মেহমানের জন্য আঠারো পদ
আসসালামু আলাইকুম,
আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যরা কেমন আছে সবাই? আশা করি সবাই সুস্থ আছেন।ভালো আছেন।সৃষ্টিকর্তার অোঅশেষ রহমতে আমিও ভালো আছি। আজ আমি আবারও আপনাদের মাঝে নতুন একটা ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি।আশা করি আজকের ব্লগটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
নতুন নতুন রান্না করতে আমার যেমন ভালো লাগে। তেমন রান্না করে লোকজনকে খাওয়াতে অনেক বেশি ভালো লাগে। আমরা যেখানে থাকি সেখানে তো আত্মীয়-স্বজন তেমন বেশি কেউ থাকে না।তবে জাহিরার বাবার অফিসের অনেক লোকজনকে মাঝে মাঝে আমি বাসায় দাওয়াত করে খাওয়াই।আমরা খাওয়াতে অনেক বেশি পছন্দ করি। তবে এবার জাহিরার বাবার অফিসে সিনিয়র নিজের মুখে আমাদের বাসায় খেতে চেয়েছিলাম এজন্য তাকে দাওয়াত করা হয়েছিল। আমিতো এখানে একা থাকি আর দুজন ছোট বাচ্চাকে সামলিয়ে মেহমানদারি করা খুব সহজ ব্যাপার নয়।তারপর যে কাজটা করতে ভালো লাগে তার জন্য একটু তো কষ্ট সহ্য করতে হয়।
আমার বাবা বলেন মেহমান হচ্ছে রহমত। বাসায় মেহমান আসলে রহমত বাড়ে।
তবে শুধু অফিসে সিনিয়র একা তো আসবে না তার সাথে আরো কয়েকজন থাকবে। এবারে রান্না করা হয়েছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। জাহিরার বাবা অফিসের সিনিয়র এর পছন্দটা জানতেন। এজন্য তার পছন্দ অনুযায়ী সব রান্না করা হয়েছিল। এক কথায় যাকে বলে বাঙালি খাবার। অফিস সিনিয়র যিনি ছিলেন তিনি একেবারে বাঙালি খাবার খেতে পছন্দ করেন। এই গরমে তিনি পোলাও মাংস রোস্ট খেতে একেবারেই অপছন্দ করেন। আর এজন্য কষ্টটা আরেকটু বেশি করতে হয়েছে। কারণ পোলাও রান্না করলে কয়েক পদের রেসিপি হলেই হয়ে যায়। যেহেতু বাঙ্গালি খাবার এজন্য সব দিকে খেয়াল রাখতে হয়েছে।
যেহেতু আমি বাচ্চা নিয়ে একা একা সব কিছু করতে হবে। এজন্য প্রথমে আমি আগে পছন্দের খাবারের একটা লিস্ট বানিয়ে নিয়েছি।সে অনুযায়ী বাজার করে আগের দিন সব রেডি করে নিয়েছি। যাতে করে দাওয়াতের দিন কোন রকম ঝামেলা না হয়।খাবারের মেন্যুতে ছিল চ্যাপার শুটকি ভর্তা,তিল ভর্তা,টমেটো ভর্তা,টাকি মাছ ভর্তা,পটল ভাজা, আলুর ঝুরি ভাজা,টমেটো শশার সালাদ,হাঁসের মাংস,মাংস ভুনা,কাঁঠাল মাংসের তরকারি,লইট্টার শুটকি ভুনা,ছোট মাছের চচ্চড়ি,রুই মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘণ্ট, চিংড়ি ভুনা,চিংড়ি দিয়ে কচুর লতি,পায়েস,বাদাম ভর্তা।আমার বাসার খালা সব কেটে রেডি করে দিয়েছে আর আমি সকাল থেকে সব রান্না শুরু করছি।
মেহমান দাওয়াত করলে একটা টেনশন কাজ করে সময়ের মধ্যে সব রান্না হবে কিনা। মেহমান দুপুরে আসবে তাই টেনশন টা আরো একটু বেশি কাজ করছে। সব মিলিয়ে টেনশনে মাঝে মাঝে মনে হয় রান্না গুলো টেস্ট ঠিকঠাক মতো হলো কিনা। এই আঠারো পদের রান্না করে গুছিয়ে পরিবেশন করা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জের মত ছিল। নিজেকে এজন্য ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা করে ১৮ পদের রান্না শেষ করে মেহমান আসার আগে আমি টেবিল গুছিয়ে ফেলতে পেরেছিলাম।খাবার শেষে সবার জন্য আমি পায়েস আর মিষ্টি রেখেছিলাম যেহেতু বাঙালি খাবার তাই দইয়ের ব্যবস্থা না করে বাসায় পায়েস বানিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো অনেকগুলো রেসিপি করে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারব কিন্তু রান্না নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত ছিলাম যে একটাও রেসিপি করে উঠতে পারিনি। আর সবশেষে ডাইনিং টেবিলে সবগুলো আলাদা আলাদা করে ছবি নেব তারও সুযোগ হয়ে ওঠেনি একটি মাত্র ছবি ছিল সেটি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি।
সার্থকতা এখানেই যে খাবার খেয়ে সবাই অনেক বেশি প্রশংসা করেছিল এবং সবাই শুধু এটা বলছিল যে আমি কতদিন ধরে রান্না গুলো করেছি। এত রান্নায় একসাথে কিভাবে সম্ভব।আমি চেষ্টা করেছি সবাইকে টাটকা খাবার পরিবেশন করতে এবং সেটা করতে পেরে নিজের কাছে অনেকটা শান্তি পেয়েছি। সবাই খেয়েছে এটাতে আমি অনেক বেশি আনন্দ পেয়েছি।আজ এ পর্যন্ত ই। অন্য কোনদিন আরো অন্য কিছু নিয়ে আপনাদের সাথে হাজির হব। আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি।ধন্যবাদ সবাইকে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আরেহ বাহ! গরমের মাঝেও দুপুর বেলায় মেহমানের সামনে ১৮ রকমের পদ সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশন করেছেন ছোট ছোট দুইজন পিচ্চি নিয়েও, এতেই তো আপনাকে কুর্নিশ জানাতে ইচ্ছে করছে আপু!! আপনার ধৈর্য্য আছে, মানতেই হবে! আর এত এত পদের ভর্তা, মাংস, ভাজি করেছেন, মেহমান রা তো কনফিউশান এ পড়ে গিয়েছিল বোধ হয় যে কোনটা রেখে কোনটা খাবেন!!
মেহমানরা সত্যি কনফিউশনে পরেছিল আপু।আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল।
মেহমানদের জন্য এত সুন্দর আয়োজন করেছেন দেখে বুঝতে পারলাম প্রচণ্ড খাটনির শিকার হয়েছেন। হাতে কলে বাবু থাকলে আরো হয়রানি হতে হয় এমন আয়োজন করতে গেলে। তবে বেশ ভালো লাগলো সুন্দরভাবে তা আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন দেখে। বেশ ধারণাও পেলাম ওই দিনের আপনার কার্যক্রমের।
আপনি আমার অবস্থা বুঝতে পেরে সুন্দর মন্তব্য করেছেন জেনে ভালো লাগলো। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল।
আপু আপনার বাবার মতো আমার আব্বু ও বলেন মেহমান হচ্ছে রহমত।আর মেহমান এলে খুশী হন তিনি।আপনি ভাইয়ার অফিসের সিনিয়রের জন্য ১৮ আইটেম রান্না করলেন।তাও সময়ের আগেই টেবিল ঘুছিয়ে দিতে পেরেছেন।এজন্য আমিও আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি।আসলে ভর্তা আইটেম করতে একটু বেশী সময় লাগে।পোলাও, রোস্ট রান্না করতে তেমন সময় লাগে না।ধন্যবাদ আপনাকে অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য।
আমার বাসায় মেহমান আসলেই বাবার কথাটা মনে পড়ে।অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।
১৮ পদের রান্না খেয়ে মেহমান তো ভীষণ তৃপ্তি পেয়েছেন। আসলে বাংঙ্গালিয়ানা খাবারে অনেক পদের রান্না করতে হয়।আপনি অনেক ধৈর্যের সাথে এতো গুলো রান্না করেছেন জেনে ভালো লাগলো।রান্না খেয়ে আপনার প্রসংশা করেছে জেনে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্ট ট ভাগ করে নেয়ার জন্য।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ এতো সুন্দর করে আমার পোস্টে মন্তব্য করার জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
অফিসের সিনিয়র যখন নিজের থেকে দাওয়াত চায় তখন তো একটু কষ্ট করে হলেও আয়োজনটা করতে হবে । আর আপনার হেল্পিং হ্যান্ড আপনাকে সাহায্য করেছে আর আপনি ঝটপট 18টা পদ তৈরি করে ফেলেছেন ।এরকম ভর্তা জাতীয় জিনিস বেশি থাকলে খাবার খেতেও ভালো লাগে । আর নিজের হাতে তৈরি করা যে কোনো খাবারই কিন্তু ভালো ও স্বাস্থ্যসম্মত । সব শেষ কথা যে সবাই খাবার খেয়ে আপনার প্রশংসা করেছে এটাই বড় কথা । আর এতগুলো রান্না করে কিন্তু ছবি তোলা কষ্টকর । ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে ।
এমন আঠারো বিশ পদ রান্না করে শুধু দেখালে হবে ভাবী আমাদেরও একদিন এমন মজাদার রান্না করে দাওয়াত করে খাওয়ার সুযোগ করে দেন।যাইহোক এতগুলো খাবার একসাথে দেখে অনেক লোভই লাগছে। আশা করছি মেহমানরা আপনার হাতের রান্না খেয়ে খুবই খুশি হয়েছিলেন। ধন্যবাদ ভাবি মেহমানদের জন্য এত পদ রান্না করে সেই মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।