আঘারকার রিসার্চ ইনস্টিটিউটে জ্ঞান আহরণের কিছু মুহুর্ত || চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান কি ভাবছে!

in আমার বাংলা ব্লগ3 months ago

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


1000235862.jpg






আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



বিজ্ঞান ছাড়া আমরা ক্রমশ পিছিয়ে যাব তার উদাহরণ প্রতিমুহূর্তেই পাই। আজ আমার এক প্রতিবেশী দাদার সুবাদে তার রিসার্চ ল্যাবে হঠাৎ করেই পৌঁছে গিয়েছিলাম। আগে থেকে কোনরকম চিন্তাভাবনা ছিলনা তাই আলাদা করে কোন প্রস্তুতিও ছিল না। প্রথমে গিয়েই একটু অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল তবে ল্যাবরেটরির ভেতরে ঢুকে ভীষণ আনন্দ হয়েছিল। আর এটা ভেবেই ভালো লাগছিল যে আমাদের দেশে এমন গভীর বিষয় নিয়ে বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশ কিছু সময় সেখানে থেকে অনেক কিছু জেনে যখন ফিরলাম তারপর থেকে ভাবছি আপনাদের সাথে আজকে এই বিষয়টাই শেয়ার করে নেব। চলুন দেরি না করে শুরু করি।

1000235833.jpg

অন্যান্য অনেক বিষয় নিয়ে গবেষণা হলেও আমার প্রতিবেশী দাদার গবেষণার মূল বিষয় হলো জেব্রা ফিস। আমি ওনার সাথে কথা বলে যা জেনেছি সেটুকুই আপনাদের সাথে ভাগ করছি। আশা করি আপনাদের খুবই ভালো লাগবে। জেব্রাফিস নিয়ে গবেষণার প্রধান কারণ কি। জেব্রাফিস এর সাথে মানুষের প্রায় ৭০% জিনগত মিল আছে। এই কারণেই বর্তমানে ভাবা হচ্ছে যে আমাদের দেহে এমন অনেক কিছু বৈশিষ্ট্য থাকার কথা যা জেব্রাফিস এর মধ্যে আছে। সেইগুলি আবিষ্কার করা প্রধান উদ্দেশ্য। জেব্রাফিসের প্রতিপালন করার ঘরের এটি দরজা।

1000235847.jpg

ঘরটিতে ঢুকেই আমরা এরকম ধরনের প্রায় তিনটি বড় বড় একুরিয়াম বক্স সহ আলমারি দেখতে পাই। প্রায় দেড়শটা বক্সে দু'হাজার মাছ রয়েছে। প্রতিটি মাছেরই আলাদা আলাদা ক্যাটাগরি। বিভিন্ন বক্সে সেইগুলি লেভেলিং করা আছে। ক্যাটাগরি বলতে মাছের সাইজ এবং কোন মাছের মধ্যে কোন জিনটা আছে, কোন জিনটা নেই বা কোন জিনটা তুলে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আরো একটা বিষয় ওখানে উল্লেখ আছে, জিন তুলে নেওয়ার ফলে মাছটির শরীরে কি পরিবর্তন দেখা দিয়েছে এবং সে আদৌ বাঁচতে করতে পারছি কি না পারলেও কতটা সুস্থ বা কতটা অসুস্থ। যে সমস্ত মাছগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে তাদের বের করে দেয়া হয় তবে সেই মাছগুলো মরে যাওয়ার আগে ছাত্র-ছাত্রীরা তার ওপর অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়।

1000235837.jpg

খুব ছোট্ট ছোট্ট মাছগুলি কিলবিল করে চলে বেড়াচ্ছিল। এই বক্সগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হয়। এছাড়াও একুরিয়ামের মতনই অক্সিজেন সিস্টেম করা আছে। জিন পরিবর্তন করা হয় কেন। আর এই মাছটি কেন ব্যবহার করা হয়েছে। এ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে উনি বললেন, জেব্রা ফিস এর মধ্যে একটি বিশেষ ধরনের ক্ষমতা আছে। এই মাছ রিজেনারেটিং করে। অর্থাৎ এর যদি পাখনা খুলে যায় নিজে নিজেই পাকনা আবার গজায়। হৃদপিণ্ড বা ফুসফুসে যদি কোন সমস্যা দেখা দেয় মাছটি নিজেই নতুন করে ছাড়িয়ে তোলে। চামড়া খুলে চলে গেলে সেই জায়গাটা ভরাট করে দেয়। অর্থাৎ এর কোন ক্ষয়ক্ষতি হলে বাইরে থেকে কোন সাহায্য লাগে না। জিন নিয়ে রিসার্চ করার পর দেখা গেছে মানুষের শরীরেও এই একই জিন আছে যার কারণে মানুষও রিজনারেটিং করতে পারে। কিন্তু কোন কিছুর অভাবে এই দিনটি কাজ করে না। সেই অভাবটা কি সেটা জানার জন্যই এই প্রচেষ্টা। একবার ভেবে দেখুন সত্যি যদি আবিষ্কার হয়ে যায় এবং মানুষের এই জিনটিকে একটিভেট করানো যায় তাহলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিপুল উন্নয়নমূলক পরিবর্তন আসবে যা আমাদের ধারণার বাইরে।

প্রথম ছবিটি এক ধরনের চিংড়ি মাছের ডিম। এগুলো ভারতবর্ষে পাওয়া যায় না সুদূর আমেরিকা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে জাহাজে কন্টেনারে করে আনা হয়। তার কারণ এই ডিমগুলোই প্রসেসিং করে তৈরি হয় জেব্রা ফিসের খাবার। দ্বিতীয় ছবিতে যে দেখছেন শঙ্কু আকৃতির চঙ, এখানেই পরিমাণ মতো ডিম এবং জল মিশিয়ে খাবার তৈরি করা হয়। খাবার তৈরি হয়ে গেলে এগুলোকে ছেঁকে নিতে হয়।

1000235840.jpg

এরপর এই যে ছোট্ট স্কুপটি রয়েছে এই স্কুপের এক স্কুপ করে চিংড়ির ডিম বা জেব্রাফিসের খাবার এক একটা বক্সে দেওয়া হয়। এইসব করার জন্য আলাদা কোন লোক নেই। যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে গবেষণামূলক কাজ করে তারা এবং গবেষকরা মিলেই দেন।

1000235841.jpg

এটি এক ধরনের স্লাইড। এর ওপর মাছকে রেখে মাইক্রোস্কোপের তলায় দেয়া হয় এবং ইনজেকশন দেয়া হয়। ইনজেকশনের মাধ্যমে জিন বের করা বা ঢোকানোর কাজ হয় এছাড়াও আই ভি এফ করা হয়।

1000235843.jpg

মাছের আইভিএফ! কথাটা হাস্যকর শোনালেও বাস্তবে ঘটছে। আই ভিএফ কেন করা হয়? আসলে বাইরে ডিম ফার্টিলাইজ করলেই জিনের কাজ করা যায়। এই ফার্টিলাইজেশনের সময়ই জিন ঢোকানো ও বার করার কাজটি করা হয়ে থাকে। এই সেক্টরটা পুরোটাই আই ভি এফ করার জায়গা৷ গোল ঘড়ির মতো অংশ সমেত মেশিনটা প্রেসার কন্ট্রোল করে, তার পাশে নিডিল বা ইনজেকশন। তার পাশে মাইক্রোস্কোপ।

1000235844.jpg

ইনজেকশনের ছবি, এই যন্ত্র দিয়েই ইনজেক্ট করা হয় মাছগুলোকে। ইনজেক্ট করার সময় পাশের মাইক্রোস্কোপটিতে রাখা হয়।

1000235842.jpg

এটি আরেকটি মাইক্রোস্কোপ। চিংড়িমাছের ডিম রেখে দেখছিলাম। আসলে সেগুলো ডিম বলে ব্যাখ্যা করলেও মাইক্রোস্কোপের তলায় রাখার পর দেখলাম ডিম ফুটে বাচ্ছা বেরিয়ে গেছে। ছোট্ট ছোট্ট। এইগুলি মূলত ফ্রিজারে রাখা হয়।

বর্তমানে বিজ্ঞান অনেক উন্নত। তা যে শুধুমাত্র টেকনোলজির দিকে তা কিন্তু নয়। চিকিৎসাশাস্ত্র বিপুল জয়লাভ চলছে। আপনারা জানেন কিনা জানিনা ট্রান্সপ্লান্ট হয় তা সবাই জানি। কিন্তু বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল হৃৎপিণ্ড লিভার ফুসফুস বানানোর চেষ্টা চলছে৷ হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস বানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে তা আশানুরূপ সাফল্য পায়নি। কারণ তুলনামূলক ভাবে আকারে ছোট ছিল। কিন্তু একবার যখন বানাতে পেরেছে আমি আশা করব এই কাজেও সাফল্য আসবে৷

এই বিষয়টিতে আরো অনেক কিছু বলার আছে এবং দেখানোর আছে। যা আজকে একটি ব্লকের মধ্যে সম্ভব নয় তাই ভেবেছি আরো একদিন লিখব৷ আশা করি আমার জ্ঞান আহরণের সামান্য অংশ আপনাদের জানাতে পেরে আনন্দ দিতে পেরেছি। কেমন লাগলো আজকের ব্লগটি অবশ্যই জানাবেন। শেষ করার আগে বলে রাখি আঘারকার রিসার্চ ইনস্টিটিউটটি মহারাষ্টের পুনেতে অবস্থিত। আর এই দাদাটিও বাঙালি।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণলাইফস্টাইল ব্লগ
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি, ইনশট


1000216466.jpg


৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

1000205505.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.028
BTC 68431.46
ETH 2457.08
USDT 1.00
SBD 2.60