স্বাধীনতা দিবস একটি বিলাসবহুল উৎসব। জেনারেল রাইটিং।

in আমার বাংলা ব্লগ7 days ago (edited)

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


1000232990.jpg

সোর্স








আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী
বসুধারে রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি,
যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে
উচ্ছ্বসিয়া উঠে, যেথা নির্বারিত স্রোতে
দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায়
অজস্র সহস্রবিধ চরিতার্থতায়--
যেথা তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশি
বিচারের স্রোতঃপথ ফেলে নাই গ্রাসি,
পৌরুষেরে করে নি শতধা; নিত্য যেথা
তুমি সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা--
নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি, পিতঃ,
ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত।

                     ....... রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


আমি আজ পর্যন্ত স্বাধীনতা নিয়ে কোন কবিতা লিখিনি। ইচ্ছেই করে না কোনদিন লিখি৷ যা বলতে চাই তা একটা বা কয়েকটা কবিতায়, গদ্যে আঁটবে না। তাছাড়া অযথা বিতর্কের কারণও হতে পারে৷ আমার বিশেষ পরিচিতি নেই সেই সুবাদে লেখাটি যে রক্ত গরম করবে সেও ভাবি না৷ তাই সুবিধার ঝুলিতে বিকেলের এলাইচি চা৷ মানে আমাকে কষ্ট করে লিখতে বসতেও হয় না৷

যাঁরা পড়ছেন তাঁরা কি ভাবছেন ভারতবাসী হয়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার দিনে এ আবার কি নাটক! না আসলে আজকে সোসাল মিডিয়াতে অনেকেরই অনেক পোস্ট দেখলাম সেই সব দেখে কত কি মনে হচ্ছে৷ শুভদীপ বলে একটি সম্পাদক বলল দেশ দশকে খাওয়াবে৷ আমি বললাম বাবারা সারাজীবন খাওয়াবে? সন্তানরা কবে খাওয়াবে? একটা অভিজ্ঞতা বলি, বছর দুই আগে চারদিন লম্বা ছুটির কারণে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি দেখতে গিয়েছিলাম৷ হোটেলওয়ালা বললেন এতটা এসছেন নীলকন্ঠ ধাম দেখে যান৷ বিরাট মন্দির। সত্যিই বিরাট জায়গা জুড়ে মন্দির। সুন্দর কারুকার্য। পরিচ্ছন্ন। গাড়ি রাখার আলাদা জায়গা৷ সব মিলে এক কথায় যাকে বলে সাজানো গোছানো৷ মন্দিরের পিছন দিকে খাবার জায়গা। কুপন কেটে লাইনে দাঁড়াতে হয়। ৬০ টাকায় থালি। কম টাকায় খাবার জোর করে বেশি খাবো টাইপ একটা লোক আমার সামনেই দাঁড়িয়েছিল। একটা প্লেটে কম করে ১২ টা রুটি নিল। বাড়ির সবার জন্য ১৪ টা থালি নিল। কিন্তু দাঁড়াল একজন৷ ৮ টা নেবার পর কুপন নেই তার কাছে৷ তার বাড়ির লোক কুপন আনতে গেল আমরা ১৫ মিনিট দাঁড়িয়েই রইলাম। সে কুপন আনাতে আমাদের খাবার জুটল। তারপর যেখানে খাওয়ার জায়গা সুন্দর সব টেবিল চেয়ার পাতা৷ গোটা চারজন মেয়ে অনবরত মেঝে পরিষ্কার করছে। একবার করে ঝাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পেছনেই আইস্ক্রিমের কাগজ ছিঁড়ে ফেলছে। চকলেটের খোলা। পেছন থেকে আর একজন ঝাঁটালো। আবার ফেলল৷ আহা আমাদের অসহায় ভারতবর্ষ। আমরা সবারই মঙ্গল চাই৷ কারণ আমরা সভ্য নাগরিক।

আমরা সিভিলাইজড। তাই পরিচ্ছন্ন সমাজের কথা বলি৷ এখানেও মজার কথা বলি। সকাল বেলায় কিছু লোক রাস্তা পরিষ্কার করে দিয়ে যায়। গাছের পাতা খাবারের ওয়েস্টেজ কুকুরের পটি ইত্যাদি৷ তাদের পেছন পেছনই সিভিলাইজড মানুষরা তাদের কুকুর নিয়ে আসে। কুকুরের কখনো রাস্তার মাঝে পটি পায় কখনও ধারে৷ কুকুর, সে মানুষ না৷ তাই যেখানে সেখানে পটি করতেই পারে৷ বাড়িতে বাবা বাছা করলেই বা সে তো আর নিজের সন্তান না তাহলে তার পটি তুলে পরিষ্কার করবে! এ কেমন কথা? যতই হোক কুকুর তো পশু৷ অতয়েব রাস্তাতেই থাক তার সিভিলাইজড বিষ্ঠা।

আসলে কি বলুন তো দেশ স্বাধীনতা পাওয়ার সাথে সাথে আমরাও স্বার্থপরতা শিখে গেছি। কিভাবে?
যখন পতাকা উত্তলন হল আনন্দে ভাসছে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মাথারা। আর রক্তে ভাসছে বিভক্ত রাজ্যের মানুষরা৷ ওরা অটল। স্বাধীনতার সুখ বড় সুখ৷ কয়েকটা প্রাণ গেলে কিসের ক্ষতি? দুটো মানুষ নিজেদের সমান মর্যাদার গদি পেল এই বা কম কি? সেই দেখেই আমরা শিখতে শুরু করলাম পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে আমার কি? আমি মনোযোগ দিয়ে মাংস কষি কাজে দেবে৷

জানেন বিশ্বের উচ্চতম স্ট্যাচুর ভেতরের হল ঘরে একটা বোর্ড চোখে পড়ল যাতে বড় বড় করে লেখা "The result of freedom is partition of our country "। কত সত্য চোখে জাঁকিয়ে বসে থাকে। অথচ আমরা সামান্য উলুখাগড়া আর খুব বেশি হলে আদমসুমারীর সংখ্যা। আমাদের কোথাও যাবার নেই৷ বড় কিছু করারও নেই। এখানেই বসে দোলের স্রোতে গা ভাসাব আর তলে তলে যাকে ভাই বলতাম বা বোন বলতাম তাকে উৎখাতের প্ল্যান কষব আর ক্রমশঃ সমাজের কীট বৃদ্ধির কাজে হাত লাগাব। আহা! স্বাধীনতার কি বাহার।

স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা ভাবলে কষ্ট হয়। ওরা যা ভেবে জীবন আবেগে নিয়ে বলি দিল তা আমরা কোন কিছুই ফলপ্রসূ করে উঠতে পারিনি। তবুও তাদের হাত ধরে এনে দেওয়া স্বাধীনতা আমাদের কাছে পূজো পার্বণের মত উৎসব। ছোলা সেদ্ধ মুড়ি খাবার উৎসব। জ্ঞান দেবার উৎসব। বোধ জাগরণের উৎসব। ইনকামের উৎসব। লং উইকেন্ডের উৎসব। সাদা জামা পরার উৎসব৷ উৎসব আর উৎসব।

এতো ভাবনার পরেও আমার সমস্ত মনখারাপ ও অপারগতাকে উপেক্ষা করেই আজ ভারত স্বাধীনের দিন৷ আজ পতাকা উত্তোলনের দিন৷ সব্বাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও আগামীর জন্য শুভকামনা। ভালো থাকুন।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণজেনারেল রাইটিং
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপঅনুলিপি


1000217107.jpg


৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

1000205505.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 7 days ago 

লেখাটি অসাধারণ উচ্চতার। যেভাবে রম্যরচনা করে লেখা হয়েছে তা এক কথায় প্রশংসনীয়। পুরো টান টান লেখা। এক একটি লাইন বেশ অলংকারের মতো ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন

সিভিলাইজড বিষ্ঠা

স্বাধীনতার রঙ সত্যিই ফ্যাকাসে। সবাই যে যার মত করে স্বাধীনতাকে স্বার্থপরতায় রূপান্তর করেছে। আর তার ফল ভুগতে হচ্ছে এই বিশাল দেশটাকে।

 6 days ago 

খুশি হলাম তোমার মন্তব্যে৷

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.031
BTC 60898.61
ETH 2626.61
USDT 1.00
SBD 2.61