🍁নমস্কার🍁

নীলমের লেখামিতে আপনাদের স্বাগত

🍀🍀🍀🍀🍀

---

---

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা, সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।

---

---

ছবিটি আমার একটি বইয়ের কভার পেজ থেকে তোলা

---

---

শুভ জন্মদিন ভ্লাদিমির মায়াকভস্কি।

---

---

প্রথমেই পরিচয় দিই তিনি আসলে কে ছিলেন। আমরা যারা কবিতা লিখি বা কবিতা পড়তে ভালোবাসি তাদের কাছে ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি অত্যন্ত জনপ্রিয় নাম। ১৯১৭ সালে যে রুশ বিপ্লব ঘটেছিল সেই সময় তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশ ছোঁয়া। তবে তার বয়স ছিল খুবই কম প্রায় চব্বিশ বছর। তাহলে বুঝতেই পারছেন তার জন্ম ১৯৯৩ সালে। আমাদের দেশে সাহিত্য নিয়ে যেমন শ্রুতি আন্দোলন, শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলন, হাংরি আন্দোলন ইত্যাদি হয়েছিল তেমনি রাশিয়াতেও নানান ধরনের আন্দোলন হতো। এই সময় 'ফিউচারিস্ট' কাব্য আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা তিনি ছিলেন বলে মনে করা হয়।

ভ্লাদিমির মায়াকভস্কি খুব একটা বেশিদিন পৃথিবীর আলো বাতাস উপভোগ করেননি, ১৯৩০ সালে অর্থাৎ মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে তিনি মারা যান। তবে তিনি দেখতে এতই সুপুরুষ ছিলেন এবং চেহারাও সুঠাম দীর্ঘদেহী, তার উপরে কবি হিসেবে তার যথেষ্ট নাম। কবিদের তো প্রেমের অভাব হয় না, মায়াকভস্কিরও প্রেমিক হিসেবে কোথাও কোন কমতি ছিল না তাই হয়তো নারীরা ঝটপট তার প্রেমে পড়ে যেতেন। তবে তিনি যে জনে জনে প্রত্যাখ্যান করতেন তা নয়, অনেকগুলিই প্রেমিকা ছিল এই কম বয়সের মধ্যে। কেউ কেউ আবার তার নিজের সংসারের পাশাপাশি সম্পর্ক তৈরি করেছে শুধুমাত্র কবির থেকে ভালোবাসা পেয়ে প্রেমের পরিপূর্ণতা পাওয়ার জন্য। এগুলো কোনটাই আমার কথা নয় তাঁর প্রেমিকাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনটাই জানিয়েছেন তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে৷ আমি কোথা থেকে জানলাম? ওনারা কেউই আমার বন্ধু না, আমি জেনেছি 'তিন প্রেমিকার মায়াকভস্কি' নামক একটি রুশভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করা গ্রন্থ থেকে।

জানেন মায়াকভস্কি যে শুধুমাত্র কবি ছিলেন তা কিন্তু নয়, তিনি অনেক নাট্য রচনা করেছেন এবং মঞ্চে অভিনয় করেছেন এমনকি পরিচালনা করেছিলেন। একটা সময় তিনি লেফ্ট আর্ট ফর্মের সদস্য ছিলেন যাদের স্লোগান ছিল 'ঘটনার সাহিত্য কল্পনার নয়'। তার লেখাতেও বারবার সেই ছোঁয়া পেয়েছি। কি সাবলীল ভাবে লিখেছিলেন,

আমিই সেই মানুষ যাকে ভাড়া করা যায় না...

বিপ্লব ছিল তার মজ্জায়। তিনি উচ্চ গলায় বলেছিলেন যে ভাষায় এত কাল লেখা হয়েছে সেই ভাষায় আর লেখা হবে না। নতুন ভাষায় লেখা হবে, লেখার ধরন বদলাতে হবে। যে কথা আজ আমরা এই যুগে দাঁড়িয়েও বলি। সাহিত্য নিয়ে বিপ্লব করার জন্য সাহস কম লাগে না। সেখানেও বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, লড়াই করতে হয়, এই তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষগুলোকে অনেক অপমান সহ্য করতে হয়, আর অনেক ভাবেই অপদস্ত হতে হয়। তবুও হাল ছাড়তে পারে না হয়তো তাদের জন্মই বিপ্লবের জন্য। নইলে কি আর সোজাসুজি বলতে পারেন, তলস্তয়, পুস্কিন, ফিওদর দস্তয়েভস্কি'র বইগুলো সময়ের জাহাজ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার কথা। তবে কম বয়সে তার মৃত্যু কিন্তু কোন রোগে আক্রান্ত মৃত্যু নয়। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। মৃত্যুর মাস দুয়েক আগে থেকেই তিনি ভয়ংকর হতাশায় ভুগতেন। একটি সুইসাইড নোটও লিখেছিলেন। সেখানে লেখা ছিল, আমার আত্মহন সম্পর্কহীন, এই মৃত্যুর দায় একান্তই আমার, আত্মহনন ছাড়া আমার বিকল্প কোন রাস্তা ছিল না। কবি তো তাই হয়তো সুইসাইড নোটে দুটো লাইন লিখে গিয়েছিলেন,

The incident dissolved
The love-boat smashed up

নিজের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে গিয়ে সামনের রাস্তাতেই নিজেকে নিজে গুলি করেছিলেন।

আমি জানি আত্মহনন মহাপাপ। আমি তার কথা এবং কবিতার গুণমুক্ত পাঠক মাত্র। তার মতো কাব্য প্রতিভা খুব কম মানুষই পায়৷ তাই প্রতি বছর জন্মদিনে এলে আমি তাকে স্মরণ করি। আজ তাকে স্মরণ করে কয়েকটি কথা লিখছি।

সোনার চামচ

মায়াকভস্কির মৃত্যুর পর সে রাতে কোন কুকুর কিংবা বিড়াল কেঁদেছিল কিনা জানিনা। হয়তো, 'আন্দোলন' শব্দের পেট চিরে একটা নদী গোপনে বয়ে ছিল কিংবা প্রেমীকার উদ্দেশ্যে লেখা শেষ কবিতাটি ওয়াইন গ্লাসের মতো ঝনঝন করে ভেঙে পড়েছিল৷

হয়তোবা কিছুই হয়নি এসব৷ হওয়ার কথাও না। রোজ চারপাশে কতো জন্মদিন, মৃত্যুদিন ফুটবল খেলে পা ধুতে পুকুরে নামে৷ কে ছাপে তার খবর? একদিন বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে জানালায় বসে ছিলাম। সঙ্গে পরজন্মের মায়ানগর৷ রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছিল এক অধৌত বালিকার শরীর। তার চুলের গোড়ায় পুরোনো নারকেলের গন্ধ। গলায় ভাঙা কদম৷ শরীর বেয়ে উঠে যাচ্ছিল ধ্রুপদী আস্ফালন। বিস্কুটের প্যাকেটে সেদিন আমি খুঁজেছিলাম মৃত মানুষ ও তার জন্মদিনের ভৌগোলিক অবস্থান৷

কি জানো পাঁজরে কখনও কৃমি হতে দিতে নেই৷ এই যে আজন্ম শুধু জন্ম লালনের জন্য প্রতিটা উন্মুক্ত পিঠে জেগে থাকে হিজলতলীর ময়ূর, তা দেখে কখনোতো বলো না যে কটা ঘরে চাঁদ আসে তার ছাদে মৃত্যুভয় বসে জুয়া খেলে।

কার্নিশে দেখো কাকের পাশে মরে পড়ে আছে পাঁচবছর পুরোনো আত্মহত্যার পরিকল্পনা। সে কথা না জেনে আজও গোপনে কেঁদে ওঠো জীবিত লাশে গোলাপ চাষের কথা ভেবে৷ জোর করে টেনে আনো প্রেমিকার পিছনে তাকানো দুটো সরল চোখ আর কয়েকটা বিখ্যাত লাইন -

এবং তারা বলে- ঘটনাটি শেষ হয়ে গেছে। প্রেমের তরণী দুমড়ে মুচড়ে গেছে/ভয়াবহ রুটিনের ফাঁদে/পারষ্পরিক আঘাত, বেদনা আর যকৃতের চাপে।

ভালো থেকো মায়াকভস্কি। তোমার কবিতা পড়ে আজও ঋদ্ধ হই। তোমার ক্ষুরধার কলম কে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।

আমি জানি আমার বাংলাদেশের বন্ধুরা একেবারেই ভালো নেই এখন, ঈশ্বরের কাছে তাদের ভালো থাকা কামনা করি এবং এটাও প্রার্থনা করি যেন তারা দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। সমস্ত কিছু শান্ত হোক। মানুষ মানুষের মত পৃথিবীতে বাঁচুক।

---

---

৫% বেনিফিসিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিসিয়ারি লাজুক খ্যাঁককে

---

---