নারী তুমি সব পারো যদি একটু সহযোগিতা পাও [10% beneficiary to @shy-fox]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আসসালামুয়ালাইকুম,

সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন।

InShot_20221016_220159181.jpg

আজকে আপনাদের মাঝে কোনো রেসিপি পোস্ট অথবা অন্য পোস্ট নিয়ে হাজির হয়নি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে একটি ভিন্ন রকমের পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে।

প্রতিটি মেয়ের আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে ওঠার দরকার প্রতিটা ক্ষেত্রে। সমাজ বলেন,রাষ্ট্র এবং পরিবারে নারীদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এই সমাজের নারীদের অধিকার বলতে কিছুই নেই।প্রতিনিয়ত নারীরা লাঞ্ছনা-বঞ্জনার শিকার হচ্ছে আমাদের চারিপাশে। নারীদের বাবা-মায়ের সংসারে বোঝা মনে করে,কিন্তু একটা বাবা-মা ভালো করে চিন্তা করে না।মেয়েরা বাবা-মায়ের বোঝা নয়,নারীরা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারে, তারা আত্মনির্ভরশীল হতে জানে,যদি বাবা-মা এবং সমাজের মানুষগুলো তাদের পাশে থাকে।

তেমনি ঘটেছে আমেনা জীবনে,
আমেনা এখন সমাজের প্রতিষ্ঠিত একজন মহিলা। তাকে দেখলে সমাজের গণ্যমান্য মানুষেরাও এখন অনেক সম্মান করে।কয়েকদিন আগেও আমেনাকে মানুষের চোখের কাঁটা মনে করত। আমেনা সমাজের এবং গ্রামের অলক্ষী একটা মেয়ে বলে সবাই সম্মোধন করত। কেউ তাকে দেখতে পারত না, আমেনাকে একটা ভালো ঘরে বিয়ে দেয়া হয়েছিল,সেখানে আমেনার শান্তিতে ছিল না। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অত্যাচার আর তার স্বামীর অত্যাচারে বাধ্য হয়ে স্বামীর সংসার ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে আসতে।

আমেনা নিজেকে সমাজে আত্মনির্ভরশীল এবং স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলাটা এত সহজ ছিল না।

কারণ শশুর বাড়ি থেকে চলে আসার পর থেকে শুরু হয় আমেনার জীবনে বিরম্বনা। বাবা-মা আমেনাকে দেখতে পারত না,তাকে সবসময় বকাঝকা করত।আর শশুর বাড়ি থেকে চলে আসার কারণ নাকি আমেনা। আমেনাকে এত অত্যাচার করেছে সে ব্যাপারটা তার বাবা-মা কখনো কর্ণপাত করত না। আমেনার মনে সবসময় একটাই দুঃখ ছিল, তার বাবা-মা তার কষ্টগুলো বুঝার চেষ্টা করেনি।

আমেনা যখন মেট্রিক পাশ করে তখন আমেনার বয়স হয়তো ষোল-সতের বছর। আমেনাকে বিয়ে দেয় ৪০ বছরের একটি পুরুষের সাথে। সেটাও আমেনা মেনে নেয় তার বাবা মায়ের অবাধ্য কখন হয়নি, শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার পরে তার শাশুড়ি তার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির মানুষগুলো তার উপরে অত্যাচার শুরু করে। এইটুকু মেয়ে আর কত সহ্য করবে তাদের অত্যাচার? তাই বাধ্য হয়ে ওই জেলখানা থেকে চলে আসে বাবা মায়ের কাছে। বাবা-মায়ের কাছে চলে এসেও শান্তি পায়নি,বাবা-মায়ের বিভিন্ন কথা, সমাজের মানুষের বিভিন্ন কথা,আমেনা শুনতে শুনতে যেন অস্থির হয়ে যায়।

তাই আমেনা তার খালার কাছে চলে যায়,তার খালা তাকে অনেক আদর করত। তার খালা জানতো আমেনা খুব ভালো একজন ছাত্রী,তাই তার খালা তাকে পড়ালেখা করার জন্য বলতে থাকে। আমেনা খালার কথা শুনে মনে একটু সাহস পায়, তাই আবার কলেজে ভর্তি হয়।একাদশ শ্রেণি পাশ করার পর,আমেনা একটা এনজিওতে পার্টটাইম চাকরি করত। সেখানে বেতনও ভালো ছিল,সেই বেতন দিয়ে আবার পড়ালেখা শুরু করে আমেনা।

JvFFVmatwWHRfvmtd53nmEJ94xpKydwmbSC5H5svBACH7yMKvD4y2NFEKVx3zMmWp2zvwUV3Q7K5hEqpMZyEUPC6etbU4gTbq78WEs6tMR1u5ZwBKtcZ5f783qRzaya2AzHqYzaM3C.jpeg

এই চাকরি করার পর আমেনাকে যারা অসম্মান করত, যারা তাকে গ্রামের অলক্ষি মেয়ে বলে সম্বোধন করত তারা সম্মান করতে শুরু করে। তখন বিভিন্ন জায়গা থেকে আমেনার জন্য বিয়ে আসতে শুরু করে,তখন আমেনার বাবা-মায়ের কাছে ও আমেনার কদর বেড়ে যায়।যারা একসময় আমেনাকে চোখের কাঁটা মনে করত, তারাই এখন আমেনাকে নিয়ে গর্ব করছে। আমেনাকে তার বাবা-মা প্রতিনিয়ত বলতো তোর কি লাগবে,মা তোর কি খেতে ইচ্ছে করে প্রতিনিয়ত জিজ্ঞেস করত। একসময় আমেনাকে একমুঠো ভাত দিতে তাদের বিরক্ত লাগত।

কারণ আমেনা এখন স্বাবলম্বী এবং ইনকাম করছে। শশুর বাড়ি থেকে চলে আসার পর তার বাবা-মা মনে করেছিল, শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছে এখন বাবা-মায়ের বোঝা হয়ে থাকবে।তাই বাবা মা তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। এখন তো উল্টো আমেনা বাবা-মায়ে খরচ দিচ্ছে।আমেনার কদর তো এমনিতে বেরে যাবে তার বাবা-মায়ের কাছে তাই না?

এনজিওর চাকরি থেকে বারবার তাগিদ দিচ্ছিল পুরো সময় চাকরি করার জন্য,কিন্তু আমেনা এনজিও চাকরি করবে না আগে থেকেই চিন্তা ভাবনা ছিল। শুধুমাত্র তার পড়ার খরচ জোগাড় করার জন্য এই চাকরিটি নিয়েছিল। তার চিন্তা-ভাবনা ছিল অনেক মহৎ কাজ করবে।সে চেয়েছে তার মত সমাজে লাঞ্চিত-বঞ্চিত নারীদের নিয়ে সমাজে আত্মনির্ভরশীল এবং স্বাবলম্বী করতে।তার এই মহৎ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য সে বিভিন্ন রকমের সামাজিক কাজ করতো।

তার কাজে খুশি ছিল সমাজের অবহেলিত নারীরা,সব রকমের সহযোগিতা করত ওই নারীদের আমেনা।তার বেতনের অর্ধেক টাকা অসহায় নারীদের জন্য খরচ কত এবং চাকরি অবস্থায় আমেনা বিসিএস ক্যাডার হিসেবে উত্তীর্ণ হয়।
তারপরে থেকে আমেনার আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে সমাজে নারীদের উন্নয়নমূলক কাজ করতে থাকে আমেনা ।

আমেনার প্রথম জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। এখন আমেনার সম্মান, টাকা-পয়সার কোন কিছুর অভাব নেই। আমেনা জীবনে আর বিয়ে বসে নি,তার জীবনটা কাটিয়ে দিচ্ছে সমাজে লাঞ্চিত এবং সুবিধা বঞ্চিত নারীদের নিয়ে। আমেনা এখন প্রতিটা মা-বাবাকে তাদের ঘরে গিয়ে গিয়ে বুঝাচ্ছে। মেয়েদের কখনো সমাজের বোঝা নয়। মেয়েরা পুরুষের মতো আত্মনির্ভরশীল হতে পারে যদি বাবা-মায়ের সদিচ্ছা থাকে।

আমেনার মত হাজারো নারী আমাদের সমাজের অত্যাচার,বাবার বাড়ির অত্যাচার,গ্রামের এবং সমাজের মানুষের অত্যাচার সহ্য করে হয়তো ঘরের কোণে বসে আছে। যদি আমেনার মত প্রতিটা নারী জেগে ওঠে, তাহলে কোন নারী আমাদের সমাজে অবহেলিত হবে না,প্রতিটা নারী সমাজে আত্মনির্ভরশীল এবং স্বাবলম্বী হয়ে গড়ে উঠবে।

এই গল্পটি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা।

ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

ধন্যবাদ,সবাই ভাল থাকবেন।।

Sort:  
 2 years ago 

নারী বলে থাকব না আর
বদ্ধ ঘরে বসে,,
অজ্ঞতার ঘোর কাটিয়ে
দেখব জগৎটাকে।

শিশু আমি, কন্যা আমি,
আমি হলাম নারী
গোটা বিশ্বে দেখিয়ে দিব,
আমিও যে পারি।

তাইতো আজ সুযোগ চাই,,
সুশিক্ষা চাই চাই অধিকার,
নারী বলে হেলা করে
দিওনা ধিক্কার।

পুরুষ তুমি বন্ধু হয়ে
হাতটা যখন নারীর হাতে।
মিলেমিশে করব কাজ
একত্রে সর্বাজ্ঞে।
♥♥

 2 years ago 

আমেনা করুন দুর্দশার কাহিনী পড়ে আমি সত্যি অনেক খারাপ বোধ করছি ৷ তা ঠিকই বলেছে এরকম আমেনা আর মতো আমাদের সমাজে অনেক নারী এসব অত্যাচারের শিকার হচ্ছে ৷ তাই আমাদের সকলের এটা বোঝা উচিত যে ,নারীরা কখনো বোঝা নয়৷ তারাও পারে কারণ শুধু পুরুষ জাতির মাধ্যমে এই সুন্দর পৃথিবী গড়ে ওঠেনি৷ দুজনের পারস্পরিকের মধ্যেই এই সুন্দর পৃথিবী তাই আসুন আমরা নারী-পুরুষ উভয়ই একে টিকে আছে৷ তাই আমাদের সবার উচিত নারী পুরুষ একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সম্মান জানানো ৷ ভালো লাগলো আপনার এই নৈতিকতার পোস্টটি দেখে হয়তো কেউ কেউ শিখতে পারবে৷

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 years ago (edited)

কিছু কিছু বাবা মা আছে যে মেয়ের বিয়ের পর মেয়েকে একেবারেই পর করে দেয়। শ্বশুরবাড়িতে শত অত্যাচার হলেও তাকে সেখানেই মুখ বুজে পরে থাকতে বলে। আমেনা এই সমাজের জন্য একটি উদাহরণ। শুধু একটু মনোবল আর সাহসের প্রয়োজন। তাহলেই এমন হাজার হাজার আমেনার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন পূর্ণ হবে। খুব ভালো লিখেছেন আপু ধন্যবাদ।

নাবী তুমি সব পারো।

আপু আপনার টাইটেলে একটু ভুল আছে। ঠিক করে নিবেন আশা করি।

 2 years ago 

অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু, এই ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য🙏🙏 আসলে আপু কিভাবে যেন ভুল হয়ে গেছে সেটা বুঝতে পারছি না 😭😭

 2 years ago 

যখন একটা মেয়ে নিজের পায়ে দাড়াতে পারে না,অন্যর উপর ডিপেন্ডেড থাকে,তখন তার বাবা মায়ের কাছেও বোঝা হয়ে যায়।এমন অনেক বাস্তব উদাহরণ দেখেছি।তাই প্রতিটি মেয়ের আমেনার মত মনে জোর নিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত।তাহলে তার দেখাদেখি অন্যরাও এগিয়ে যাবে।এবং অন্য এমন নারীদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।আপু গল্পটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো।ধন্যবাদ

 2 years ago 

আমি আপনার সাথে একমত।জীবনে যত দুর্দশা দুর্ভোগ আসুক না কেন আমাদের উচিৎ নিজেদের মেয়ে বোন কে স্বাবলম্বী ও সুশিক্ষিত করে তোলা।যাতে তাকে অন্যের মুখাপেক্ষী হতে না হয়।আমেনার খালা কে ধন্যবাদ উনি বিপদে আমেনার পাশে দাড়িয়েছেন এবং তাকে পুনরায় পড়াশোনা করতে উৎসাহ দিয়েছেন।ধন্যবাদ আপু শিক্ষামূলক ও মোটিভেশনার একটি পোস্ট করার জন্য।

 2 years ago 
আমেনা করুন কাহিনী পড়ে সত্যি অনেক খারাপ লাগলো। আমাদের সমাজে এখনও সেই আগের কুসংস্কার রয়েছে, নারীরা সমাজের বোঝা মনে করে। কিন্তু তারা বোঝে না, একটু সহযোগিতা পেলে এই নারীরা আপনার পাশে দাঁড়াতে পারে শক্ত হাতে। শুধু আমি নয়, সমাজে যে কোন নারীকে শ্বশুরবাড়ি থেকে, সব কিছু মেনেজ করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো এটা অনেক কষ্টকর। তাই আমাদের সমাজের এই চিত্র পাল্টাতে হবে, কারণ ইসলাম নারীকে উচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন।
 2 years ago 

খুবই চমৎকার কিছু কথা আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন আপু। আমি আপনার কথা সঙ্গে পুরোপুরি একমত পোষণ করছি বর্তমান সময় নারীরা অনেক বেশি স্বাবলম্বী। তাদেরকে যদি একটু সাপোর্ট করা যায় তারাও সমাজে অনেক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারবে। আমেনার গল্প শুনে নিজের কাছে খুবই ভালো লাগলো আসলে একটা মেয়ে যদি তার পারিবারিক সাপোর্ট থাকে তাহলে অবশ্যই ভালো কিছু করতে পারবে। কিন্তু বর্তমান সমাজে এখনো অনেক কিছু খারাপ দৃষ্টি আছে তারা মেয়েকে বোঝা মনে করে। আমি মনে করি প্রত্যেকটা পরিবারের উচিত তাদের মেয়েদেরকে সাপোর্ট করা যাতে করে তারাও সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে।

 2 years ago 

আমিও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি নারীরা সব পারে। তবে যদি তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে তাদের দুর্গম পথ অধিকতর সহজ হয়ে যায়। আমিও এরকম একজন নারীর কথা জানি, তিনি একজন মহিলা মানুষ হয়েও সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সেই গল্প অন্য কোন একদিন পোস্টের মাধ্যমে জানিয়ে দেব। আপু আমেনা প্রথম দিকে যত দুঃখ,কষ্ট ও যন্ত্রণা সহ্য করেছিল, পরবর্তীতে তা লাঘব হয়েছে জেনে সত্যিই ভীষণ ভালো লেগেছে। আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া গল্পটি খুবই শিক্ষণীয় ছিল। এত সুন্দর একটি বাস্তব গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আমেনার করুন কাহিনী গল্পটি পড়ে আমার কাছে আমেনার জন্য কষ্ট লেগেছে। পুরো গল্পটি পড়ে যখন জানতে পারলাম আমেনা পড়ালেখা করে স্বাবলম্বী হতে পেরেছে এবং কারো বোঝা হয়ে থাকে থাকতে হয়নি। আমেনাকে নিয়ে সবাই গর্ববোধ করতে শুরু করেছে। তখন আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আমাদের সমাজে এমন কিছু মা-বাবা আছে যে মেয়ে শশুর বাড়িতে হাজার অত্যাচারের পরেও তারা মুখ বুজে সহ্য করে নিতে বলে। তারা মেয়েকে বুঝতেই চায় না। আমেনার গল্পটি পড়ে আমার কাছে খুবই ভালো লাগলো।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 68501.73
ETH 2459.44
USDT 1.00
SBD 2.63