আসুন কবিতা পড়ি।৷ স্বরচিত কবিতা ও প্রেক্ষাপটের গল্প।। ক্রিয়েটিভ রাইটিং ক্রিয়েটিভ রাইটিং।।
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
বন্ধুরা, অনেকদিন পর আজ একটি কবিতা নিয়ে এলাম। আমরা যারা কবিতা লিখি অন্যান্য সমস্ত লেখার থেকে কবিতার জন্ম দেওয়াটা আমাদের কাছে অনেক আনন্দের। জানেন অনেক মানুষ জিজ্ঞেস করে কেন কবিতা লিখি? যারা লেখে না তারাই এমন প্রশ্ন সচরাচর করে থাকে। তারপর থেকে আমি নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করি যে কেন কবিতা লিখি। কবিতা তো সবাই লিখতে পারে না আর সবাই কবিতা লিখলেও কিন্তু সবাই কবি হয়ে ওঠে না। সে কারণে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের কবি মহলে একটি বহুল প্রচলিত কথা আছে, কবিতা তো সবাই লেখে কিন্তু কবি কেউ কেউ হয়। আমিও সেই তাদেরই বলে যারা কবিতা লিখে কিন্তু কবি নয়। কবি অনেক বড় ব্যপার। কবি সবাই হতে পারে না কবি হওয়ার জন্য অনেক সাধনার প্রয়োজন হয়। আমি জানিনা আমার সেই একাগ্রতা বা সাধনা দুটোই আছে নাকি। তবে চেষ্টা করে যাই। কবিতা তো আমি লিখি না। আমার কবিতা পায়। খিদে পাওয়া ঘুম পাওয়ার মতো করে কবিতাও পায়। ভেতরে একটা অন্যরকম তরঙ্গ সৃষ্টি হয় যতক্ষণ না কবিতা লিখে উঠতে পারছি ততক্ষণ চরম অশান্তি চলতে থাকে। একি অদ্ভুত একটা ব্যাপার তাই না?
এক সময় আমি নিজেকে বহুবার জিজ্ঞেস করেছি যে কেন কবিতা লিখি। তার খুব সহজ উত্তর জীবনের অনেক কথা আমরা সরাসরি বলতে পারিনা। অনেক প্রতিবাদও সরাসরি করতে পারি না। তখন আমাদের রূপকের হাত ধরতে হয়। রূপক অর্থাৎ একটা আড়াল। কিংবা পর্দা বলা যায়। পর্দা কে সামনে রেখে আমরা অনেক না বলা কথা বলে ফেলি। আর সেই না বলা কথা এবং পর্দা মিলেমিশে একটি কবিতার জন্ম নেয়। আমার লেখাগুলো আদতে কবিতা হয়ে ওঠে কিনা জানা নেই। তবে চেষ্টা করি লিখতে।
আজকে যে কবিতাটি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব সেটি জীবনের আধ্যাত্মবোধ মূলক। জীবনের সারমর্ম বা বোধের কবিতা। তবে অবশ্যই লেখার ধরন আলাদা। আধুনিক কবিতা মানুষ যেভাবে লিখতো আমি সেভাবে লিখি না আর লেখার চেষ্টাও করি না। যা লেখা হয়ে গেছে যা বলা হয়ে গেছে যা সবাই জেনে গেছে তা নিয়ে আমি আর নতুন করে কি বলবো। আমি যদি প্রয়োগ করি তাতে আমার আর আলাদা করে কি ছাপ থাকবে। এই ব্যতিক্রমী হওয়ার মনোভাবটাই হয়তো আমাকে সবার থেকে আলাদা করে একটি নতুন ধরনের উপস্থাপন করতে জোর করে।
কবিতাটি পড়ে বুঝতে অসুবিধা হবে ভেবে আমি হালকা করে সারমর্মটি বলবো এবং কবিতার প্রেক্ষাপট অর্থাৎ কোন পরিস্থিতিতে কবিতাটি লিখেছিলাম সেটি নিয়ে সামান্য আলোচনা করব। কবিতাটি পড়ানোর আগে বলে রাখি এটি একটি প্রকাশিত কবিতা। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের বইমেলা উপলক্ষে বিখ্যাত লিটল ম্যাগাজিন যাকে কবিতা আপগ্রেডেশনের প্রতিষ্ঠান বলে আমরা চিনি, কবিতা পাক্ষিক নামক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। নিজের সম্পর্কে নিজের বলতে বড্ড লজ্জা করে। কখনোই নিজের পারার অংশটুকু বা ভালোর অংশটুকু সুন্দর করে গুছিয়ে বলে উঠতে পারিনি। তাও বলবো এই কবিতাটি কিন্তু অনেক বড় বড় কবিদের থেকে প্রশংশা পেয়েছিল।
প্রথম তিনটি লাইন ইংরেজিতে লেখা৷ মূল শব্দ হল ইউনিভার্স৷ অর্থাৎ মহাবিশ্ব৷
হতে পারে এই মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র অংশ আপনি। হতে পারে আপনিই মহাবিশ্ব৷
মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র অংশ আমরা যেমন তেমনিই আমরাও এক একটি মহাবিশ্ব। আমাদের ভেতর সারাক্ষণই জন্ম মৃত্যু ঘটে, সংঘর্ষ হয়। যেমন আমাদের কোষগুলি যেমন অনবরত জন্মায় তেমনি তাদের মৃত্যুও ঘটে। তাই না? এই ভাবে শরীরের নানান আভ্যন্তরীণ অংশকে মিলিয়ে আমি একটি মহাবিশ্ব বলতে চেয়েছি৷
এরপরের লাইন ইজ্জত আর ফুচকা দুই হাত ফসকে মাটিতে পড়ে গেল।
আমাদের ইজ্জতও যেন ফুচকার মতোই সস্তা আর পলকা। যে সে যখন তখন কারণে অকারণে হনন করে নেয়। মাটিতে ফেলে দেয়। মাটি যা ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের দেহ, যা পঞ্চভূতে বিলীন। ক্ষিতি-মাটি বা পৃথিবী, অপ-জল, তেজ-আগুন, মরুৎ-বায়ু, ব্যোম-আকাশ৷ আকাশ অর্থে শূন্য। তারও পরে মহাশূন্য, বাতাসহীন মহাশূন্য৷ যেখানে কত নক্ষত্র জন্মায় কত নক্ষত্র মরে যায়৷ ঠিক আমাদের শরীরের আভ্যন্তরীণ গঠন। যাকে কেন্দ্র বিন্দু আমরা জন্মান্তরবাদ লিখি অথচ কিছুই নেই৷ সবই দোদুল্যমান৷ অস্থির। আবার আমাদের আকাশ আমাদের জীবনও একদিন ফুরিয়ে যাবে কলসির জলের মতো৷
এইটুকুই বলেছি৷ লাইন ধরে মানে করলাম। যে কাজ আমি কোনদিন করিনি৷ কিন্তু কবিতাটি যেহেতু একেবারে আলাদা ঘরাণায় তাই যাঁরা পড়বেন তাদের সুবিধার্থে করলাম৷
এবার দেখাই পত্রিকাটির প্রচ্ছদ।
খুব সহজ সরল প্রচ্ছদ৷ লিটিল ম্যাগাজিনের এরকম ধরনের প্রত্যেক সাধারণত হয় না। তবে এই বিশেষ ফটোজেনিক প্রচ্ছদটির কারণ ছিল, পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠাতা এবং দীর্ঘ সময় ব্যাপী জিনিস সম্পাদনা করেছেন এবং পত্রিকাটিকে যিনি তার কঠোর পরিশ্রমে একটি প্রতিষ্ঠান করে তুলেছেন সেই স্বনামধন্য এবং সম্মানীয় ব্যক্তি প্রভাত চৌধুরীর জীবনের শেষ বইমেলার ছবি। বর্তমানে পত্রিকাটি ওনার স্ত্রী যুথিকা চৌধুরী দায়িত্ব নিয়ে চালান ঠিকই তবে কবিতার সম্পাদনের জন্য আলাদা গোষ্ঠী রয়েছে। এই প্রচ্ছদটি এবং পত্রিকাটি দেখে আমার বারবার একটা কথা মনে হয় মানুষ চলে যায় কিন্তু মানুষের সৃষ্টি মানুষের আবিষ্কার মানুষের কাজ চিরন্তন হয়ে থেকে যায় সবার মাঝে।
এবার কবিতাটির প্রেক্ষাপট নিয়ে বলবো দুচার কথা। কবিতাটি আমি লিখেছিলাম খাবার টেবিলে বসে৷ আমাদের আলোচনার বস্তু ছিল এই পঞ্চভুত। জীবন, মৃত্যু ও জন্মান্তর সমেত আমাদের মহাবিশ্বের গোলক ধাঁধা৷ খাওয়ার পর এতো সময় ধরে আমাদের আড্ডা চলছিল যে থালা ও হাত দুটোই শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। তারপর যখন হাত ধুয়ে আবার বসেছিলাম কবিতাটি উঠে এলো এই ভাবে৷
আজকের পোস্টে এইটুকুই বলার ছিল। আপনাদের কেমন লেগেছে কবিতাটি এবং আমার আলোচনাটি পড়ে কতটা বুঝতে পেরেছেন তা জানার আগ্রহ রইলো। আশা করি এমন জীবন বোধ বাস্তবতা আপনাদের ভালই লাগবে।
আবার আসবো আগামীকাল নতুন কিছু নিয়ে। আজ এ পর্যন্তই থাক। আপনারা ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং সৃষ্টিতে থাকুন।
পোস্টের ধরণ | ক্রিয়েটিভ রাইটিং |
---|---|
ছবিওয়ালা | কবিতাটি নীলম সামন্ত, প্রচ্ছদ টি সম্পাদকের প্রকাশকরা পিডিএফ |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিখন |
৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
পোস্টটা ভীষণ সুন্দর করে সাজিয়েছিস। আমি শুধু ওপর নিচ করে করে তাই দেখছিলাম। আর সেই কবিতাটি নিয়ে নতুন করে কি বলবো। এই কবিতাটি একটি উত্তরণের মত। আর কবিতা পাক্ষিক তো বাংলা কবিতার ইলিয়াড ওডিসির মত। অসাধারণ ব্যাখ্যা করেছিস। কবির এমন বিশ্লেষণ পাঠক পেয়ে গেলে আর কিই বা বুঝতে বাকি থাকে। এমন সমৃদ্ধ বিশ্লেষণ কবিতাকে পাঠকের কাছে মোড়কহীন ভাবে উপস্থাপনা করে।
হ্যাঁ এই গ্রুপে তোমাকে একদিন বলছিলাম। চেষ্টা করলাম সাজাতে। তুমি প্রথম বললে পোস্ট ভালো লাগছে দেখতে। আপ্লুত হলাম।
Hi, @neelamsamanta,
Thank you for your contribution to the Steem ecosystem.
- Explore Steem using our Steem Blockchain Explorer
- Easily create accounts on Steem using JoinSteem
- Delegate to @ecosynthesizer and wtiness vote @symbionts to support us.
আপনার লেখাগুলো আমার বেশ ভালো লাগে। কবিতা এবং কবিতার প্রেক্ষাপট দুটো পড়েই ভীষণ ভালো লেগেছে। আমরা যেমন মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র অংশ আবার তেমনি আমরাও মহাবিশ্ব। আমাদের অভ্যন্তরেও জন্ম মৃত্যু ঘটছে। আপনার লেখাগুলো দারুন ছিল আপু। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। এতো সুন্দর মন্তব্য করলেন, আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ভালো থাকবেন৷
আপনার লেখা কবিতাগুলো আমার কাছে বেশ ভালো লাগে। আপনার লেখা সবগুলো কবিতাই আমি পড়ে থাকি। আমার কাছে বেশ দারুন লাগে। যেমন আমরা মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র অংশ। আমাদের অভ্যন্তরেও জন্ম মৃত্যু দুটোই ঘটছে। আপনার লেখাগুলো দারুন ছিল। শুভকামনা রইল আপনার জন্য আপু।