ছোট গল্প - "স্বপ্নের শেষটা" || ( ১০%লাজুক খ্যাকের জন্য) by ripon40
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@ripon40 বাংলাদেশের নাগরিক
- স্বপ্নের শেষটা
- ১২, ফেব্রুয়ারী ,২০২৩
- রবিবার
আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি " স্বপ্নের শেষটা " গল্প শেয়ার করছি । আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
গল্প - স্বপ্নের শেষটা
মেয়েটির নাম তূর্ণা । সে মেডিকেলের শেষ বর্ষের ছাত্রী । পরিবারে একমাত্র বাবা ছাড়া আর কেউ নেই । রহমত মিয়াকে বাবা বলে ডাকলেও সে তার জন্মদাতা পিতা নয় । বহুদিন আগে রহমত মিয়া রিক্সা চালানোর সময় তূর্ণাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে বাড়িতে নিয়ে আসে । তখন থেকেই রহমত মিয়া তূর্ণাকে নিজের মেয়ের মতো লালন পালন করছেন ।
বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে রহমত মিয়া আর বিয়ে করেনি । তাই তার পরিবার বলতে সে এবং তার আদরের মেয়ে তূর্ণা রহমত মিয়া সারাদিন রিক্সা চালায় আর উপার্জিত অর্থ দিয়ে পরিবারের খরচ চালায় । অভাব অনটনের পরেও রহমত মিয়া তূর্ণার আবদার পূরণে সচেষ্ট ছিল ।
তূর্ণা বলত , ‘ বাবা , আমার জন্য লাল শাড়ি পরা পুতুল নিয়ে আসবে ' । রহমত মিয়া সাথে সাথেই পুতুল এনে দিত । ঐ ছোট্ট তূর্ণা আজ বড় হয়ে মেডিকেলে পড়ছে ।
তূর্ণা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে । ছুটি পেলেই সে তার বাবার কাছে চলে যায় । অনেকদিন হলো তূর্ণা বাবার কাছে যেতে পারেনি । তাই এবার শীতের ছুটি পাওয়ার সাথে সাথেই সে বাবার কাছে চলে গেল । রহমত মিয়া বলে , ‘ তুই না থাকলে আমার কিছুই ভালোলাগে না ” । তূর্ণা হেসে মাথা নাড়ে ।
রাতে খাবারের সময় রহমত মিয়া তার মেয়েকে বলে , “ মা , ডাক্তার হইতে তোর আর কতদিন লাগব ? ’
তূর্ণা বলে , ‘ বাবা , আর বেশিদিন লাগবেনা । এই মাসের পরই আমি ডাক্তার হয়ে যাব ' । এক ঝলক হাসি দিয়ে রহমত মিয়া বলে , ‘ তখন আমি সবাইরে মিষ্টি খাওয়ামু । '
সকালে না খেয়েই রহমত মিয়া রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে গেল । দুপুর পার হয়ে যাবার পরেও তার বাবা না আসায় তূর্ণার অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল । বিকেলের দিকে একজন বাড়িতে এসে জানালো যে , রহমত মিয়া অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল পরে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । একথা শোনার সাথে সাথে তূর্ণা হাসপাতালে চলে গেল । গিয়ে দেখল তার বাবার জ্ঞান ফিরে এসেছে । এতে তূর্ণা কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেল । তূর্ণা বলল , ‘ বাবা , এখন ঠিক আছো ? তোমাকে না কতবার বলেছি না খেয়ে রিক্সা নিয়ে বের হবে না । কোন কথাই শুনছ না তুমি ’ । রহমত মিয়া বলে , ‘ সে মা আর ভুল হইবনা ’ । আমি ঠিক আছি । তুই এইসব নিয়া চিন্তা করিস না ’ । পরে তূর্ণা ডাক্তারের কাছ থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করে । রিপোর্ট দেখে তূর্ণা পাথরের মত স্থির হয়ে আছে । অজান্তেই চোখ থেকে দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল।রিপোর্টে লেখা অসুখের নাম ‘ লিউকোমিয়া ’ । অর্থাৎ ব্লাড ক্যান্সার । রহমত মিয়া বলে , ‘ কিরে চুপ কইরা রইলি ক্যান ‘ মা ’ কি হইছে আমার ’ ? মেয়ে জবাব দেয় , ‘ কই , কিছুতো হয়নি , বাবা ’ ।
তখন কেউ একজন রহমত মিয়াকে বলে দিয়েছ যে , তার ক্যান্সার হয়েছে । ক্যান্সার কথাটার অর্থ বোঝে রহমত মিয়া । কারণ , কিছুদিন আগে পাশের বাড়ির রহিম খাঁ কে ক্যান্সারে মরতে দেখেছে সে । সে বুঝতে পেরেছে যে সে হয়তো আর বাঁচবে না । বাসায় এসে সে মেয়েকে সব বলল । তূর্ণা বুঝে গেছে যে , তার বাবা সব জানতে পেরেছে । তখন তূর্ণা বলে , ‘ তুমি চিন্তা কোরো না বাবা । আমি ডাক্তার হয়েই তোমাকে সুস্থ্য করে তুলব ' ।
রহমত মিয়া বলে , ‘ হ মা , আমি জানি তুই ডাক্তার হইয়া আমারে ভালো কইরা তুলবি ’ । তূর্ণার চোখে জল । ধীরে ধীরে রহমত মিয়ার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল । এর মধ্যে তূর্ণাকে আবার হোস্টেলে ফিরে যেতে হবে । এক মাস পরই সে ডাক্তার হয়ে যাবে । রহমত মিয়া তূর্ণাকে বিদায় দিল । যাওয়ার পূর্বে তূর্ণা পাশের বাড়ির মরিয়মকে তার বাবার দেখা শোনার দায়িত্ব দিয়ে গেল । মরিয়ম তার সাধ্যমত রহমত মিয়ার সেবা করছিল । এর মধ্যে দু'বার তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল । এখন রহমত মিয়া আর রিক্সা চালাতে পারে না । ভালোভাবে হাঁটতেও পারে না । রহমত মিয়া বলে , ‘ মা , মরিয়ম , তূর্ণা মা কবে আইব ’ ?
মরিয়ম বলে , ‘ চাচা , তিনদিন পরেই চইলা আইব ' ।
রহমত মিয়া কি যেন ভেবে মাথা নাড়ে । রহমত মিয়ার অবস্থার এখন খুবই আশঙ্কাজনক । তূর্ণা অবশেষে তার সার্টিফিকেট পেয়েছে । এখন সে ডাক্তার । তাড়াতাড়ি সে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল । সকালে খুশিতে দৌড়াতে দৌড়াতে তূর্ণা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল । গিয়ে দেখল বাড়িতে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে । হঠাৎ সে দেখল খাটিয়াতে তার বাবার লাশ । তূর্ণা তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না । শোকে সে যেন পাথরে পরিণত হয়েছে । আজকে তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে না । চোখ দুটো স্থির হয়ে লাশের দিকে তাকিয়ে আছে । দুপুরে বাড়ির পাশেই রহমত মিয়ার দাফন সম্পন্ন হয় ।
কবরের পাশে তূর্ণা একা দাঁড়িয়ে আছে । বাবার আদর স্নেহের কথা খুব মনে পড়ছে তার । সার্টিফিকেটটা ধুলোতে পড়ে আছে অবহেলিত ভাবে । সে আকাশের দিকে তাকালো । তূর্ণার মনে হলো তার বাবা তার সাথেই আছে । এসব ভাবতে ভাবতে সে লক্ষ্য করল সূর্য্য তার নির্মম তীব্র আলোক রশ্মিগুলো তার উপরে ছড়িয়ে দিয়েছে । তখন তূর্ণা একটু ছায়ার জন্য এদিক ওদিক তাকাল । হঠাৎ তার মনে হলো , জীবনের সব থেকে বড় ছায়াটাই তো চিরদিনের মত আমাকে ছেড়ে চলে গেছে । এখন এই সামন্য ছায়া আঁকড়ে ধরে আর কি হবে । এসব ভাবতে ভাবতে সূর্যের প্রখর তাপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে কবরের দিকে তাকিয়ে রইল তূর্ণা । তখন একখন্ড মেঘ এসে তূর্ণার উপর ছায়া ফেলল । তূর্ণার মনে হয় তার বাবা - ই যেন ছায়া হয়ে তার পাশে আছে ।
আশাকরি গল্পটি আপনারা পড়বেন। গল্প পড়তে আমি খুবই পছন্দ করি। যেটা প্রায়ই পড়া হয়ে থাকে ভালো লাগে পড়তে।গল্প পড়া মানেই নতুন কোন কিছু ঘটছে তার সাথে পরিচিত হওয়া। আমার লেখা গল্প পড়ে ভালো লাগলে নিশ্চয় মতামতের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন নাহ।
প্রথম গল্প:-গোয়েন্দা রহস্য গল্প - "এলাচির উইল"( শেষ পর্ব) |
source |
দ্বিতীয় গল্প:-ছোট গল্প - "অশ্রুর তির্থস্থানে একদিন"( শেষ পর্ব) |
source |
তৃতীয় গল্প:-ছোট গল্প - "শোনার পাহাড়ের পাখি"( পর্ব নেই ) |
source |
আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি আশা করছি আপনারা সবাই আমার পোষ্ট উপভোগ করবেন এবং আপনারা সবাই আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন
বিভাগ | ছোট গল্প । | |
---|---|---|
বিষয় | ছোট গল্প - "স্বপ্নের শেষটা") | @ripon40 |
গল্প তৈরি করার অবস্থান | লিংক |
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি মোঃ রিপন মাহমুদ। আমার স্টীমিট একাউন্ট@ripon40। আমি একজন বাঙালি আর আমি বাঙালী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করি। আমি স্টীমিটকে অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসি পড়তে, লিখতে, ব্লগিং,ফটোগ্রাফি,মিউজিক,রেসিপি ডাই আমার অনেক পছন্দের। আমি ঘুরতে অনেক ভালোবাসি। আমার সবচেয়ে বড় গুণ হলো কারোর উপর রাগ করলে সহজেই ভুলে যাই।
তূর্ণা তার বাবার সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো কিছুতেই ভুলতে পারছে না। কিভাবেই বা ভুলবে যে ছিল তার জীবনের ছায়া সে আজকে চলে গিয়েছে। তূর্ণার বাবা তূর্ণা কে অবশেষে ডাক্তার বানাতে পেরেছে এটা জেনে ভীষণ ভালো লেগেছে। এর কারণে তূর্ণার বাবার আত্মা শান্তি পাবে। এমনিতে খুবই খারাপ লেগেছে আপনার আজকের গল্পটি পড়ে। এই জীবনে তূর্ণা একা হয়ে গেল। তার পাশে আর কেউ রইল না। এমনিতে এরকম একটি গল্প শেয়ার করলেন দেখে ভালো লেগেছে।
প্রতিটা মেয়ে তার বাবার রেখে যাওয়া স্মৃতি গুলো কখনোই ভুলতে পারেনা তার ক্ষেত্রে এক ই হয়েছিল।
আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগল। তবে তৃর্ণার বাবার জন্য অনেক খারাপ লাগল। আসলে কষ্টের মানুষ এখন একটু সুখ পেল আর সাথে সাথে মারা গেল। সত্যি তৃর্ণার বাবার জীবনে সুখ সহ্য হলো না।আর তৃর্ণা ঠিক বলেছে জীবনের বড় ছায়াতো চিরদিনের মতো তাকে ছেড়ে চলে গেছে, এখন আর সামান্য ছায়া দিয়ে কি হবে।
বাস্তবিক জীবনে এরকম অনেক ঘটনা রয়েছে যা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
কিছু মানুষের হয়তো সুখ সহ্য হয় না। রহমত মিয়ার মেয়ে এখন ডাক্তার হয়েছে, একসময় সেই রিকশা চালাত কিন্তু এখন তো তার মেয়ে ডাক্তার হয়েছে তার এখন সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে কিন্তু তার মেয়ে যে ডাক্তার হয়েছে সেই সুখের সংবাদটি জানার আগেই সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গিয়েছে। গল্পটা যদিও একটু বেদনাদায়ক তবে অনেক ভালো লেগেছে ভাইয়া।
একদম ঠিক বলেছেন কিছু মানুষের সুখ সহ্য হয় না গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
তূর্ণার বাবা রিক্সা চালিয়ে তূর্ণাকে ডাক্তার বানিয়েছে কিন্তু শেষে তিনি ডাক্তার অবস্থায় দেখেননি তূর্ণাকে। তূর্ণা অনেক খুশি হয়ে এসেছিল তার বাবাকে বলবে বলে কিন্তু পারেনি। এর আগেই তার বাবা তাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গিয়েছিল। আসলে মাথার উপরের ছায়া তো আর সব সময় থাকে না। একদিন না একদিন ছায়াও ছেড়ে চলে যায়। তূর্ণার বাবা তূর্ণার ছায়া ছিল। যাই হোক ভালই লেগেছে লিখেছেন।
বাস্তবিক জীবনে সিনেমা কে হার মানানো অনেক গল্প রয়েছে যেগুলো আমাদের সমাজে আড়াল হয়ে থাকে ঠিক সেই রকম একটা বিষয় গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
গল্পটি পড়ে মনের অজান্তে চোখের কোন পানি চলে এসেছে। খুবই কষ্ট লেগেছে গল্প টি পড়ে। বাবা খুবই কষ্ট করে ওকে পড়াশোনা করিয়া ডাক্তার বানিয়েছে কিন্তু শেষে সময় মেয়ের সার্টিফিকেটটি দেখতে পেল না। তার আগে সেই ত্রিনাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আসলেই অনেকে হৃদয়বিদারক যেটা তর্ণা ক্ষেত্রে হয়েছে যেটা জীবনের সবচেয়ে শোকাহত বিষয়।
এতো কষ্ট করে তূর্ণা কে তার বাবা ডাক্তার করলেন রিক্সা চালক বাবার পক্ষে এটি বেশ ব্যয়বহুল ছিল।কিন্তু নিয়তি তার বাবাকে তার ডাক্তার হওয়ার সার্টিফিকেট টা দেখার সুযোগ করে দিল না।বাবা নামক বটবৃক্ষের ছায়া তার মাথায় আর নেই।ভালো লেগেছে গল্পটি ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য।
বাবা-মা সব সময় তার সন্তানদের সফলতার পথে পৌঁছে দেয়ার জন্য জীবনের সর্বোচ্চটুকু করে থাকে অনেক বাবা-মাই সেই সুখের সময় চলে যায়।
গল্পটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো ভাইয়া। তূর্ণার বাবা এত কষ্ট করে মেয়েকে পড়িয়ে ডাক্তার করেও শেষে আর দেখে যেতে পারল না।খুব কষ্ট লাগল।তূর্ণার এখন আর কেউ রইলো না। তারপরেও সে একজন ডাক্তার হতে পেরেছে দেখে ভাল লাগলো। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া গল্পটা শেয়ার করার জন্য।