গল্প : ছোট্টবেলা মাছ ধরার মজার ঘটনা পর্ব-১ //by ripon40
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@ripon40 বাংলাদেশের নাগরিক
- ছোট্টবেলা মাছ ধরার মজার ঘটনা
- ২৫, মে ,২০২৪
- শনিবার
আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি " ছোট্টবেলা মাছ ধরার মজার ঘটনাময় গল্প শেয়ার করছি । আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
কয়েকদিন আগে ছোট্টবেলা ধরার গল্প শেয়ার করেছিলাম। আজকে সেই মাছ ধরা নিয়ে আরেকটি ভিন্ন গল্প শেয়ার করব। আসলে ছোট্টবেলার এই সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত গুলো যখন স্মৃতি হিসেবে ভেসে ওঠে সেটা গল্প করতে এবং লিখতে দুটোই আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। এই প্লাটফর্মে যুক্ত হওয়ার পর নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক গল্প শেয়ার করেছি । অনেক ভালো লাগে যেটা আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে এবং আপনাদের জীবনের গল্প গুলো পড়তে অনেক ভালো লাগে।
আমাদের বাসা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদী । সেই পদ্মা নদীতে যাওয়ার পথে দুইটি শাখা নদী রয়েছে ।শুধুমাত্র বর্ষাকালীন সময়ে সেই শাখা নদীতে ভরপুর পানি থাকে। বর্ষার শেষে সে নদীগুলোতে পানি একদম খুব কমে যায় । কোথাও চর জাগো হয় আবার কোথাও হাটু সমান পানি আবার এক মানুষ সমান পানি থাকে। আমাদের বাসা থেকে যেহেতু পদ্মা নদীর দূরত্ব তিন কিলোমিটার। এই তিন কিলোমিটার শুধু ফসলের মাঠ তারি মাঝে মাঝে ছোট্ট দুটি শাখা নদী । আবার সেই ফসলি মাঠের অনেক জায়গাও উঁচু নিচু খাদ রয়েছে । বর্ষাকালে সেই ফসলের মাঠ তলিয়ে যায়। তখন সেই ছোট্ট খাদগুলোতে পানি থাকে। আবার যখন বর্ষার সময় পানি কমে যেত সেই সময় এই ছোট্ট ছোট্ট খাদে পানি থাকতো । আর যেখানে পানি সেখানেই মাছ।
আমরা অপেক্ষায় থাকতাম কখন বর্ষার পানি ফসলি জমি থেকে সরে যাবে আমরা সেখানে মাছ ধরবো। এলাকার সমবয়সীরা বিভিন্ন ধরনের আলোচনা করতাম কিভাবে আমরা সেখান থেকে মাছ মেরে আনব সেই পরিকল্পনা। আমরা যদি একটু দেরি করতাম দুই এক দিন তাহলে অন্য কেউ মাছ মেনে নিয়ে যেতে পারে এই ভয়ে থাকতাম সেই সময়। অনেক বড় ফসলের মাঠ সেই মাঠের অবস্থান বেদে বিভিন্ন নাম কোথাও নাম রয়েছে শামুক গাঁড়ের মাঠ, এই নামটি হওয়ার কারণ বর্ষার শেষে সেখানে প্রচুর শামুক পাওয়া যায়। আবার অন্য একটি জায়গায় তার নাম চাকদার মাঠ, গরিবের সাম যেহেতু অনেক বড় চড় যেখানে ছোট্ট ছোট্ট জমির খন্ড যাদের অল্প জমি তাদেরকে বলা হত গরিবের সাম। সেই ফসলের মাঠে সবচেয়ে বেশি জমি ছিল আমাদের বাড়ির পাশে মোল্লাদের সেজন্য বলা হত মোল্লারে বড় দাগ। আরো অনেক নাম রয়েছে সেগুলো আর বললাম না।
যাইহোক, আমরা তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি সেই সময়ের ঘটনা। বর্ষার পানি আমাদের ফসলি জমি থেকে কমে যাওয়ার পর আমাদের জমির পাশে একটি ছোট্ট কোবলা ছিল । আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় ছোট্ট খাদ গুলোকে কোবলা বলা হয়। সেখানে কিছুটা পানি রয়েছে সেই জায়গাটি আমরা আগে দেখে এসেছিলাম মাছ মারবো ।আমি এবং দুই চাচাতো ভাই মিলে তারপরের দিন রওনা দিলাম মাছ মারার জন্য সেখানে হেঁটে যেতে আধা ঘন্টা সময় লাগে। দুইটি পাতিল এবং সিলভারের পাত্র নিয়ে রওনা দিলাম। সেখানে সম্ভবত সকাল সাতটার দিকে পৌঁছে গেলাম। তারপর সেই খাদের মাঝ বরাবর কাদা দিয়ে বাধ দিলাম। আমাদের পরিকল্পনা একপাশের পানি অন্যপাশে সেচে মাছ ধরার পর বাঁধের কিছু অংশ কেটে দিয়ে সেখানে জাল পেতে আবার পানি ভর্তি দ্বিতীয় বাধে সেচে ফেলব।
যখন আমরা প্রথম বাধে মাছ ধরা শুরু করলাম পানির কমার সাথে সাথে শোল মাছ গুলো ফাল দিয়ে যেখানে পানি সেচে রেখেছিলাম সেখানে চলে গেল। ভাবলাম এরপর সেটাও সেচবো তখন সেই মাছগুলো ধরে নিব। এভাবে অনেকগুলো মাছ ফাল দিয়ে মাটির বাঁধ টপকিয়ে অপর পাশে চলে যায়। যখন প্রথম বাধের মাছ মারা শেষ দ্বিতীয় বাঁধের পালা তখন সেই বড় বড় শোল মাছগুলো বাঁধের কিনারায় এসে ফাল দিয়ে প্রথম বাধে চলে যায় । কারণ শোল মাছ অনেক লাফালাফি করে খুবই চালাক তারা পানির স্রোতের গতিবেগ বুঝতে পেরে এভাবে ফাল দিয়ে বেশি পানিতে চলে যায়। মাছগুলো আমাদের সাথে চালাকি করতে থাকে আমরা সেই মাছগুলো ধরার জন্য অনেকবার বাঁধের পানি এ পাশ থেকে ওপাশ এভাবে সেচতে শুরু করি।
এভাবে অনেকবার চেষ্টা করার পরে কিছু মাছ ধরতে পারি। আর বাকি মাছগুলো এভাবেই ফাল দিয়ে চলে যায়। সেদিন অনেক মাছ পেয়েছিলাম দুই পাতিল। বাম মাছ বেলে মাছ শোল মাছ টাকি মাছ আর অন্যান্য মাছ পেয়েছিলাম। যেটা বর্তমান খুব কম পাওয়া যায়। এরকম মাঠের ছোট্ট ছোট্ট খাদগুলো থেকে আমরা অনেক মাছ মেরেছি। সেই সময় এই ছোট্ট ছোট্ট খাদগুলো থেকে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। বর্তমান যেগুলো শুধুই স্মৃতি। সেখানে আর বর্ষার পানি হয় না যেগুলো একদম শুকিয়ে ভরাট হয়ে গিয়েছে। সামান্য কয়েক বছরের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন মাঝে মাঝে সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে সত্যিই অবাক লাগে।
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি মোঃ রিপন মাহমুদ। আমার স্টীমিট একাউন্ট@ripon40। আমি একজন বাঙালি আর আমি বাঙালী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করি। আমি স্টীমিটকে অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসি পড়তে, লিখতে, ব্লগিং,ফটোগ্রাফি,মিউজিক,রেসিপি ডাই আমার অনেক পছন্দের। আমি ঘুরতে অনেক ভালোবাসি। আমার সবচেয়ে বড় গুণ হলো কারোর উপর রাগ করলে সহজেই ভুলে যাই।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ছোটবেলায় যেখানে অল্প পানি দেখতাম মাছ দিয়ে বাঁধ দিয়ে অথবা গামছা মশারি দিয়ে মাছ ধরতে শুরু করতাম বন্ধুদের সাথে।
আসলে সময়টা খুবই ভালো ছিল এখন এরকম দৃশ্য দেখলে খুব মিস করি।
আপনার পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো।
সেই দিনগুলো কতই না সুন্দর ছিল ভাই সবকিছুই হারিয়ে ফেলেছি। বর্তমান ছোট্ট বাচ্চাদের সেই মাছ ধরার বিষয়টি দেখতে পাই না ।যুগের সাথে সবকিছুই হারিয়ে যাচ্ছে।
আপনার মাছ ধরার গল্পটা পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছে। আসলে ছোটবেলাতে আমিও দেখেছিলাম অনেকেই এরকম মাছ ধরতো। যদিও কখনো নিজের এরকম অভিজ্ঞতা নেই। তবে আপনারা দেখছি দুই পাতিল মাছ ধরেছেন। এতগুলো মাছের কথা শুনে তো আমার অনেক বেশি আনন্দ লাগতেছে। সত্যি নিজের হাতে এতগুলো মাছ ধরার অভিজ্ঞতা অনেক বেশি মজাদার ছিল। অনেক ভালো লেগেছে আপনার মাছ ধরার গল্প।
আমরা প্রচুর মাছ ধরেছি সেই সময় মাছ ধরতে অনেক আনন্দ পেতাম। মাছ ধরতে পারলে নিজেকে অনেক বড় মনে করতাম সেই দিনগুলো হারিয়ে ফেলেছি।
ছোটবেলায় মাছ ধরতে যাওয়ার সুন্দর একটি ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখে ভালো লাগলো। বেস চমৎকার হয়েছে আপনার আজকের এই ঘটনা শেয়ার করা। আর এরই মধ্য দিয়ে অনেক কিছু জানার সুযোগ হলো আমার
একদম সেই দিনগুলো অনেক চমৎকার ছিল সেই দিনের কথা মনে পড়লে সেই স্মৃতিচারণগুলো আমাকে পীড়া দেয় আবার ফিরে যেতে ইচ্ছে করে।
ভাইয়া আপনার মাছ ধরার গল্প টি পড়ে সত্যি ভীষণ ভালো লাগলো। তাহলে তো আপনারা যে মাছগুলো ধরতেন ওগুলো নদীর মাছ ছিল। আর খুবই ভালো ভালো মাছ ধরতে পেরেছিলেন। যে মাছগুলোর এখন বেশ চরা দাম ।আর আপনাদের মাঠের বিভিন্ন ধরনের নাম খুবই অদ্ভুত লেগেছে, বেশ মজা পেয়েছি পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ আপু একদম পিওর নদীর মাছ। সেই সময় নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। বর্তমান যেটা খুবই কম পাওয়া যায়। সেই জন্যই মনে পড়ে গেল সেই দিনগুলোর কথা তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।