📚 নমস্কার📚

☘️☘️☘️☘️☘️☘️

নীলমের লেখামিতে আপনাদের স্বাগত

---

---

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা, সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।

---

---

ছবিটি ক্যানভা অ্যাপে তৈরি

আজ সারাদিন টানা মহাভারতের বিশেষ চরিত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন'র সাথে কেটে গেল। কোন একটা কিছুর মধ্যে ঢুকে গেলে কিভাবে যে সময় চলে যায় তা সত্যিই বুঝতে পারি না। এতদিন ধরে যখন কবিতা লিখেছি তখন এইভাবে ডুবে যেতে হয়নি কখনো। কিন্তু প্রবন্ধ লেখার সময় নিজেকে অনেক বেশি একাগ্র করতে হয়। আমার লেখক পরিচিতি রয়েছে আমি মহাভারতের চরিত্রগুলোর উপর বিশ্লেষণমূলক কাজ করছি। সেটি প্রতি সপ্তাহে একটি করে প্রবন্ধ জমা করতে হয়। এই কাজটি আমি টেক টাচ টক নামক একটি জনপ্রিয় ওয়েবজিনে সাপ্তাহিক ধারাবাহিকভাবে করে থাকি। প্রতিদিন স্টিমিটে পোস্ট নিয়ে সকাল থেকেই জল্পনা করি তারই ফাঁকে ফাঁকে কবিতা লিখি বা অন্যান্য পত্রিকার প্রয়োজনীয় লেখাগুলো লিখে রাখি। কিন্তু প্রবন্ধ লেখার সময় অনেকটাই সময় চলে যায় কারণ পড়াশোনাটা একটু বেশিই লাগে। এই কাজগুলো ধারাবাহিক ভাবে করি তার কারণ ধরে লিখলে একটা সুন্দর পান্ডুলিপি তৈরি হয়ে যায়। কবিদের তো একটা মনস্কামনা থেকেই যায় যে প্রতিবছর বইমেলায় অন্তত একটা বই হোক। গত বছর বইমেলায় কবিতার বই হয়েছে তার আগের বছরও কবিতার বই হয়েছে। আসলে কবিতার বই এর জনপ্রিয়তা কম। আর আমাদের মত নোবিস কবিদের নতুন ধরনের কবিতা পড়ার লোকও কম। সে ক্ষেত্রে প্রকাশকরা অনেকেই বলে থাকেন গদ্য বা প্রবন্ধের বই করতে। আবার এই প্রকাশকের এই কিভাবে ডোবায় তা নিয়ে আরেকদিন একটি পোস্ট লিখব। তবে সেই প্রবন্ধের কথা মাথায় রেখে এই কাজটা করছি। আজ প্রবন্ধ লিখতে লিখতে ভীষণ বইমেলার দিনগুলো মনে পড়ছিল। তাই ভাবলাম বইমেলা নিয়ে আজ কিছু লিখি।

কলকাতা বইমেলায় অনেকগুলো গেট হয়৷ এক থেকে চার নম্বর। আর প্রতিটি গেটেই যে সমস্ত গার্ড থাকে তাদের কাছে বইমেলার ম্যাপ দেওয়া থাকে। যে কেউ ঢুকলেই ওই ম্যাপ সংগ্রহ করতে পারে, ম্যাপ এর সুবিধা হচ্ছে ম্যাপের মধ্যেই পুরো বইমেলার একটা ছোট চিত্র আঁকা থাকে। কোন গেটে কত নম্বর স্টল এবং সেই স্টলে কোন প্রকাশনীর দোকান তা খুব সহজেই জানা যায়৷ আগে যখন বই মেলায় যেতাম তখন এই ম্যাপের প্রয়োজনীয়তা ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে আমি আর শুধু কবি নই। আমাদের বাচ্চা লিটল ম্যাগাজিনটির দায়িত্ব ঘাড়ে আসার পরে সোজা গিয়ে ডিউটি পড়ে লিটিল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নের ৯২ নম্বর টেবিলে। তখন আর এই গেট ওই গেট দিয়ে ঢোকার কোন সুযোগই থাকে না। মেদিনীপুর থেকে সরাসরি গেলে পেছনের বাসস্টপে নেমে শো জান নম্বর গেটে ঢুকেই লিটিল ম্যাগ প্যাভিলিয়ন৷ আর যেকদিন কলকাতায় থেকেছি সেই কদিন ২ বা ৪ নম্বর গেটে নেমেছি। উল্টোডাঙ্গা থেকে অটো করে গেলে ওই দিকে নামতে হয়। এই কয়েকদিনের বইমেলা যেন একটা হই হই রই রই ব্যাপার প্রতিটা কবি সাহিত্যিকদের।

প্রতিদিন গিয়ে প্রথম কাজ ছিল টেবিলটা সাজিয়ে ফেলা। আমাদের যে কটা সংখ্যা সারা বছর ধরে বের হয় সব কটা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা আর সমস্ত সম্পাদকদের যত বই সেগুলোকেও জায়গা করে দেওয়া৷ প্রতিদিন দুজন করে সম্পাদক থাকতে। আমার পড়েছিল ৫ দিন। আমার সহকর্মী হিসেবে ছিল আপনাদের প্রিয় কৌশিক দা। সারাদিন আমাদের প্রায় বাথরুম যাওয়ার সময় হতো না। কিংবা গোটা মেলা যে ঘুরে দেখবো সেই সুযোগও হতো না। মাঝে কিছুক্ষণ যদি রিলিফ পাই তখনই পা ব্যথা করছে সেই নাম নিয়ে হাঁটতে বেরিয়ে পড়তাম।

যে গেট দিয়ে ঢুকেছি তার উল্টো দিক দিয়ে বেরোলে এই রিং রোডটা পড়ে। এখানে সমস্ত হাতের কাজের জিনিসের দোকান। হাতে আঁকা ক্যানভাস পেইন্টিং থেকে শুরু করে গলার হার, চুড়ি, ডাইরি ক্যালেন্ডার নানান ধরণের শো পিস। আমি প্রতিবার হাঁটতে বেরলে এই জায়গায় এসে হাঁ করে তাকিতে থেকেছি। ভাবতাম এতো সুন্দর পেইন্টিং যারা করে তাদের হাত কি দিয়ে তৈরি! হাঁটতে হাঁটতে সোজা চলে যেতাম ধ্রুবতারা ও পারস্পরকে স্টলে।

ওখানে আমার বই রাখা থাকতো। তাছাড়া পরিচিত কবি বন্ধুরা তুই থাকতই। পারস্পরিকের সামনেই খাবার দোকান ছিল। আরেকটু দূরে গিল্ড অফিস। একদিন ওই খাবার দোকানে খাবার খেয়েছি আর বাকি দিনগুলো বইমেলায় শুধু কফি খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছি। ওহ না শুধু কফি না পাপড়ি চ্যাট ঘুগনি, ডিমটোস্ট এইসব। আসলে মেলার মধ্যে খাবারের ভয়ঙ্কর দাম। আর বিশাল লাইন। অতো সময় আমাদের কোনদিনই হত না যে দাঁড়িয়ে খাবার কিনব৷ কারণ লিটিল ম্যাগে ঠিক করে না থাকলে ক্রেতা এসে ফিরে যায় বা নিজেদের পরিচিত মানুষরা এলে দেখা না পেয়ে চলে যায়। তাই কাজের দায়িত্ব থাকলে কোন দিকে তাকানোর উপায় নেই৷

এই আমরা তিন মহিলা সহ-সম্পাদক। বইমেলায় যে শুধু কাজ করে গেছি তা না। সাজগোজের কমতি ছিল না। আমার পেছনে এবং পাশে দুই ভদ্রমহিলা বসতেন আলাপ হয়েছিল, বন্ধুত্বও হয়েছিল, ওনারা রোজ বদলে বদলে শাড়ি পরে সুন্দর করে সেজে আসতেন। আর আমার! অতো ধৈর্য্য আর ইচ্ছে কোনদিনই হত না। তবে তাতে আনন্দের কিছু কমতি ছিল না৷

কত কত যে আনন্দের মুহুর্ত রয়েছে কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি। একদিন এতো খিদে পেয়েছিল, আর আমি মেদিনীপুর থেকে মেলায় গেছি। কৌশিকদাকে বললাম বিরিয়ানি খাওয়াতে। আর আমাদের এই বড় দাদা বললেন ওনার পেট ভর্তি! কোথায় কি? দাদা বিরিয়ানি পেয়ে দিব্য সমান তালে চালিয়ে গেলেন! এদিকে আমরা দুটি জগাইমাধাই আধপেটা থেকে গেলাম।

তবে এবার বই মেলায় অদ্ভুত সুন্দর কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এমন প্রচুর মানুষ এসেছিলেন, যারা মিলন সামন্তের ইকুয়াল টু অ্যাপেল কিনতে চান, অনেকেই দাঁড়িয়ে বলছেন উমুক পত্রিকায় পড়ি তো নীলমের লেখা, খুব ভালো লাগে। এক দিদিকে আমাদের পত্রিকা বেচতে গেলাম উনি বললেন উনি তো নেবেনই। সাথে এও বললেন ওনার পত্রিকা আমি যেন একটা নিই। কারণ ওখানে নীলম সামন্ত বলে একজনের একটি চিঠি রয়েছে সেইটে নাকি দুর্ধর্ষ৷ উনি সম্পাদক হয়েই নাকি পাঁচ সাত বার পড়ে ফেলেছেন৷ আমি সেসব শুনে বেশ মজাই নিয়েছি৷ কারণ ওনারা প্রত্যেকেই নীলম সামন্তর লেখার সাথে পরিচিত। কবি নীলম সামন্তকে অনেকেই চেনেন কিন্তু আমাকে কেউ চেনে না। না চেনারই কথা কারণ ঘন ঘন কবিতা সভায় ডাক পেলেও কোনদিন সেভাবে যাওয়া হয়নি। ভাগ্যিস যাইনি নইলে এমন সুন্দর মুহুর্তগুলো কি আর পেতাম?

টানা নয় দিন বই মেলার গল্পের কথা কোনভাবেই একটা পোস্টে লেখা সম্ভব না। পরে আবার কখনো আপনাদের সাথে শেয়ার করব অন্য কোন গল্প। আজ এ পর্যন্তই রইল।

আগামীকাল আবার আসব নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ আপনারা সকলেই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

টা টা

ফটোগ্রাফার	ডিভাইস	লোকেশন	বছর
নীলম সামন্ত ও কৌশিক চক্রবর্ত্তী(আমার সিঙ্গল ছবি) ও অদিতি সেনগুপ্ত(সেল্ফি)	স্যামসাং F54	করুণাময়ী,কলকাতা	২০২৩

(৫% বেনিফিসিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিসিয়ারি লাজুক খ্যাঁককে)