিসাধন, "হ্যাঁ, হুজুর । অবশ্যই চাই ।"

-"তাহলে আমি যা বলবো তুমি ঠিক ঠিক তাই করবে ।"


[চলবে]

Sort:  

দাদা যতই পড়তেছি ততই মনে হচ্ছে আরো গভীরে চলে যাচ্ছি। তবে মনে হচ্ছে, ইন্সপেক্টর মিত্র হরিসাধন এর উপর সন্দেহ। কেননা হরিসাধন সবকিছু জানে মনে হচ্ছে।

নইলে ইন্সপেক্টর মিত্র হরিসাধন এর চোখে দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত না।

" ।-"শোনো হরিসাধন, তুমি কি সত্যিই চাও তোমার বাবুর হত্যাকারীকে ধরে উচিত সাজা দেই ?"

থরথর করে কেঁপে উঠলো হরিসাধনের সারা শরীর ।

এই কথার মাঝে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। জানিনা পরবর্তীতে কেস টা কোন দিকে ঘুরে যাবে'। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



 3 years ago 

হয়তো ওই ক্যাটালগে কোন ধরনের পটাশিয়াম সায়ানাইড এর মত বিষ দেয়া ছিল যেটা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের কাছে আসা মাত্র মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। এটা ছাড়াতো আর কোন কিছু পাওয়া যাচ্ছে না খুঁজে। কিন্তু খুনটা করালো কে সেটা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। খুনি হয় হরিসাধন না হয় যে লোকটা ডেলিভারি দিয়ে গিয়েছে ক্যাটালকটা সে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়।

 3 years ago 

আমিও অপেক্ষায় আছি আপনার মত । দেখা যাক কি হয় । ভাল থাকবেন

 3 years ago 

দাদা আমিও রূপক ভাইয়ার সাথে একমত।আমার ও গল্পটা পড়ে মনে হচ্ছে যে ক্যাটালগটাতে পটাশিয়াম সায়ানাইড এর মতো কোনো একটা পয়েজন দেওয়া ছিলো। আরেকটা ব্যাপার, আমার মনে হচ্ছে খুনটা হরিসাধন ই করেছে। বাকিটা বলবো দাদা আপনি যে কতটা জোস গল্পকার তা হয়তো আপনি নিজেও জানেন না।

 3 years ago (edited)

গল্পটা আরো জমে উঠেছে। এ তো মনে হচ্ছে বাতাসে ছড়ানোর মত ভাইরাস বা বিষ। ৩য় পার্ব পড়তে পড়তে তাই মনে হচ্ছিল। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল পুরো বিষয় টা যেন তারাতারি শেষ না হয় । আর যখন শেষ হলো তখন আপসোস হচ্ছিল দাদা আরো একটু কেন লিখলো না। তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে বিষয় টা বিষ নয় । এত সহজে গল্পের মূল রহস্য ভেদ করা আমাদের পক্ষে হয়তো সম্ভব নয়। দেখা যাক কি হয় । মনের ইচ্ছাটার কথাই বললাম। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম । শুভ কামনা আপনার জন্য । সব সময় ভাল থাকবেন ।

 3 years ago 

গতকাল পর্যন্ত মনে হচ্ছিল নার্সারির লোকজন খুনের সাথে জড়িত কিন্তু আজ মনে হচ্ছে হরি সাধন এর সাথে যুক্ত!

থরথর করে কেঁপে উঠলো হরিসাধনের সারা শরীর ।

তীব্র এবং বিকৃত স্বরে চিৎকার করে উঠলো সহসা হরিসাধন, "হ্যাঁ, হুজুর । অবশ্যই চাই ।"

রহস্য লুকিয়ে আছে উপরের বাক্যগুলোতে!

 3 years ago 

আর যাইহোক হরিসাধন খুনের সাথে জড়িত না এটা মোটামোটি পরিস্কার হয়ে গেছে এবং মৃত্যুটি নিয়ে বেশ পরিস্কার রহস্য তৈরী হয়েছে, অজানা অনেক প্রশ্ন এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ইন্সপেক্টর মিত্র কি পারবেন মৃত্যু রহস্য ভেদ করতে? তারপর অপেক্ষা করতে হবে আমাদের পরবর্তী পর্বের জন্য।

 3 years ago 

এই পর্বটি পড়ে মনে হচ্ছে ক্যাটালগে কোন ধরনের বিষাক্ত কিছু ছিল। এই বিষাক্ত কিছুর কারণে হয়তো প্রফেসর সেনের মৃত্যু হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে এটি কোনো মারাত্মক ধরনের বিষ ছিল। যার ফলে প্রফেসর সেন খুব সহজেই আক্রান্ত হয়েছেন। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম দাদা।

 3 years ago 

প্রফেসর সেনের মৃত্যুর আসল রহস্য বিষ এটা প্রায় উন্মোচিত হয়েছে। এটা খুবই ভয়ঙ্কর বিষ সেটা বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু কোন ধরনের বিষে তার মৃত্যু হয়েছে এটা এখনও পরিষ্কার নয়। কিন্তু এই ভয়ঙ্কর বিষ কে দিল? প্রফেসর সেন কি নিজে খেয়েছে? এগুলোর এখনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। গল্পটি রহস্যময় রয়েই গেল। দেখা যাক পরবর্তী পর্বে কি হয়। অপেক্ষায় রইলাম ০৪ পর্বের জন্য।

 3 years ago 

আপনার কথা টা সত্য হতে পারে । দেখা যাক কি হয় তবে এত সহজে রহস্য ভেদ করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। ভাল থাকবেন।

 3 years ago (edited)

আমার তো মনে হচ্ছে, ওই অর্কিডের ক্যাটালগেই বিষ ছিল ওটাই মৃত্যুর কারণ।কারণ মৃত্যুর আগে ওই ক্যাটালগটিই এসেছিল।কিন্তু ওটাই বাজেয়াপ্ত করে টেস্ট করা হয় নি।ওটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এভিডেন্স।আবার মনে হচ্ছে অর্কিডের মধ্যে বিষ দিয়ে ডাক্তার মেরে ফেলেছে।কারণ সে পাশের ঘরে ছিল তার উপরে আবার ডাক্তার, তাই তার ফায়দাও ছিল অনেক।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.17
JST 0.033
BTC 64258.81
ETH 2772.25
USDT 1.00
SBD 2.65