চুরি করা মহাপূণ্য যদি পেটে সয়|| মজার অভিজ্ঞতা ||
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
না বলে নেওয়াকেই চুরি বলে৷ তবে এই চুরি যতক্ষণ ছেলেমানুষী পর্যায়ে থাকে ততক্ষণে ভালো। কিন্তু ছোটখাটো চুরি করতে করতে যদি পুকুর চুরি হয়ে যায় তা কখনোই ভালো নয়। আজকে আমি আপনাদের যা বলব তা সবটাই ছেলেমানুষী হিসেবে দেখবেন এইটুকু অনুরোধ রাখি।
ছোটবেলা থেকেই আমি একটু দুষ্টু প্রকৃতির৷ তবে সামনে থেকে কিন্তু খুবই শান্ত শিষ্ট। দুষ্টু বলতে কারোর কোন ক্ষতি করা নয় তবে এই শীতের দুপুরে ছাদে গিয়ে পাশের বাড়ির আচার চুরি করা বা আমলকি চুরি করে খাওয়া, এইগুলো খুব সহজেই করে ফেলতাম। মনে পড়ে একবার আমাদের এই পাড়ার এক দাদাদের ভুট্টা চাষ হয়েছিল। আমাদের মেদনীপুরের ক্ষেতে খুব একটা ভুট্টা চাষ হয় না। তো বিষয়টা বেশ অভিনব ব্যাপার ছিল। আর তখন বাজারেও পাওয়া যেত না। বলতে গেলে বেড়াতে গিয়ে এক দুবার হয়তো ভুট্টা খেয়েছি তার আগে। এদিকে এমন লোভনীয় জিনিস। ওদের গাছগুলোতে প্রচুর ভুট্টা হয়েছিল। কিন্তু ওরা সেগুলো দেয়ও না আমাদের কাউকে। চাইলেও দেবে কি দেবে না সেসব ভাবতে ভাবতে একদিন আমাদের ছোটদের দল দুপুরবেলায় হানা দিলাম। বেশ কিছু ভুট্টা তুলেও আনলাম। বিকেল থেকে তো ওদের বাড়িতে হই হই রই রই কান্ড চলছে। এদিকে আমরা কিছু জানি না টাইপ মুখ করে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করছি কি হয়েছে। ওরা ভেবেছে পাশেই অন্যান্য পাড়া, সেখানকার লোকেরা নিয়েছে। অতয়েব পার পেয়ে গেলাম। খুব মনে পড়ে ভুট্টাগুলো খেয়ে বাইরে ফেললে ওরা দেখতে পাবে বলে আমরা গরুকে খাইয়ে দিয়েছিলাম। এরকম অন্যের বাড়ির গাছের ফল পাড়া রাত্রিবেলায় ছিপ ফেলা এসব বিদ্যে কিন্তু ছোট থেকেই ছিল। হে হে হে।
বন্যার সময়ও যেতাম দলবেঁধে অন্যের গাঁইতি জাল থেকে মাছ তুলে নিয়ে আসার জন্য। 🤣
এইসব দুষ্টু বুদ্ধি কিন্তু আমার এখনো আছে। যখন যেখানে থেকেছি সেই জায়গায় কোন ফল বা সবজির গাছ থাকলে যখন কেউ হাত দেয় না আমি ঠিক সুযোগ করে গিয়ে একটা দুটো পেড়ে নিয়ে চলে আসি। আপনাদের বারবারই বলি আমি সদ্য দু'মাস হলো পুনেতে আছি। এদিকের লোকজনেরা বেশ অদ্ভুত। গাছে কোন ফল হলে সচরাচর পেড়ে খায় না। সে ক্ষেত্রে আমরা যে পাবো বা চেয়ে আনবো সে রকম কোনো ব্যাপার থাকে না। এদিকে আমাদের সোসাইটির মধ্যে বেশ কিছু পেঁপে গাছে ভর্তি পেঁপে হয়েছে। পাখি খেয়ে যায় কিন্তু কেউ তোলে না। সামনের বাজারগুলোতে কাঁচা পেঁপে পাওয়া যায় না। তো গত শনিবার দুপুরের দিকে যখন সবাই ভাতঘুম দেবে দেবে ভাবছে তখনই ঠিক করলাম হানা দেব। প্রতিবেশী এক বাঙালি দাদা আছেন যার কথা আগের দিন ব্লগে বলেছিলাম, সেও কাকতালীয়ভাবে ফোন করলো, বললে 'এই সময় ময়দান ফাঁকা দেখতে পাচ্ছি উপর থেকে, পেঁপে তাহলে পেড়ে আনি'। ভালো কথা। চলে গেল পেঁপে পাড়তে৷ প্রায় দশটা পেঁপে নিয়ে এলো। আমি কিন্তু এবারে নিজে যাইনি। আসলে নতুন জায়গা আমার খুব একটা সাহস হচ্ছিল না৷ দাদারা প্রায় দশ বছর হল এখানে আছেন৷ সেই ফায়দাটাই তুললাম। হে হে হে।
দশটা পেঁপের পাঁচটা ওরা নিল। পাঁচটা আমায় দিল। ছবির পেঁপেগুলো কিন্তু চুরিরই পেঁপে৷ আপাতত এই সপ্তাহ পেঁপে উৎসব চলছে বাড়িতে৷ কি কি নতুন পুরনো রেসিপি করলাম তা আরেকদিন দেখাব৷
জানেন বন্ধুরা আমার ফ্ল্যাটের পাশেই বেশ খানিকটা চাষের জমি। তার পাশে বিশাল আম বাগান, কাঁঠাল গাছও আছে। আমি যখন আসি তখন ফলে ভরে ছিল। এখন নেই৷ কিন্তু পরের বার হলে আমি টার্গেট করে রেখেছি আমের আচার আর এঁচোড়ের তরকারিটা ওই বাগান থেকেই মানে ওই আর কি। 🙈🙈
যাইহোক আমার মজার অভিজ্ঞতা বা ছেলেমানুষী জীবন কেমন লাগল আপনাদের? আমি কিন্তু এমনিতেই খুব সিরিয়াস। তবে দুষ্টুবুদ্ধিগুলোকে চলে যেতে দিইনি৷ কেন জানেন? এই ছোটছোট বিষয়গুলিই জীবনে সামান্য হলেও রঙ এনে দেয়। যদিও এসবের মধ্যে আমরা কেউই আমাদের সন্তানদের আনি না৷ ওরা কি থেকে কি শেখে তা আমি আন্দাজও করতে পারি না৷ তাই নিজেকে যথেষ্ট সাবধানেই রাখি।
গাছটার ছবি নেই। এটা ডাউনলোড করেছি। তবে এর থেকেও বেশি পেঁপে হয়ে রয়েছে।
বন্ধুরা, আজকের ব্লগ এখানেই শেষ করছি। আবার আসব কাল অন্য কোন গল্প শোনাতে। আজ
টা টা
পোস্টের ধরণ | অভিজ্ঞতা শেয়ার |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এ কাজগুলো আমিও করতাম ছোট বেলায়।যেহেতু কলোনীতে বড় হওয়া। তাই বন্ধুরা মিলে এই কাজ করতাম। পেয়ারা,বরই চুরি করতাম। তবে এখন আর সেই কাজ করি না। তবে গাছ এখনও চুরি করি। বেশ মজা লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে।
আমি ছোট বেলাটা বাঁচিয়ে রাখছি এই ভাবে৷
দিদি আপনার অভিজ্ঞতা ও ছেলেমানুষী পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। আমার এমন কোন অভিজ্ঞতা নেই।শহরে বেড়ে ওঠা।তবে আপনি চমৎকার দিন কাটিয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য।
শহরের জীবনগুলো বড্ড শুকনো যেন। আমি গ্রামে ছেলেবেলা কাটালেও বড় হয়ে তো আগাগোড়াই শহরে৷ তাই তফাৎটা ভীষণ বুঝি৷
আপনার ভালো লেগেছে শিমুল আপু। খুব খুশি হয়েছি। ভালো থাকবেন৷