ঝড়ের রাতে আম কুড়াতে গিয়ে ভূত দেখার গল্প // পর্ব-১

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

আসসালামু আলাইকুম/🌺

হ্যা লো বন্ধুরা,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সকলেই সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় খুব ভাল আছি। আমি @rayhan111 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ থেকে।


এখন গাছে গাছে আম ধরেছে, আর এই আমগুলো দেখে যেন স্মৃতিময় একটি গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। আসলে ঝড়ের দিনে আম কুড়াতে অনেক ভালো লাগে। আর এই আম কুড়াতে যেন আমার একটা নেশা ছিল। ঝড় উঠলেই আম কুড়ানোর জন্য গাছ তলায় চলে যেতাম। আর এই আম কুড়ানোর মুহূর্ত গুলো অনেক বেশি ভালো লাগতো। কারণ গ্রাম অঞ্চলে যখন ঝড় বাতাস উঠতো তখন আম গাছের নিচে ছেলে মেয়েরা উপস্থিত হতো। তাদের সাথে আমরা মুহূর্তগুলো সত্যি অনেক আনন্দের সাথে উপভোগ করতাম।কারণ আমগুলো নিচে পড়ার সাথে সাথে কুড়ানোর জন্য সবাই ব্যস্ত হয়ে যেতো।


lamp-2903830_1280.jpg

source

আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়াশোনা করি। আর এই সময় সকল বন্ধুদের সাথে নিয়ে যেন দল বেধে চলাচল করতাম। বিশেষ করে আমাদের বাড়ির পাশে আমার সমবয়সী অনেকেই ছিল। একই ক্লাসে পড়াশোনা করতাম। আর সকল বন্ধুরা যেন আম কুড়াতে খুবই ভালবাসতো।আমার বন্ধুর রফিক ছিল ও তো গাছে গাছে উঠে আম পারতো। ওর আরো বেশি নেশা ছিল আমের প্রতি। আসলে এখনকার মানুষদের আর আম গাছে উঠে এবং আম কুড়ানোর সেই দৃশ্যগুলো দেখা যায় না। এখন মানুষ বাজার থেকে কাঁচা আম বা পাঁকা আম কিনে নিয়ে আসে। আগের মত গাছ থেকেও পারার মুহূর্তগুলো কেউ আর উপভোগ করেনা। বিশেষ করে বৃষ্টি এবং বাতাস আসলে আম কুড়ানোর জন্য আমরা গাছের নিচে যেতাম। এখন বৃষ্টি আর বাতাস আসলেই মানুষ ঘরের ভিতরে লুকিয়ে পড়ে। বাইরে তো যায় না ভয়ে। কিন্তু আগে আমরা বৃষ্টিতে ভিজে আম কুড়াতাম। তাই বৃষ্টি এবং বাতাস আসলে আম কুড়ানোর জন্য আমাদের বাড়ির পাশেই দুটি আম গাছ রয়েছে, সেই গাছে নিচে আমরা আম কুড়ানোর জন্য আসতাম।


তারপরে একদিন স্কুল ছুটি শেষে আমরা বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। আসলে আমাদের স্কুল বিকাল ৪ টা পর্যন্ত হতো। বিকাল ৪ টার সময় যখন ছুটি হয়েছে, তখন বন্ধুরা মিলে বাড়িতে দিকে রওনা দিলাম। আসলে আমাদের বাড়িতে আসার পথে রাস্তার পাশে অনেকগুলো আমগাছ রয়েছে। আর হঠাৎ করে দেখতে পেলাম আকাশে কালো মেঘ এবং বাতাস বইতে শুরু করেছে। বন্ধুরা দৌড়ে এসে সেই আম গাছে নিচে আসলাম। আর আম গাছ থেকে আম কুড়াতে লাগলাম।আমাদের স্কুল ব্যাগগুলো আম গাছে নিচে রেখে আমরা আম কুড়াতে লাগলাম। আসলে আম কুড়াতে তখন অনেক বেশি ভালো লাগতেছিল। তবে প্রচণ্ড বাতাস বইতে শুরু করলো, তখন অনেক ভয় পাচ্ছিলাম।


fantasy-2847724_1280.jpg

source

অল্প বাতাসের মধ্যেই অনেকগুলো আম পড়েছে, আমরা বন্ধুরা সেই আমগুলো কুড়িয়ে এটি ব্যাগের ভিতর নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম এবং মুহুর্তের মধ্যে বৃষ্টি নামলো। আর আমাদের ব্যাগে পলিথিন ছিল এই পলিথিন দিয়ে ব্যাগটা বেঁধে আমরা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাড়িতে আসলাম। বাড়িতে এসে আম বের করলাম, মা বলল যে বৃষ্টিতে ভিজে আম কুড়াতে হবে তোর,এই জন্যই তো তোদের দেরি হয়েছে। বললাম যে না স্কুল থেকে বের হওয়ার সময় বৃষ্টি নেমেছে, আর ভিজে গেছি যার কারণে আমগুলো কুড়িয়ে নিয়ে এসেছি। তা না হলে বকা খেতাম।আসলে বৃষ্টির দিনে ভিজতে খুবই ভালো লাগে। তবে বৃষ্টিতে ভিজে আম কুড়ানোর মুহূর্তে অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে। বৃষ্টি আসলে আমরা আমতালা যেতাম আম কুড়াতাম। আর বৃষ্টির পানিতে খেলাধুলা করতাম, আমাদের এই বৃষ্টির পানিতে বন্ধুদের সাথে খেলাধুলার মুহূর্তটা অসাধারণ ছিল। বৃষ্টি নামলে আমরা সেই আমগুলো নিয়ে রেখে দিতাম, আসলে আম খাওয়ার প্রতি ইচ্ছে ছিলো না।কিন্ত কুড়ানোর প্রতি নেশা ছিল অনেক আমার।


একদিন বিকেলবেলা স্কুল ছুটি শেষে বাড়িতে আসলাম। বাড়িতে এসে দেখতে পেলাম আম্মা বাড়িতে নেই। বড় ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম আম্মা কই গেছে। বলল যে মামা অসুস্থ হয়েছে। তাই মামা বাড়িতে গিয়েছে। আর সেদিনই সন্ধ্যা বেলা অনেক বাতাস ছিল, তখন আমার বাড়িতে বন্ধুরা কয়েকজন আসলো। বললো চল আমাদের বাড়ির পেছনে একটা আম বাগান রয়েছে, সেই আম বাগানে আমরা আম কুড়াবো যাবো।তাই আর দেরি না করে বন্ধুদের সাথে আম কুড়াতে সেই আম বাগানের কাছে আসলাম। আম বাগানে এসে দেখতে পেলাম অনেকেই আম কুড়াতে এসেছে। আর বাতাস বইতেছে, তখন অনেকগুলো আম পরলো। আমরা বন্ধুরা মিলে আমগুলো কুড়িয়ে একটি ব্যাগে রেখে দিলাম। আর সেই ব্যাগে অনেক আম হল, তারপরে বন্ধুদের বাড়িতে এই আমগুলোর রাখলাম। এবং বন্ধু বলল যে তাদের একটা ভিটা রয়েছে অর্থাৎ বাড়ির পেছনে একটি উঁচু জায়গা রয়েছে, সেখানে দুটা আম গাছ রয়েছে। এই আম গাছের আমগুলো কাঁচা মিঠা খেতে খুবই মজা লাগে।


তবে এই ভিটার উপরে যে দুটি আমগাছ রয়েছে, কাঁচা মিঠা হলেও এই আম কুড়াতে সন্ধ্যাবেলা কেউ যায় না। কারণ ওখানে ভয় রয়েছে। কারণ ওখানে একটি গাছ রয়েছে, সেই গাছের সাথে আমাদের গ্রামের এক মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। যার কারণে সেখানে ভয় রয়েছে, আর ওখানে আম কুড়াতে কেউই যায় না। কিন্তু ঐদিন আমরা তিন বন্ধু ছিলাম, বন্ধু রফিক বলল যে আজকে আমরা ওখানে আম কুড়াবো। আর অনেক আম পড়ে রয়েছে। আমি বারবার না করলাম কিন্তু রফিক বললো কিছুই হবে না।রফিক বলল যে আমি দুদিন আগে ওখান থেকে আম কুড়িয়ে নিয়ে এসেছি, কিছুই হবে না চল যাই। যেতে চাইলাম না তারপরেও দুই বন্ধুর কথা মতে আমরা সেখানে আম কুড়াতে গেলাম এবং সেখানে আম কুড়াতে গিয়ে ভয়াবহ এক ঘটনা সম্মুখে পড়েছিলাম। তো বন্ধুরা সেই ঘটনাটি আগামী পর্বে আপনাদের সাথে শেয়ার করব, আশা করছি সে পর্বের জন্য আপনারা সবাই অপেক্ষা করবেন।🙏🤲🙏


আমার পরিচয়

IMG_20211018_182622.jpg

আমার নাম মোঃ রায়হান রেজা।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবাসি। আমি পেশায় একজন সহকারী মেডিকেল অফিসার ।আমি সর্বদাই গরীব-দুঃখীদের সেবায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং নতুন সৃজনশীলতার মাধ্যমে কিছু তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে🌹💖🌹।

Amar_Bangla_Blog_logo_png.png

👉 বিশেষভাবে ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের যারা এই পোস্টকে সমর্থন করছেন🌺🌹🌺

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 months ago 

আম কুড়তে গিয়ে ভুত দেখেছেন কি ভয়ংকর কথা।আসলে ছোট বেলায় ঝড় বৃষ্টিতে আম কুড়ানো যে কি মজা তা শুধু গ্রামে যারা বেড়ে উঠেছে তারাই বুঝবে।ভীষণ আনন্দের বন্ধুদের সাথে আম কুড়ানো।বাড়িতে যতো আমেই থাকুন না কেন যদি একটা আমও কুড়িয়ে পাওয়া যায় তাহলে সে যে কি খুশি খুশি লাগে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।পরবর্তী পর্বে ভুত দেখার বিস্তারিত জানতে পারবো নিশ্চয়ই। ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 2 months ago 

আপনি ঠিক বলেছেন আম খাওয়ায় চেয়ে কুড়াতে অনেক ভালো লাগে। আপনার দেখছি ঝড়ের সময় অনেক আম কুড়িয়েছেন।আসলে সামনে আম পড়লে না কুড়িয়ে থাকা যায় না।তবে আপনার বন্ধু ভয়ের জায়গায় আম কুড়াতে গিয়ে কি হলো সেটা জানার অপেক্ষায় থাকলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 months ago 

দারুন গল্প শেয়ার করেছেন ভাইজান। আপনার এই গল্প করে বেশ ভালো লাগলো। আসলে ঝড়ে রাতে আমরা আম কুড়াতে গিয়েছি কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়ে কোনদিন ভূত দেখতে পেলাম না। আর সে প্রতীক্ষায় দিন দিন বড় হয়ে গেছি। যাইহোক খুব সুন্দর ঘটনা শেয়ার করেছেন।

 2 months ago 

খুব সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। গল্প করতে আমার ভালো লাগে। গল্প পড়ার মধ্যে অজানা কিছু জানা সম্ভব হয়। ঠিক তেমনি আম কুড়ানোর বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে পোস্ট শেয়ার করেছেন। পাশাপাশি আম কুড়াতে গিয়ে ভূতের ভয় পেয়েছেন সেটাও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 66937.04
ETH 3270.78
USDT 1.00
SBD 2.74