একজন আইসক্রিম ওয়ালা
আমি @riyadx2 বাংলাদেশ থেকে
মঙ্গলবার, ৩০ ই জুলাই ২০২৪ ইং
বাংলাদেশে বিভিন্ন জন বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। প্রত্যেকেই তার নিজস্ব পেশাকে অনেক ভালোবাসে থাকেন। আবার কেউ কেউ আছেন যারা, নিম্নমানের পেশা গুলো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে থাকেন। এটা আসলে আমাদের জন্য মোটেও কাম্য নয়। কেননা, পেশা দিয়ে কখনো মানুষ কে মাপা যায় না। মানুষ কে সঠিক ভাবে মাপতে হলে তার মন মানসিকতা নির্ধারণ করে মাপতে হয়।পেশা তো শুধু মাত্র একটি আয়ের উৎস।আর মানুষের মন হচ্ছে সব থেকে বড় আদালত।যার মন মানসিকতা ভালো, সে কখনোই কারো কাছে ছোট হবে না। কিন্তু যাদের মন মানসিকতা একদম নিম্ন মানের, তার পেশা উচ্চ মানের হলেও তার মাঝে মাঝে মানুষের কাছে অনেক ছোট হতে হয়।এটার মূল কারণ হলো মন মানসিকতা নিম্ন মানের। আমাদের সমাজের মধ্যে অনেক মানুষ রয়েছে, যাদের পেশা নিম্ন মানের কিন্তু সমাজে সেসব মানুষের কথার মর্যাদা রয়েছে। আজকে আমি আপনাদের সাথে এমনি একটি লোকের গল্প শেয়ার করবো।
নাম তার আশরাফুল ইসলাম। পেশায় একজন আইসক্রিম ওয়ালা। তবে, শীতকালে সে পেয়ারা এবং গাজর বিক্রি করে থাকেন।তার বাসা রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার এক নং খোড়াগাছ ইউনিয়নে অবস্থিত।তার সাথে আমার পরিচয় ২০১৫ সালের শুরু থেকে।আমি যখন ক্লাশ ফাইভে পড়ি, তখন থেকে সে আমাদের স্কুলের মধ্যে আইসক্রিম, পেয়ারা এবং গাজর বিক্রি করে থাকেন। এখন পর্যন্ত সে সেই স্কুলের মধ্যে আইসক্রিম, পেয়ারা, গাজর বিক্রি করছেন।সে দীর্ঘ দিন ধরে একই স্কুল এবং একই জায়গায় অবস্থান করে তার ছোট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সে দীর্ঘ দিন ধরে সে যে স্কুলে তার ছোট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু তার সাথে সেই স্কুলের কোন ছাত্র ছাত্রী কিংবা শিক্ষকের কোন দ্বন্দ্ব লাগে নি।
তবে, আমি অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানে দেখেছি, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সাথে সব সময় দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। তাদের তুলনায় আমাদের স্কুলের আশরাফুল ইসলাম ভাই অনেক গুনে ভালো। শুধু মাত্র এই স্কুলের মধ্যেই তার সুনাম রয়েছে তা নয়, বরং পুরো এলাকা জুড়ে রয়েছে তার বিশাল সুনাম। এখন এলাকার অনেক আইসক্রিম ব্যবসায়ী তার মতো হাল ধরতে চান, কিন্তু বেশিদিন মাঠের মধ্যে টিকতে পারেন না তারা। আমাদের আইসক্রিম ওয়ালা আশরাফুল ইসলাম ভাই কে একজন ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রবীণ ব্যক্তিরা পর্যন্ত তাকে ভালো ভাবে চিনে থাকে। স্কুল ছুটির পর সে আমাদের এলাকার গ্ৰাম গুলোর মধ্যে ঘুরে ঘুরে আইসক্রিম বিক্রি করে থাকেন।
এখন আসুন তার সুনাম অর্জনের মূল কারণ আপনাদের সাথে শেয়ার করি। আসলে তার সুনাম অর্জনের মূল কারণ হলো, সে স্কুলের গরীব ছাত্র ছাত্রীদের কে একদম বিনামূল্যে আইসক্রিম খাওয়াতেন।সে নিজেও গরীব হলেও সে অন্য আরেকজন গরীব ছেলে মেয়েদের কে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করে থাকেন। স্কুল ছুটির পর সে গরীব ছাত্র ছাত্রীদের কে ডেকে ডেকে আইসক্রিম খাওয়াতেন। এ ছাড়াও তিনি সব সময় বাচ্চাদের সাথে অনেক মজা করে থাকেন।আমার সাথে তার অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বের একটি সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে। আমি এখন সেই স্কুলের মধ্যে পড়া লেখা না করলেও আমি সেই স্কুলের মধ্যে তার আইসক্রিম খাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে ছুটে চলে যাই।
একদা আশরাফুল ইসলাম ভাই এর সাথে তার পরিবারের গল্প জানতে চাইলাম। তখন সে আমাকে বলল, সে নাকি আইসক্রিম বিক্রি করে একটি বিল্ডিং বাড়ি তৈরি করেছেন। এটা জেনে আমি অনেক খুশি হয়ে যাই। আসলে হালাল ইনকামের মধ্যে অনেক অনেক বরকত রয়েছে। তিনি তার দুই ছেলে কে পড়ালেখা করাচ্ছেন।তার একজন ছেলে রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করছে। আরেকজন ছেলে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। তিনি আইসক্রিম বিক্রি করে এতো কিছু করছেন, তা আসলে ভাবার বিষয়।আমি এই ভাইয়ের জীবনের গল্প থেকে বুঝতে পারলাম, হালাল ইনকামের মধ্যে অনেক অনেক বরকত রয়েছে।তাই আমাদের সকলের উচিত সব সময় হালাল উপার্জনের প্রতি বহাল থাকা।আর সব সময় সৎ পন্থা অবলম্বন করে পথ চলা। নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা সৎ মানুষ কে অনেক ভালোবাসেন।
সবাই কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Device | Redmi 10C |
---|---|
Camera | 48 MP |
County | Bangladesh |
Location | Rangpur, Bangladesh |
Vote@bangla.witness as witness
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আইসক্রিম বিক্রেতা আশরাফুল ইসলামকে নিয়ে সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন ভাইয়া। যেনে ভালো লাগলো আইসক্রিম বিক্রি করে তিনি দুই ছেলেকে পড়াশুনা করাচ্ছেন এবং বিল্ডিং বাড়ী তৈরি করেছেন। এবং গরীব ছাত্র-ছাত্রীকে ফ্রিতে আইসক্রিম খাওয়ায়। স্যালুট ওনাকে। আইসক্রিম বিক্রেতা আশরাফুল ইসলাম এর জন্য শুভ কামনা। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
সেটা যেকোনো ধরনের ব্যবসা হোক ছোট হোক বড় হোক সবার ব্যবসাকে সম্মান দেখাতে হবে। কারণ য়ার যেমন সামর্থ আছে সেই সেভাবে ইনকাম করে তার পরিবারের খরচ বহন করে। একজন মানুষ অনেকদিন যাবত আপনাদের স্কুলে আইসক্রিম বিক্রি করে এবং অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার ইনকামের উপরে পুরো পরিবার নির্ভরশীল। আপনার সুন্দর অনুভূতিগুলো পড়ে বেশ ভালো লেগেছে।
আপনি একটি ভীষণ অন্যরকম পোস্ট শেয়ার করলেন। একজন আইসক্রিমওয়ালার জীবনধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরলেন। এ অতি পুণ্যের কাজ। মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই সব থেকে আগে দরকার। আর সেদিক থেকে সব শ্রেণীর মানুষকে গুরুত্ব দেওয়া একটি সমাজব্যবস্থায় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আইসক্রিমওয়ালার জীবনধারণ যেভাবে মানুষের সামনে তুলে আনলেন তা আপনার এক ভিন্নধর্মী চিন্তাধারার মানসিকতাকে প্রকাশ করল।
আসলে বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ কোন না কোন পেশায় নিয়োজিত। তবে তারা তাদের নিজস্ব পেশাকে অনেক সম্মান করে। আপনি অনেক সুন্দর একটি আইসক্রিম ওয়ালার জীবন কাহীনি আমাদের মাঝে শেয়ার করছেন।তবে সে আইসক্রিম বিক্রি করে বিল্ডিং বাড়ি দিয়েছে এটা শুনে খুব ভালো লাগলো।ধন্যবাদ ভাই আমাদের মাঝে এতো সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।