কোলকাতার পুজো - পর্ব ০৭
দেখতে দেখতে কোলকাতার পুজো সিরিজের সপ্তম পর্বে চলে এলুম । আজকে যে পুজো প্যান্ডেলের ছবি শেয়ার করতে চলেছি সেটি গোয়ালপাড়া বাগানের উদয়ন সংঘের পুজো । এদের এ বছরকার পুজো থিম ছিল "অক্ষর জ্ঞান" । এই থিমটি মূলতঃ প্রাচীন গুরুগৃহের শিক্ষাদান থেকে বর্তমানের বাংলা অক্ষরজ্ঞান ও প্রথম বিদ্যারম্ভের উপর আধারিত । প্রাচীনকালের শিক্ষাদানের পদ্ধতি আধুনিক যুগের শিক্ষাদানের পদ্ধতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল । তখন উপনয়নের পর অষ্টম বর্ষীয় বালকেরা গুরুগৃহে গমন করতো । এরপরে একাদিক্রমে ষোড়শ বর্ষ অব্দি গুরুগৃহে থেকেই বিদ্যালাভ সম্পূর্ণ করে গৃহে প্রত্যাবর্তন করতো ।
প্রাচীন যুগে বাংলা বর্ণমালা এখনকার যুগের মতো ছিল না । ব্রাহ্মী লিপি থেকে বাংলা লিপির উৎপত্তি । কিন্তু, বাংলা লিপির কোনো সংবদ্ধ রূপ ছিল না তখন । এলোমেলো ভাবে ছিল এবং সংস্কৃত বর্ণমালার আধিক্য ছিল বাংলা বর্ণমালায় । সর্বপ্রথম এগুলো সুসংবদ্ধ ও লিপিবদ্ধ করেন দুই প্রবাদ প্রতিম পন্ডিত । মদনমোহন তর্কালঙ্কার ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর । মদনমোহন তর্কালঙ্কারের "পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইলো/কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিলো ।।" তো আপনারা সকলেই পড়েছেন । ঈশ্বরচন্দ্রের ন্যায় ইনিও শিশু শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন । তবে, মদনমোহনের বাংলা বর্ণমালায় স্বরবর্ণের "ৠ", "ঌ", "ৡ", "অ০ " এবং "অঃ" ছিল যা শুধুমাত্র সংস্কৃত বর্ণমালাতে পাওয়া যায় । ঈশ্বরচন্দ্রের বাংলা বর্ণমালায় একমাত্র "ঌ" ব্যাতিত বাকি সব সংস্কৃত বর্ণ ছেঁটে ফেলা হয় ।
তবে, "ঌ"-ও আসলে বাংলা বর্ণমালায় অবাঞ্চিত এবং অপ্রাসঙ্গিক, তাই বর্তমানে এটি বিল্পুত । এরপরে আসি ব্যঞ্জনবর্ণে । মদনমোহনের ব্যঞ্জনবর্ণে "ড়", "ঢ়" "য়", "ৎ", " ং", "ঃ" এবং " ঁ" ছিল না । এর পরিবর্তে ছিল "ক্ষ", যা আসলে "ক" আর "ষ" এর যুক্তবর্ণ । তাই "ক্ষ" কোনোক্রমেই ব্যঞ্জনবর্ণ হতে পারে না । বিদ্যাসাগরের ব্যঞ্জনবর্ণ-ই বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে । যদিও এই ব্যঞ্জনবর্ণমালায় দুটি "ব" আছে - একটা "প" বর্গীয় বর্ণ এবং অপরটা অন্তঃস্থ "ব" । যেমন "বাতাস" শব্দে "প" বর্গীয় "ব" ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু, "স্বপন" শব্দে অন্তঃস্থ "ব" ব্যবহার করা হয়েছে । পরিশীলিত বাংলা বর্ণমালায় এই অন্তঃস্থ "ব" বাদ দেওয়ার প্রস্তাবনা করা হয়েছে ।
আধুনিক বাংলা বর্ণমালার জনক তাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর না থাকলে আজকে আমরা বাংলা ভাষায় শুধু কথা বলতে পারতাম, লেখা বা পড়া সম্ভব হতো না । শৈশবে অক্ষরজ্ঞান হওয়া এবং বাংলা ভাষা শেখার জন্য দুই জন মনীষীর নাম সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য । এক - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং দুই - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । ঈশ্বরচন্দ্রের "বর্ণ পরিচয় - ১ম ও দ্বিতীয় ভাগ" এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "সহজ পাঠ - ১ম ও ২য় ভাগ" ।
উদয়ন সংঘের পুজোর প্যান্ডেলে ঢোকার প্রধান প্রবেশদ্বার । এই তোরণ সাজানো হয়েছে থার্মোকলের তৈরি অসংখ্য স্বরবর্ণ- ব্যঞ্জনবর্ণ দিয়ে ।
তারিখ : ২২ অক্টোবর, ২০২৩
সময় : রাত ১০ টা ৫০ মিনিট
স্থান : কোলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
প্রাচীনকালের গুরুগৃহ । ছাত্রেরা গুরুগৃহে থেকে অধ্যয়ন করছে ।
তারিখ : ২২ অক্টোবর, ২০২৩
সময় : রাত ১১ টা ০০ মিনিট
স্থান : কোলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
ন'পাড়ার উদয়নসংঘের পুজো প্যান্ডেলের প্রধান তোরণ এটি । বর্ণমালা দিয়ে সজ্জিত ।
তারিখ : ২২ অক্টোবর, ২০২৩
সময় : রাত ১১ টা ১০ মিনিট
স্থান : কোলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
ন'পাড়ার উদয়নসংঘের পুজো প্যান্ডেল । দারুন দেখতে হয়েছে । লাল, সাদা আর কালো রঙের প্যান্ডেল এটি । কালো রঙের ওপর সাদা রঙের বর্ণমালা, আর লাল হলো ঝালর ।
তারিখ : ২২ অক্টোবর, ২০২৩
সময় : রাত ১১ টা ১৫ মিনিট
স্থান : কোলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
প্যান্ডেলের ভেতর ঢোকার পরে প্রথমেই নজর কাড়বে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দন্ডায়মান পূর্ণাঙ্গ মূর্তিটির ওপর । ঋজু দেহে উন্নত মস্তকে সর্বকালের অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ মনীষী ।
তারিখ : ২২ অক্টোবর, ২০২৩
সময় : রাত ১১ টা ২০ মিনিট
স্থান : কোলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
প্যান্ডেলের ভেতর সর্বত্র বাংলা বর্ণমালা আর বর্ণপরিচয় ও সহজপাঠের সাদা-কালো চিত্র । অসাধারণ সাজসজ্জা ।
তারিখ : ২২ অক্টোবর, ২০২৩
সময় : রাত ১১ টা ২৫ মিনিট
স্থান : কোলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
প্যান্ডেলের ভেতরের দেয়ালে ঝোলানো সাদা-কালো চিত্রগুলো ঈশ্বরচন্দ্রের বর্ণপরিচয় ও রবীন্দ্রনাথের সহজ পাঠ থেকে নেওয়া হয়েছে ।
তারিখ : ২২ অক্টোবর, ২০২৩
সময় : রাত ১১ টা ৩০ মিনিট
স্থান : কোলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
অবশেষে মাতৃমূর্তির দর্শন পেলুম ।
তারিখ : ২২ অক্টোবর, ২০২৩
সময় : রাত ১১ টা ৩৫ মিনিট
স্থান : কোলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
ক্যামেরা পরিচিতি : OnePlus
ক্যামেরা মডেল : EB2101
ফোকাল লেংথ : ৫ মিমিঃ
------- ধন্যবাদ -------
পরিশিষ্ট
আজকের টার্গেট : ৫৫৫ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 555 trx)
তারিখ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩
টাস্ক ৪৩৬ : ৫৫৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
৫৫৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
টাস্ক ৪৩৬ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
কলকাতার পুজো এর ৭ম পর্বে আপনি কিন্তু অসাধারণ ফটোগ্রাফির সাথে সাথে প্রাচীন কালের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে আধুনিক কালের শিক্ষা ব্যবস্থার তুলনা করে দারুন কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন। যার অনেক কিছুই আমার জানা ছিল না। আজ আপনার কাছ হতে তথ্য গুলো জানতে পেরে ভালোই হলো দাদা। ধন্যবাদ দাদা সুন্দর ফটোগ্রাফির সাথে সাথে তথ্য বহুল একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আজকের ফটোগ্রাফি গুলো অসাধারণ হয়েছে দাদা। কলকাতা সুন্দর সুন্দর পুজো গুলো আপনার পোষ্টের মাধ্যমে দেখা হয়ে যাচ্ছে। কলকাতা থিম পুজো গুলো দেখতে ভীষণ ভালো লাগে আমার কাছে। অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা, কলকাতার পূজোর সপ্তম পর্ব আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
ন'পাড়ার উদয়ন সংঘের পূজা প্যান্ডেল এর ফটোগ্রাফি গুলো দেখতে দারুণ লাগছে দাদা। অক্ষর জ্ঞান থিমটা চমৎকার হয়েছে। আসলেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর না থাকলে আমরা বাংলা ভাষায় লিখতে বা পড়তে পারতাম না। উনার অবদানের কথা বাঙালি জাতি আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। যাইহোক এতো সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
কলকাতা পুজোর ফটোগ্রাফি গুলো অসাধারণ হয়েছে দাদা। সেই সাথে আগের কালের শিক্ষার ব্যবস্থা ও বর্তমান কালের শিক্ষার কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন যা পড়ে বেশ ভালো লাগলো। আসলে দাদা আপনার পোস্টগুলো পড়লে অনেক কিছু জানা হয়।দাদা আপনার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু জানতেও শিখতে সক্ষম হয়েছি। অনেক ধন্যবাদ দাদা সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।
কলকাতা পুজের ৭ ম পর্বে আজ বেশকিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করলেন। চমৎকার লাগলো দাদা ফটোগ্রাফি গুলো। আপনি শিক্ষা ব্যবস্থার বেশকিছু তথ্য তুলে ধরেছেন। অনেক কিছুই জানা গেলো আপনার পোস্টের মাধ্যমে।আপনার পোস্টের মাধ্যমে অনেক কিছু জানা যায়। ধন্যবাদ দাদা ফটোগ্রাফির সাথে সাথে বেশকিছু তথ্য আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনার শেয়ার করা কলাকতার পুজো পর্ব সমূহের মধ্যেই এই পর্বটি সেরা ছিল। যেহেতু এই পুজোর পেন্ডেল বাংলা অক্ষর দিয়ে সাজানো হয়েছে। আমাদের বাংলা বর্ণমালার ইতিহাসে মদনমোহন তর্কালঙ্কার এবং এশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান অপরিসীম। ফটোগ্রাফির সাথে আপনার বিস্তারিত তথ্য গুলো জানতে পেরে অনেক ভালো লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা ফটোগ্রাফি গুলো অসাধারণ ছিল। সেই সাথে বর্ণনা ও অনেক ভালো লেগেছে।
পুজো প্যান্ডেলের থিমটা ছিল, একটু আলাদা। ছবিগুলো যতটা উপভোগ করেছি, তার থেকেও বেশি ভালো লেগেছে, নিজের মতো করে যে বর্ণনা দিয়েছেন, সেই তথ্য জেনে। সব মিলিয়ে ব্লগটা বেশ ভালো লাগলো ভাই।
শুভেচ্ছা রইল 🙏
বর্ণমালার থিমটি একটি দারুণ কনসেপ্ট। বর্ণমালার ক্রমবিকাশ এবং বাংলা বর্ণমালার বর্তমান রূপ আসার পেছনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনার পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম। বেশ কিছু জিনিস আগে জানা ছিল না। অনেক ধন্যবাদ এই পুজোর ছবিগুলোর মাধ্যমে বর্ণমালার তথ্যগুলো শেয়ার করার জন্য।