//জেনারেল রাইটিং//সচেতনতাই বেঁচে থাকার একমাত্র চাবিকাঠি//
নমস্কার বন্ধুরা
গতকাল কলেজে যাওয়ার সময় আমার চোখের সামনে খুবই দুঃখজনক এই ঘটনাটি ঘটেছিল। কলেজে প্র্যাকটিকাল ক্লাস ছিল দুপুর ২ টো থেকে । অন্যান্য দিনের মতো গতকালও আমি বারোটা নাগাদ কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। যেহেতু আমাকে ট্রেনে করে কলেজে যেতে হয়, তাই বাধ্য হয়েই আমাকে এত তাড়াতাড়ি ট্রেন ধরার জন্য ঘর থেকে বেরোতে হয়। যাই হোক, অন্যান্য দিনের মতো যথাসময়ে ট্রেন বারাসাত স্টেশনে এসে দাঁড়ায় এবং সেখান থেকে আমি দ্রুত ট্রেনে উঠে পড়ি।
তবে অনেকগুলো স্টেশন পার করার পর, হঠাৎ করেই মছলন্দপুর স্টেশনে এসে ট্রেন বেশ খানিক সময় দাঁড়িয়ে পড়ে। সাধারণত স্টেশনে ট্রেন এক থেকে দু মিনিট দাড়াই । কিন্তু সেখানে ১০ মিনিট ধরে ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে দেখে অনেকেই ট্রেন থেকে নেমে পড়ল দেখার জন্য। তারপর সেখানে খুব হইচই শুরু হল পুলিশও আসতে শুরু করেছিল। ট্রেনের জানলা থেকে আমি বিষয়টি দেখার চেষ্টা করলাম। তারপর দেখলাম একটা মাঝবয়সী ছেলেকে প্রচুর মানুষ ঘিরে ধরে আছে এবং সকলেই তাকে দুই এক কথা শুনিয়ে দিয়ে যা চলে যাচ্ছে।
এসব দেখে আমিও ট্রেন থেকে নেমে কিছুটা দূরেই দাঁড়ালাম। তারপর সেখান থেকে জানতে পারলাম আমরা যে ট্রেনে করে আসছিলাম ,সেই ট্রেনের সামনেই ছেলেটি শুয়ে পড়েছিল সুইসাইড করার জন্য। শুনে এক মুহূর্ত নিশ্চুপ হয়ে গেলাম আমি। এতদিনে এই ঘটনাগুলো শুনে এসেছি তবে স্বচক্ষে কখনো দেখতে হবে এটা কল্পনা করিনি। এই ঘটনাগুলো ভাবলেই আমি শিউরে উঠি, ছেলেটিকে দেখে ভীষণ মায়া লাগছিল আমার। না জানি কতটা দুঃখ তার ভিতরে জমে আছে! সেই জন্য বাধ্য হয়েই সে এরকম করছিল।
ট্রেন স্টেশনে দাঁড়ানোর কিছুটা আগে থেকেই প্রচন্ড জমায়েত দেখে, ট্রেনের চালক তার গতি কমিয়ে এনেছিল, সেই জন্যই ছেলেটি তার প্রাণ ফিরে পেল। লাইন থেকে তোলার পর ছেলেটিকে সকলে মিলে ভীষণ বকাবকি করছিল আর প্রচুর পরিমাণে সমালোচনা করছিল , দু 'একজন পারলে তাকে চড় থাপ্পর ও মারছিল। আর ছেলেটি মাঝবয়সি হলেও প্রচন্ড জোরে জোরে হাউমাউ করে কাঁদছিল। খুব খারাপ লাগছিল তার সেই কান্না দেখে। সে কাঁদছিল আর শুধু বলছিল ,এত দুঃখ নিয়ে সে আর বেঁচে থাকতে পারছে না। তার যা কিছু পাওয়ার ছিল সে পেয়েই গেছে এই পৃথিবী থেকে আর কিছু তার পাওয়ার বাকি নেই, তাই সে আর এই দুঃখের জীবন রাখতে চাই না।
বহু মানুষ তাকে নিয়ে বহু সমালোচনা মূলক মন্তব্য করে চলেছিল আবার কেউ কেউ তাকে ভীষণ বকাবকি করছিল। কিন্তু আমার তখন তাকে দেখে ভীষণ খারাপ লাগছিল ,তাকে যদি সবাই তখন একটু সান্ত্বনা দিয়ে ভালোবাসতো তাহলে হয়তো তার এই প্রচুর দুঃখ কিছুটা হলেও কমতো । আসলে আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই অনেক ছোট বড় দুঃখ লেগেই থাকে, কিন্তু সেই সময়ে যদি কাউকে আমরা সান্ত্বনা দেওয়ার মত পাশে পেয়ে থাকি ,মনে হয় কেউ না কেউ তো পাশে আছে ।কিন্তু যদি সেরকম কেউ না থেকে থাকে পাশে, তখন আমরা আস্তে আস্তে ছোট দুঃখটাকেও বড় আকারে ধারণ করে ফেলি।
তাই আমার মনে হয় প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে তার জীবনের সমস্ত ঘটনা দুঃখ-কষ্ট গুলো ভাগ করে নেওয়ার মত একজন মানুষকে দরকার ,সেটা আমাদের পরিবারের লোকও হতে পারে কিংবা বাইরের কোন বিশ্বস্ত মানুষও হতে পারে। অনেক দুঃখ কষ্টের কথা গুলো না বলতে পেরেই মানুষ ধীরে ধীরে একাকীত্বকে আপন করে নিয়ে এই পথ গুলো বেছে নিয়ে থাকে। তাই তাদেরকে সান্ত্বনা দেওয়ার বদলে তাদের নিয়ে সমালোচনা করা একেবারেই উচিত না বলে আমি মনে করি।
কারণ একবার ভেবে দেখুন তো আমাদের নখ কাটতে গিয়ে একটা জায়গায় কেটে গেলে, কতটা পরিমাণ ব্যথা লাগে ? সেসব জেনেও প্রচুর মানুষ দুঃখে হাত কেটে ফেলছে । রান্না করতে গিয়ে একটু আগুনের ছ্যাকা লাগলে কেমন লাগে? ভাবুন তো! তা সত্ত্বেও প্রচুর মানুষ আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে। সুইসাইড করব, এই কথাটা মুখে আমরা দুঃখের সময় হয়তো কেউ কেউ বলে থাকি । কিন্তু সেটা করা কি অতটাই সহজ ? হাত কাঁপে না? ভয় করে না ?সত্যিকারের এই পথে এগোতে । তাহলে ভেবেই দেখুন কতটা খারাপ মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেলেই মানুষ এইরকম একটা পথে এগিয়ে যায়।
তাই আমি বলব, এইসব মানুষদের দেখলে কখনো তাদের নিয়ে সমালোচনা না করে, পারলে তাদেরকে একটু সান্ত্বনা দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে ,বিষয়টি বুঝিয়ে বলা উচিত।তাহলে হয়তো তাদের মানসিক অশান্তিটা, কিছু সময়ের জন্য, একটু হলেও কমতে পারে।
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
---|
আজ আর নয়। আজ এই পর্যন্তই শেষ করছি। ভালো থাকবেন সকলে আর সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তীতে আবারও নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব।
This is a manual curation from the @tipU Curation Project. Your post was promoted on Twitter by the account josluds
@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 6/8) Get profit votes with @tipU :)
আসলে দিদি আপনার সাথে আমি একেবারে একমত। যারা এরকম দুঃখ কষ্ট গুলো বেশি সহ্য করতে পারে না তারা সুইসাইডের কথা চিন্তা করে। কিন্তু তাদেরকে আমাদের উচিত সান্ত্বনা দেওয়া, একটু ভালোবাসা দেওয়া। তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো উচিত আমাদের। যদি তারা মনে করে তাদের পাশে কেউ হলেও আছে, তখন এরকম চিন্তা ভাবনা করবে না আর একাকীত্ব বোধ করবে না। ছেলেটার কথা শুনে আমার কাছেও খুব খারাপ লেগেছে। হয়তো ছেলেটার মনে অনেক বেশি কষ্ট।
আমারও তাই মনে হয় ভাই ,ছেলেটার মনে অনেক কষ্ট ছিল বলেই সে এরকম একটা কাজ করতে গিয়েছিল। আপনারও যে আমার মত চিন্তাভাবনা জেনে ভালো লাগলো ভাই।
আপু, আমাদের সমাজে সমালোচনা করার মতো অনেক লোকই আছে, তবে সমবেদনা দেয়ার মত লোক খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল। আর তাইতো মাঝ বয়সী ওই ছেলেটি যখন ট্রেনের নিচে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল, তখন অনেকেই তাকে সমালোচনা করেছিল এবং চর থাপ্পর মারতে গিয়েছিল। তারা কি একবারো ভেবেছিল, যে ছেলেটি এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মনের ভিতরে কি চলছে। কেনই বা সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে যেতে চাইছে। কেউ শোনার মত নেই আপু তবে বলার মত অনেকেই আছে। যাইহোক আপু, আপনার পোস্ট পড়ে মাঝ বয়সী ওই ছেলেটির জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে।
সত্যি ভাই ,কেউ একবারও চিন্তা করে দেখেনি যে ছেলেটার মনের অবস্থাটা কি ছিল ! কখন মানুষ এসে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবে।
আসলে এই রকম ঘটনা আমাদের সমাজে অনেক দেখতে পাওয়া যায়।তবে ইদানিং অনেক বেশিই ঘটছে। তবে এরকম মানুষদের পাশে থেকে তাদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে এদের মাইন্ড ওয়াশ করে এদেরকে বাঁচিয়ে তোলার একটা সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব। তবে সেরকম যদি ব্যক্তির সান্নিধ্যে পড়ে অন্যথায় কোন উপকারেই আসবে না।
আপনি ঠিকই বলেছেন ভাই,ইদানিং এই ঘটনা অনেক বেশি পরিমাণেই দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের উচিত অবশ্যই, তাদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে মাইন্ডওয়াশ করে দেওয়া, কিন্তু সঠিক মানুষ না হলে সেটা তো গ্রহণ করতে পারবে না।
আসলে এরকম ঘটনা আমাদের বর্তমান সমাজে প্রচুর পরিমাণে দেখা যাচ্ছে। তবে একটা ব্যাপার কি জানো তো, মানুষের দুঃখ যখন সীমা ছাড়া হয়ে যায় তখন এই সামান্য ব্যথা তার কাছে কোন ব্যথাই মনে হয় না। এজন্য মানুষ হাত কাটে, ট্রেনের নিচে গিয়ে ঝাঁপ দেয়। তবে তারপরও এই মানুষগুলোকে আসলে সঠিক রাস্তায় নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তার পরিবারের বা কাছের মানুষের।
এরকম একটা দুঃখজনক অবস্থায় তার পাশে দাঁড়ানো অবশ্যই উচিত তার পরিবারের অথবা তাদের কাছের মানুষদের ।কিন্তু এই সহযোগিতা হয়তো সব সময় তারা পায় না , সেজন্যই হয়তো প্রচুর পরিমাণে এরকম মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে।