গল্প : শৈশবের ঘুড়ি উড়ানো //by ripon40

in আমার বাংলা ব্লগ3 months ago

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@ripon40 বাংলাদেশের নাগরিক


  • শৈশবের ঘুড়ি উড়ানো
  • ২০, এপ্রিল ,২০২৪
  • শনিবার


আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি " শৈশবের ঘুড়ি উড়ানো " গল্প শেয়ার করছি । আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।



field-6558125_1280.jpg

Source

আসলে সময়ের সাথে সাথে অতীতের ঘটে যাওয়া সকল স্মৃতিগুলো ভেসে ওঠে। যেগুলো কখনো ভুলবার নয় ।জীবনের এই গতিপথে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্যে মানুষ লিপ্ত থাকি। আজকে আমি শৈশবের একটি ঘটনা শেয়ার করব। সেই সময়টা ছিল জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। স্বাধীনভাবে যেকোনো কিছু করার একটি ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষার সময় ছিল তখন। প্রচন্ড গরম পরছে বৃষ্টির দেখা নেই। এরকম ঘটনা আমার জীবনে কখনো দেখিনি ।এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। প্রতিদিনই তাপমাত্রার রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মাঠে মাঠে ফসলের অবস্থা খুবই খারাপ হাহাকার তৃষ্ণার্ত একটি পরিবেশ।

গ্রামীণ পরিবেশে যারা বেড়ে উঠেছে । এই প্রচন্ড গরমে গাছ তলায় গিয়ে বসে বসে সময় পার করার বিষয়টি হয়তো অনেকে উপভোগ করেছেন। এই সময় আকাশের দিকে তাকালে প্রচুর ঘুড়ি উড়তে দেখতে পাই বিকেল মুহূর্তে। এই ঘুড়ি উড়ানো নিয়ে শৈশব কালের ঘটনা শেয়ার করব। যখন আমি ক্লাস সিক্স সেভেনে পড়তাম সেই সময় ঘুড়ি উড়ানোর প্রতি আমার অনেক নেশা ছিল। ঘুড়ি উড়ানোর মধ্যে অনেক মজা পেতাম। সেই সময় চিলে ঘুড়ি উড়াইতাম যেটা আমি খুব সহজে তৈরি করতে পারতাম। কখনো বইয়ের কাগজ আবার কখনো পলিথিন দিয়ে পাটকাঠি এবং নারকেলের শলাকা দিয়ে এই ঘুড়ি তৈরি করতাম বেশি। সেই সময় প্রতিদিন ঘুড়ি তৈরি করতাম একটি করে। সেই সময় সুতা ছিল টোটার যেটা দিয়ে খুব সহজে চিলে ঘুড়ি উড়ানো যেত।

কখনো বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যাওয়ার পর সেই ঘুড়ি ছিঁড়ে চলে যেত। সেই ঘুড়ি যেদিকে উড়ে যেত তার পিছে পিছে দৌড়াতে থাকতাম। কখন পড়বে আবার সেই ঘুড়ি নিয়ে চলে আসব । দেখা গেছে অনেক সময় অনেক বড় গাছের ডালে বেঁধে গিয়েছে যেখানে ওঠার মত সাহস বা পরিবেশ নেই । শুধু তাকিয়ে থেকে দেখতাম আর অনেক কষ্ট পেতাম ফিরে আসতাম মন খারাপ করে। আবার বাড়িতে এসে মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে চুপি চুপি ঘরের মধ্যে খোঁজাখুঁজি করতাম। পলিথিন বা বইয়ের কাগজ নিয়ে ঘড়ি তৈরির জন্য। তবুও টের পেয়ে যেত অনেক বকাঝকা এবং মার পর্যন্ত খেয়েছি তবুও ঘুড়ি তৈরি সেটা আবার মাঠে গিয়ে ওড়ানো বাদ দেয়নি।

অনেক বয়স্ক মানুষ ঘুড়ি উড়াতো। তাদের ঘুড়িগুলো ছিল বড় সাইজের। তাদের ঘুড়ি দেখে আমার খুব হিংসা হতো কারণ সেই ঘুড়িগুলো আমি তৈরি করতে পারতাম না। ঢাহুস,কৈড়ো ঘুড়ি যেগুলো দেখতে খুবই সুন্দর এবং অনেক দূর উঠত। আমার একদিন অনেক শখ হল একটি ডাহস ঘুড়ি বানাবো। আমাদের বাড়ির পাশে এক বড় ভাই সে খুব সুন্দর করে সে ঘুড়ি তৈরি করত। মায়ের কাছে একদিন আবদার করলাম তার কাছ থেকে যেন একটি ঘুড়ি তৈরি করে এনে দেয়। কোনমতে রাজি হয় না অনেক কান্নাকাটি করে রাজি করালাম। সেই বড় ভাই আমাকে অনেকদিন ঘোরানোর পর একটি ডাহস ঘুড়ি তৈরি করে দিয়েছিল। সেই সময় আমি এতটা খুশি হয়েছিলাম। সেই অনুভূতিটা সেই সময় সেরা অনুভূতি ছিল।

স্কুলে গিয়ে অপেক্ষা করতাম কখন স্কুল ছুটি হবে বাড়িতে গিয়েই ঘুড়ি উড়াবো। অপেক্ষা যেন শেষ হয় না যখন স্কুল ছুটি হতো খুব দ্রুত বাড়িতে চলে আসতাম। বাড়ি থেকে স্কুলে এর দূরত্ব 5 মিনিটের পথ হেঁটে গেলে। খাওয়া দাওয়া না করে বাড়িতে বই রেখে ঘুড়ি নিয়ে মাঠের উদ্দেশ্যে দৌড়। অনেকে দেখি ঘুড়ি উড়াচ্ছে তাড়াতাড়ি সুতা ছাড়িয়ে ঘুরিয়ে উড়িয়ে দিয়ে বসে থাকতাম। ঘুড়ি যখন মাথার সোজাসুজি চলে আসতো সবচেয়ে বেশি মজা পেতাম । সেই সময় কারণ যার ঘুড়ি যত উপরে উঠবে সেটাই হবে সেরা ঘুড়ি। আসলে সেই সময় কি যে ভালো লাগতো। এতটাই নেশা ছিল যে সেটা বলে প্রকাশ করতে পারবোনা । সেই দিনগুলো হারিয়ে গিয়েছে আর কখনো ইচ্ছা হয় না ঘুড়ি উড়ানোর। একদিন ঘুড়ি উড়াচ্ছি প্রচন্ড ঝড় বাতাস উঠে আসে। খুব দ্রুত ঘুড়ি নামাইতে হবে ঝড় বাতাসের কবলে পড়ে ঘুড়ি মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। সেই সময় এতটা কষ্ট পেয়েছিলাম সেই দিনটি খুবই খারাপ গিয়েছিল। সব সময় মন খারাপ ছিল কয়েকদিন।

তখন আবার নিজে নিজে চিলে ঘুড়ি তৈরি করে উড়াতাম। আর অন্যের বড় বড় ঘুড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। চিলে ঘুড়ি ধারাবাহিকভাবে তৈরি করার প্রচেষ্টা আমাকে এতটা এক্সপার্ট করে তোলে আমি তিন চার মিনিটের মধ্যে পলিথিনের কাগজ দিয়ে খুব দ্রুত গড়ে তৈরি করতে পারতাম। বড় বড় ঘুড়িগুলো অনেক টান হত তাদের থেকে দূরে থাকতাম কারণ তাদের সুতা মোটা ছিল আমার চিকুন সুতার চিলে ঘুড়ি বেঁধে গিয়ে ছেড়ে যেতে পারে। তারা অনেক সময় আমার সাথে মজা করত ছিঁড়ে দেবে বলে। এক সময় আমি সব ধরনের ঘুড়ি তোরে চেষ্টা করলাম ভালই তৈরি করতে পারতাম । তখন সেই সময় আর তেমন একটা ফিলিংস ছিল না। গত কয়েক বছর আগে করোনার সময় একটি ঢোল ঘুড়ি তৈরি করেছিলাম অনেক সুন্দর হয়েছিল। এখনো মাঝে মাঝে সেই ঘুড়ি উড়ানো দেখতে পাই মাঠে কিন্তু আগের মত নয়। বর্তমান ছেলেপেলে মাদকাসক্ত এবং প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সেই ঘুড়ি উড়ানোর অভ্যাসটা তাদের মধ্যে দেখতে পাই না।

ধন্যবাদ সবাইকে



20211112_012926-01.jpeg

আমি মোঃ রিপন মাহমুদ। আমার স্টীমিট একাউন্ট@ripon40। আমি একজন বাঙালি আর আমি বাঙালী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করি। আমি স্টীমিটকে অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসি পড়তে, লিখতে, ব্লগিং,ফটোগ্রাফি,মিউজিক,রেসিপি ডাই আমার অনেক পছন্দের। আমি ঘুরতে অনেক ভালোবাসি। আমার সবচেয়ে বড় গুণ হলো কারোর উপর রাগ করলে সহজেই ভুলে যাই।



standard_Discord_Zip.gif

>>>>>|| এখানে ক্লিক করেন ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<

gPCasciUWmEwHnsXKML7xF4NE4zxEVyvENsPKp9LmDaFuzVwHnY92rponrLLcEknitVG5yvYaPTExVtjfc6Bi4cvC9ppuyLmaATGbhg8UF4suiCxVfuw2YuSWJftJo9C74dQUN2WE1yNJmdtXp.png

💞 আল্লাহ হাফেজ 💞

Sort:  
 3 months ago 

ভাইয়া আপনার পোস্ট দেখে একদম শৈশবে ফিরে গেলাম। ভাই আপনার পোস্টে খুবই দারুণ ছিল আর আপনার পোষ্টের মাধ্যমে আমার আগের ঘুড়ি উড়ানোর কথা মনে পড়ে গেল। আসলে ভাই আমি নিজেই ঘুড়ি তৈরি করতে পারি। আমি বেশি ডাউক ঘড়ি তৈরি করে উড়িয়েছি। আপনার পোস্ট পড়ে জানতে পারলাম যে বড় রাগ ঘুড়ি ওরা তো তাদের ঘুড়িগুলো হতো বড় সাইজের। ওই ঘুড়িগুলোকে ২২ খিলের ঘুড়ি বলে থাকে। আর ওই ঘরে আপনি তৈরি করতে পারতেন না তাই আপনার হিংসা হতো। যাইহোক ভাই আপনার শৈশবের কথাগুলো খুবই ভালো লাগলো। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 3 months ago 

শৈশবের স্মৃতি স্মরণ করেছেন দেখে বেশ ভালো লেগেছে। আমার ভাইয়েরা ঘুরে উড়াতো আর আমি তাদের ঘুড়ি তৈরি সহ বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতাম। একদম ছোটবেলায় ফিরে গেছি আপনার এই পোস্ট পড়ার মধ্য দিয়ে। খুবই ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার পোস্ট দেখে।

 3 months ago 

আসলে ভাইয়া এখন আর আগের মতো ঘুড়ি উড়ানোর দেখা যায় না বলে চলে। সত্যি বর্তমান যুগের বাচ্চারা ডিভাইস নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে। তবে এখন একটু দেখা গেলেও আগের মতো আর আনন্দ পাওয়া যায় না।আপনার অনুভূতি গুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 months ago 

যারা গ্রামে বাস করেছে তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন স্মৃতিটা স্মরণীয় হয়ে আছে। স্কুল ছুটির পরেই ঘুড়ি উড়ানোর উদ্দেশ্যে ছুটে চলা। তবে আমি আমার আম্মুর কাছে ঘুড়ি বানানোর কথা বলতে পারতাম না গোপনে বন্ধুর কাছে থেকে ঘুড়ি এনে উড়াতাম।

 3 months ago 

আপনাকে ধন্যবাদ জানাই অনেক সুন্দর একটি বিষয় আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। শৈশবে আমরা অনেক ঘুড়ি উড়িয়েছি। ঘুড়ি উড়াতে আমার খুবই ভালো লাগে। ছোটবেলায় আমি নিজের হাতে অনেক ঘড়ি তৈরি করেছি কারণ ঘুড়ি তৈরি করা আমার কাছে নেশার মতো ছিল।

ঘুড়ি যখন মাথার সোজাসুজি চলে আসতো সবচেয়ে বেশি মজা পেতাম ।

একদম ঠিক কথা বলেছেন ভাই এই সময় যে আমরা এত আনন্দ পেতাম সেটা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।

 3 months ago 

আপনার শৈশব জীবনের ঘুড়ি উড়ানোর মুহূর্তগুলি পড়ে ভালো লাগলো।আসলে আমরাও এভাবে গাছতলায় বসে বসে খেজুর পাতার চরকি কিংবা কাগজের ঘুড়ি তৈরিকরে উড়াতাম।আপনারা পলিথিন দিয়ে ঘুড়ি তৈরি করতেন জেনে ভালো লাগলো।কিছু সময়ের জন্য আবারো শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল,ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 months ago 

ছোটবেলার ঘুড়ি উড়ানোর স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেলো আপনার এই পোস্ট পড়ে। ছোটবেলায় যখন সবাই একসাথে ঘুড়ি উড়াতাম, তখন অনেক বেশি ভালো লাগতো। সেই আনন্দ টার কথা মনে পড়লেই খুব ভালো লাগে। সবাই মিলে ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা ধরতাম। শৈশবের সেই স্মৃতিময় দিনগুলো আমাদের সবার কাছ থেকেই হারিয়ে গিয়েছে। চাইলেই আর সেই দিনগুলো আমরা ফিরে পাবো না। এখন যেন সেই খেলা গুলো আমাদের কাছ থেকে চলে গিয়েছে। সবাই তো এখন মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত থাকে। ঐতিহ্যবাহী খেলা গুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

 3 months ago 

শৈশবের প্রত্যেকটা খেলা ছিল অনেক বেশি সুন্দর। যার মধ্যে ঘুড়ি উড়ানো তো অবশ্যই ছিল। আমরা তো ছোটবেলায় পলিথিন দিয়ে সুন্দর করে ঘুড়ি তৈরি করতাম। শলা, পলিথিন আর সুতা হলেই হতো, অন্য কোন কিছুর প্রয়োজন হতো না। একেবারে ছোট থাকতে অন্যদের কাছে ঘুড়ি তৈরি করানোর জন্য নিয়ে যেতাম। যখন আস্তে আস্তে বড় হচ্ছিলাম তখন তো সবাইকে আমরাই তৈরি করে দিতাম। সবাই একসাথে অনেকগুলো ঘুড়ি তৈরি করে উঠাতাম, সেই মুহূর্ত ছিল অনেক সুন্দর।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 64867.61
ETH 3451.61
USDT 1.00
SBD 2.55