প্রথম বার বান মাস্কা খাওয়ার অভিজ্ঞতা || লাইফস্টাইল ব্লগ
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
খাবারের নামটা খুব অভিনব তাই না? মহারাষ্ট্রে আছি প্রায় নয় বছর। আমাদের বাংলায় যেমন পাউরুটি খুব বিখ্যাত এখানে তেমনি পাও। আমাদের পেছন পোড়া পাউরুটি যেমন কোথাও পাওয়া যায় না তেমনি মুম্বাইয়ের পাও এর মতো পাও কোথাও পাওয়া যায় না৷ পাও মানেই পাউরুটি৷ তবে এখানে পাওগুলো ছোট ছোট হয় আর এমন ভাবে তৈরি যাতে মাঝে খুব সহজেই কাটা যায়। আবার আমাদের পাউরুটিটা লম্বা মত দেখতে হয়। বিভিন্ন ধরনের পাউরুটি হয় যেগুলো স্লাইস হয় আবার তিন কোণা হয় ওগুলো আলাদা আলাদা মানে দেশীয় আইডিয়ার নয়। বিদেশের সংস্করণে তৈরি । পাউরুটির ইংরেজি ভার্সন বান। তবে বান পাও এর মত অত ছোট হয় না বেশ বড়সড়ই হয়। যেমন বার্গারের বান ।
ভারতবর্ষে বিদেশী আগুনের অভাব কোন কালেই ছিল না। পার্শিয়া থেকে একসময় কিছু মানুষ এসে গুজরাট এবং মহারাষ্ট্রের কিছু অংশে বসবাস শুরু করেছিলেন৷ সংখ্যায় তারা খুবই কম ছিল। যাদের আমরা পার্সি বলে চিনি৷ এই পার্শিদের এক অংশ কলকাতাতেও থাকতো। তো বিদেশীরা আসা মানে তারা সঙ্গে করে তাদের খাবার অভ্যাসগুলো নিয়ে আসে। নইলে উপায়ই বা কি? খাবেই বা কি? যে পেট পাউরুটি চেনে সে তো আর সহজে ভাত চিনবে না৷ চিনবে৷ কিন্তু তার জন্যও সময় লাগবে৷ যাইহোক, পার্শিরা খাচ্ছে দেখে তা যে শুধু তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে বা থেকেছে এমনটা নয়৷ তার ফলাফল হিসেবে এই বান বা পাউরুটি জাতীয় খাবারই এখানে ধীরে ধীরে চালু হয় আর সাথে ভারতীয় ছোয়াও পেয়ে যায়৷ তখন স্বাদ একেবারেই অন্য রকম হয়। যেভাবে চাইনিজ খাবার গুলো ভারতীয়দের উপযোগী করে তোলার জন্য ইন্ডো-চাইনিজ নাম হয়ে গেছে। এই বানও সেই সব রেসিপির মতই একটা অংশ ।
জানেন তো পাওরুটির জন্য সবথেকে বিখ্যাত হল ইটালি। সম্ভবত ইটালি থেকেই সারা বিশ্বে পাউরুটি ছড়িয়ে পড়েছে৷ তাই আজও আমরা দোকানে গেলে ইটালিয়ান ব্রেড খুঁজি৷ ইউরোপের প্রতিটা দেশেই নানান ধরণের বান ও অন্যান্য পাউরুটি পাওয়া যায়৷ ভারতবর্ষে বিদেশী শক্তি আগমন এবং তাদের স্থায়ী বসবাসের কারণেই কিন্তু নানান ধরনের পাউরুটি তৈরি হয়। বান মস্কা তেমনই একটি খাবার।
মাস্কা মানে কি জানেন? কাউকে ওয়েলিং করা বা মাখন লাগানো। সেই একই পদ্ধতিতে বানে অনেকটা বাটার লাগালে তৈরি হয়ে যায় বান মস্কা৷ এই বাটার কিন্তু সাধারণ আমুলের বাটার নয়। আলাদা করে তৈরি হয়। আর সাথে অনেকটা ক্রিম ও সামান্য জ্যাম মেশানো থাকে।
এসব কিছু জানলেও বানমস্কা কিন্তু আগে কখনোই খাইনি, এই প্রথমবার। যত আহামরি শুনতে তত কিন্তু খেতে নয়।। তবে বান বা পাউরুটিটি অন্যন্ত নরম, আর স্পনজি। গরম গরম প্লেটে করে সার্ফ করে দেয় আর মাঝখানটা পুরোটা অনেক অনেক বাটার দিয়ে ভর্তি থাকে। বাচ্চাদের জন্য ভীষণ লোভনীয় খাবার৷
অনেকেই বান মস্কার প্লেইন মানে শুধু বাটার দেওয়া নেয়৷ আমি চেখেছিলাম অমলেট মাঝে দেওয়া পাও । সত্যিই অসাধারণ লেগেছিল। বিশেষ করে পাউরুটির আকৃতি ও ভলিউম।
আমি জানি না এরম তুলতুলে বান কিভাবে বানায়৷ অমলেট বানমাস্কা তেও বাটার থাকে। শুধু ডিমের অমলেট বানিয়ে রোল করে বান মাঝ বরাবর ফালি করে ঢুকিয়ে দেওয়া হহ।
আমরা কয়েকজন ছাড়াও আরো অনেকেই ছিল সেদিন আর দোকানে তাই ভিড়ের কোন শেষ ছিল না। ভাবলাম একটা ছবি তুলে নিয়ে দিলে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারব সহজে। পার্সিদের খাবার আমরা কিভাবে কখন যে নিজের মতো করে তৈরি করেছি। তা বুঝতেই পারিনি। জানেন বন্ধুরা, প্লেইন বান মাস্কা নিয়ে অনেকেই গরম গরম দুধ চায়ে ডুবিয়ে খাচ্ছিলেন। আমি যদিও চা খাই না৷ তবে পাশের টেবিলে দেখেছি৷
যেহেতু ভারতীয় ছোয়া দিই আমরা যেকোন খাবারে তাই আমার মনে হয় এই বানগুলো শুধু বাটার আর ক্রিমে না ডুবিয়ে খানিকটা ঘুগনি বা তড়কার সাথে খেলে আরও মজাদার লাগবে৷ আসলে মহারাষ্ট্রে থাকার দরুণ পাওভাজি খেয়ে শিখেছি ঝাল কিছু দিয়েও পাউরুটি খেতে অসাধারণ লাগবে৷
বন্ধুরা আমার আজকের অভিজ্ঞতার গল্প কেমন লাগলো জানাবেন।
একটা কথা না বললেই নয়, এই বানমাস্কা সেদিনও খেতে ভালো ছিল। বাচ্চারা একটা স্যান্ড উইচ সাথে দুটো করে বানমাস্কা খেয়েছে৷ এতোই লোভনীয় ছিল যে বললার বা ব্যাখ্যার নয়৷ এক সাথে অর্ডার দেওয়া হয়নি কতটা খাবে তার আইডিয়া ছিল না বলে। কিন্তু প্রতিবারেই যখন এক একটা বান আসছিল ছোঁ মেরে এমন খেল সবাই আমার মনে হল এরা বহু যুগের বুভুক্ষু প্রাণী। হা হা হা। যদিও আমার ওই অমলেট খেয়েই পেট ভরে গেছিল।
যাইহোক আস আসি৷ আবার আগামীকাল আসব অন্য কিছু নিয়ে৷
টা টা।
পোস্টের ধরণ | লাইফস্টাইল ব্লগ |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
দেখতে কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে বান মাস্কা। যদিও এটা কখনো খাওয়া হয়নি কারণ আমাদের দেশে তো এটা পাওয়া যায় না। তবে আমার তো খুবই পছন্দ হলো।পাউরুটি দিয়ে মাংসের ঝোল বা তরকারি খাওয়া আমার একটা অভ্যাস বলতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমি পাউরুটি দিয়ে ঝোল দিয়েই খেতে পছন্দ করি। কারণ এটা একটু মিষ্টি আর ঝাল সবকিছুই মিলিয়েই হয়। যাইহোক বাচ্চারা যে এত মজা করে খেয়েছে এটা শুনেই তো বেশি ভালো লাগলো।
হ্যাঁ৷ পাউরুটি দিয়ে একটু ঝাল কিছু বা ঝোল কিছু আমারও ভালো লাগে। ভারতের মহারাষ্ট্রে এমন অনেক রেসিপি হয়। ভীষণ মজাদার খেতে লাগে। বানালে আপনাদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করব।