রিভিউ-কেমন খেতে বম্বে বিরিয়ানি (১০% @shy-fox এর জন্য)
তারিখ-২৯.০৪.২০২৩
নমস্কার বন্ধুরা
আশা করি ঈশ্বরের আশীর্বাদে সকলে ভালো আছেন।আমিও ভালোই আছি। কিন্তু কাজের চাপের জন্য পোস্ট করতে পারছিনা রোজ। আজকে নিয়ে আসলাম একটা ফুড রিভিউ, বলতে পারেন বিরিয়ানি রিভিউ নিয়ে। অনেকেই জানেন যারা বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গে থাকেন, আজকাল নৈহাটির বোম্বে বিরিয়ানির খুব নাম ডাক হচ্ছে। সব রকম ইউটিউবাররা ঠিক দাদা বৌদি বা ডিবাপের মত নৈহাটির বম্বে বিরিয়ানি কেও তুলনা করা শুরু করেছে। এত ইউটিউবারের এত রিভিউ দেখে আমারও মনে হল আমিও একবার অন্তত ট্রাই করে দেখি, কেমন খেতে? ভেবেচিন্তে আজকে যেহেতু উইকেন্ড সেই কারণে কাজ সেরে উঠেই ভাবলাম জমাটো তে নৈহাটির বোম্বে বিরিয়ানি থেকে একটা মাটন বিরিয়ানি অর্ডার করি।
এর আগেও আমি একদিন অর্ডার করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ডেলিভারি চার্জ প্রায় ১০০ টাকা নিচ্ছিল দেখে আর অর্ডার করিনি।আজ বেশ অনেকক্ষণ শিলাবৃষ্টি হয়েছিল।সেই কারণে ওয়েদারটাও বেশ ঠান্ডা। জমেটো ওপেন করে দেখলাম বোম্বে বিরিয়ানির তে একটা সুন্দর অফার দিচ্ছে। মাটন বিরিয়ানি চিকেন চাপ একসাথে মিলে খুবই কম খরচ পড়ছে। সাথে ডেলিভারি চার্জও অনেকটাই কম প্রায় ৬৩ টাকার মতো। আমার এখন আপাতত সঠিক দাম মনে নেই। কিন্তু প্রায় ওরকমই। যদি স্ক্রিনশট থাকে তবে অবশ্যই শেয়ার করব। যাই হোক মোটামুটি সব মিলিয়ে খরচ পড়লো ৩৬৬ টাকা।
মনে মনে খুব আনন্দেই রয়েছি, আজ এতদিন পরে মনের ইচ্ছে পূরণ হতে চলেছে। অর্ডার করে দিলাম। প্রায় ৪০ মিনিট লাগলো খাবারটা পৌছাতে। যদিও নৈহাটি থেকে যে ডেলিভারি বয় টি বিরিয়ানি টা নিয়ে এলো সে যথেষ্টই তাড়াতাড়ি নিয়ে এসেছে। কারণ নৈহাটি থেকে বাইকে এত তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়ি পৌঁছানো যায় না। হয়তো বৃষ্টির কারণে রাস্তায় ভিড় টা কম ছিল। ছেলেটা এলো, ওকে টাকা মিটিয়ে দিয়ে লাফাতে লাফাতে প্যাকেটটা নিয়ে উপরের ঘরে এলাম। সাথে একটা থালা নিয়ে।
ভাবলাম জমিয়ে মটন বিরিয়ানি, চিকেন চাপ খাব।আর একটা ভালো সিনেমা দেখবো। দেখে উইকেন্ডটা এনজয় করব। থালাতে ঢেলে খিচিক্ খিচিক্ করে কয়েকটা ছবিও তুলে নিলাম। আপনাদের সঙ্গে ভাগ করবো বলে। বিরিয়ানি তো আর ভাগ করতে পারবো না। তাই ছবিই না হয় ভাগ করেনি।
অবশ্যই এর আগে ইউটিউবারদের রিভিউ শুনেছিলাম।এটা নাকি দাদা বৌদির ডিউপ কপি।সেই কারণে উৎসাহ আরও বেশি ছিল! ভাবলাম দাদা বৌদির বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য আর ঠেঙিয়ে ব্যারাকপুর যেতে হবে না। আমার পাশের নৈহাটিতেই পাওয়া যাবে। যাই হোক থালা নিয়ে সাজিয়ে একটা ওয়েব সিরিজ খুলে বসলাম।
প্রথমেই বিরিয়ানিটা মুখে দেওয়ার পরেই মনে হল হালকা ঠান্ডা লাগছে। তারপরে ভাবলাম অতদূর থেকে নিয়ে এসেছে সেটা ঠান্ডা হতেই পারে। তবে চিকেন চাপে হাত দেওয়াতে ভিশন ডিসঅ্যাপয়েন্টেড হলাম।কারণ একদমই জলের মত ঠান্ডা। ভাবলাম ঠিক আছে সাইড ডিস গুলো সাধারণত অনেক আগে বানায়। আর ঠান্ডা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটুকু মেনে নেওয়া যেতেই পারে। ভাতটা মুখে দিয়েই একটু আঠালো লাগলো।ভাতটা ঠিক ঝরঝরে লাগলো না। কিন্তু নুন-মশলা সব ঠিকই ছিল। সেটা নিয়ে কোন কমপ্লেইন নেই। দুবার ভাত খেয়ে সালাড এবং ওদের সেই বিখ্যাত চাটনিটা মুখে দিয়ে মনে হল চাটনিটা খুবই জলসা এবং স্বাদহীন।
এরপর প্রথমেই চিকেন চাপটার থেকে এক টুকরো মাংস ভেঙে মুখে দিলাম। বিশ্বাস করুন কোন রেস্টুরেন্ট কি করে এরকম নুন ছাড়া চিকেন চাপ বানাতে পারে আমার কোন আইডিয়া ছিল না। চিকেনটা খুব সুন্দর সেদ্ধ হয়েছিল এটা সত্যি কথাই। আর জুসিও ছিল। তবে ওরা যেটা সার্ভ করেছিল সেটা কোনভাবেই চিকেন চাপ বলা যেতে পারে না। কারণ প্রথম কথা চিকেন চাপ হবে খানিকটা ঘন এবং একটু তেল ভাসবে উপর থেকে কিন্তু এইটা ছিল চিকেন রেজালার মত সাদা। কিন্তু ট্যাল ট্যালে ঝোলের মতো।চিকেন চাপ কখনোই ট্যাল ট্যালে হবে না। তাও আমি লুক্সটাকে গুরুত্ব দিলাম না। মুখে দেওয়ার পরে নুনহীন চিকেন চাপ এই এক্সপেরিয়েন্সটা হবে আশা করতে পারিনি। যেখানে এই দোকানটা নিয়ে এক রকম ইউটিউবে চরমভাবে ভাইরাল ভিডিও ছড়িয়েছে।
এরপর ভাবলাম চলো এটা কেও ক্ষমা করে দিলাম।অন্তত বিরিয়ানির আলু এবং মটন এই দুটো আমাকে ডিজাপয়েন্টেড করবে না। ভেবে প্রথমে আলুটা মুখে দিলাম। দেখলাম বেশ নরম এবং ভেতর পর্যন্ত নুন ঢুকেছে। মনে হল যাক আলুটা অন্তত একটু হলেও দাদা বৌদির মত খেতে। বাদামি রঙের দেখতে, কারণ পেঁয়াজ রসে বয়েল করা হয়েছে আলুটাকে। সেই কারণেই স্বাদটা একদম ভেতর পর্যন্ত ঢুকেছে।
এইবার স্টার অফ দা প্লেট অর্থাৎ মটনের পালা। সত্যি বলতে ভয়ে ভয়ে মটনটা ছিঁড়লাম। হাতে ছেড়ার সময় বিশেষ কিছু যদিও বুঝতে পেলাম না। কারণ সাইজটা বেশ ভাল ছিল মটনের এবং দেখতেও বেশ গাড়ো রঙের লাগছিলো। ছিড়ে যখন মুখে দিলাম মটনটা তখন আবার দেখলাম এতেও নুন কম। এবং যতটা টেন্ডার দাদা বৌদির বিরিয়ানির মটন ততটাও টেন্ডার নয়। খানিকটা ছিবড়ে মতো লাগলো।
ওভারল এক্সপেরিয়েন্স মোটেই খুব ভালো বলা যেতে পারে না। তবে আমাদের কাঁচরাপাড়া, কল্যাণী এইসব জায়গার মধ্যে যত জায়গাতে বিরিয়ানি খেয়েছি, তার মধ্যে তুলনামূলক একটু ভালো লেগেছে। কিন্তু তাকে কোনভাবেই দাদা বৌদি বা ডি বাপির সাথে তুলনা করলে অত্যুক্তি করা হবে।
যাইহোক ভাঙা হৃদয় নিয়ে কোনরকমে খাবারটা শেষ করে, ওয়েব সিরিজটাও আর দেখা হলো না। আরে মুডটাই তো বিগড়ে গেছিলো। দেখব কি করে!
এবার আর একটা কথা- অনেকেই আমাকে ভাবতে পারেন আমি কেন শুধু বিরিয়ানির রিভিউ করি।ফুড রিভিউ মানে তো বিরিয়ানি রিভিউ নয়। কিন্তু কি করবো বলুন? যখনই কোন খাবার অর্ডার করতে যাই, প্রথমেই বিরিয়ানি চোখে পড়ে।আমাকে ছোটখাটো "বিরিয়ানি কুইন" বলা যেতে পারে।
[স্ক্রিনশট নেওয়া হয়েছে জ্যোমাটো থেকে]
আজ এখানেই শেষ করছি খাবারের রিভিউটা। আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। আবার আসবো নতুন কোন উপস্থাপনা নিয়ে।সকলে খুব ভালো থাকবেন।
#
পরিচিতি
আমি পায়েল।ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার কাছাকাছি ডাক্তার বিধান রায়ের স্বপ্নের শহর কল্যাণীর বাসিন্দা।একসময় যদিও চাকরী করেছি কিন্তু বর্তমানে ফুলটাইম ব্লগার এবং ভ্লগার।যদিও নিজেকে এখনও শিক্ষানবিশ মনে করি। আর তা ই থাকতে চাই ।সফল হয়েছি কিনা বা কতদিনে হব তা জানি না, কিন্তু নিজের প্যাশনকেই লক্ষ্য করে এগিয়ে চলেছি।বাকিটা আপনাদের হাতে।আশাকরি আমার সাথে যুক্ত থাকলে আশাহত হবেন না।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এতো রাতে খাবার দেখে তো ঘুম ভেঙে গেলো দিদি ৷ হিহিহিহ!!! কি নাম বম্বে বিরিয়ানি দারুন নাম তার সাথে দেখেই জিভে জল এসে গেলো ৷ অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি
ধন্যবাদ ভাই
বম্বে বিরিয়ানির নাম শুনে মনে হয়েছে খুব ইয়াম্মি লাগবে খেতে। বিরিয়ানি এবং চাপ খাওয়ার আগে আপনি যে খুব এক্সাইটেড ছিলেন, সেটা আপনার পোস্ট পড়েই বুঝতে পেরেছি। তবে খাওয়ার পর হতাশ হয়েছেন, সেটা জেনে একটু খারাপ লাগলো। বাসায় পার্সেল এনে খাওয়ার চেয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে আমার খুব ভালো লাগে। কারণ বিরিয়ানি ঠান্ডা হয়ে গেলে খেতে একটুও ভালো লাগে না। যাইহোক পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আমিও রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে খাওয়াই পছন্দ করি। কিন্তু কাজ করে উঠে রাত ৮টায় আর ভালো লাগে না একা একা তাও।
ঠিক বলেছেন আপু পার্সেল হলো বিপদের বন্ধু। মাঝে মধ্যে খুব দরকার হলে অর্ডার করে বাসায় এনে খাওয়া যায়। ফিডব্যাক দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন সবসময়।