বন্ধুদের সাথে কাটানো সন্ধে ও খাওয়াদাওয়া
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
শুরুতেই সবাইকে পুশের শুভেচ্ছা জানাই। জানেন তো আজকাল প্রায় সারাদিনই $PUSS এর দুর্বার গতি দেখতে দেখতেই কেটে যায়। তাই সারাদিন কি খাই কি করি তা নিজেই জানি না। এদিকে মাথায় মাইথোলজি নিয়ে পড়াশুনোর ভুতটা আবার নড়ে চড়ে বসেছে। এমত পাগল পাগল দিনে আমার প্রতিবেশী বাঙালি বন্ধু সকাল সকাল ফোন করে বলল রাতে ওদের বাড়ি যেতে৷ পাশেই বাঙালি পরিবার থাকার কারণে আমরা প্রায়ই একে অপরের বাড়ি চলে যাই। এক সাথে চা খাওয়া থেকে শুরু করে ভালো কিছু রান্না করলেই ডাক পড়ে। আসলে প্রবাসের জীবনে এই প্রতিবেশী বন্ধুগুলোই সাহারা। বিপদে আপদে এরাই সাহায্যের হাত৷ তারপর যদি বাঙালি হয় তো তবে বন্ধুত্ব এমনিই ভালো হয়৷
এই পরিবারের সাথে আমাদের বন্ধুত্বের ফলে আমার মেয়েটিও নতুন জায়গায় এসেই খেলার সঙ্গী পেয়ে গেছে৷ বিষয়টা কিন্ত একদিক থেকে খুবই ভালো। নতুন জায়গায় একেবারেই বন্ধু-বান্ধব না থাকলে একাকীত্ব আরও বেশি করে চেপে বসে। সেক্ষেত্রে জীবনটা ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তো খুবই কঠিন হয়।
সন্ধের আমন্ত্রণ থাকার কারণে আজ তো রান্নাবান্নার পাঠ নেই তাই একটা বই নিয়ে বসেছিলাম সন্ধে হতে না হতেই বৌদি ফোন করে ডাকলো। খুব বেশি দেরি না করে ওদের বাড়ি পৌঁছে দেখি একেবারে জিভে জল আনা সব রান্না হচ্ছে। তন্দুরি চিকেন আর হোমমেড পিজা। ওদের কয়েকদিন আগে আমিও তন্দুরি চিকেন বানিয়ে খাইয়েছিলাম। আজ ওরা বানিয়েছে। আসলে ওদের বাড়িতে একটা রোস্টার আছে যার ফলে এই ধরনের রান্নাগুলো খুবই ভাল রান্না হয়। আমি যেদিন তন্দুরি বানিয়েছিলাম সেদিন মেরিনেশনের পর ওদের বাড়িতেই নিয়ে গিয়ে ওভেনে দিয়ে দিয়েছিলাম।
যাইহোক বাচ্চাদের তো মহানন্দ। পিজা খেতে কে না ভালোবাসে। যদিও পিজা যে আমার খুব প্রিয় খাবার তা কিন্তু নয়। তবে বাচ্চারা যেহেতু খায় সেজন্য আমিও ওই দলে এডজাস্ট করে নিই। ছবিতে দেখুন না বাচ্চারা কি আনন্দ করে খাচ্ছে। আসলেই আমাদের এক জায়গায় খাওয়া-দাওয়া একটাই কারণ বাচ্চাদের আনন্দ। ওদের মুখে হাসি দেখলে বাবা মা হিসেবে আমাদের আর আলাদা করে কি চাই বলুন।
রান্নাগুলো বেশ ভালই হয়েছিল। তন্দুরি চিকেন একটা করে আর এরকম বড় সাইজের দুটো পিজা বানানো হয়েছিল। যদিও সব খাওয়ার মত পেটে জায়গা কারোই ছিল না অনেকটাই খাবার বেশি হয়েছে। তবে যেটুকু খেয়েছি সেটুকু মন ভরে খেয়েছি৷
জানেন ওদের বাড়ি যাওয়ার পরপরই ওদের আরেক বন্ধু এসেছিল তার বাড়ি তামিলনাড়ুতে। বাঙালি শুনে সে অবাক ভাবে জিজ্ঞেস করল আমাদের বাড়ি বাংলাদেশে নাকি। বাঙালি মানেই যেন সবাই বাংলাদেশের। এই কথাটা আমি আগেও শুনেছি। একি দেশের মধ্যে থেকে ওরা যেন বিশ্বাসই করে না পশ্চিমবাংলার নিজস্ব বাঙালি অনেক রয়েছে। এক এক মানুষের একেক রকম ধারণা। কি আশ্চর্য তাইনা? তারপর ওনাকে বুঝিয়ে বললাম যে না পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশ দুটো জায়গাতেই বাঙালি থাকে ঠিকই তবে প্রত্যেকেরই নিজের বাড়ি নিজ নিজ দেশে। জানিনা লোকটা কি বুঝল তবে বেশ অবাকই হলো।
সবার সাথে গল্প করতে করতে যখন খাচ্ছিলাম তখন মনে মনে ভাবছিলাম সত্যিই যদি সমস্ত বাঙালিদের নিয়ে একটা দেশ হতো কি ভালই না হত। বাঙালি সমস্ত সংস্কৃতি একসাথে উদযাপন হত। আর যদি একটা ধর্মের নাম বাঙালি হত? দারুন না ব্যাপারটা? ব্রিটিশরা ভুল করে গেছে। কি বলেন আপনারা? আমার মাঝে মধ্যে এরকম আগডুম বাগডুম চিন্তাভাবনা মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে। মাথা তো নয় যেন কোপাইয়ের হাট। হরেক জিনিস পাওয়া যায় তাও আবার সস্তায়। হা হা হা।
বন্ধুদের সাথে সারা সন্ধ্যায় অনেক গল্প করে কাটালাম। ফিরে আসার সময় বৌদি দুটো প্যান্ট দিল আমার মেয়েকে পরের জন্য। বন্ধুরা কত আপন হয়ে গেলে এমনটা হয় তাই না? একটা সময় আমিও ভালো জামা ছোট হয়ে গেলে বন্ধুদের মেয়ে থাকলে তাদের দিয়েছি পরতে। এতে করে আমার আমার ব্যাপারটা কম হয় এবং সবার সাথে এডজাস্ট করে চলাটাও শিখতে পারে। অন্য কেউ দিয়েছে বলে সেটা পড়বো না বা ব্যবহার করব না বা আমার যেটা আছে সেটাই সেরা এমন অহংকারবোধ তৈরি হওয়ার আগেই গোড়া থেকে নির্মূল করে দেওয়া যায়।
এই সব নিয়েই আজকের সন্ধ্যাটা বেশ ভালোই কেটে গেল। তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে খানিক আনন্দের মুহূর্ত শেয়ার করি। অনেকেই ভাবে প্রবাসীর জীবন বোধহয় একাকী খুব কষ্টের বাড়ির লোকজনকে ছেড়ে ধুঁকতে ধুঁকতে বেঁচে থাকা। কিন্তু সব সময় তা হয় না। একটা না একটা বন্ধু জুটেই যায় এবং আমরা প্রত্যেকেই একে অপরের ভালো বন্ধু হয়ে কাটিয়ে দিয়ে আমাদের পরিবারহীন উন্মুক্ত পারিবারিক জীবন।
আজকের ব্লগ এখানেই শেষ করছি আবার আসবো আগামীকাল অন্য কোন বিষয় নিয়ে লিখতে। ততক্ষণ আপনারা খুব ভালো থাকবেন।
টাটা।
পোস্টের ধরণ | লাইফস্টাইল ব্লগ |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি, ইনশট |
৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
দারুণ সব লোভনীয় খাওয়াদাওয়ার মেনু। দেখলেই জিভে জল এসে যায়। তাও তন্দুরি চিকেন হলে তো কথাই নেই। সব মিলে একটা সুন্দর সময় কেটে গেছে এতো খেতে খেতে। এমন সব খাবার দেখলে ইচ্ছে করে মোবাইল স্ক্রিনে হাত ঢুকিয়ে যদি একটু নেওয়া যেত৷ হা হা হা৷ যাক৷ দেখেও ভালো লাগা ব্যক্ত করলাম। ভালো থাক সবসময়।
হ্যাঁ৷ লোভনীয় বটে৷ ভালো খেতেও হয়েছিল৷ সত্যিই যদি মোবাইলে হাত ঢুকিয়ে খাওয়া যেত। কী মজাই না হত৷
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
অনেক সুন্দর সন্ধ্যা কালীন মুহূর্ত কাটিয়েছেন আপনি। আপনার এই দারুন মুহূর্তের ফটোগ্রাফি গুলো দেখে এবং অনুভূতিগুলো পড়ে বেশ ভালো লাগলো।
ঠিক বলেছেন৷ খুব আনন্দে কেটেছিল৷ বাচ্চারা খুব মজা করেছে৷ প্রবাসে তো পরিবার বলে কিছু নেই৷ বন্ধুরাই পরিবার৷ বন্ধুরাই আপনজন৷