প্রথম বই প্রকাশের দিন।। স্মৃতিচারণ।। মেমোরি রাইটিং।।

in আমার বাংলা ব্লগlast month

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


1000220244.jpg








আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



রোজই কিছু না কিছু নতুন নতুন লিখি। কিন্তু রোজ কি নিয়ে লিখব সেটা ভাবতেই প্রায় সারাদিন লেগে যায়। আজ প্রথমে ভেবেছিলাম কাগজ দিয়ে তৈরি কোন কিছু জিনিস বানিয়ে আপনাদের দেখাবো। কিন্তু কি বানাবো সেটা ভাবতে ভাবতেই প্রায় সন্ধে হয়ে যায়। এদিকে সন্ধের সময় কাজের অন্ত নেই। অগত্যা ভাবলাম চিঠি পোস্ট করি। তারপর নিজের ফোন গ্যালারি দেখছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ল প্রথম বই প্রকাশের ছবিগুলো। তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করি আমার প্রথম বই কিভাবে প্রকাশ হয়েছিল কোথায় প্রকাশ হয়েছিল।

IMG-20220901-WA0048.jpg

আমি যখন ফেসবুকে প্রথম কবিতা লিখতে শুরু করি, আমার পরিচিতি তখন থেকেই ধীরে ধীরে হতে থাকে। তবে কবিতা নিয়ে যে কোনো ভবিষ্যৎ হয় বা আমি অনেক লিখে অনেক পাঠক পেতে পারি সেই ইচ্ছে এবং ধারনা কোনটাই আমার ছিল না। কবিতা লিখতাম নিতান্ত শখে। তো দু একজন কবি বন্ধু হতে হতে বেশ একটা বৃত্ত তৈরি হলো। কিন্তু ওই যে আমার গোল যেহেতু ছিলনা তাই কবিতা নিয়ে বড্ড খামখেয়ালীপনা ছিল। আজ মনে হল লিখলাম, দু চারটে পত্রিকাতেও পাঠিয়ে দিলাম, কাল মনে হল লিখলাম না। এসবের মধ্যেই আমি হাতেগোনা কিছু পাঠক পেয়েছিলাম। তাদের মধ্যে অনেকেই আমায় বই করার জন্য খুবই উৎসাহ দিতেন। কিন্তু আমার বই কে পড়বে সেই বিশ্বাস আর সাহস কোনটাই আমার মধ্যে ছিল না। অবশ্য আজও যে অনেকটা আছে তেমন নয়। তবে ওই কিছু জন পাঠকের মধ্যেই একজন বয়সে ছোট পাঠক আমায় বলতেন "দিদি আমি যখন প্রকাশনা করব তখন কিন্তু তোমার বই অবশ্যই করবো। তুমি না বলবে না।" আমি ওকে মজা করে উত্তর দিতাম, "তুমি কাজটা শুরু কর আমি যদি জীবনে একটাও বই করি তোমার প্রকাশনা থেকেই করব।" তারপর দিন চলে যায় মাস চলে যায় আমার আর কোন তাগিদ থাকে না। সত্যি সত্যিই ও যখন প্রকাশনা শুরু করলো একেবারেই নাছোড়বান্দা হয়ে পেছনে পড়ে থাকলো। এদিকে আমার সাহস নেই বই করার। তখন ওই বলল যে "দিদি ছোট্ট করে বই করো বড় বইতে তো খরচ বেশি, নিতান্ত তোমার যদি একেবারেই সাহস না হয় তাহলে সামান্য কিছু কবিতা দিয়ে কর।" তারপর অনেক ভেবেচিন্তে ভাবলাম এক ফর্মার একটা বই করাই যায়। ওকে বললাম "১২ থেকে ১৪ টা কবিতা দেব তুমি এক ফর্মার বই বানাও"।

1000004260.jpg

কবিতা বাছা খুব একটা সহজ কাজ নয়। অনেকের কাছে হলেও যেহেতু আমার প্রথম বই তাই আমার কাছে একেবারেই ছিল না। বই হবে এরম কথাবার্তা চলার মাঝেই আমি একবার ব্যারাকপুরে ছিলাম কৌশিকদাকে বললাম সাহায্য করতে। আমরা দুজনেই ধোবি ঘাটে বসে প্রায় চোদ্দটা কবিতা বেছে নিয়েছিলাম। আর শুরু হল আমার বই প্রকাশের যাত্রাপথ। এরপর খুব বেশি সময় লাগেনি। কয়েক মাসের মধ্যেই বই হাতে এসে যায়। আমি ছাড়া তো আর প্রথম বই প্রকাশ হয় না তাই চটজলদি কয়েকদিনের ছুটি হাতে চলে এলাম কলকাতা বই পাড়ায়। ২০২২ সালের ২রা সেপ্টেম্বর ছিল সেই দিন। ২রা সেপ্টেম্বরের আগে পর্যন্ত এত টেনশন হচ্ছিল যে রাতের ঘুমই প্রায় উড়ে গেছিল।

অনেকেই বই প্রকাশ করেন বড় হল ভাড়া নিয়ে বেশ বড়সড় অনুষ্ঠান করে। আমার প্রকাশকও তখন নতুন আর আমিও। দুজনেই এই পথে প্রথম। সেই হিসেবে আমি বলেছিলাম কফি হাউসের বই প্রকাশের অনুষ্ঠান করতে। আমাদের কলকাতার কবিদের কফি হাউসে আড্ডাটা একটা দারুন ব্যাপার। এই কফি হাউসের টেবিল এই যে কত পত্রিকা প্রকাশ হয় কত বই প্রকাশ হয় এবং মান্নাদের ওই বিখ্যাত গানটির পরবর্তী স্মৃতি তৈরি হয়ে যায় তার খবর আর কেউ রাখে না। কিন্তু আমার প্রকাশক বলল কফি হাউস তো অনেকেই যায় আমরা কলেজ স্কোয়ারে করি। খোলা আকাশের নিচে মুক্ত হাওয়ায় অন্যরকম হবে।

IMG-20220901-WA0035.jpg

প্রকাশক ও আমার দুজনেরই গুটি কয়েক কাছের বন্ধু বান্ধব নিয়ে প্রকাশ হয়েছিল আমার প্রথম বই মোমবাতির কার্ণিশ। কলেজ স্কোয়ারে ঠিক যেই জায়গাটাতে দুর্গা মন্ডপ হয় তারই পাশে প্রকাশকের প্রকাশনা পারস্পরিক-এর ব্যানার টাঙিয়ে তার সামনে মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এবং আমরা প্রত্যেকেই নিজের নিজের লেখা কিছু কবিতা পাঠ করেছিলাম, সাথে অনেক আড্ডার গল্প করেছিলাম। আর কেউ কেউ ফেসবুক লাইভও করেছিল। খুব মজা হয়েছিল এই দিন।

IMG-20220901-WA0025.jpg

সবথেকে মজার ব্যাপার ছিল এই যে বই প্রকাশ হচ্ছে এটা দেখে কলেজ স্কোয়ারে সাধারণ মানুষ যারা বিকেলে ঘুরতে আসে তারাও উৎসাহী হয়ে দেখতে চলে এসেছিল। প্রথমবার আমার অভিজ্ঞতা হল কলেজ স্কোয়ারে যারা চা বিক্রি করে তারা এরকম ধরনের ঘটনার সাথে অভ্যস্ত। কারণ তাদের হাসি হাসি মুখের কথা এবং তৎক্ষণাত টাকা না নিয়ে চা পরিবেশন করা ভঙ্গিমা।

IMG-20220901-WA0024.jpg

এরপর যেটা প্রথম অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেটা না বললে পত্রিকা প্রকাশের স্মৃতিচারণ সম্পন্ন হয় না। কি জানেন? প্রথম বার নিজের বইতে পাঠকের উদ্দেশ্যে কিছু লিখে সই করে দেওয়া। এতদিন সই করেছি নিজের সমস্ত দরকারি কাগজপত্রে। এই সই কিন্তু সেই সই নয় এটি অটোগ্রাফ। আজ মনে পড়লে হাসি পায় ঠিকই তবে সেদিন প্রচন্ড উত্তেজনা ছিল।

IMG-20220901-WA0033.jpg

বইটি থেকে আমিও বেশ কিছু কবিতা পাঠ করি। সবাই শুনে একটা কমন কথা বলেছিল, লেখাগুলো একেবারেই অন্যরকম। লেখা শুরু থেকেই এই তকমা পেতে পেতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। প্রথম প্রথম একটু অন্যরকম লাগলেও এখন বেশ ভালই লাগে। এখন মনে হয় আমি ঝাঁকের কই হয়ে ঝাঁকে মিশে যায়নি। এ বড় স্বস্তির এ বড় আরামের। পরে বইমেলাতে আরো অনেকগুলি বই আমি নিজে সই করে পাঠকদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। তবে আমার এই বইটি পাঠপ্রিয় হওয়ার পেছনে আমার থেকেও বেশি অবদান আমার প্রকাশকের। এ বইটি প্রকাশের পর আমার পরিচিতি অবশ্যই অনেক বেড়েছে। এবং অনেক মানুষ যারা নীলম সামন্তকে চেনে তার লেখাটি চেনে। কিন্তু আমাকে অনেকেই চেনে না। এই বিষয়টা আমার শুনতে অদ্ভুত লাগলে অভিজ্ঞতা কিন্তু দারুন। এবছর বইমেলায় এরকম অনেক ঘটনাই ঘটছে। আগে একদিন একটা ব্লগে বলছিলাম। এটা ভাবলে বেশ ভালই লাগে।

IMG-20220901-WA0032.jpg

প্রথম বই হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা খুব একটা খারাপ হয়নি। খুব একটা কেন একেবারেই খারাপ হয়নি। তবে অনেকেই বলেছিলেন বড় বই করতে। তো আমার মনে হয় কবিতার বই ছোট হওয়ায় ভালো। সেক্ষেত্রে কবিতা মানুষের পকেটে বা ছোট্ট ব্যাগের মধ্যে চলে যায় যা যাতায়াতের পথে বাসে ট্রেনে ট্রামে বসে পড়ে নেয়া যায়। তবে দিন যত এগিয়ে যায় মানুষ এক ফর্মা করতে চায় না বড় বড় করতে চায়। আবার আমি দেখেছি এমন বিখ্যাত কবিদের যারা এখনো কবিতার বই এক ফর্মারই করেন। সেই দেখে আমার এখনো মনে হয় আমি ভবিষ্যতে বই করলে এক ফর্মার করব। এক ফর্মা অর্থে ষোল পাতার ছোট্ট বই।

1000004257.jpg

বন্ধুরা, আমার বই প্রকাশের স্মৃতির গল্প এখানেই শেষ করি। আবার কাল আসবো অন্য কোন পোস্ট নিয়ে। ততক্ষণ আপনারা ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।

টা টা

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণস্মৃতিচারণ
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত সহ অনেকে
মাধ্যমস্যামসাং গ্যালাক্সি M-01
লোকেশনকলেজ স্কোয়ার, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিখন


1000216466.jpg


৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

1000205505.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last month (edited)

অসাধারণ হয়েছে পোস্টটি। মনে পড়ে যাচ্ছে সেই দিনের কথা। প্রথম বই প্রকাশ যে কোন কবির কাছেই স্মরণীয় একটি দিন। আর এই সবকটি ছবি আজও যেন ভীষণ জীবন্ত। মোমবাতির কার্নিশ নিয়ে আর নতুন কি বলবো। বারবার কবিতাগুলি পড়তে ইচ্ছে করে। এই বইটির সবকটি কবিতাই এক একটি জীবন্ত ডায়নামাইট। আগামীর শুভেচ্ছা রইল। তারতর করে এগিয়ে যা লক্ষ্যের দিকে।

 last month 

সেই দিনটা ভোলা যায়? বড় আনন্দের কেটেছিল তোমাদের সবার সাথে। কতজনের সাথে সেদিন প্রথম দেখা হয়েছিল। তোমার সাথে ব্যারাকপুর ফিরলাম। সবই মনে আছে।

 last month 

প্রত্যেকটি কবির কাছে এমন দিন অনেকটাই স্মৃতি মধুর হয়ে থাকে। সেই বিষয়গুলো অনেক চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছেন, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

 last month 

হ্যাঁ সিয়াম, ঠিকই বলেছ। আমি তো অনেক দুরত্বে থেকে সাহিত্যচর্চা করি। আমার জন্য একটা মঞ্চ, একটা দেখা হওয়া একটা মেলা একটা কবিতাপাঠের যাপনই অনেক পাওয়া।

ভালো থেকো। সাবধানে থেকো।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 57337.14
ETH 2342.62
USDT 1.00
SBD 2.35